ইসলামী শরীয়তে স্ত্রী সহবাসের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি এবং নিষিদ্ধ সময়

ইসলামী শরীয়তে স্ত্রী সহবাসের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি। স্ত্রী গর্ভবতী হলে সহবাসে কোন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি এবং সহবাসের নিষিদ্ধ কোন সময়।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। ইসলামের প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সহবাস তার ব্যতিক্রম নয়। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে দিবারাত্রে স্বামী-স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়, তখনই সহবাস বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর।’(সূরা বাক্বারাহ; ২/২২৩)। উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইবনুল মালিক বলেন, স্ত্রীর পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম সকল ধর্মেই নিষিদ্ধ। কিন্তু পশ্চাৎদিক থেকে সম্মুখের দ্বারে সঙ্গত হওয়া মোটেও নিষিদ্ধ নয়। ইয়াহূদীদের বিশ্বাস ছিল যে, পশ্চাদ্বিক থেকে সঙ্গত হলে তাতে কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে হবে ট্যারা, এটি একটি কুসংস্কার ও ভ্রান্তধারণা। এই ভ্রান্তধারণা অপনোদনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, ‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ হলো তোমাদের শষ্যক্ষেত্র স্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবে ইচ্ছা স্বীয় ক্ষেত্রে গমন কর।’’ আয়াতে স্ত্রীগণ দ্বারা বিবাহিত ও মালিকানা স্বত্বের দাসীই কেবল উদ্দেশ্য। তাদেরকে ক্ষেতের সাথে তুলনা করা হয়েছে; ক্ষেত যেমন বীজ থেকে ফসল উৎপন্ন করে তদ্রূপ স্ত্রীগণও মানব সন্তানের উৎপাদন ক্ষেত্র। আর এর উপযোগী পন্থা হলো সম্মুখ পথে সঙ্গম হওয়া। পশ্চাৎদ্বার হলো মলের পথ। তা (সন্তান) উৎপাদনের ক্ষেত্রও নয়, উপরন্তু এটি ঘৃণিত ও কদর্য কর্ম। ‘‘তোমরা যেভাবে ইচ্ছা স্বীয় ক্ষেত্রে গমন কর’’ এর অর্থ হলো দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে অথবা সম্মুখভাগ হতে অথবা পিছন দিক হতে যেভাবেই ইচ্ছা স্ত্রী গমন তোমাদের জন্য বৈধ, তবে কর্ম সম্পাদন করতে হবে কেবল সম্মুখ দ্বার দিয়ে। আর এতে তোমাদের এবং এর মাধ্যমে জন্মগ্রহণকৃত সন্তানের কোনই ক্ষতির আশংকা নেই। শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থাকার বলেন; সমস্ত ইমাম ও মুহাদ্দিস একমত যে, পুরুষ যে পন্থা ও প্রক্রিয়াই হোক না কেন সম্মুখদ্বারে সঙ্গত হলেই তা বৈধ। অত্র আয়াত তার দলীল। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)-বলেন, স্ত্রীকে ক্ষেতের সাথে তুলনা করার দ্বারা ইশারা করা হয়েছে এই দিকে যে, উৎপাদন ক্ষেত্র হলো সম্মুখদ্বার, আর তা যেন লঙ্ঘিত না হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে ব্যক্তি অভিশপ্ত যে তার স্ত্রীর পশ্চাতদ্বার দিয়ে সঙ্গত হয়। সুতরাং তা সর্বসম্মত হারাম। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৫২৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৫; মিরকাতুল মাফাতীহ হা/, ৩১৮৩)
.
মহান আল্লাহ স্ত্রীদের সাথে সংগমের কোন সময়, দিন তারিখ বা নিয়মনীতি বেঁধে দেননি।তবে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি নিষিদ্ধ সময় আছে, যাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ নয়। সেটা শেষে উপস্থাপন করবো। তার পূর্বে সহবাসের সুন্নাহ সম্মত প্রদ্ধতি আলোচনা করছি ইনশাআল্লাহ। যেমন:

▪️(১)- স্ত্রী সহবাসের প্রথমে নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎ, কাজটির মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখার, মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত করা। (এ মর্মে হাদীস দেখুন, সহীহ মুসলিম ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২, সিলসিলা সহীহা ৪৫৪,মিশকাত,১৮৯৮)

