আল্লাহ জাহান্নামের জন্য কিছু মানুষ সৃষ্টি করেছেন এই হাদীসের অর্থ

প্রশ্ন: হাদীসে এসেছে: “আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য কিছু মানুষ সৃষ্টি করেছেন।”এই হাদীসের অর্থ কী? তবে কি এর মানে এই যে তারা কুফরি করতে বাধ্য এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থেকে বঞ্চিত?
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
▪️প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর মহান আল্লাহ তা‘আলা কাউকেই জোরপূর্বক না আনুগত্যে বাধ্য করেন, না গুনাহে ঠেলে দেন। তবে তিনি তাঁর বান্দাদের আনুগত্যের আদেশ দেন,গুনাহ থেকে নিষেধ করেন, ঈমানকে পছন্দ করেন এবং কুফরকে অপছন্দ করেন। যেমন তিনি বলেছেন:(إِنْ تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْ وَلَا يَرْضَى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَ وَإِنْ تَشْكُرُوا يَرْضَهُ لَكُمْ)”যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তার বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে তিনি তোমাদের জন্য তা-ই পছন্দ করেন।(সূরা যুমার: ৭) আর যে ব্যক্তি কুফরি করে, সে নিজের ইচ্ছায়ই করে। যদি তাকে জোর করা হতো, তবে সে তো অজুহাত দেখাতে পারতো,এবং তার কোনো জবাবদিহি থাকত না। আর কুফরের কারণে সে শাস্তির যোগ্য হতো না। আল্লাহ বলেছেন:(وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا وَإِنْ يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا * إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا)”আর বলুন, সত্য তোমাদের রব-এর কাছ থেকে; কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে কুফরী করুক। নিশ্চয় আমরা যালেমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি আগুন, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; এটা নিকৃষ্ট পানীয়! আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে–আমরা তো তার শ্ৰমফল নষ্ট করি না- যে উত্তমরূপে কাজ সম্পাদন করেছে।”(সূরা কাহফ: ২৯-৩০) আর তিনি আরও বলেছেন:وَ هَدَیۡنٰهُ النَّجۡدَیۡنِ”আর আমরা তাকে দুটি পথ দেখিয়েছি।”(সূরা-বালাদ: ১০)
.
ইমাম তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরে বলেছেন:
يقول تعالى ذكره: وهديناه الطريقين، ونجد: طريق في ارتفاع.واختلف أهل التأويل في معنى ذلك، فقال بعضهم
عُنِ بذلك: نَجْد الخير، ونَجْد الشرّ، كما قال: (إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا).ذكر من قال ذلك:حدثنا أبو كُرَيب، قال: ثنا وكيع، عن سفيان، عن عاصم، عن زرّ، عن عبد الله [بن مسعود] (وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ) قال: الخير والشرّ”
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমরা তাকে দুইটি পথ দেখিয়েছি। আর ‘নাজদ’ অর্থ উচ্চ ভূমির পথ।
তাফসীরবিদগণ এর অর্থ নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন: এখানে উদ্দেশ্য হলো: কল্যাণের পথ ও অকল্যাণের পথ, যেমনটি আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘নিশ্চয়ই আমি তাকে পথ দেখিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, নয় সে অকৃতজ্ঞ হবে’। যারা এ কথা বলেছেন তাদের মধ্যে থেকে উল্লেখ করা হলো: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আবু কুরায়ব, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ওয়াকী‘, তিনি বলেছেন: আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান, তিনি বলেছেন: ‘আসিম থেকে, তিনি বলেছেন: যুরআ থেকে, তিনি বলেছেন: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে তিনি বলেছেন: (আর আমরা তাকে দুটি পথ দেখিয়েছি) এর অর্থ হলো: ভালো (কল্যাণ) এবং মন্দ (অকল্যাণ)।”(তাফসীরে তাবারী; খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ৪৩৭)
.
অতএব, মানুষ তার কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন। আর এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিই তাকলিফ (দায়িত্ব) আরোপের মূলভিত্তি। তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা জানেন মানুষ কী নির্বাচন করবে, এবং তা তিনি তার সৃষ্টি হওয়ার আগেই লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি জানেন কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে, কিন্তু কাউকেই তিনি এমন কোনো কাজে বাধ্য করেন না—যা জান্নাত বা জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
.
