আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না এ কথা কতটুকু সত্য

আল্লাহ তায়ালার যে অর্থে عالم الغيب (নিজের থেকে নিজে সব কিছু জানেন) সে অর্থে কোন নবীরাসূলঅলীবুযুর্গعالم الغيب নন। তবে আল্লাহ তাআলা যাকে যতটুকু জানানতিনি ততটুকুই জানেন। আর এভাবে যিনি জানেন তাকে পরিভাষায় عالم الغيب বলা হয় না। যখন নবী-রাসূলগণই عالم الغيب ননতখন গণকজ্যোতিষীটিয়া পাখী ওয়ালা,জ্বীন-শয়তান বা কোন অলী-বুযুর্গকোন পীর ফকরি  হুজুর عالم الغيب হওয়ার বা গায়েব জানার প্রশ্নই আসে না।

জাহিলী যুগে যেভাবে গণকজ্যোতিষী এবং এক শ্রেণীর পীর-বুযুর্গ গায়েব জানার দাবী করতো বর্তমানেও এক শ্রেণীর জ্যোতিষীগণকটিয়া পাখী ওয়ালা এবং এক শ্রেণীর ভন্ড আলেম যারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অতীতবর্তমান,ভবিষ্যত সবকিছু জানে বলে দাবী করেতারা মূলতঃ কুরআন এবং সহীহ হাদীস থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরে গেছে। কেননাعالم الغيب (অদৃশ্যের জ্ঞান) একমাত্র আল্লাহ তাআলায় জানেন। ইরশাদ হচ্ছেঃ

“ আপনি বলুন: আমি তোমাদেরকে বলি না যেআমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যেআমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করিযা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিন: অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারেতোমরা কি চিন্তা কর না ? (আনআম৬: ৫০)

তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। 
স্থলে ও জলে যা আছেতিনিই জানেন।
কোন পাতা ঝরে নাকিন্তূ তিনি তা জানেন।
কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না
এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় নাকিন্তূ তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”। (আনআম৬: ৫৯)

“তিনিই সঠিকভাবে নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেন: হয়ে যাঅত:পর হয়ে যাবে। তাঁর কথা সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবেসেদিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত।তিনিই প্রজ্ঞাময়সর্বজ্ঞ”। (আনআম৬: ৭৩)

“আপনি বলে দিনআমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নইকিন্তূ যা আল্লাহ চান।আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতামতাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতামফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য  (আরাফ৭: ১৮৮)

“তারপর তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে সেই গোপন ও আগোপন বিষয়ে অবগত সত্তার নিকট। তিনিই তোমাদের বাতলে দেবেন যা তোমরা করছিলে”। (তাওবা৯: ৯৪)

“আর তুমি(হে নবী) বলে দাওতোমরা আমল করে যাওতার পরবর্তীতে আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ এবং দেখবেন রসূল ও মুসলমানগণ। তাছাড়া তোমরা শীঘ্রই প্রত্যাবর্তিত হবে তাঁর সান্নিধ্যে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত। তারপর তিনি জানিয়ে দেবেন তোমাদেরকে যা করতে”। (তাওবা৯: ১০৫)

“তারা বলেতাঁর কাছে তাঁর পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ এল না কেনবলে দাও গায়েবের কথা আল্লাহই জানেন। আমি ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম”। (ইউনুছ১০: ২০)

আর আমি তোমাদেরকে বলি না যেআমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যেআমি গায়বী খবরও জানিএকথাও বলি না যেআমি একজন ফেরেশতাআর তোমাদের দৃষ্টিতে যারা লাঞ্চিত আল্লাহ্ তাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না। তাদের মনের কথা আল্লাহ্ ভাল করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব (হুদ১১: ৩১)

“এটি গায়বের খবরআমি আপনার প্রতি ওহী প্রেরন করছি। ইতিপূর্বে এটা আপনার এবং আপনার জাতির জানা ছিল না। আপনি ধৈর্যধারণ করুন। যারা ভয় করে চলেতাদের পরিণাম ভালসন্দেহ নেই”। (হুদ১১: ৪৯)

