ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. কর্তৃক তার সন্তান সালেহ এর বিয়ের পূর্বে তাকে উদ্দেশ্য করে প্রদত্ত দশটি উপদেশ শীর্ষক লেখাটি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর নামে মিথ্যাচার

🔴🔴 সতর্কবার্তা:
“ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. কর্তৃক তার সন্তান সালেহ-এর বিয়ের পূর্বে তাকে উদ্দেশ্য করে প্রদত্ত দশটি উপদেশ” শীর্ষক ফেসবুকে প্রচারিত লেখাটি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর নামে মিথ্যাচার:

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক দীনী ভাই-বোন “একজন নারী যেমন স্বামী পছন্দ করে” শিরোনামে নিম্নোক্ত লেখাটি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর নামে কোনরূপ সত্যতা যাচাই-বাছাই বা সঠিক উৎস অনুসন্ধান করা ছাড়াই পোস্ট করে চলেছেন:

লেখাটি নিম্নরূপ:
————————
একজন নারী যেমন স্বামী পছন্দ করে: (একটি অসাধারণ লেখা)। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহি.এর ছেলের বিয়ের সব ঠিকঠাক। একদিন সময় করে তিনি পুত্রকে ডেকে পাশে বসালেন। তার সঙ্গে আন্তরিক হলেন। এবং ছেলেকে) বললেন: ইয়া ওয়ালাদি! (হে আমার ছেলে) তুমি কি সুখী হতে চাও?
ছেলে: নাআম ইয়া আবী! (হ্যা অবশ্যই আব্বাজান)। তাহলে তোমাকে তোমার হবু জীবনসঙ্গিনীর জন্য দশটা বিষয় নিয়ে যেতে হবে।
ছেলে: কী সেগুলো? কোথায় পাওয়া যাবে?
পিতা: তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। কিনতেও হবে না। আমার কাছে, তোমার কাছে, সবার কাছেই সেগুলো আছে। সবাই ব্যবহার করতে পারে না, এই যা। তাহলে চলো দেখা যাক, অমূল্য সেই দশটা বিষয় কী?

প্রথম ও দ্বিতীয়: নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে। খুনসুটি রসিকতা পছন্দ করে। ন্যাকামো তাদের স্বভাব। তারা ভালোবাসার স্পষ্ট প্রকাশকে খুবই পছন্দ করে। তুমি একান্তে তোমার স্ত্রীর কাছে এসব প্রকাশে কখনোই কার্পণ্য করবে না। তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবে। যদি এসবে কার্পণ্য করো, তাহলে দেখবে কিছুদিন পরই তোমার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে। এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে।

তৃতীয়: নারীরা কঠোর কর্কশ রূঢ় বদমেজাজী রুক্ষস্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করে না। তোমার মধ্যে এমন কিছু থেকে থাকলে এখনই ঝেড়ে ফেল। কারণ তারা সুশীল ভদ্র উদার পুরুষ পছন্দ করে। তুমি তার ভালোবাসা অর্জনের জন্য তাকে আশ্বস্ত করার জন্য হলেও গুণগুলো অর্জন করো ৷

চতুর্থ: এটা খুব ভাল করে মনে রাখবে, তুমি তোমার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, পরিপাটি, গোছালো, সুরুচিপূর্ণ, সুগন্ধিময় দেখতে চাও, তোমার স্ত্রীও কিন্তু তোমাকে ঠিক তেমনটাই চায়। তাই সাবধান থাকবে, তার চাহিদা পূরণে যেন, কোনও অবস্থাতেই তোমার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়।

পঞ্চম: ঘর হলো নারীদের রাজ্য। একজন নারী নিজেকে সব সময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে। সে কল্পনায়, স্বপ্নে, বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে। সাজায়। রচনা করে। খুবই সাবধান থাকবে! কখনোই তোমার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেঙে দিতে যেও না। এমনকি তাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াসও চালাবে না।

ষষ্ঠ: নারীরা তার স্বামীকে মনেপ্রাণে সর্বান্তঃকরণে প্রবলভাবে স্বামীকে পেতে চায়। তবে পাশাপাশি বাপের বাড়িকেও হারাতে চায় না। হুঁশিয়ার থেকো বাবা! তুমি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিওনা। তুমি এ অন্যায় দাবী করে বসো না, হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তোমার বাবা-মাকে।

তুমি এ বিষয়টা চিন্তাতেও স্থান দিও না। তুমি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করলে, সে হয়তো চাপে পড়ে মেনে নিবে। কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা বোবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে। তোমার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে জেগে উঠবে।

