ইসলামী ব্যংকগুলো কি ঘুরিয়ে সূদ খায়?

লেখিকাঃ হামিদা মুবাশশেরা

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মুসলিমরা এক দারুণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ইসলামের শত্রুরাসর্বশক্তি নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে (সমর যুদ্ধেও অবশ্য) অবতীর্ণ হয়েছে। তাদেরব্যবহৃত একটি কৌশল হল ইসলামের স্বীকৃত বিষয়াবলী বা ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে কোন প্রচেষ্টারব্যাপারে মুসলিমদের মাঝে দ্বিধা এবং সংশয়ের সৃষ্টি করা। আমাদের ঈমানের দুর্বলতা ও জ্ঞানের স্বল্পতারকারণে তারা এ ব্যাপারে শতভাগ সফল হয়েছে বললে অত্যুক্তি করা হবে না। তাই খুব দুঃখজনক হলেওসত্যি যে ক্বুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলাম পালন বা ইসলামকে সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণের যেকোন প্রচেষ্টা মুসলিমদের দ্বারাই সমালোচিত হয় সবার আগে। ইসলামী ব্যাংকিং এর একটি প্রকৃষ্টউদাহরণ। এই বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা, বিভ্রান্তি রয়েছে অনেক একনিষ্ঠভাবে ইসলাম পালনকারীর মাঝেও।

ইসলাম সুনির্দিষ্ট জ্ঞানের ধর্ম। এখানে সন্দেহ, হলেও হতে পারে জাতীয় অনুমানের কোন অবকাশ নেই।তাই আমাদের যে স্বভাবটির মাধ্যমে আমরা অজান্তেই ইসলামের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করি, তা হল জ্ঞানছাড়া ইসলাম নিয়ে কথা বলা। একজন ইঞ্জিনিয়ারের কাছে চিকিৎসা নিতে কেন যাব নাসেটা আমরা খুব ভালভাবে বুঝি কিন্তু আলেমের কাছ থেকে সুশৃখংল উপায়ে দ্বীন শিক্ষা না করে থাকলেইসলাম নিয়ে কেন কথা বলা যাবে না, তা আমাদের অনেকেরই মাথায় ঢোকে না।

ইসলামী অর্থনীতি একটি অত্যন্ত গতিশীল ও গভীর বিজ্ঞান যা সম্যকরূপে উপলব্ধির জন্য অর্থনীতিরনানা অংশ ও একই সাথে উসূল আল ফিকহ বা ইসলামী আইন Derivation এর মূলনীতি সম্পর্কে জানাথাকতে হবে। জ্ঞান ছাড়া শুধু নিজস্ব সীমিত এবং পক্ষপাতমূলক অভিজ্ঞতা বা স্রেফ ধারণার বশবর্তী হয়েমন্তব্য করলে তাতে মুসলিমদের অপকার বৈ উপকার হবে না। আরেকটি বিষয় হল, দুটো বিষয় আপাতদৃষ্টিতে সদৃশ মনে হলেও তা আসলেই এক হয়ে যায় না বা তাদের ব্যাপারে শরীয়াহর দৃষ্টিভঙ্গিও এক হয়েযায় না। যেমনঃ

বিয়ে ছাড়া এবং বিয়ের মাধ্যমে সন্তান হওয়ার মাঝে এমনিতে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বিয়ে কয়েকটিশব্দ উচ্চারণ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু মেয়ের অভিভাবকের উপস্থিতিতে সামাজিকভাবে এই কয়েকটিশব্দের উচ্চারণই সামষ্টিক জীবনে বৈপ্লবিক পার্থক্য ডেকে আনে। তাই একটি সুন্নাহ, আরেকটি ব্যভিচারযার জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিং এরস্বাতন্ত্র্য বুঝতে হলে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে

বক্ষমান প্রবন্ধে আমরা ইসলামী ব্যাংকিং এর বিষয়টি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় দিক থেকে আলোচনাকরব, অবশ্যই স্কলারদের থেকে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাপ্রসূত পক্ষপাতদুষ্টতা থেকেমুক্ত হয়ে এবং দল নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ইনশাল্লাহ।

এক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হল ইসলামী ব্যাংকিং মু’মালাতের অংশ। অর্থ্যাৎ এব্যাপারে প্রাথমিক নিয়ম হল তা হালাল,যদি না ইসলামের মৌল নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। তাই এসংক্রান্ত কোন বিষয় যদি কাফিরদের উদ্ভাবিতও হয় কিন্তু ইসলামের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক না হয়এবং সমাজের জন্য কল্যাণকর বলে বিবেচিত হয়, তবে তা থেকে অনৈসলামিক উপাদানসমূহ দূর করেতাকে হালাল করার প্রচেষ্টার মাঝে দোষের কিছু নেই বরং এর মাধ্যমে ইসলামের যুগোপযোগিতা ও চিন্তাগবেষণার প্রতি সমর্থন প্রতিভাত হয়ে উঠে।

ইসলামী ব্যাংকিং কি?