আর আল্লাহর কাছেই আছে আসমান যমীনের গোপন তথ্য; আর সকল কাজের প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে;অতএবতাঁরই বন্দেগী কর এবং তাঁর উপর ভরসা রাখআর তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে তোমার পালনকর্তা কিন্তূ বে-খবর নন”। (হুদ১১: ৪৯)

বলুন, আল্লা ব্যতীত নভোমন্ডল ভূমন্ডলে কেউ গায়বের খবর জানে না এবং তারা জানে না যেতারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে (নামল২৭: ৬৫)

“এগুলো অদৃশ্যের খবরআমি আপনার কাছে প্রেরন করি। আপনি তাদের কাছে ছিলেন নাযখন তারা স্বীয় কাজ সাব্যস্ত করছিল এবং চক্রান্ত করছিল”। (ইউছুফ১২: ১০২)

“তিনি সকল গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় অবগতমহোত্তমসর্বোচচ মর্যাদাবান”। (রা১৩: ৯)

“নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিয়ামতের ব্যাপারটি তো এমনযেমন চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান”। (নাহল ১৬: ৭৭)

তিনি দৃশ্য অদৃশ্যের জ্ঞানী। তারা শরীক করেতিনি তা থেকে উর্ধ্বে (মুমিনুন২৩: ৯২)

“যখন আমি সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালামতখন ঘুণ পোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সোলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচিছল। যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেনতখন জিনেরা বুঝতে পারল যে,অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান থাকলে তারা এই লাঞ্চনাপূর্ণ শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতো না (সাবা৩৪: ১৪)

“আল্লাহ্ আসমান ও যমীনের অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত”। (ফাতির,৩৫: ৩৮)

“বলুনহে আল্লাহ্ আসমান ও যমীনের স্রষ্টাদৃশ্য অদৃশ্যের জ্ঞানী, আপনিই আপনার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করবেনযে বিষয়ে তারা মত বিরোধ করত”। (যুমার৩৯: ৪৬)

“আল্লাহ্ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য বিষয় জানেনতোমরা যা কর আল্লাহ্ তা দেখেন”। (হুজরাত৪৯: ১৮)

না তাদের কাছে অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আছে যে, তারাই তা লিপিবদ্ধ করে”? (তুর৫২: ৪১)

তার কাছে কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যেসে দেখে(নাজম৫৩: ৩৫)

“তিনিই আল্লাহ্ তাআলাতিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেইতিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালুঅসীম দাতা”। (হাশর৫৯: ২২)

না তাদের কাছে গায়বের খবর আছে? অত:পর তারা তা লিপিবদ্ধ করে”। (কলম৬৮: ৪৭)

“তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না (জ্বিন৭২: ২৬)

“যেদিন আল্লাহ্ সব পয়গম্বরকে একত্রিত করবেনঅত:পর বলবেন তোমরা কি উত্তর পেয়েছিলে
তাঁরা বলবেন: আমরা অবগত নইআপনিই অদৃশ্য বিষয়ে মহাজ্ঞানী (মায়েদা৫: ১০৯)

“যখন আল্লাহ্ বললেন: হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যেআল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত করঈসা বলবেনআপনি পবিত্র! আমার জন্যে শোভা পায় না যেআমি এমন কথা বলিযা বলার কোন অধিকার আমার নেই। যদি আমি বলে থাকিতবে আপনি অবশ্যই পরিজ্ঞাতআপনি তো আমার মনের কথা ও জানেন এবং আমি জানি না যা আপনার মনে আছে। নিশ্চয় আপনিই অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাত”। (মায়েদা৫: ১১৬)

“সুলায়মান পক্ষীদের খোঁজ খবর নিলেনঅত:পর বললেনকি হলহুদহুদকে দেখছি না কেননাকি সে অনুপস্থিত?” (নামল২৭: ২০)

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েব জানতেন না।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عن عائشة رضى الله عنها انها قالت …..فقال له ورقة هذا الناموس الذى نزل الله على موسى ياليتنى فيها جذعاً، يا ليتنى اكونحياّ اذ يخرجك قومك فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اَوَ مُخرجىَّ هم قال نعم، لم يأت رجلٌ قطّ بمثل ما جئت به الاعودى وان يدركنى يومك انصرك نصرا مؤزرا ثم لم ينشب ورقة ان توفى وفتر الوحىبخارى حـ٣

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন :…… (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নবুওয়ত প্রাপ্ত হলেন। তখন হযরত খাদিজা (রা:) তাঁকে ওরাক্বাহ ইবনে নাওফাল এর কাছে নিয়ে যান।) তখন ওরাক্বাহ ইবনে নাওফাল বলেনঃ …..হায় আফসোস! যদি আমি তখন জীবিত থাকতাম যখন আপনার কওম আপনাকে (নিজ দেশ থেকে) বের করে দিবে। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন : “তারা কি আমাকে (নিজ দেশ থেকে) বের দিবেতিনি (ওরাক্বাহ) বললেনঃ হাঁ,…….