▪️দ্বিতীয়ত: মু’মিন জননী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একটি নাবালক ছেলে মারা গেল আমি বললাম, তার জন্যে সৌভাগ্য। সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের থেকে এক চড়ুই পাখি (অর্থাৎ-নির্দ্বিধায় চলাচল করবে)। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তা’আলা তৈরি করেছেন জান্নাত এবং তৈরি করেছেন জাহান্নাম। এরপর তিনি এ জান্নাতের জন্য যোগ্য নিবাসী এবং জাহান্নামের জন্য যোগ্য নিবাসী তৈরি করেছেন।”(সহিহ মুসলিম হা/৬৬৬০) এই হাদীসে তিনি (আল্লাহ) জাহান্নামের জন্য কিছু লোক সৃষ্টি করেছেন এর অর্থ হলো,তাদের চুড়ান্ত পরিণতি জাহান্নাম হবে; এর মানে এই নয় যে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এখানে للنار (লিন্নার) এর লামের অর্থ হলো পরিণতি ও চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য, কারণ এর অর্থ নয়।
.
মনাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) তার আত তানবীর শারহুল জামিউস সগীর গ্রন্থে বলেন:واعلم أنه تعالى ما خلق الخلق إلا لعبادته، كما قال: وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ، فاللام هنا في الحديث لام الصيرورة والعاقبة، لا لام العلة، مثلها في قوله تعالى: وَلَقَدْ ذَرَأْنا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالإِنسِ “জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন, যেমনটি তিনি বলেন: ‘আর আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’। সুতরাং, হাদিসে ‘লাম’ (اللام) অর্থ হলো ‘চূড়ান্ত পরিণতি ও গন্তব্য’, কারণ এর অর্থে নয়।যেমনটি আল্লাহ তায়ালার এই বাণীতেও রয়েছে:”আর আমরা তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি;।(সূরা আরাফ: ১৭৯; আত তানবীর শারহুল জামিউস সগীর; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩০৮)
.
ইমাম তাবারী (রহিমাহুল্লাহ) আল্লাহ তায়ালার এই বাণীটির তাফসীরে বলেন:”আর আমরা তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি;।(সূরা আরাফ: ১৭৯) এটা আল্লাহর জ্ঞান তাদের ব্যাপারে পূর্বেই সম্পূর্ণ হওয়া যে, তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরী করার কারণে অবশেষে সেখানে (জাহান্নামে) গিয়ে পৌঁছাবে।”(তাফসীরে তাবারী; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ২৭৮)
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাদের থেকে এবং তাদের শাস্তি দেওয়া থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী। যেমনটি তিনি বলেন:(مَا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَآمَنْتُمْ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا) “যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও এবং ঈমান আনো, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে কী করবেন? আর আল্লাহ তো পরম কৃতজ্ঞ, মহাজ্ঞানী।” (সূরা নিসা: ১৪৭)
.