ব্যাংক একটি আর্থিক মধ্যস্ততাকারী প্রতিষ্ঠান যা সঞ্চয়কারী ও বিনিয়োগকারীর মাঝে কার্যকর সেতুবন্ধনেরকাজ করে পুঁজির দক্ষতাপূর্ণ বণ্টনে সাহায্য করে। Financial Intermediation অর্থ্যাৎ যাদের উদ্বৃত্ত অর্থ আছেকিন্তু নিজেরা খাটানোর মত সুযোগ/যোগ্যতা/ মানসিকতা নেই, আর যাদের ব্যবসায়িক দক্ষতা/ অবকাঠামোআছে কিন্তু যথেষ্ট পুঁজি নেই, তাদের মাঝে সমন্বয় সাধনের এই কাজটি যুগে যুগে হয়ে এসেছে। ব্যাংকপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখন এই কাজটি করে। সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার অনৈসলামিক উপাদানসমূহ সরিয়েবিভিন্ন ইসলামী অর্থনৈতিক পদ্ধতির দ্বারা অনুরূপ কাজ যখন কোন প্রতিষ্ঠান করে, তখন তাকে ইসলামীব্যাংক বলে। এখানে উল্লেখ্য যে ইসলামী ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় সংগ্রহের যেসব পদ্ধতি ব্যবহারকরে তা নতুন আবিষ্কৃত কোন পন্থা নয়। একদম প্রাথমিক যুগ থেকেই মুসলিমরা যেভাবে ব্যবসা বাণিজ্যকরত, এখনও সেই পদ্ধতিই আধুনিক যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে আরও Formal & Structured উপায়েপ্রয়োগ করা হয় মাত্র।

আজকাল ব্যাংকের সাথে লেনদেন করার ব্যাপারটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণতহয়েছে, আর আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার অধীন নেই। এটা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মত নয় যে না করলেআমাদের জীবন স্থবির হয়ে যাবে না। যাদের জীবিকা অর্জনের মূল উৎস ব্যবসা নয় তারা হয়তবা চাইলেব্যাংকের সাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লেনদেন না করেও চলতে পারেন, কিন্তু যারা ব্যবসা করেন, তাদেরক্ষেত্রে এটা সত্যি নয়। তাই একটি আধুনিক সমাজে ব্যাংকের অবস্থানের ব্যাপারে কথা বলার সময় শুধুনিজের কথা চিন্তা না করে একটি সামষ্টিক অর্থনীতির কথা চিন্তা করতে হবে, বিবেচনায় আনতে হবেসমাজের সকল স্তরের মানুষের কথা।

ইসলামী ব্যাংকিং এর আদর্শগত ভিত্তিঃ

ইসলামী ব্যাংকিং এর আদর্শগত ভিত্তি ইসলামী অর্থনীতি, যা দ্বীন ইসলামের সাথে সম্পর্কহীণ কিছু নয়,বরং এর একটি অংশ মাত্র। অর্থনীতির তিনটি মৌলিক প্রশ্ন- What  to Produce, How to produce and For whom to Produce এর উত্তর ইসলামী অর্থনীতি খোঁজে ঐশী নির্দেশনার মাঝে, প্রচলিত অর্থনীতির মতTrial & Error পদ্ধতিতে নয়।

