আহলে-বাইত কারা? কুরআন ও হাদীসের আলোকে বর্ননা এবং আহলে-বাইত এর মর্যাদা প্রসঙ্গে শরীয়ত পর্যালোচনা

✍️ ▌আহলে-বাইত কারা? কুরআন ও হাদীসের আলোকে বর্ননা এবং আহলে-বাইত এর মর্যাদা প্রসঙ্গে শরীয়ত পর্যালোচনা

আহল আল-বাইত (আরবী : أهل البيت‎‎) একটি আরবীয় শব্দগুচ্ছ যার অর্থ গৃহের লোক, বা গৃহের পরিবার। ইসলামের প্রচারের পূর্বে ‘আহল আল-বাইত’ শব্দটি আরব উপদ্বীপে গোত্র শাসক পরিবারের জন্য’ ব্যবহৃত হতো। ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে এটি ইসলামের নবী পরিবারকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

অধিকন্তু বলা যায় যে – আহল বলা হয়, অধিকারী, পরিবার-পরিজন, বাসিন্দা ইত্যাদি। আর বাইত বলা হয়, ঘরকে। সুতরাং আহলে বাইত অর্থ হল, ঘরের অধিবাসী। ঘরের আত্মীয়-পরিজন ইত্যাদি। অতএব, আহলে বাইত তথা ঘরের অধিবাসী বলে মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে স্ত্রী। তারপর সন্তানাদী।

শাব্দিক অর্থে আহলে বাইত –

বাইত শব্দটি এসেছে আরবী بات يبيت থেকে। যার অর্থ হল, রাতে বসবাস করা। রাতে পুরুষ ব্যক্তির সাথে কে থাকে? সন্তান না স্ত্রী?

নিশ্চয় স্ত্রী। কারণ সন্তান বড় হয়ে গেলে আলাদা ঘরে বসবাস করে। স্বামীর সাথে রাতে বসবাস করে একমাত্রই স্ত্রী।

সে হিসেবে কারো আহলে বাইত বললে, এর দ্বারা প্রথম উদ্দেশ্য হয় উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী। সন্তান নয়।

তবে পরবর্তীতে সন্তানও আহলে বাইত অর্থে হয়, কারণ সন্তানও যেহেতু ব্যক্তির বাড়িতেই বসবাস করে থাকে। কিন্তু প্রথম অর্থ স্ত্রীকেই বুঝায়।

পবিত্র কুরআনের ভাষায় আহলে বাইত –

পবিত্র কুরআনে আহলে বাইত শব্দটি দুইবার এসেছে। প্রথমবার এসেছে কুরআনে কারীমের সূরা হুদে ইবরামীম (আ:) এর আলোচনায়। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী বলা যায় যে –

وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى قَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ فَمَا لَبِثَ أَنْ جَاءَ بِعِجْلٍ حَنِيذٍ (69) فَلَمَّا رَأَى أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُوا لَا تَخَفْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَى قَوْمِ لُوطٍ (70) وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ (71) قَالَتْ يَا وَيْلَتَى أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوزٌ وَهَذَا بَعْلِي شَيْخًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ (72) قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ (73

অর্থ : আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন!, কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন। তারা বলল-ভয় পাবেন না। আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরের ইয়াকুবেরও। সে বলল-কি দুর্ভাগ্য আমার! আমি সন্তান প্রসব করব? অথচ আমি বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ, এতো ভারী আশ্চর্য কথা। তারা বলল-তুমি আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে বিস্ময়বোধ করছ? হে আহলে বাইত তথা গৃহবাসীরা, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও প্রভুত বরকত রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশংসিত মহিমাময়। [সূরা হুদ-৬৯-৭৩]।

উপরোক্ত আয়াতে ইবরাহীম (আ:) এর স্ত্রী সারা (আ:) এর বিস্ময়বোধ করায় ফেরেস্তাগণ আহলে বাইত বলে সম্বোধন করে সান্তনা দিয়েছেন।

তাহলে কী দাঁড়াল? আল্লাহ তাআলার কুরআনের ভাষায় আহলে বাইত হলেন মূলত: স্ত্রীগণ।

তারপর কুরআনে কারীমের ৩৩তম সূরা আহযাবে আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীগণকে আহলে বাইত সম্বোধন করা হয়েছে। দেখুন-