সপ্তম: তুমি জানো, অনেক শুনেছ এবং পড়েছ নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাহু (বা পাঁজরের) বাঁকা হাড় থেকে। এই বক্রতা কিন্তু তার দোষ নয়, সৌন্দর্য। তুমি চোখের ভ্রু লক্ষ করে দেখেছো? সেটার সৌন্দর্যটা কোথায়? – বক্রতায়। একদম ঠিক কথা। বক্রতাই ভ্রুকে সুন্দর করে তোলে। ভ্রুটা যদি সোজা হতো, দেখতে সুন্দর লাগতো না। যদি তোমার স্ত্রী কোনও ভুল করে ফেলে, অস্থির হয়ে রেগেমেগে হামলা করে বসো না। উত্তেজিত অবস্থায় তাকে সোজা করতে যেও না, তাহলে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে যাবে। আর ভাঙা মানে বুঝই তো, তালাক-বিচ্ছেদ।
.
অষ্টম: তুমি হাদীসটা পড়োনি?
– কোনটা আব্বাজান?
– ঐ যে, যার ভাবার্থ হলো: নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। তার প্রতি অতীতে কৃত সব সদ্ব্যবহার-সদাচার ভুলে যায়। তুমি যদি তার প্রতি যুগ-যুগান্তরও সুন্দর আচরণ করো, হঠাৎ একদিন কোনক্রমে একটু রূঢ় আচরণ করে ফেলেছো, ব্যস অমনিই সে নাকের জল চোখের জল এক করে বলবে: ‘আমি তোমার কাছ থেকে কখনোই ভালো কিছু পাইনি।’
দেখো বাছা! তার এই আচরণে রুষ্ট হয়ো না। তার এই চপল স্বভাবের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি বিতৃষ্ণা এনো না। তার এই স্বভাবকে তুমি অপছন্দ করলেও, তার মধ্যে তুমি অনেক এমন কিছু পাবে যা তুমি শুধু পছন্দই করো না, বরং জানও লড়িয়ে দিতে পারো।

নবম: নারীদের শরীর-মনের অবস্থা সবসময় এক রকম থাকে না। এক সময় এক রকম থাকে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে। অনেক সময় মানসিক অস্থিরতাও বিরাজ করে। তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তা’আলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামায মাফ করে দিয়েছেন। রোযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য ও মেজাজ ঠিক হওয়া পর্যন্ত । তুমি তো রাব্বে কারীমের বান্দা। তুমিও তোমার রবের গুণে গুণান্বিত হও। রব্বানী হও। তুমি তোমার স্ত্রীর দুর্বল মুহূর্তগুলোতে তার প্রতি কোমল হবে। তোমার আব্দার আবেগ শরমে রেখো। তোমার রবও খুশি হবেন, তোমার রাব্বাহও খুশি হবে। কৃতজ্ঞ হবে।

দশম: সবসময় মনে রেখো, তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ, বিভিন্নভাবে তোমার মুখাপেক্ষী। তোমার সুন্দর আচরণের কাঙাল। তুমি তার প্রতি যত্নবান হবে। তার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ দিবে। তাকে আপন করে নিবে। তাহলে সে তোমার জন্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে। তাকে অনুপম সঙ্গী হিসেবে পাবে।
লেখা: হাম্বলী মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ।
——————–
✅ প্রকৃতপক্ষে ফেসবুকে প্রচারিত উপদেশমূলক এই লেখাটি গবেষকদের দৃষ্টিতে কোন সূত্রেই ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.-এর বলে প্রমাণিত নয়। তার রচিত কোন গ্রন্থেই এর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বরং তা পূর্বসূরী অন্য কোন আলেমের লেখা বলেও প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং তদন্ত করে যা পাওয়া গেছে তা হল, এটি সিরিয়ার হিমস শহরের অধিবাসী বিখ্যাত লেখক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ আল বুরায়জানি-এর লেখা। যিনি সেখানকার শরিয়া কোর্টের একজন বিচারক, শিক্ষক এবং মসজিদের খতিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
সুতরাং এ কথাগুলো ভালো হলেও তা ইমাম আহমেদ বিন হাম্বল রহ.-এর দিকে সম্বন্ধ করা বৈধ নয়। আল্লাহু আলম।
[তথ্যসূত্র: Islamqa]
আব্দুল্লাহিল হাদি বিন আব্দুল জলিল মাদানি
জুবাইল, সৌদি আরব।