ইসলামী অর্থনৈতিক মতাদর্শের কয়েকটি মূলনীতি উল্লেখ করলেই পার্থক্যটি স্পষ্ট হবে।

প্রচলিত অর্থনীতি হল অসীম চাহিদা সীমিত সম্পদ দিয়ে কার্যকরভাবে মিটানোর উপায়।(Effective Allocation of scarce resources to meet unlimited demand) অন্যদিকে ইসলামী অর্থনীতি অনুযায়ীমানুষের চাহিদা অসীম হলেও সব চাহিদা মিটানোর যোগ্য নয়। সমাজে ফেন্সিডিল বা পর্ণোগ্রাফির বিপুলচাহিদা থাকলেই ইসলামী রাষ্ট্র তা উৎপাদন করা শুরু করবে না। আবার ইসলামী অর্থনৈতিক দর্শনঅনুযায়ী সম্পদ সীমিত নয়। আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষ পাঠিয়েছেন কিন্তু তাদের ন্যায্য চাহিদা মিটানোর মতসম্পদ দিয়ে দেন নি-এই ধারণা আল্লাহর প্রজ্ঞা, দয়াশীলতা তথা তাওহীদের দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক।(W.F.O  তথ্যও এই বক্তব্য সমর্থন করে যে পৃথিবীতে ক্ষুধা সমস্যার কারণ খাদ্যের অভাব নয়)কিন্তু তাহলে এত দারিদ্র্য কেন? কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর। দুনিয়াতে পরীক্ষাস্বরূপ আল্লাহ সবার হাতেসমান সম্পদ না দিয়ে আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিভাবে সেই সম্পদ ব্যবহার করা যায়। মানুষযখন সেই নীতিমালা অনুসরণ করবে তখন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান অনিবার্য।

ইসলামী অর্থনীতির আরেকটি মূলনীতি হল সম্পদের মালিকানা নিয়ে এর দৃষ্টিভঙ্গি। আল্লাহর রুবুবিয়্যাতেরঅংশ হিসেবে সম্পদের মালিকানা আসলে আল্লাহর। তাই সম্পদ উপার্জন, বণ্টন, ব্যয় সব ব্যাপারেআমাদের সাবধান থাকতে হবে, জবাবদিহিতার ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে।

ইসলামী অর্থনীতির তাত্ত্বিক বিষয়গুলো বাস্তবে প্রয়োগ করে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।যেমনইসলামী ব্যাংক, ইন্সুরেন্স ইত্যাদি। তাই ইসলামী ব্যাংকের সাথে প্রচলিত ব্যাংকের প্রথম পার্থক্যআদর্শগত-যা থেকে জন্ম নেয় অন্যান্য কার্যপদ্ধতিগত পার্থক্যের।

ইসলামী ব্যাংকের কার্যপদ্ধতিঃ
ইসলামী ব্যাংকগুলো শরীয়াহ মেনে চলে-একথাটি ব্যাপক দ্ব্যর্থবোধক। কারণ শুধু সুদমুক্ত থাকাটাই শরীয়াহর একমাত্র দাবী নয়।ইসলামী ব্যাংকগুলো সুদমুক্তভাবেও BAT (Brithish American Tobacco) বা অনুরূপ কোন সংস্থার সাথে লেনদেন করতে পারবেনা।
তারপরও ইসলামী ব্যাংকের মূল বৈশিষ্ট্য সুদ পরিহার করা।তাই ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম বুঝতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে সুদের সংজ্ঞা কি?
[1]