▪️(২)- সহবাসের সময় শৃঙ্গার তথা চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে, كان رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতেন। (সহীহ বুখারী ১৯২৭, মুসলিম ১১০৬, আবু দাঊদ ২৩৮২, তিরমিযী ৭২৯, যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)

▪️(৩)- সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া– بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। (সহীহ বুখারী হা/১৪১, ৫১৬৫; মুসলিম হা/১৪৩৪; বুলূগুল মারাম হা/১০২০)

▪️(৪)- যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ রহ. نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)-এই আয়াতের তফসিরে বলেন, قَائِمَةً وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ ‘দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে উপরের দিক থেকে বা নিচের দিক থেকে সেটা হোক স্বামী অথবা স্ত্রী (সব দিক থেকে সঙ্গম করতে পারে, তবে তা হতে হবে) স্ত্রীর যোনিপথে অন্য পথে নয়। (তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)

▪️(৫)- স্ত্রী সহবাসের পর ঘুমানোর পূর্বে ওযু করা: সহবাসের পরে ঘুমাতে ও পানাহার করতে চাইলে কিংবা পুনরায় মিলিত হতে চাইলে মাঝে ওযু করে নেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না; কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ওযূ করে।’(আবু দাউদ হা/৪১৮০, সহীহ আত-তারগীব হা/১৭৩, সনদ হাসান)

▪️(৬)- একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (সহীহ মুসলিম হা/৩০৮ মিশকাত হা/৪৫৪)। তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ وَأَطْهَرُ এরূপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট। (মুসনাদে আহমেদ হা/২৩৩৫০, আবু দাউদ হা/২১৯, মিশকাত হা/৪৭০)

▪️(৭)- সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো জায়েয আছে। এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই। (আবু দাঊদ হা/৪০১৯ তিরমিযী হা/২৭৯৪, আল মুগনী ৭/৭৭ ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৭৬৬)

▪️শরী‘আতে সহবাসের কিছু শিষ্টাচার ও নীতিমালা নির্দেশ করা হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে স্ত্রী সহবাসের নিষিদ্ধ সময়গুলো হলো:
_________________________________
🔸(ক). প্রসবোত্তর স্রাব অথবা ঋতু স্রাব থাকাকালীন স্ত্রী সহবাস করা হারাম। (সূরা আল-বাক্বারাহ; ২/২২২) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করে সে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা (কুরআন) অবিশ্বাস করে।’(তিরমিযী হা/১৩৫; ইবনু মাজাহ হা/৬৩৯, সনদ সহীহ)। তবে এমতাবস্থায় শুধু সহবাস ছাড়া অন্যান্য সব কাজ করা যাবে। (সহীহ মুসলিম, হা/৩০২)। কিন্তু কেউ যদি এই অবস্থায় জেনে বুঝে সহবাস করে, তাহলে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে। এমন অবস্থায় তওবার পাশাপাশি কাফফারা স্বরূপ এক দীনার বা অর্ধ দীনার গরীব-মিসকীনকে দান করতে হবে। (তিরমিযী, আবু দাঊদ হা/২৬৪; ইরওয়া হা/১৯৭; মিশকাত হা/৫৫৩)। আর এক দীনার হলো ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণের সমপরিমাণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৫/৩৮ হাজার টাকা। তবে শারঈ বিধান না জেনে অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা ভুলক্রমে স্ত্রীর মাসিকের সময় সহবাস করে ফেললে তওবা করাই যথেষ্ট হবে। কাফফারা দিতে হবেনা ইনশাআল্লাহ। (সহীহ মুসলিম ১২৬; ইবনুল উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতি; ১/৫৭১)

🔸(খ). স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করা হারাম। বর্তমানে যাকে ‘এন্যাল সেক্স’ বা পায়ু সেক্স বলে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِيْ دُبُرِهَا فَقَدْ بَرِئَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘যে তার স্ত্রীর পশ্চাদদ্বারে সঙ্গম করে, সে যেন আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর নাযিলকৃত দ্বীন হতে মুক্ত হয়ে গেল।’(আবু দাঊদ হা/৩৯০৪; তিরমিযী, হা/১৩৫; ইবনু মাজাহ হা/৬৩৯)। অপর বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না এবং সে অভিশপ্ত। (তিরমিযী হা/১১৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৯২৩, সনদ হাসান; আবু দাঊদ হা/২১৬২, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৩১৯৩-৯৪)। অতএব স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করা কোনক্রমেই বৈধ নয়। এটা অসভ্য ও বিজাতীয়দের ঘৃণ্য অপকর্ম।