ইমাম তাবারী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরে-এ বলেন:
جل ثناؤه بقوله:”ما يفعل الله بعذابكم إن شكرتم وآمنتم”، ما يصنع الله، أيها المنافقون، بعذابكم، إن أنتم تُبتم إلى الله، ورجعتم إلى الحق الواجب لله عليكم، فشكرتموه على ما أنعم عليكم من نعمه في أنفسكم وأهاليكم وأولادِكم، بالإنابة إلى توحيده، والاعتصام به، وإخلاصكم أعمالَكم لوجهه، وترك رياء الناس بها، وآمنتم برسوله محمد صلى الله عليه وسلم فصدَّقتموه، وأقررتم بما جاءكم به من عنده فعملتم به؟ يقول: لا حاجة بالله أن يجعلكم في الدَّرك الأسفل من النار، إن أنتم أنبتم إلى طاعته، وراجعتم العمل بما أمركم به، وترك ما نهاكم عنه؛ لأنه لا يجتلب بعذابكم إلى نفسه نفعًا، ولا يدفع عنها ضُرًّا، وإنما عقوبته من عاقب من خلقه، جزاءٌ منه له على جرَاءته عليه، وعلى خلافه أمره ونهيه، وكفرانِه شكر نعمه عليه؛ فإن أنتم شكرتم له على نعمه، وأطعتموه في أمره ونهيه، فلا حاجة به إلى تعذيبكم، بل يشكر لكم ما يكون منكم من طاعةٍ له وشكر، بمجازاتكم على ذلك بما تقصر عنه أمانيكم، ولم تبلغه آمالكم”
“আল্লাহর বাণী ‘তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে ও ঈমান আনলে, আল্লাহ তোমাদের শাস্তি দিয়ে কি করবেন?’ এর অর্থ হলো: হে মুনাফিকরা! তোমরা যদি আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং তোমাদের ওপর তাঁর যে নানান নেয়ামত দিয়েছেন নিজেদের মধ্যে, তোমাদের পরিবার ও সন্তানদের মধ্যে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো,তার একত্ববাদের দিকে ফিরে আসো, তার সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্ক রাখো, আমলগুলো তার জন্য খাঁটি করো, মানুষের দেখানোর জন্য নয়,আর তার রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি ঈমান আনো, তাঁকে সত্য বলে স্বীকার করো এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর আনা বিষয়গুলো মানো ও সে অনুযায়ী কাজ করো,তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে কী করবেন? তিনি বলেন: তাহলে আল্লাহর তোমাদের জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে নিক্ষেপ করার কোনো প্রয়োজন নেই।কারণ,আল্লাহ তোমাদের শাস্তি দিয়ে নিজের কোনো লাভ করবেন না, কিংবা কোনো ক্ষতি দূর করবেন না। বরং তাঁর শাস্তি কেবল সেই সৃষ্টির প্রতি প্রতিফল যিনি তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় করেছে, তাঁর আদেশ অমান্য করেছে, তাঁর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা অস্বীকার করেছে। কিন্তু যদি তোমরা তাঁর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলো, তবে আল্লাহর তোমাদের শাস্তি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং তিনি তোমাদের আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার প্রতিদান দেবেন এমনভাবে, যা তোমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি হবে। আল্লাহ মানুষকে এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি যে, তাদের জাহান্নামে শাস্তি দেবেন। তবে যারা কুফরী ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, তাদের পরিণতি অবশ্যই জাহান্নাম। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, কে তাঁর আনুগত্য করবে এবং জান্নাতে যাবে, আর কে কুফরী করবে ও জাহান্নামে প্রবেশ করবে তিনি পূর্ব থেকেই জানেন।”(তাফসীরে তাবারি; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৩৪২)
.
▪️তৃতীয়ত: যে ব্যক্তি নেক আমল করে, তারপর তার সমাপ্তি হয় জাহান্নামের লোকদের আমলের মাধ্যমে—সে আসলে সেই ব্যক্তি, যে নেক আমল করে লোক দেখানোর জন্য (রিয়া) এবং কপটতার সাথে (নিফাক), যেমন হাদীসে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে এসেছে।সাহল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মুশরিকরা মুখোমুখী হলেন। তাদের মধ্যে তুমুল লড়াই হল। (শেষে) সকলেই আপন আপন সেনা ছাউনীতে ফিরে গেল। মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে মুশরিকদের কোন একাকী কিংবা দলবদ্ধ কোন শত্রুকেই রেহাই দেয়নি বরং তাড়িয়ে নিয়ে তরবারি দ্বারা হত্যা করেছে। তখন বলা হল “হে আল্লাহ্‌র রসূল! অমুক লোক আজ যতটা ‘আমল করেছে অন্য কেউ ততটা করতে পারেনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে ব্যক্তি জাহান্নামী। তারা বলল, তা হলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতী হবে যদি এ ব্যক্তিই জাহান্নামী হয়? তখন কাফেলার মধ্য থেকে একজন বলল, অবশ্যই আমি তাকে অনুসরণ করে দেখব (তিনি বলেন) লোকটির দ্রুত গতিতে বা ধীর গতিতে আমি তার সঙ্গে থাকতাম। শেষে, লোকটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে তীব্র যন্ত্রণায় সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করে তার তরবারির বাঁট মাটিতে রাখলো এবং ধারালো দিক নিজের বুকের মাঝে রেখে এর উপর সজোরে চেপে ধরে আত্মহত্যা করল। তখন (অনুসরণকারী) সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহ্‌র রসূল। তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? তিনি তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সব ঘটনা জানালেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেউ কেউ জান্নাতবাসীদের মতো ‘আমল করতে থাকে আর লোকজন তাকে তেমনই মনে করে থাকে অথচ সে জাহান্নামী। আবার কেউ কেউ জাহান্নামীর মতো ‘আমল করে থাকে আর লোকজনও তাকে তাই মনে করে অথচ সে জান্নাতী।”(সহিহ বুখারী হা/৪২০৭; সহীহ মুসলিম হা/১১২)
.