সুদ কিঃ
সুদের সংজ্ঞা বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে ইসলামী অর্থনীতিতে মুদ্রা (Currency)র ধারণা। ইসলামী অর্থনীতিতে টাকা বা মুদ্রা কোন পণ্য নয়, কারণ তা সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। একটি পণ্য (ধরুন মোবাইল) এর সাথে টাকার পার্থক্য হল টাকা আপনি সরাসরি খেয়ে বা পরে ফেলতে পারবেন না। একে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে কোন পণ্যে পরিণত করে তবেই ব্যবহার করতে পারবেন।( টাকা দিয়ে একটা বার্গার কিনে তারপর খেয়ে ফেললেন) আর যেহেতু এটা পণ্য নয়, তাই এটা আপনি বেচতে পারবেন না, বেচে কোন লাভও করতে পারবেন না। এই তত্ত্বের মাধ্যমে ইসলাম প্রচলিত অর্থনীতিতে সুদের যে সংজ্ঞা- Price of credit- তার মূলে কুঠারাঘাত করেছে কারণ টাকা ধার দেয়া কোন পণ্য নয় যে তার দাম নিবেন।
যারা সুদের পক্ষে সাফাই গান, তারা অনেকে বলেন টাকা ধার দেয়া একটি সার্ভিস, সুদ হল এই সার্ভিস চার্জ। কিন্তু ইসলামে অর্থের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে, তা হল এটি মালে ফানি বা Fungible Goods।Fungible Goods হল সেটাই যা একবার ব্যবহার করলেই নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ আপনি যদি কাউকে এমন কোন জিনিস ধার দেন, তবে তার পক্ষে ঐ একই জিনিস ফেরত দেয়া সম্ভব নয়। তাকে ফেরত দিতে হবে অনুরূপ কিছু। যেমন আপনি কাউকে বার্গার ধার দিলে সে ফেরত দেয়ার সময় আরেকটি অনুরূপ বার্গার দিবে। প্রথম বার্গারটি ফেরত দেয়া সম্ভব নয় কারণ ব্যবহারের পর তা আর অবশিষ্ট নেই। ১০০ টাকাও এমন। ফেরত দিতে হবে আরেকটি সমমূল্যের নোট, যেটা ধার দেয়া হয়েছিল, সেটা নয়।
আর Non Fungible Goods হল যা ব্যবহারের পরও অবশিষ্ট থাকে যেমন বাড়ি, গাড়ি, মোবাইল ইত্যাদি। আপনার মোবাইলের সেটটি যদি কাউকে এক মাসের জন্য ধার দেন, তবে এটা সম্ভব যে এক মাস ব্যবহার করার পর সে ঐ মোবাইল সেটটিই ফেরত দিবে। এখন, কোন বস্তু Non Fungible হলেই শুধু আপনি তাকে ভাড়া দিতে পারবেন, নতুবা নয়।
তাহলে আমরা দেখলাম মুদ্রা বা টাকা Fungible Goods হওয়াতে আপনি একে ভাড়া দিতে পারবেন না, পণ্য না হওয়াতে বিক্রিও করতে পারবেন না। তাহলে টাকা বাড়ানোর উপায়টা কি? ইসলাম টাকা অলস ফেলে রাখতে উৎসাহ দেয় না, টাকা অলস ফেলে রাখলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে যা ক্রমান্বয়ে আপনার টাকার পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
টাকা বাড়ানোর একমাত্র এবং একমাত্র বৈধ উপায় হল একে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা। নিচে এটা চিত্রের সাহায্যে দেখানো হল-
(১)টাকা ————পণ্য (Fungible/ Non Fungible Goods) বিক্রি———টাকা
(২)টাকা————-পণ্য (Non Fungible Goods Only) ভাড়া——–টাকা
এভাবে টাকাকে একটি চক্রের মাধ্যমে প্রবাহিত করে আপনি তাকে বাড়াতে কমাতে পারেন। তা না করে যদি আপনি সরাসরি টাকার লেনদেনে কম বেশি করেন, তবে তা হবে সুদ।
[1] আমি যখনই কোন মানুষকে এই প্রশ্নটি করি, তখনই তারা বলেন মাসে মাসে নির্ধারিত (Fixed) একটা পরিমাণ দেয়াই হল সুদ। প্রতিউত্তরে যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে বাড়িভাড়ার পরিমাণতো নির্ধারিত, সেটা কেন সুদ নয়? তখন যে বাক্যাংশটি যোগ করা হয় তা হল লাভ ক্ষতি যাই হোক, তারপরও যদি দিতে হয়, তবে তা সুদ। এগুলো আসলে সুদের কোন সংজ্ঞা নয়। কারণ যারা বাণিজ্য অনুষদে পড়াশোনা করেছেন, তারা জানেন যে সুদের হার পরিবর্তনশীল (Floating) হতে পারে। আবার কেউ যদি কাউকে ১,০০,০০০ টাকা ধার দিয়ে বলেন যে ১ বছরের মাঝে ফেরত না দিতে পারলে ১০০০ টাকা বেশি দিতে হবে, তবে তাতে লাভ ক্ষতির কোন সম্পর্ক নেই, তাও এটা সুদ।
চলবে,ইনশা’আল্লাহ।