🔸(গ). স্বামী-স্ত্রীর লজ্জাস্থানে মুখ লাগানো উচিত নয়। যাকে বর্তমানে ‘ওরাল সেক্স’ বলে। মুখ গহ্বর কিংবা জিহ্বা দ্বারা একে অপরের যৌনাঙ্গ চুষা (ঝঁপশ) বা লেহন করা। যা কোন সভ্য ও রুচিশীল মানুষের আচরণ হতে পারে না। এটা অপবিত্র এবং অন্যজন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম করেছেন। (সূরা আল-আরাফ; ৭/১৫৭)। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নিজের কোন অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং পরস্পরে কারোর ক্ষতি করা যাবে না।’(ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০, ২৩৪১, সহীহুল জামে, হা/৭৫১৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৫০; বিস্তারিত দ্র. ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং-২১৪৬, ৫০৭০৮)। এটা রুচিহীন, বিকারগ্রস্ত বেহায়া জাতির অপকর্ম।

🔸(ঘ). রামাযান মাসের দিনের বেলায় সিয়াম থাকাবস্থায় সহবাস করা হারাম। (সূরা আল-বাক্বারাহ,২/১৮৭)। কেউ যদি সিয়াম অবস্থায় সঙ্গম করে,তাহলে সিয়ামের কাযা কাফফারা ওয়াজিব, এতে স্বামী স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকলে তাদের তাহলে উভয়ের উপর কাযা, কাফফারা অপরিহার্য হবে। কিন্তু যদি শুধু স্বামী জোর করে সহবাস করে তাহলে শুধু স্বামীর উপর কাযা কাফফারা ওয়াজিব হবে স্ত্রী শুধু উক্ত সিয়ামের কাযা আদায় করবে। (সহীহ বুখারী হা/১৯৩৬; মুসলিম হা/১১১১; মিশকাত হা/২০০৪; আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ ফাতাওয়া ১৫/৩০৭)। কাফফারার বিষয়গুলোর ধারাক্রম নিম্নরূপ। [অর্থাৎ একটি আদায় করতে সক্ষম না হলে অপরটি করতে হবে প্রথমটির সামর্থ্য থাকলে দ্বিতীয়টি গ্রহন করা জায়েজ নেই।] (১). একটি রোজার বিনিময়ে একটি দাস মুক্ত করা। [বর্তমান যুগে যেহেতু দাস-দাসীর প্রথা নেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।] (২). একটানা [বিরতি হীনভাবে] ৬০টি রোজা রাখা। (৩). তাও সম্ভব না হলে ৬০জন মিসকিন তথা গরিব-অসহায় মানুষকে একবেলা পেট পুরে খাবার খাওয়ানো অথবা প্রতিটি রোজার বিনিময়ে অর্ধ সা তথা সোয়া বা দেড় কিলোগ্রাম চাল দেয়া। –টাকা দেয়া সুন্নাহ পরিপন্থী, তাই টাকা দেয়া যাবেনা। – একজন মিসকিনকে ৬০ বেলা খাবার‌ খাওয়ানো যেমন জায়েজ তেমনি ৬০জন মিসকিনকে এক বেলা খাওয়ানোও জায়েজ। (কাফফারা প্রসঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস সহীহ বুখারী হা/১৯৩৬, সহীহ মুসলিম হা/১১১১, মিশকাত হা/২০০৪)

🔸(ঙ). হজ্জ বা উমরাহর ইহরাম অবস্থায় সহবাস হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে। (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৭)। কেননা যৌনমিলনের ফলেই ইহরাম বাতিল হবে

🔸(চ). স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনের গোপন রহস্য অন্যের কাছে ফাঁস করা হারাম। কেনন এই সম্পর্কে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৭; বিস্তারিত দ্র. ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৫৫৬০)