এ হাদীসটি থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর রাসূল (সা:) গায়েব জানতেন না। কারণ যদি তিনি গায়েব জানতেন তাহলে ওরাক্বাহ কথার উত্তরে তিনি (তারা কি আমাকে নিজ দেশ থেকে বের দিবে?) এ কথা বলতেন না।

অন্য হাদীসে আছেঃ

হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত………..সেই অবস্থায় আল্লাহর রাসূল (সা:) আগমন করলেন। তিনি বসে শাহাদাহ পাঠ করে বললেনহে আয়েশাতোমার সম্পর্কে আমার কানে এ ধরনের কথা এসেছে। যদি তুমি এসব থেকে মুক্ত থাকো তবে শীঘ্রই আল্লাহ তায়ালা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করবেন। আর যদি আল্লাহ না করুনতুমি কোন পাপ করে থাকোতবে তুমি আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাওতাওবা করো। বান্দা যখন নিজের পাপের কথা স্বীকার করে এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করেতখন আল্লাহ তায়ালা সেই তাওবা কবুল করেন……শেষ পর্যন্ত। (বুখারী)

এই হাদীসটি হচ্ছে ইফকের হাদীসের অংশবিশেষ। এইখানে আল্লাহর রাসূল (সা:) হযরত আয়েশা (রা:) কে বললেন: (তুমি যদি কোন পাপ করে থাকো…..)। বুঝা গেল আল্লাহর রাসূল (সা:) গায়েব জানেন না কারণ যদি জানতেন তাহলে তিনি বলে দিতেন যেআয়েশা (রা:) কোন পাপ কাজ করেননি।

এমনিভাবে আল্লাহর রাসূল (সা:) কে যখন হুদায়বিয়ার এখানে আটকে দেওয়া হলো। তখন হযরত উসমান (রা:) আসতে দেরী হওয়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়লো যেউসমান (রা:) কে হত্যা করা হয়েছে। তখন আল্লাহর রাসূল (সা:) সকল সাহাবীদের কাছ থেকে বায়আত নিলেন এই মর্মে যেযতক্ষণ পর্যন্ত উসমান হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পলায়ন করবো না। এই হাদীস দ্বারাও বুঝা গেল আল্লাহর রাসূল (সা:) গায়েব জানতেন না কারণ উসমান (রা:) কে তারা হত্যা করেনি বরং বন্দী করেছিল।

নিম্নে আরো একটি হাদীস পেশ করা হচ্ছে। যেখানে আল্লাহর রাসুল (সা:) কে যাদু করা হয়েছিল এবং যে যাদু করেছিল তার নাম ছিল লাবিদ ইবনুল আসাম। এ যাদুর কারণে আল্লাহর রাসূল (সা:) অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেনশেষে দুই ফেরেশতার মাধ্যমে জানতে পারেন যেতাকে যাদু করা হয়েছে। বুঝা গেল আল্লাহর রাসূল (সা:) যদি গায়েব জানতেন তাহলে ফেরেশতাদের মাধ্যমে জানানোর প্রয়োজন হতো না। হাদীসটি এইঃ

عن عائشة رضى الله عنها: أن النبى صلى الله عليه وسلم سحر حتى إنه ليخيل إليه أنه يفعل الشىء وما يفعله، وأنه قال لها ذات يوم: (أتانى ملكان، فجلس أحدهما عند رأسىوالآخر عند رجلى، فقال: ما وجع الرجل؟ قال: مطبوب. قال: ومن طبّه؟ قال لبيد بن الأعصم فى مشط ومشاطة، وفى جف طلعة ذكر فى بئر ذروان). رواه البخارى

হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিতলাবিদ ইবনুল আসাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যাদু করেছিলএবং জিব্রাঈল (আ:) সূরায়ে ফালাক্ব দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করেছিলেন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে গেলেন। (বিস্তারিত দ্র সহীহ বুখারী)

অন্য এক হাদীসে আছে যেখায়বার যুদ্ধের পরে সালাম ইবনে মুশকিম এর স্ত্রী যয়নব বিনতে হারেছ আল্লাহর রাসূল (সা:) কাছে বকরির ভূনা গোশত বিষ মিশিয়ে উপঢৌকন হিসেবে পাঠায়। সেই মহিলা আগেই খবর নিয়েছিলো যে,আল্লাহর রাসূল (সা:) বকরির কোন অংশ বেশী পছন্দ করেন। শোনার পর পছন্দনীয় অংশে বেশী করে বিষ মেশায়। অন্যান্য অংশেও বিষয় মেশায়। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা:) এর সামনে এনে সেই বিষ মিশ্রিত গোশত রেখে দেয়। রাসূল (সা:) পছন্দনীয় অংশের একটুকরো মুখে দেন। কিন্তু চিবিয়েই তিনি ফেলে দেন। এরপর তিনি বললেনএই যে হাড় আমাকে বলছে যেআমার মধ্যে বিষ মেশানো রয়েছে। যয়নবকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করা হলোযে স্বীকার করলো। তিনি বললেনতুমি কেন একাজ করেছমহিলা বললোআমি ভেবেছিলাম যদি এই ব্যক্তি বাদশাহ হনতবে আমরা তার শাসন থেকে মুক্তি পাবোআর যদি এই ব্যক্তি নবী হনতবে আমার বিষ মেশানোর খবর তাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এ নির্জলা স্বীকারোক্তি শুনে রাসূল (সা:) সেই মহিলাকে ক্ষমা করে দিলেন।

এ ঘটনার সময় আল্লাহর রাসূল (সা:) সাথে হযরত বাশার ইবনে বারা ইবনে মারুরও ছিলেন। তিনি এক লোকমা খেয়েছিলেন। এতে তিনি বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। রাসূল (সা:) সেই মহিলাকে ক্ষমা না হত্যা করেছিলেনএ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। একাধিক বর্ণনার সমন্বয় এভাবে করা হয়েছে যেপ্রথমে রাসূল (সা:) তাকে ক্ষমা করলেওহযরত বাশার-এর ইন্তেকালের পর কেসাসস্বরূপ তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (ফতহুল বারীসপ্তম খন্ডপৃ.৪৯৭ইবনে হিশাম২য় খন্ডপৃ. ৩৩৭)

এ হাদীস দ্বারা ও বুঝা যাচ্ছে যেআল্লাহর রাসূল (সা:) গায়েব জানতেন না। কারণ যদি গায়েব জানতেন তাহলে তিনি বিষ মেশানো গোশাত খেতেন না। এবং এর কারণে একজন সাহাবী ও মৃত্যুবরণ করতো না।

উল্লেখ্য, যে ব্যক্তি “গায়বী ইলম” তথা কোন মাধ্যম ছাড়াই অদৃশ্যের খবরাদির জ্ঞান দাবি করে সে তাগুতের অন্তর্ভুক্ত।সহজ কথায় তাগুত হলো এমন প্রত্যেক জিনিস যা দ্বারা মানুষ সীমা লঙ্খন করে। চাই তা মা‘বূদ (উপাস্য) হোক যেমন : মূর্তি অথবা অনুসরণীয় ব্যক্তি হোক যেমন : জ্যোতিষ-গণক ও ধর্ম ব্যবসায়ী পীর-বুজুর্গ এবং বদ আমল আলেম সমাজ অথবা মান্যবর ব্যক্তিরা হোক যেমন : শাসক, সর্দার ও নেতাজি ও প্রধানরা যারা আল্লাহর অবাধ্য।

তাওহীদের পূর্ণতা ততক্ষণ সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত একমাত্র আল্লাহর এবাদত ও সর্বপ্রকার তাগুত তথা শিরক মুক্ত না হয়। আল্লাহ বলেন “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা এক আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত তথা শিরক থেকে দূরে থাক।” [সূরা নাহল : ৩৬ ]

সমাপ্ত