লেখিকাঃ হামিদা মুবাশশেরা

ইসলামী ব্যাংকগুলো কি ঘুরিয়ে সুদ খায়?-৩

টাকা বাড়ানোর একমাত্র এবং একমাত্র বৈধ উপায় হল একে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা। নিচে এটা চিত্রের সাহায্যেদেখানো হল-
(১) টাকা——–পণ্য (Fungible/ Non Fungible Goods) বিক্রি ——টাকা
(২) টাকা ——–পণ্য (Non Fungible Goods Only) ভাড়া ——টাকা
এভাবে টাকাকে একটি চক্রের মাধ্যমে প্রবাহিত করে আপনি তাকে বাড়াতে কমাতে পারেন। তা না করে যদি আপনি সরাসরি টাকারলেনদেনে কম বেশি করেন, তবে তা হবে সুদ। সুদের এই অভিনব সংজ্ঞা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, বরং তা নিম্নোক্ত হাদিসথেকে গৃহীত-
আবূ সাইদ আল-খুদরী-রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু- থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ-সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেন-
সোনার সাথে সোনা, রূপার সাথে রূপা, গমের সাথে গম, যবের সাথে যব, খেজুরের সাথে খেজুর এবং লবণের সাথে লবণ বিনিময়েরক্ষেত্রে সমান সমান এবং হাতে হাতে বিনিময় হওয়া উচিৎ। এরূপ বিনিময়ে যে বেশি বা কম দেয় বা নেয়, সে সুদী কারবার করে।এক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা উভয়েই সমান।[1] (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে এমন লেনদেনের অর্থ কি? কোন স্বাভাবিক মানুষ কেন এতে লিপ্ত হবে? এমন লেনদেন করার পেছনেযদি কোন যুক্তিই না থাকে, তবে তা নিষিদ্ধই বা করা হল কেন? কিন্তু কেউ যদি হাদিসটি গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করেন, এবং মুদ্রারঅবিশেষায়িত রূপ (Non standardized Nature of money) এর কথা বিবেচনায় রাখেন, তাহলে বুঝবেন যে হাদীসে উল্লখিতপণ্য গুলো আসলে তখন মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হত। হাদিসটি আসলে ইসলামে মুদ্রার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিচ্ছে!!!!!!!!!!!!!!!
এই নিষেধাজ্ঞার সীমারেখা কি শুধু এই ছয়টি পণ্যের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নাকি- এ নিয়ে ফকীহদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়েগ্রহণযোগ্য মতটি হল যে সোনা ও রূপা বাদে বাকি চারটি পণ্যের ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় (Cause of Judgment) হবে এদের ওজন বাপরিমাণ, তা ছাড়াও এটা খাদ্য যোগ্য হতে হবে।
আর সোনা ও রূপার ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হচ্ছে মূল্য। [2]
তাই যে পণ্য ও উল্লেখিত ছয়টি পণ্যের বিচার্য বিষয় (খাদ্য যোগ্য এবং ওজন করা হয় বা খাদ্য যোগ্য এবং পরিমাপ করা হয় বা মূল্যহিসেবে পরিশোধ করা হয়) একই হবে তারাও উক্ত নিষেধাজ্ঞার অধীনে পড়বে।
এখন সুদের সংজ্ঞা বুঝতে হলে আমাদের নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে-
(১) যদি একই পণ্য হয় তবে লেনদেন সমজাতীয় ও নগদে হতে হবে। তা না হলে সুদ হবে।
যেমন গমের সাথে গম- একই প্রকার, পরিমাণ ও নগদে লেনদেন হতে হবে।
(২) যদি পণ্য একই না হয় কিন্তু তাদের বিচার্য বিষয় একই হয় তবে পরিমাণ অসমান হতে পারবে, কিন্তু লেনদেন নগদে হতে হবে।
যেমন এক কেজি গমের সাথে তিন কেজি খেজুর লেনদেন করা যাবে, কিন্তু সাথে সাথে হতে হবে।
(৩) যদি পণ্য একই না হয় এবং এদের বিচার্য বিষয়ও ভিন্ন হয় তবে অসমান পরিমাণ এবং বাকীতে লেনদেন দুটোই বৈধ।
যেমনঃ সোনার সাথে গমের লেনদেন।
এই শেষোক্ত কেস এ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার ভুমিকা প্রতিভাত হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে একটি পণ্য ও আরেকটি মূল্য হিসেবেবিবেচিত হবে। যে কোন একটি প্রদানে বিলম্ব করা যাবে। দুটোই নয়।
যদি পণ্য সরবরাহ বিলম্বিত হয়, মূল্য আগে পরিশোধ করা হয় তবে তাকে বলে বাই সালাম, আর যদি মূল্য পরে শোধ করা হয়, পণ্যআগেই সরবরাহ করা হয় তবে তাকে বলে বাই মুরাবাহা।