আর যে ব্যক্তি আন্তরিকতা ও ঈমানের ভিত্তিতে জান্নাতবাসীদের আমল করে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এত ন্যায়পরায়ণ, মহামহিম ও পরম দয়ালু যে, তিনি তাকে জীবনের অন্তিম প্রান্তে পরিত্যাগ করেন না। বরং এমন মানুষই আল্লাহর তাওফীক, সঠিক পথে অটল থাকার দিকনির্দেশনা ও দৃঢ়তার প্রকৃত উপযুক্ত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন:یُثَبِّتُ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِالۡقَوۡلِ الثَّابِتِ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ فِی الۡاٰخِرَۃِ ۚ وَ یُضِلُّ اللّٰهُ الظّٰلِمِیۡنَ ۟ۙ وَ یَفۡعَلُ اللّٰهُ مَا یَشَآءُ”যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদেরকে সুদৃঢ় বাক্যের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যারা যালিম আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করেন”।(সূরা ইবরাহীম: ২৭) তিনি আরও বলেন:وَ الَّذِیۡنَ جَاهَدُوۡا فِیۡنَا لَنَهۡدِیَنَّهُمۡ سُبُلَنَا ؕ وَ اِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ “আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমরা তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথসমূহের হিদায়াত দিব।আর নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের সঙ্গে আছেন।”(সূরা আনকাবূত:৬৯)
এবং আরও বলেছেন:اِنَّهٗ مَنۡ یَّـتَّقِ وَ یَصۡبِرۡ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ”নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ধৈর্যধারণ করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুহসিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।”(সূরা ইউসুফ: ৯০) এবং আরও বলেন:یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِنِعۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَضۡلٍ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ لَا یُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ”তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্য এবং এজন্য যে আল্লাহ মুমিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।”(আলে ইমরান :১৭১)
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির,আল-ফাক্বীহ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] তার আল-ফাওয়ায়েদ গ্রন্থে বলেন:
وأما كون الرجل (يعمل بعمل أهل الجنة حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراع فيسبق عليه الكتاب) ، فإن هذا عمل أهل الجنة فيما يظهر للناس ، ولو كان عملا صالحا مقبولا للجنة ، قد أحبه الله ورضيه : لم يبطله عليه .وقوله : ( لم يبق بينه وبينها إلا ذراع ) يشكل على هذا التأويل، فيقال: لما كان العمل بآخره وخاتمته لم يصبر هذا العامل على عمله حتى يتم له، بل كان فيه آفة كامنة ونكتة خُذل بها في آخر عمره، فخانته تلك الآفة والداهية والباطنة في وقت الحاجة، فرجع إلى موجبها وعملت عملها .ولو لم يكن هناك غش وآفة لم يقلب الله إيمانه كفرا مع صدقه فيه وإخلاصه بغير سبب منه يقتضي إفساده عليه، والله يعلم من سائر العباد ما لا يعلمه بعضهم من بعض”
