পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:-প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
( إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ )
“তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট,তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে”।(তিরমিযী হা/১০৮৪, সিলসিলা সহীহা হা/১০২২)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:”একজন দ্বীনদার ও সৎ যুবক যুবক এক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু তরুণীর বাবা এতে আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর আপত্তির কারণ হলো, যুবকটি এখনো শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কর্মসূত্রে দূরবর্তী কোনো গ্রামে থাকতে হতে পারে, ফলে মেয়েটিকে বাসায় একা থাকতে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তরুণীর বাবার আপত্তি কি যৌক্তিক? এ বিষয়ে যথাযথ দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করুন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
.
শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেন:
” إذا خطب الرجلُ امرأة، وكان ذا دين وخلق مرضي: فإن المشروع أن يجاب ويزوج، والعذر الذي قاله أبو المخطوبة في السؤال: عذر لا يمنع من تزويجها،، ولا يحل لأبيها إذا كانت راغبة في هذا الخاطب أن يمنعها من أجل هذا العذر؛ لأنه ليس عذرا شرعيا، وهو آثم بمنعه هذا الخاطب؛ لأن ولي المرأة أمين يجب عليه أن يتصرف فيما هو مصلحة لها ”
“”যদি কোনো পুরুষ দ্বীনদার ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয় তাহলে শরীয়তের নির্দেশনা হলো তার প্রস্তাব গ্রহণ করা এবং বিবাহ সম্পন্ন করা। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতার উল্লিখিত অজুহাত যেমন ছেলেটি এখনো পড়াশোনা শেষ করেনি কিংবা ভবিষ্যতে দূরবর্তী গ্রামে চাকরি করতে হতে পারে এগুলো এমন বৈধ কারণ নয়, যা বিবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, যদি মেয়েটি ঐ যুবকের প্রতি আগ্রহী হয়, তবে কেবল এসব অজুহাতের ভিত্তিতে তার পিতা বিয়েতে বাধা দিতে পারেন না। কারণ, এটি শরীয়তসম্মত কোনো অজুহাত নয়। বরং এমনটি করলে তিনি (পিতা) গুনাহগার হবেন। একজন অভিভাবক হিসেবে পিতার দায়িত্ব হলো— তিনি মেয়ের প্রতি আমানত রক্ষা করবেন, তার সর্বোত্তম কল্যাণ নিশ্চিত করবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকে সুপথে পরিচালিত করবেন।”(ইবনু উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব; ১৯/২)
.
আমাদের ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর এই ফতোয়ার মূল বক্তব্য হলো যদি একজন যুবক দ্বীনদার এবং ভাল চরিত্রের অধিকারী হন, তবে তার বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত, বিশেষ করে যদি তরুণীও সেই যুবককে পছন্দ করেন। অভিভাবকের দায়িত্ব হল মেয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং তার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এটি নির্দেশ করে যে, ইসলামের দৃষ্টিতে, দ্বীনদার ও সদাচরণকারী পুরুষের প্রস্তাব গ্রহণ করা সঠিক, এবং পিতার অযথা বাধা দেওয়া শরীয়তের পরিপন্থী।
.
আমাদের ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মূল বক্তব্য বিশ্লেষণ:
.
(১). বিয়ের ক্ষেত্রে মূল যোগ্যতা: যদি কোনো যুবক দ্বীনদার ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়, তাহলে শরীয়ত তার প্রস্তাব গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহিত করে। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট,তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে”।(তিরমিযী হা/১০৮৪, সিলসিলা সহীহা হা/১০২২)
.
(২). অভিভাবকের অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতার আপত্তির কারণ ছিল: (ক). যুবকটি এখনো পড়াশোনা শেষ করেনি। (খ). চাকরির কারণে তাকে দূরবর্তী গ্রামে থাকতে হতে পারে, ফলে মেয়েটি একা থাকতে পারে।শাইখ বলেন, এগুলো শরীয়তসম্মত বাধা নয়। কেননা,পড়াশোনা চলমান থাকলেও যদি সে ভরণপোষণ ও দাম্পত্য জীবনের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়, তাহলে এটি বিয়েতে বাধা হতে পারে না। দূরে থাকার সম্ভাবনা থাকলেও এটি এমন কোনো কারণ নয়, যা বৈবাহিক সম্পর্ক অগ্রাহ্য করার মতো গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, চাকরি বা অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে, এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।
.
(৩). অভিভাবকের দায়িত্ব ও গুনাহর আশঙ্কা: যদি মেয়েটি ঐ যুবককে বিয়ে করতে আগ্রহী হয়, তবে পিতা কেবল এইসব কারণ দেখিয়ে বাধা দিতে পারেন না।এমনটি করলে পিতা গুনাহগার হবেন, কারণ এটি মেয়ের হক নষ্ট করার শামিল। অভিভাবকের দায়িত্ব হলো মেয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করা, তাকে এমন পাত্রের কাছে বিয়ে দেওয়া যে তার জন্য ভালো হবে এবং অযৌক্তিকভাবে তার স্বাধীন ইচ্ছাকে বাধা না দেওয়া।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনার সারসংক্ষেপ হল:
দ্বীনদার ও উত্তম চরিত্রের ব্যক্তি বিয়ের জন্য উপযুক্ত হলে, শুধুমাত্র পড়াশোনা বা দূরবর্তী চাকরির মতো কারণ দেখিয়ে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা শরীয়তসম্মত নয়। যদি মেয়েটি আগ্রহী হয়, তবে অভিভাবকের উচিত তার ইচ্ছাকে সম্মান করা। অন্যথায়, তিনি গুনাহগার হবেন। আল্লাহ সকল অভিভাবককে সঠিক বুঝ দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।