[1] উপরের হাদিসটি আমার সীমিত জ্ঞান মোতাবেক আমার জীবনে পড়া সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হাদিস।
[2] এটা বিস্ময়কর লাগতে পারে যে সোনা ও রূপার ক্ষেত্রে আলাদা কেন? আমরা আমাদের সমকালীন উদাহরণ থেকে বুঝতে পারি যেদুই টাকার কয়েন ও দুই টাকার নোটের ওজন আলাদা হলেও এদের বাজারমূল্য একই। অর্থ্যাৎ সোনা ও রূপার বৈশিষ্ট্য অন্য চারটিপণ্য থেকে একটু আলাদা।
________________________________________________________________
সুদের শ্রেনীবিভাগঃ
উপরোক্ত আলোচনার পর আমরা যাব সুদের শ্রেনীবিভাগে। সুদ দুই প্রকারঃ
রিবা আন নাসিয়াহঃ
সময়ের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে/ শর্ত হিসেবে মূলধনের সাথে যে বৃদ্ধি হয় তাকে বলে রিবা আন নাসিয়াহ।এর উৎপত্তি ঋণ। কেউ যদি ১০০০০০ টাকা ধার দেয় এই শর্তে যে এক বছর পর ফেরত দেয়ার সময়১১০০০০ টাকা দিতে হবে, তবে এই অতিরিক্তটা হল রিবা আন নাসিয়াহ।
ঋণ গ্রহীতাকে অতিরিক্ত কিছু টাকা দেয়ার বিনিময়ে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেয়া হলেও সেটা হবেরিবা আন নাসিয়াহ।
রিবা আল ফদলঃ
হাতে হাতে লেনদেনের সময় যদি সমজাতীয় পণ্য কম বেশি করা হয় তবে রিবা আল ফদল হবে।
উদাহরণঃ টাকা ভাংতি করার সময় আপনি টাকার পরিমাণ কম বেশি করতে পারবেন না বা পুরান টাকাবদলিয়ে নতুন টাকা দেয়ার জন্য কোন সার্ভিস চার্জ দিতে পারবেন না।
তৃতীয় একটি প্রকারঃ
রিবার একটি অত্যন্ত প্রচ্ছন্ন রূপ হল ঋণ দিয়ে তা থেকে উপকার নেয়া। সেটা যে শুধু অতিরিক্ত অর্থেরবিনিময়ে হতে হবে তা নয়। আপনি যদি ঋণগ্রহীতার দায়বদ্ধতার সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে কোন কাজকরিয়ে নিতে চান বা তার কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেতে চান (সুপারিশ করানো ইত্যাদি) তবে তা বৈধহবে না।[1] এখন ইসলামী ব্যাংকের উদ্দেশ্যই যেখানে বৈধ উপায়ে মুনাফা অর্জন, তাই এর পক্ষেঢালাওভাবে ঋণ (কর্জে হাসানা) দেয়া সম্ভব নয়। কর্জে হাসানা একটি সেবামূলক পদ্ধতি যার প্রয়োগআমাদের দেশে খুবই কম।
[1] তবে ঋণ গ্রহীতা ও দাতার মধ্যে পূর্ব থেকেই এরূপ সম্পর্ক থাকে, তবে সমস্যার কিছু নেই। এব্যাপারটি নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা পেতে নিচের ফতওয়াটি দেখুন-
http://www.islamqa.com/en/ref/115815/riba
_________________________________________________________________________
ইসলামী ব্যাংকগুলো কিভাবে টাকা বৃদ্ধি করে?
ইসলামী ব্যাংকগুলো টাকা বৃদ্ধি করে মূলত তিনটি উপায়ে-
১) কেনা বেচা
২) ভাড়া
৩) অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা
১) কেনা বেচাঃ
ইসলামী ব্যাংকগুলো মূলত বাই সালাম[1] এবং বাই মুরাবাহা[2] পদ্ধতিতে গ্রাহকদের সাথে ব্যবসা করে। তা কিভাবে প্রচলিত ব্যাংকেরথেকে আলাদা হল? নিচের উদাহরণ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হবে-
আপনি একটি প্রচলিত ব্যাংকে গিয়ে বললেন আপনার ৫০০০০০ টাকা লাগবে।তারা জানতে চাইবে যে কেন- আপনি বললেন আপনারপাইপের ব্যবসা আছে এবং আপনি তার কাঁচামাল কিনতে চান। তারা যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে (আসলেই আপনার ব্যবসা আছেনাকি, টাকা ফেরত দেয়ার মত সামর্থ্য আছে নাকি ইত্যাদি)আপনাকে ৫০০০০০ টাকা দিবে, আপনি সেই টাকা খাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়পর সুদ সহ তাদের ৫৫০০০০ টাকা ফেরত দিবেন।
আপনি যদি একটি ইসলামী ব্যাংকে গিয়ে বলেন যে ৫০০০০০ টাকা লাগবে।তারাও জানতে চাইবে যে কেন- আপনি বললেন আপনারপাইপের ব্যবসা আছে এবং আপনি তার কাঁচামাল কিনতে চান। তারা যেটা করবে সেটা হল যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আপনারকাছে জানতে চাইবে আপনি কোথা থেকে, কি ধরণের পাইপ কিনতে চান। আপনার চাহিদা জানার পর ইসলামী ব্যাংক আপনারঅর্ডারকৃত পণ্য দোকান থেকে নগদে কিনবে এবং আপনার কাছে লাভসহ ধারে [3]বেচবে।আপনি সেই মাল দিয়ে ব্যবসা করেব্যাংককে মালের মূল্য পরিশোধ করবেন-৫৫০০০০।