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا (33

অর্থ : হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। [সূরা আহযাব – ৩২,৩৩]।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসীর (রহ:) বলেন, কুরআন মাজীদ নিয়ে যে চিন্তা-গবেষণা করে, সে কখনোই এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী গণ উপরোক্ত আয়াতে শামিল রয়েছেন। কেননা বাক্যের পূর্বাপর ধারা নবীর স্ত্রীদের সাথে সম্পৃক্ত।

এজন্যই উপরোক্ত আয়াতের পরই আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে।’ [সূরা আহযাব : ৩৪]

কুরআনে কেবল এ দু’টি স্থানেই আহলে বাইত শব্দ এসেছে। যে উভয় স্থানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আহলে বাইত বলে স্ত্রীগণকেই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। সন্তান নয়। তবে আহলে বাইতের মাঝে সন্তানও প্রবেশ করে তবে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথমেই নয়। প্রথমত : আহলে বাইত বলার দ্বারা স্ত্রীই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।

হাদীসের দৃষ্টিতে আহলে বাইত –

সহীহ মুসলিমে নিম্নোক্ত শব্দে উক্ত বর্ণনা এসেছে –

قَالَتْ عَائِشَةُ: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ، مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ، فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ، ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا، ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ، ثُمَّ قَالَ: ” {إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا} [الأحزاب: 33

অর্থ্যাৎ – সুতরাং কী বুঝা গেল? রাসূল সাঃ এর আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ একথা পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তান ও আলী (রা:) আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত একথা প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস দ্বারা। এ কারণেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বাইত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর সম্মানিতা স্ত্রীগণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তান ফাতিমা (রা:), হাসান (রা:), হুসাইন (রা:) এবং আলী (রা:) প্রমুখ।

নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো –

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বাইত নির্ধারণে আলেমগণ কয়েকটি অভিমত উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহল হচ্ছে – তাঁর স্ত্রীগণ, তাঁর সন্তানগণ, বনু হাশেম, বনু আব্দুল মোত্তালিব এবং এদের সকলের আযাদকৃত দাসগণ। কেউ কেউ বলেছেন: তারা হচ্ছেন – কুরাইশ গোত্র। কেউ কেউ বলেছেন: আলে-মুহাম্মদ হচ্ছেন – উম্মতে মুহাম্মদীর তাকওয়াবান ব্যক্তিরা। কেউ কেউ বলেন: সকল উম্মতে মুহাম্মদী।

অগ্রগণ্য মতানুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীবর্গ আহলে-বাইত এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। দলিল হচ্ছে – আল্লাহ্ তাআলা নবীর স্ত্রীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেয়ার পরে বলেন –

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

অর্থ – হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।

এছাড়া ফেরেশতারা ইব্রাহীম (আ:) এর স্ত্রী সারাকে বলেছিলেন :

رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ

অর্থ – হে আহলে বাইত, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও প্রভূত বরকত বর্ষিত হোক।

এবং যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা আগত আয়াতে লুত আলাইহিস সালাম এর স্ত্রীকে তাঁর আহল থেকে বাদ দিয়েছিলেন :

إِلَّا آلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ إِلَّا امْرَأَتَهُ

অর্থ – কিন্তু লূতের পরিবার-পরিজন। আমরা অবশ্যই তাদের সবাইকে বাঁচিয়ে নেব। তবে তার স্ত্রীকে নয়। [সূরা হিজর : ৫৯-৬০]

এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কারো স্ত্রী তার পরিবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচানার সারাংশে বলতে পারি যে – আমাদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঘরে থাকা সবাই আহলে বাইত।

আইলে বাইত এর মর্যাদা :

আহলে সুন্নাত তাদেরকে ভাল বাসে ও সম্মান করে। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ও সম্মান করারই অন্তর্ভুক্ত। এ শর্তসাপেক্ষে যে, তারা সুন্নাতের অনুসারী হবে এবং মিল্লাতের আদর্শের উপর স্থিতিশীল থাকবে, যেমনি ভাবে তাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীন আব্বাস রা. ও তাঁর সন্তানগণ এবং আলী (রা:) ও তাঁর সন্তানগণ প্রমুখ সে আদর্শের উপর ছিলেন। পক্ষান্তরে যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করবে এবং দ্বীনের উপর স্থিতিশীল থাকবে না, তাদের সাথে বন্ধত্ব – যদি তারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও থাকে – জায়েয হবে না।