“যে বর্ণনায় এসেছে যে একজন মানুষ জান্নাতবাসীদের আমল করে, এমনকি তার সাথে জান্নাতের মাঝে শুধু এক হাত দূরত্ব থাকে, কিন্তু তার আগে লিখিত তাকদীর কার্যকর হয়ে যায় তাহলে এর অর্থ হলো: এটি জান্নাতবাসীদের আমল বলে মানুষের নিকট প্রকাশ পায়। কিন্তু যদি তার আমল সত্যিই জান্নাতের উপযোগী সৎ আমল হতো, যা আল্লাহ ভালোবাসেন ও সন্তুষ্ট হন, তবে আল্লাহ তা নষ্ট করে দিতেন না। আর হাদীসে বলা হয়েছে: ‘তার সাথে জান্নাতের মাঝে আর শুধু এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে’ এটা এই ব্যাখ্যায় আপাতদৃষ্টিতে সমস্যাজনক মনে হতে পারে। তবে বলা হয়: যেহেতু আমলের আসল বিচার হয় শেষাংশ দ্বারা, তাই এ কর্মী তার আমলে অবিচল থাকতে পারেনি। বরং তার মধ্যে গোপন এক রোগ ও অন্তর্নিহিত এক দুর্বলতা ছিল, যা জীবনের শেষ সময়ে তাকে ব্যর্থ করে দেয়। তখন সেই গোপন দোষ ও লুকানো বিপদ তার কাছে প্রকাশ পায়, এবং সে তার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে যায় ও সেই অনুযায়ী কাজ করে ফেলে। যদি তার ভেতরে কোনো প্রতারণা বা রোগ না থাকত, তবে আল্লাহ তার ঈমানকে কুফরে রূপান্তরিত করতেন না, অথচ সে এতে সত্যবাদী ও আন্তরিক ছিল এমনটা কোনো কারণ ছাড়া হতো না। আল্লাহ তো বান্দাদের ব্যাপারে জানেন যা তাদের একজন আরেকজন সম্পর্কে জানে না।”(ইবনুল কাইয়্যিম আল ফাওয়াইদ; পৃষ্ঠা: ১৬৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:إن حديث ابن مسعود : (حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراع) أي: بين الجنة، ليس المراد أن عمله أوصله إلى هذا المكان حتى لم يبق إلا ذراع، لأنه لو كان عمله عمل أهل الجنة حقيقة من أول الأمر، ما خذله الله عز وجل؛ لأن الله أكرم من عبده، عبد مقبل على الله، ما بقي عليه والجنة، إلا ذراع يصده الله؟ !هذا مستحيل، لكن المعنى: يعمل بعمل أهل الجنة ، فيما يبدو للناس، حتى إذا لم يبق على أجله إلا القليل: زاغ قلبه، والعياذ بالله -نسأل الله العافية-. هذا معنى حديث ابن مسعود. إذاً: لم يبق بينه وبين الجنة إلا ذراع بالنسبة لأجله، وإلا فهو من الأصل ما عِمِل عَمَلَ أهلِ الجنة -نعوذ بالله من ذلك، نسأل الله ألا يزيغ قلوبنا- عامل وفي قلبه سريرة خبيثة أودت به إلى أنه لم يبق إلا ذراع ويموت” ا”ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে: ‘যতক্ষণ না তার সাথে জান্নাতের মাঝে এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে’ এখানে জান্নাতের নিকটে পৌঁছানো বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, তার আমল তাকে এমন একটি জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে যে জান্নাত থেকে মাত্র এক হাত দূরত্বে থাকতে সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। কারণ, যদি সত্যিই তার আমল প্রথম থেকেই জান্নাতবাসীদের আমল হতো, তাহলে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা তাকে ব্যর্থ করতেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দার চেয়েও অধিক দয়ালু। একজন বান্দা যদি আল্লাহর দিকে মনোযোগী থাকে, আর জান্নাতের সাথে তার মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকতে আল্লাহ কি তাকে ফিরিয়ে দেবেন? এটা অসম্ভব। কিন্তু এর অর্থ হলো: সে (মানুষের দৃষ্টিতে) জান্নাতিদের কাজ করে, মানুষের দৃষ্টিতে ও তাই মনে হয়,যতক্ষণ না তার জীবনের সময় থেকে অল্পই বাকি থাকে; তখন তার অন্তর (পথভ্রষ্ট) বিপথগামী হয়ে যায় আল্লাহ আমাদের সেই অবস্থা থেকে রক্ষা করুন আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই। এটাই ইবনে মাসউদের হাদীসের অর্থ।অতএব,তার মৃত্যু পর্যন্ত জান্নাতের সাথে তার মধ্যে কেবল এক হাত পরিমাণ দূরত্বই অবশিষ্ট থাকে,কিন্তু মূল কথা হলো, সে কখনোই জান্নাতবাসীদের আমল করেনি—আমরা আল্লাহর কাছে এর থেকে আশ্রয় চাই, এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের অন্তরকে পথভ্রষ্ট না করেন। সে বাহ্যিকভাবে আমল করেছে, অথচ তার অন্তরে ছিল একটি খারাপ গোপন অভিপ্রায়, যা তাকে ধ্বংস করেছে এমনকি মৃত্যু অবধি এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকা অবস্থায়ও।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী; লিক্বা নং-১৩/১৪)
.
তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন:
وأما حديث ابن مسعود رضي الله عنه: (إن أحدكم ليعمل بعمل أهل الجنة حتى ما يكون بينه وبينها إلا ذراع فيسبق عليه الكتاب فيعمل بعمل أهل النار فيدخلها)؛ فهذا يوجب الحذر من أن يعمل الإنسان بعمل أهل الجنة، فيما يبدو للناس، دون ما في باطن قلبه. ويدل لهذا ما ثبت في الصحيح أيضاً: من أن رجلاً كان مع النبي صلى الله عليه وسلم في غزوة، وكان لا يدع للعدو شاذة ولا فاذة إلا قضى عليها ، فقال النبي صلى الله عليه وسلم (هذا من أهل النار) ، فعظم ذلك على الصحابة ، وشق عليهم كيف يكون هذا من أهل النار وهو على هذه الحال! ثم قال أحد الصحابة : والله لألزمنه -ألزم هذا الرجل وأمشي معه- حتى أنظر ماذا يكون من أمره ، يقول: فأصابه سهم -أصاب هذا الرجل الشجاع الجيد سهم- فغضب وجزع ثم أخذ بسيفه ووضعه على بطنه واتكأ عليه حتى خرج السيف من ظهره ، فمات ، فجاء الرجل الذي كان ملازماً له إلى النبي صلى الله عليه وسلم وقال: أشهد أنك رسول الله ، قال: (وبم ؟) قال: إن الرجل الذي قلت لنا إنه من أهل النار صارت خاتمته كذا وكذا -نعوذ بالله من سوء الخاتمة- فقال النبي صلى الله عليه وسلم: (إن الرجل ليعمل بعمل أهل الجنة فيما يبدو للناس وهو من أهل النار). وعلى هذا؛ فيكون حديث عبد الله بن مسعود رضي الله عنه فيه التحذير من سوء الطوية وفساد النية ، وأن الإنسان يجب عليه إذا عمل بعمل أهل الجنة أن يكون عمله مبنياً على إخلاص وتوحيد، حتى يكون نافعاً له عند وفاته ومفارقته الدنيا
“আর ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীস সম্পর্কে: তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীদের আমল করতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে এক হাত দূরত্ব ছাড়া আর কিছু না থাকে, তখন (পূর্ব নির্ধারিত) তাকদীর এগিয়ে আসে এবং সে জাহান্নামীদের কাজ করে, ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে।” এই হাদীস মানুষের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। অর্থাৎ, সে যেন এমন কাজ না করে, যা বাহ্যিকভাবে মানুষের চোখে জান্নাতবাসীদের কাজের মতো মনে হয়, অথচ তার অন্তরের ভেতরে সেই সত্যিকারের বাস্তবতা না থাকে। এর প্রমাণ হলো সহীহ হাদীসে বর্ণিত ঘটনা: রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সঙ্গে এক ব্যক্তি একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, সে শত্রুর বিরুদ্ধে এমনভাবে লড়ছিল যে, তাদের কাউকে ছেড়ে দিতেন না—ছোট-বড় সবাইকেই দমন করত। তখন নবী ﷺ বললেন: ‘সে জাহান্নামের লোক। এ কথা সাহাবীগণের কাছে অত্যন্ত বড় ও বিস্ময়কর মনে হলো। তারা খুবই বিচলিত হলো, কীভাবে এ ব্যক্তি জাহান্নামের লোক হতে পারে অথচ সে এত সাহসী! তখন এক সাহাবী বললেন: আল্লাহর কসম! আমি এই লোকটির সঙ্গেই থাকব, তাকে অনুসরণ করব, দেখি তার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন: সেই সাহসী লোকটি একটি তীরের আঘাতে আহত হলো। তখন সে রেগে গেল, ধৈর্য্য হারালো, তারপর তার তলোয়ার নিয়ে পেটে রাখল এবং তাতে ভর দিলো, ফলে তলোয়ার পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেল এবং সে মারা গেল। তখন যে সাহাবী তাকে অনুসরণ করছিলেন, তিনি এসে নবী ﷺ-কে বললেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। নবী (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন: ‘কিসের ভিত্তিতে? তিনি বললেন: আপনি যাকে আমাদের সম্পর্কে বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামের লোক, তার শেষ পরিণতি এ রকম হলো। (আমরা আল্লাহর কাছে সুসমাপ্তি প্রার্থনা করি।)