দেখুন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংকের কাছে ৫০০০০ টাকা বেশি যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেনকিভাবে প্রথমটি সুদ আর দ্বিতীয়টি লাভ?
প্রথম ক্ষেত্রে লেনদেন হচ্ছে টাকার সাথে টাকা। আপনার হাতে ব্যাংক টাকা দিচ্ছে।
আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে লেনদেন হচ্ছে মালের সাথে টাকা। ইসলামী ব্যাংক প্রথম ক্রেতা,আপনি দ্বিতীয়।
ইসলামী ব্যাংকগুলোর এই মোডটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়। তাই আমাদের নিচেরবিষয়গুলো খুব ভালমত বুঝতে হবে।
প্রথমত,
এক্ষেত্রে একটি শরীয়াহ ইস্যুটি খুব সতর্কতার সাথে নিশ্চিত হতে হয়- সেটা হল ব্যাংক আসলেই পণ্যটির প্রথম ক্রেতা কিনা এবংমালিকানা সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা।কারণ মালিকানার প্রকৃত হস্তান্তর না হলে সে লেনদেন বৈধ হয় না।ব্যাপারটি যেন কাগজেকলমের মাঝে এমনভাবে সীমাবদ্ধ না থাকে যে প্রকারান্তরে গ্রাহককে পণ্যটি ক্রয়ের জন্য ধার দেয়া হচ্ছে। আর এখানেই ইসলামীব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মানবীয় ধর্মীয় উপাদানগুলোর অপরিহার্যতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। যদি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নাথাকে, তারা নিজেরাই ইসলামী ব্যাংকিং এর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো না বুঝেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাদের যদি তাকওয়া নাথাকে তবে ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে যায়। ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাঝে শরীয়াহ প্রতিপালনের মানের পার্থক্যটাওএখান থেকেই আসে।
দ্বিতীয়ত,
কোন জিনিস নগদে লেনদেন হলে একরকম দাম আর ধারে দিলে (হোক এক কিস্তি বা একাধিক)বেশি দাম নির্ধারণ করা বৈধ। কিন্তুএখানে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে ক্রেতা বাকিতে কিনবেন না নগদে কিনবেন তা অবশ্যই চুক্তি সম্পন্ন করার সময়ই নির্ধারিতহয়ে যেতে হবে। কোন জিনিস একটি দামে বেচলেন, তারপর বাকিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার জন্য অতিরিক্ত ফি আদায় করাহল-সেটা বৈধ হবে না। এর সারমর্ম হল কোন বস্তুর দাম একবারই নির্ধারিত হবে, আর সেটা চুক্তি সম্পন্ন করার সময়ই।আর একারণেই নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কোন বস্তুর দাম শোধ করা হলে ক্রেতাকে Discount দেয়ার প্রচলিত পদ্ধতি শরীয়াহ সম্মত নাকিসে ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। গ্রহণযোগ্য মতটি হল একদম সময় হিসাব করে পূর্বনির্ধারিত হারে কম দেয়া যাবে না, তবেঅনির্ধারিতভাবে, দৈব চয়ন পদ্ধতিতে কিছু কম রাখা যেতে পারে উপহার হিসেবে, যাতে ক্রেতা সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধের ব্যাপারেউৎসাহিত হন।
তৃতীয়ত,
বেচা কেনার ক্ষেত্রে যে দায়ের সৃষ্টি হয় তা গ্রাহক পণ্যটি নিয়ে লাভ করল না ক্ষতি করল তার উপর নির্ভরশীল নয়।[4] অনেক গ্রাহকঅভিযোগ করে থাকেন যে ইসলামী ব্যাংক ক্ষতির ভাগীদার হয়না। এক্ষেত্রে অবশ্য লক্ষণীয় যে ব্যাংকের সাথে তার চুক্তির স্বরূপ কিছিল। যদি তা বাই বা ইজারা মোড হয়ে থাকে, তবে ব্যাংকের দায় নেয়ার কথাও না।
[1] যদি পণ্য সরবরাহ বিলম্বিত হয়, মূল্য আগে পরিশোধ করা হয় তবে তাকে বলে বাই সালাম
[2] যদি মূল্য পরে শোধ করা হয়, পণ্য আগেই সরবরাহ করা হয় তবে তাকে বলে বাই মুরাবাহা
[3] বাই মুয়াজ্জাল হল ধারে বিক্রি করা, বাই মুরাবাহা হল লাভে বিক্রি করা। ইসলামী ব্যাংকগুলো দুটো পদ্ধতির সমন্বিত পদ্ধতি প্রয়োগকরে থাকে।
[4] এ বিষয়টি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা থেকে বুঝতে পারি, আপনি দোকান থেকে একটি মোবাইল ধারে কেনার পরযদি আপনার মোবাইলটা চুরি হয়ে যায়, তবুও আপনাকে দোকানে দাম ঠিকই পরিশোধ করতে হবে।
চলবে,ইনশা’আল্লাহ।