অতএব আহলে বাইত সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ভূমিকা ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তারা আহলে বাইতের দ্বীনদার ও সঠিক পথের উপর অবিচল ব্যক্তিদেরকে খুবই মহব্বত করে থাকে এবং আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করে এবং দ্বীনের আদর্শ হতে চ্যুত হয়ে যায়, তাদের থেকে দূরে সরে যায়। কেননা অবিচলভাবে আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণ অনুসারী না হওয়া পর্যন্ত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা তার কোন কাজেই আসবে না। আবু হোরায়রা রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যখন এ আয়াত নাযিল হয়: ‘আর তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন কর।’[সূরা শুয়ারা : ২১৪]

তখন তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন: ‘হে কুরাইশগণ! (অথবা অনুরূপ কোন শব্দে তিনি সম্বোধন করেছিলেন) নিজেদেরকে ক্রয় করে নাও। আল্লাহ তাআলার সামনে আমি তোমাদের কোন কাজেই আসব না। হে আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন উপকারে আসব না। হে রাসূলুল্লাহর ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর সামনে আপনার জন্য কিছুই করতে পারব না। হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! আমার সম্পত্তি হতে যা চাও চেয়ে নাও। তবে আল্লাহর কাছে আমি তোমার কোনই কাজেই আসব না’ [সহীহ বুখারী]।

অনুরূপভাবে আহলে সুন্নাত সে সব নাসেবী লোকদের ভ্রান্ত পথ থেকেও মুক্ত, যারা দ্বীনের প্রকৃত অনুসারী আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে থাকে এবং তাদের প্রতি কটূক্তি আরোপ করে থাকে।একই ভাবে তারা সে সব বেদআতী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের ভ্রষ্টতা থেকেও পবিত্র, যারা আহলে বাইতকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাদেরকে রব হিসাবে স্থির করে।এ ক্ষেত্রে এবং এ ছাড়া আর সব ব্যাপারেও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ন্যায় সংগত নীতি ও সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে – যাতে কোন বাড়াবাড়ি ও ত্রুটি কোনটাই নেই এবং আহলে বাইতও অন্যান্যদের ব্যাপারেও অধিকার ক্ষুণ্ণ ও অতিরঞ্জন কোনটাই করা হয়নি। দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আহলে বাইতের লোকজন তাদের নিজেদের সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করার প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। এবং বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনকারীদের থেকে নিজেরা মুক্ত থেকেছেন। আমিরুল মুমিনীন আলী রা. তার নিজের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কারীদেরকে অগ্নিদগ্ধ করেছেন এবং ইবনে আব্বাস রা. তাদেরকে হত্যা করা সমর্থন করেছেন। অবশ্য অগ্নিদ্ধ করার বদলে তরবারী দ্বারা হত্যা করার প্রবক্তা ছিলেন তিনি। আলী (রা:) অতিরঞ্জনকারীদের নেতা আব্দুল্লা বিন সাবাকে হত্যা করার জন্য খুঁজে ছিলেন। কিন্তু সে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে লুক্কায়িত রাখে।

শিয়াদের দৃষ্টিতে আহলে বাইত এর ধারণা প্রসঙ্গে পর্যালোচনা –

কিন্তু শিয়া ধর্মাবলম্বীরা বলে থাকে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত শুধু রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তানগণ এবং আলী (রা:)।

তারা এ আক্বিদা পোষণ করে পবিত্র কুরআনের আয়াত অস্বিকার করছে। আর কুরআনের কোন একটি বিধান অস্বিকারকারীই মুসলমান থাকতে পারে না।

আমরা কুরআনকে যেমন দলীল মানি। তেমনি হাদীসকেও দলীল মানি। কুরআন অস্বিকারকারীকে যেমন কাফির বিশ্বাস করি, হাদীস অস্বিকারকারীকেও কাফির বিশ্বাস করি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়াদের কুফরী থেকে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আমলকে হিফাযাত করুন।

আপনাদের শুভাকাঙিক্ষ –

সাজ্জাদ সালাদীন [সঙ্কলক ও লেখক]
১১ই মুহাররম, ১৪৪১ হিজরী
২৭শে ভাদ্র, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
১১ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং। 🧚‍♀️🧚‍♀️
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