▪️উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন সময়ে সহবাস করা যাবেনা মর্মে সমাজে যা কিছু চালু আছে তার শারঈ কোন দলিল নেই। সবই নিজেদের বানানো মনগড়া কথা। যেমন:
_______________________________________
🔹(১). গর্ভবতী নারীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে প্রথম তিন মাস, শেষ তিন মাস বা এর মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মিলন উচিত নয়। করলে যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করে, এতে উভয় সন্তানই দুর্বল হয়। ট্যারা হয় ইত্যাদি মর্মে যা বলা হয়, এই বক্তব্যের শারঈ কোন দলিল নেই এগুলো নিজেদের তৈরি করা কথা। বরং শারঈ নিষিদ্ধ সময় ব্যাতিত সর্বদা সহবাস করা যায়। যদি গর্ভকালীন অবস্থা স্বাভাবিক ভাবে চলমান থাকে তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সহবাস করা যায়। সহবাসের সময় স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না। তবে এ ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা নিঃসন্দেহে উত্তম। যেমন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমি স্ত্রীসহবাসের সময় ‘আযল করি। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন এটা কর? উত্তরে সে বলল, আমি তার সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ায় এটা করি। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতে যদি কোনো প্রকার ক্ষতি হতো তাহলে পারস্যবাসী (ইরান) ও রোমকগণও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। (সহীহ মুসলিম হা/১৪৪৩, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৩১৮৮)। উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, প্রাচীন আরব সমাজের মানুষের ধারণা ছিল, গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করে, এতে উভয় সন্তানই দুর্বল হয়। অথবা গর্ভাবস্থায় কোনো দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকলে এবং সেটি দুগ্ধ পান করলে শিশুর ভীষণ ক্ষতি হয়। গর্ভস্থিত সন্তান হোক, দুগ্ধপোষ্য সন্তান হোক অথবা উভয় সন্তানই হোক তার ক্ষতির আশংকা করে জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে হাদীসে উল্লেখিত প্রশ্ন করলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে বললেন, তোমার এই ধারণাই যদি সত্য হতো অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় অথবা দুগ্ধদানকালীন সময়ে স্ত্রীর সাথে সহবাস যদি ঐ সন্তানদের ক্ষতিই হতো তাহলে রোম এবং পারস্যের নারীদের সন্তানগণ অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতো, কেননা তারা গর্ভাবস্থায় তাদের সন্তানদের দুগ্ধ পান করে থাকে এবং তাদের সাথে সহবাসও করিয়ে থাকে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৪৩;)

🔹(২). স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই। যেমন বলা হয়, আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কক্ষনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করিনি। বা উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হবে। সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয় ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়। (দেখুন, ইবনু মাজাহ ৬৬২, ১৯২২,মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৩১২৩, তুহফাতুল আরুশ ১১৮ –১১৯ পৃঃ)

🔹(৩). শুক্রবারে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি ‘মুনকার’ তথা যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬১৯৪)

🔹(৪). বিভিন্ন দিনে মিলনের বিভিন্ন ফযীলত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তা শী‘আদের তৈরী জাল বর্ণনা মাত্র। (খোমেনী, তাহরীরুল ওয়াসায়েল, বিবাহ অধ্যায়)

🔹(৫). স্ত্রীর সাথে রাতের প্রথম প্রহরে সহবাস করলে সন্তান মেয়ে হয় আর শেষ প্রহরে করলে সন্তান ছেলে হয় এই কথার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। কেননা ছেলে-মেয়ে দেয়ার মালিক কেবল মাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। (সূরা শূরা, ৪২/৪৯-৫০)

🔹(৬). পশ্চিম দিকে মাথা রেখে স্ত্রী সহবাস নাজায়েজ মর্মে সমাজে যে বক্তব্য চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই। কেননা এ বিষয়ে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখিত হয়নি। (ফাতাওয়া ইমাম নববী ১৯০-১৯১ পৃ)। এছাড়াও এর বাহিরে যা কিছু সমাজে প্রচলিত রয়েছে তার সবই ভিত্তিহীন।

🔹(৭). স্ত্রীকে উপুড় করে পিছনের দিক থেকে যদি তার সাথে সঙ্গম করা হয়,তাহলে (সেই সঙ্গমে সন্তান জন্ম নিলে) তার চক্ষু টেরা হয়। এই ধারণার কোন ভিত্তি নেই। যার প্রমাণে মহান আল্লাহ বলেন, তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং, তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও। (সূরা বাকারাহ; ২/২২৩)
.
অবশেষে, মহান আল্লাহ সবাইকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী বিধি-নিষেধ পালন করার তৌফিক দিন এবং সমাজে প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার থেকে হেফাজত করুন। আমীন। (মহান আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।