লেখিকাঃ হামিদা মুবাশশেরা

ইসলামী ব্যাংকগুলো কি ঘুরিয়ে সূদ খায়? শেষ পর্ব

ইসলামী ব্যাংকগুলো কিভাবে টাকা বৃদ্ধি করে?
ইসলামী ব্যাংকগুলো টাকা বৃদ্ধি করে মূলত তিনটি উপায়ে-
১) কেনা বেচা
২) ভাড়া
৩) অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা
২) ভাড়াঃ
এক্ষেত্রে ব্যাংক কোন মেশিনারীস বা অন্য কোন Non Fungible Goods কিনে তা গ্রাহকের কাছেভাড়া দেয়।
৩) অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসাঃ
ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা বা মুশারাকা পদ্ধতিতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রাহকের সাথে ব্যবসা করেথাকে। এই দুই পদ্ধতির [1]সারমর্ম নিচে চিত্রের সাহায্যে নিচে দেখান হল-
ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়াঃ
ঋণ দিয়ে যেহেতু অতিরিক্ত কিছু নেয়া যাবে না, তাই ইসলামী ব্যাংকগুলোর পক্ষে কার লোন, হোমলোন এগুলো দেয়া সম্ভব নয়। তারা যেটা করে সেটা হল ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়া। এক্ষেত্রে ইসলামীব্যাংক ও গ্রাহক অংশীদারী ভিত্তিতে কোন পণ্য কেনে। ধরুন একটি মোটর সাইকেলের দাম ২০০০০টাকা। আপনি ১০০০০ টাকা দিলেন, ব্যাংক দিল ১০০০০ টাকা। মোটর সাইকেলটির মালিকানা ৫০%আপনার , আর বাকিটা গ্রাহকের। পুরো মোটর সাইকেলটা এখন আপনি যদি বাজার দরে কাউকেভাড়া দেন, তাহলে এটার মাসিক ভাড়া হবে ধরুন ১০০০০ টাকা। ব্যাংক পুরো মোটর সাইকেলটিআপনাকেই ভাড়া দিবে। [2] যেহেতু ব্যাংক এর ৫০% র মালিক সেহেতু আপনি তাকে ভাড়া দিবেন৫০০০ টাকা। আর সাথে মাসে মাসে ব্যাংকের অংশের কিছু টাকা শোধ করবেন। এভাবে ক্রমান্বয়েআপনার মালিকানার অনুপাত বাড়তে থাকবে, ফলে প্রদেয় ভাড়ার পরিমাণও কমতে থাকবে।আরেকটি ভিন্ন চুক্তিতে ব্যাংক এই মর্মে গ্রাহকের সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবে যে গ্রাহক যদি তার দায়নির্ধারিত সময়ের মাঝে পরিশোধ করে দেয়, তবে ব্যাংক বস্তুটির মালিকানা তাকে দিয়ে দেবে।[3]
অনেকের মনে হতে পারে যে এখানে শর্তযুক্তভাবে একাধিক চুক্তি একটি চুক্তির মাঝে করা হচ্ছে। কিন্তুব্যাপারটি আসলে তা নয়, এটি একই চুক্তির বিভিন্ন অংশ।
[1] আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পোর্টফোলিওর প্রায় পুরোটাই বাই মোড দ্বারাপূর্ণ। লাভ ক্ষতির ভিত্তিতে এই অংশীদারিত্বের ব্যবসার মাঝেই ইসলামী ব্যাংকিং এর প্রাণশক্তি ওস্বাতন্ত্র্য নিহিত। কিন্তু তা খুব কম করাতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে মানুষকে বিভ্রান্ত বা সন্দিহানকরা খুব সহজ হয়।
[2] মাল যে গ্রাহককেই ভাড়া দিতে হবে এমন নয়, তৃতীয় পক্ষকেও দেয়া যেতে পারে।