। তখন নবী (ﷺ) বললেন: মানুষের দৃষ্টিতে একজন জান্নাতবাসীদের আমল করে, অথচ সে জাহান্নামের লোক। অতএব ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদীসটি মানুষকে সতর্ক করে দেয় খারাপ অন্তরের উদ্দেশ্য ও নষ্ট নিয়তের ব্যাপারে। তাই মানুষের কর্তব্য হলো যখন সে জান্নাতবাসীদের কাজ করবে, তখন যেন তার কাজটি হয় খাঁটি আন্তরিকতা (إخلاص) ও তাওহীদের ভিত্তিতে। কেননা এভাবেই তার কাজ তার মৃত্যুর সময় এবং দুনিয়া থেকে বিদায়ের মুহূর্তে প্রকৃতপক্ষে তার জন্য কল্যাণকর হবে।”(ইবনু উসাইমীন, লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১২/২৩) শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, একজন ব্যক্তি সারাজীবন ভালো কাজ করতে থাকে, কিন্তু যদি তার অন্তরের উদ্দেশ্য খারাপ হয় বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পরিবর্তে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে সেই আমল তাকে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবে না। বাহ্যিকভাবে সে জান্নাতবাসীদের মতো মনে হলেও, তার অন্তরের গোপন পাপাচার বা কপটতা তাকে শেষ মুহূর্তে পথভ্রষ্ট করে। আমরা যেন সর্বদা আমাদের নিয়ত বা উদ্দেশ্যকে পরিশুদ্ধ করি এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমল করি, এই শিক্ষাই এখানে দেওয়া হয়েছে।
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ শিক্ষাই গ্রহণ করি যে, একজন মুমিনের দৃঢ় বিশ্বাস থাকা উচিত আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণরূপে সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী, পরম করুণাময়, ন্যায়পরায়ণ ও জুলুম করা থেকে পবিত্র। তিনি কোনো ধরনের জুলুম করেন না, কাউকে কুফরী কিংবা গুনাহে বাধ্য করেন না। বরং তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, সর্বজ্ঞ, যিনি পূর্ব থেকেই জানেন কার পরিণাম জান্নাতে হবে আর কার গন্তব্য হবে জাহান্নাম। জাহান্নামের জন্য এমন এক দল রয়েছে যারা অবশেষে সেখানে প্রবেশ করবে, আর জান্নাতের জন্য এমন একদল রয়েছে যারা সেখানে অনন্ত সুখ-শান্তি ভোগ করবে। আমরা আল্লাহর দরবারে দো‘আ করি তিনি যেন আমাদেরকে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখেন।আরও বিস্তারিত অধ্যয়নের জন্য দেখা যেতে পারে ড.আব্দুল করীম জাইদান (রহিমাহুল্লাহ)-এর মূল্যবান গবেষণা: “ক্বদা ও ক্বদর বিষয়ে ঈমান এবং তার মানুষের আচরণের উপর প্রভাব”।গৃহীত ইসলাম সওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-২৯৯৬১৯)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফিজাহুল্লাহ।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি সৌদি আরব।
Share: