আপনার কি প্রয়োজন সেটা আপনার রবের কাছে বলুন

ভূমিকা: মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। ইহকালে তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা তিনি নিজেই করেছেন। দুনিয়াতে চলার জন্য মানুষকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এই দিক-নির্দেশনা বা হেদায়াত মেনে চললে পরকালে মানুষ পুরস্কার হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মহান আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত। সুতরাং আমাদের সব চাওয়াই আল্লাহর কাছে বলতে হবে। আল্লাহর ভাণ্ডারে কোনো কিছুর কমতি নেই। তবে মানুষের জীবনে চাহিদার শেষ নেই, প্রয়োজনেরও সীমা নেই। তাই যাই প্রয়োজন সেটার জন্য কবর, মাযার, পীরের কাছে না গিয়ে নির্দ্বিধায় সরাসরি আরশের মালিকের কাছে বলুন। দো‘আ বিনয়-নম্রতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এজন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ বা প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
.
মহান আল্লাহ বলেন,
.
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ، ‘
.
আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বল যে,) আমি অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমাকে ডাকে এবং আমার উপরে নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখে। যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়’ (সূরা বাক্বারাহ ২/১৮৬)
.
তিনি (আল্লাহ) আরো বলেন,
.
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ،
.
আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তাতে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে, তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (সূরা মুমিন ৪০/৬০)।
.
তিনি আরো বলেন,
.
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
.
শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (সূরা আ‘রাফ ২০০)।
.
নবী করীম(ﷺ)ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলেন,
.
إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ
.
‘যখন তুমি কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছে চাইবে। আর যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে’ (তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২; সহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৭)
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন (আল্লাহর কাছে) চাইবে, তখন সে যেন বেশি করে চায়। কারণ সে তো তার রবের কাছেই চাচ্ছে!’’ [ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৮৮৯]
.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর নিকটে তোমরা সবকিছুই চাও। এমনকি সামান্য (জুতার) ফিতা হ’লেও। কেননা তিনি যদি তা পাওয়া সহজ না করেন, তবে কখনোই তা পাওয়া সম্ভব হবে না’ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৭২২২; সিলসিলা যঈফাহ হা/২১-এর আলোচনা, সনদ হাসান)
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
.
لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ سُبْحَانَهُ مِنَ الدُّعَاءِ،
.
‘মহান আল্লাহর নিকটে দো‘আর চেয়ে অধিক সম্মানিত কোন জিনিস নেই’। (ইবনু মাজাহ হা/৩৮২৯; তিরমিযী হা/৩৩৭০; মিশকাত হা/২৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৯২)

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক বর্ননায় বলেছেন,
.
مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ،
.
যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হন’। (তিরমিযী হা/৩৩৭৩; মিশকাত হা/২২৩৮)
.
বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন, আল্লাহর নিকটে দুনিয়াবী যেকোন কিছু প্রার্থনা করায় কোন দোষ নেই। কেননা দো‘আ ইবাদতেরই অন্তর্ভুক্ত। আর মানুষের জন্য আল্লাহ ব্যতীত আর কোন আশ্রয়স্থল নেই। অতএব এ সকল বিষয়ের সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য দো‘আ করা যায় (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২০৬)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।