আমাদের সমাজে দাম্পত্য সম্পর্কগুলো কত সহজে ভেঙ্গে যাচ্ছে

মেয়েদের দোষ দেবার আগে আমি আমাদের পুরষ সমাজদের জন্য কিছু বলার ইচ্ছা হয়।

স্বভাবগতভাবেই মেয়েরা খুবেই অল্প না পাওয়াতে হতাশ হয়ে যায়। এছাড়া অল্পতেই সামান্য বিষয়কে জটিল্ভাবে কল্পনা করে। দেখা যায় দাম্পত্য জীবনে ফেসবুকে কিংবা পরিচিত দম্পতিদের মাঝে সুখ দেখে তাদের সাথে নিজের দাম্পত্য জীবন তুলনা করে ভেতরে ভেতরে স্বামীর প্রতি নিরাশক্ত হওয়া শুরু করে। এর মধ্যে কিছু কিছু ভাইরা আছে তাদের স্ত্রীদের এইসব অনুভূতি বুঝার চেয়ে স্ত্রী কিছু বলতে চাইলে তেতে উঠেন, কথা বন্ধ করে দেন, রেগে যান। উনাদের ধ্যানধারনা এমন যে, উনারা এমন করে টাইট দিলে স্ত্রী উনাদের কথার বাধ্য হয়ে যাবেন। বাস্তবে হয় এর উলটো, তখন স্ত্রীরা আরো জটিল করে সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করেন আর এর এইভাবে চলতে চলতে একটা সময় সেটার অবসান হয় ডিভোর্সে!!

স্ত্রীর সাথে আন্তরিকতা রক্ষা করা, সুন্দর করে কথা বলাও যে স্ত্রীর হক এটা আমাদের অনেক পুরুষ ভাবতেও চান না। অথচ আবার তারাই স্ত্রী থেকে ভাল ব্যবহার আশা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর। কেননা তাদেরকে পাঁজরের হাড্ডি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড্ডিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হল উপরেরটি। সুতরাং তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি একেবারে ছেড়ে দাও তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে। তাই স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর।’-সহীহ বুখারী ও মুসলিম

সাইফুরস এ যখন কোচিং করতাম তখন, আমাদের ক্লাস নিতেন হাসান স্যার নামে একজন। মজার একজন স্যার ছিলেন উনি। উনি ক্লাসে একদিন সুন্দর করে বলেছিলেন যে, উনি যখন বাসা থেকে বের হয়ে ক্লাসে আসেন তখন উনার ওয়াইফ কে একবার ফোন দেন পোছার খবর দিয়ে, আবার ক্লাসের মাঝে ম্যাসেজ দেন তরকারী কি রান্না করেছে এটা জানার জন্য। এইগুলো করেন যাতে তার স্ত্রী বুঝতে পারে উনাকে স্যার ভুলেন না কখনো। এছাড়া উনাদের মধ্যে ভালোবাসাও বাড়ে এই খুনসুটির কারনে।

এখন তো হোয়াটসএপস, ভাইবার, ম্যাসেঞ্জারের যুগ। এইধরনের যোগাযোগ খুবেই সহজ। আমি নিজেও পার্সোনালী স্যারের এই রুলস ফলো করার চেষ্টা করি। দেখা গেসে, ফেসবুকে কিছু পড়েছি ইন্টারেস্টিং কিংবা মজাদার সাথে সাথে ওয়াইফ কে লিংক কপি করে দেই। আমার তো সময় নষ্ট হচ্ছে না এই সামান্য কাজে। অদ্ভুত লাগে এই সামান্য যোগাযোগের ব্যাপারে অনেক ভাই স্ত্রীদের ব্যস্ততার অযুহাত দেন অথচ দেখা যায় ফেসবুকে কিংবা ম্যাসেঞ্জারে উনি ঠিকেই একটিভ!!!

পারিবারিক সমস্যা প্রকাশের সূত্রে দেখা যায়- পারস্পরিক দায়বদ্ধতার বন্ধনে শিথিলতা, স্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ্যতা, স্বভাব চরিত্রে অহমিকা এবং সাংসারিক দায়িত্ব পালনের প্রতি অনীহা। তখন প্রতিকার হবে- উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে স্ত্রীর ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া। বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পথে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান ও পরকালের কথা মনে করিয়ে দেওয়া।

কিন্তু এটা না করে কোনো কোনো স্বামী বিশ্বাস করে বসেন যে, কথা বন্ধ করলে, তালাকের হুমকি দেওয়া, তালাক দেওয়া কিংবা বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটানোই হলো- দাম্পত্য বিরোধ ও পারিবারিক সমস্যার সঠিক সমাধান। ভুল, মনে রাখবেন এটা একমাত্র সমাধান নয়। যখন বিরোধ, অবাধ্যতা, মতানৈক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তখন কথা বন্ধ করা, তালাক বা তালাকের হুমকি প্রদান করা তার প্রতিকার নয় বরং তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে দেয়।

তাই স্বামী স্ত্রীর উচিৎ তাদের পরস্পরের উপর হকগুলো যথাযথভাবে জানা এবং তা আদায় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। কোনো ক্ষেত্রে দোষ-ত্রুটি হয়ে গেলে তা অকপটে স্বীকার করে নেওয়া এবং অতি দ্রুত সেটাকে শুধরে নেওয়া। এভাবে সবকিছুকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলে সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। এরকম শুধরে নেওয়া ও মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে না তুললে সামান্য মনোমালিন্যেও অন্তরে প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করবে। বিবাহের মাধ্যমে যে দাম্পত্য সম্পর্কের সূচনা হয় তা অটুট থাকা এবং আজীবন স্থায়ীত্ব লাভ করা ইসলামে কাম্য। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের পরিবারগুলো হিফাজত করুন, বারাকাহ দান করুন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতায়ঃ আমানা ম্যাট্রিমনি