হায়েয কি এবং হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি

প্রশ্ন: হায়েয কি? হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি? ইস্তেহাযা কি ও তার বিধান কি? যদি নারীর (জরায়ু থেকে) অনেক বেশি রক্তপাত হয় তথা সে ইস্তেহাযাগ্রস্ত হয় তাহলে কীভাবে সালাত পড়বে?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর হায়েয একটি পরিচিত তরল রক্ত। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাতেমা বিনতে হুবাইশকে বলেছেন: “নিশ্চয় হায়েযের রক্ত কালো রঙের পরিচিত রক্ত। যদি সেটা হয় তাহলে তুমি সালাত ছেড়ে দিবে। আর যদি অন্য কোন রক্ত হয় তাহলে ওযু করে সালাত পড়বে।”(সুনানে নাসাঈ হা/২১৬), ইমাম আলবানী হাদিসটিকে সহিহু সুনানে নাসাঈ গ্রন্থে সহিহ বলেছেন) হায়েযের কিছু আলামত রয়েছে; যা নারীদের অজানা নয়। রঙ হচ্ছে কালো বা গাঢ় লাল। গন্ধ হচ্ছে খারাপ। অনুরূপভাবে এটি ঘন। এ রক্তটি জরায়ু থেকে নির্গত হয়। তাই এটি এক ফোঁটা বা কয়েক ফোঁটা হয় না। কিংবা সুতার মত হয় না।
.
▪️হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি?
.
কোন নারীর হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত দুইটি:

(১). সাদাস্রাব নির্গত হওয়া। সাদা স্রাব হচ্ছে সাদা পানি, নারীরা যে পানি চিনতে পারে) এ স্রাব দেখার পর মলিন রঙ, হলুদ রঙ কিংবা ফোঁটা ফোঁটা, কিংবা ভেজা ভেজা থাকা ইত্যাদি কিছুই হায়েয নয়। এগুলো সালাত ও রোযার প্রতিবন্ধক নয়। এমনকি এগুলোর কারণে স্ত্রী সহবাসেও কোন বাধা নেই। কেননা এসব হায়েয নয়।
.
(২). কিংবা স্থানটি শুকিয়ে যাওয়া ও রক্তস্রাব, হলদেটে স্রাব বা বাদামী স্রাবের কোন চিহ্ণ না থাকে। অর্থাৎ রক্ত এমনভাবে বন্ধ হবে যে কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করলে তাতে লাল, হলুদ বা খয়েরী রঙ এর কোন প্রকার তরল পদার্থ আসবে না বরং পরিষ্কার অবস্থায় বের হবে এমনটি হলে সে জানবে যে সে পবিত্র হয়ে গেছে। গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে সালাতের সময় হলে তার উপর সালাত ফরয হবে। তিনি রোযা রাখলে সহিহ হবে এবং তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করা জায়েয হবে। কেননা তিনি পবিত্র নারীদের হুকুমের অধিভুক্ত। এ দু’টার যেকোন একটি আলামত দেখতে পেলে হায়েয শেষ হয়েছে বলে বুঝে নেবে। (বিস্তারিত জানতে দেখুন ইবনু উসাইমীন ফাতাওয়াল মারআ আল-মুসলিমা: পৃষ্ঠা: ২৭৫)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল “জনৈক নারী নিফাসের দুই মাস পর পবিত্র হওয়ার পর তিনি কিছু ছোট ছোট রক্তের ফোঁটা দেখতে পান। এ নারী কি রোযা রাখবেন না এবং সালাত পড়বেন না? নাকি কী করবেন?

জবাবে তিনি বলেন:

إذا طهرت المرأة ورأت الطهر المتيقن في الحيض وفي النفاس ، وأعني الطهر في الحيض : خروج القصة البيضاء ، وهو ماء أبيض تعرفه النساء ، فما بعد الطهر من كدرة ، أو صفرة ، أو نقطة ، أو رطوبة ، فهذا كله ليس بحيض ، فلا يمنع من الصلاة ، ولا يمنع من الصيام ، ولا يمنع من جماع الرجل لزوجته ، لأنه ليس بحيض . قالت أم عطية : (كنا لا نعد الصفرة والكدرة شيئاً ) . أخرجه البخاري ، وزاد أبو داود : ( بعد الطهر) وسنده صحيح .وعلى هذا نقول : كل ما حدث بعد الطهر المتيقن من هذه الأشياء ، فإنها لا تضر المرأة ولا تمنعها من صلاتها وصيامها ومباشرة زوجها إياها . ولكن يجب أن لا تتعجل حتى ترى الطهر ، لأن بعض النساء إذا جف الدم عنها بادرت واغتسلت قبل أن ترى الطهر ، ولهذا كان نساء الصحابة يبعثن إلى أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها بالكرسف ، يعني القطن فيه الدم ، فتقول لهن : لا تعجلن حتى ترين القصة البيضاء ”

“যদি কোন নারী হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্র হন এবং নিশ্চিত পবিত্রতা দেখতে পান; হায়েয থেকে পবিত্রতা দ্বারা আমি বুঝাতে চাচ্ছি সাদাস্রাব নির্গত হওয়া। সাদাস্রাব হচ্ছে সাদা পানি যা নারীরা চিনতে পারেন; তাহলে এ সাদাস্রাব দেখা যাওয়ার পরে যদি বাদামী বা হলদেটে কিছু দেখা যায় কিংবা রক্তের ফোঁটা বা ভেজা স্যাতস্যাতে অনুভুত হয় এগুলোর কোনটি হায়েয নয়। এগুলো সালাত ও রোযা পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয় এবং স্ত্রীর সাথে স্বামীর সহবাসের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধক নয়। কেননা সেটা হায়েয নয়। উম্মে আতিয়্যা বলেন: ‘আমরা হলদেটে ও বাদামী স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।'[সহিহ বুখারী, আবু সুনানে দাউদের আরেকটু বাড়তি টেক্স হল: “পবিত্রতার পরে”। হাদিসটির সনদ সহিহ] পূর্বোক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলব নিশ্চিত পবিত্রতার পর এ ধরণের কিছু ঘটলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। এগুলো নারীর সালাত, রোযা ও স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না। তবে পবিত্রতা দেখার আগে তাড়াহুড়া করা যাবে না। কারণ কিছু কিছু নারী রক্ত শুকিয়ে গেছে দেখলেই পবিত্র হওয়ার আগে তাড়াতাড়ি গোসল করে ফেলেন। এ কারণে মহিলা সাহাবীগণ উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ) এর কাছে কুরসুফ পাঠাতেন। অর্থাৎ রক্তযুক্ত তুলা পাঠাতেন। তখন তিনি তাদেরকে বলতেন: আপনারা তাড়াহুড়া করবেন না; যতক্ষণ পর্যন্ত না সাদাস্রাব দেখতে পান”।(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ২৮১)
.
▪️ইস্তেহাযা কি ও তার বিধান কি?

ইস্তেহাযাহ হচ্ছে কোন নারীর যদি অনবরত এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় যে কোনো সময়েই বন্ধ হয় না অথবা খুব অল্প সময় যেমন মাসে এক কি দুই দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে তাহলে উক্ত প্রবাহমান রক্তকে ইস্তেহাযাহ বলা হয়। এক সাথে এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার দৃষ্টান্ত সহীহ বুখারীতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন, «قَالَتْ فَاطِمَةُ بِنْتِ أبِيْ حُبَيْشٍ لِرَسُوْلِ اللهِ :ﷺ‬ يَا رَسُوْلَ اللهِ! إنِّيْ لاَ أطْهُرُ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: أسْتَحَاضُ فَلاَ أطْهُرُ».“ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন হে আল্লাহর রাসূল! আমি পবিত্র হতে পারছি না। অন্য রেওয়ায়েতে আছে আমার অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে যার ফলে আমি পবিত্রতা অর্জন করতে পারছি না।” খুব অল্প সময়ের জন্য বন্ধ হওয়ার দৃষ্টান্ত হামনাহ বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসে রয়েছে। তিনি এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে আরয করেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! অনেক দীর্ঘ সময় ধরে আমার রক্তস্রাব হয়।
.
মূলত ইস্তেহাযার হুকুম আর পবিত্রতার হুকুম একই। মুস্তাহাযাহ নারী এবং পবিত্র নারীর মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। ১. মুস্তাহাযাহ নারীর ওপর প্রতি সালাতে অযু করা ওয়াজিব। প্রমাণ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছেন: «ثُمَّ تَوَضَّئِيْ لِكُلِّ صَلاَةٍ» “অতঃপর তুমি প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু কর।”হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তুমি ইস্তেহাযাহ অবস্থায় ফরয অর্থাৎ ওয়াক্তিয়া সালাতের জন্য সালাতের সময় আরম্ভ হওয়ার পরেই অযু করবে। আর নফল সালাতের ক্ষেত্রে যখন সালাত পড়ার ইচ্ছা করবে তখন অযু করলেই চলবে। মুস্তাহাযাহ নারী যখন অযু করার ইচ্ছা করবে তখন রক্তের দাগ ধৌত করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বেঁধে নিবে যেন উক্ত তুলা রক্তটাকে আঁকড়ে ধরে। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন: «أنْعَتُ لَكِ الْكُرْسُفَ فَإنَّهُ يُذْهِبُ الدَّمَ قَالَتْ: فَإنَّهُ أكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ قَالَ: فَاتَّخِذِيْ ثَوْبًا قَالَتْ: هُوَ أكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ قَالَ: فَتَلَجَّمِي» “আমি তোমাকে লজ্জাস্থানে কুরসুফ তথা নেকড়া বা তুলা ব্যবহার করার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা নেকড়া বা তুলা রক্তটাকে টেনে নিবে। জবাবে হামনাহ বললেন আমার প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তদপেক্ষাও বেশি। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাহলে তুমি লজ্জাস্থানে কাপড় ব্যবহার কর। হামনাহ বললেন প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তার চেয়ে আরো বেশি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দিলেন যে তুমি তাহলে যোনীর মুখে লাগাম বেঁধে নাও।” রক্তের দাগ-চিহ্ন পরিষ্কার করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বাঁধার পরেও যদি রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস রয়েছে যে তিনি ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নির্দেশ দিয়েছেন: «اجْتَنِبِيْ الصَّلاَةَ أيَّامَ حَيْضَتِكَ ثُمَّ اغْتَسِلِيْ وَتَوَضَّئِيْ لِكُلِّ صَلاَةٍ ثُمَّ صَلِّيْ وَإنْ قَطَرَ الدَّمُ عَلَى الْحَصِيْر» “যে কয়দিন তুমি ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকবে সে কয়দিন সালাত থেকে বিরত থাক। তারপর গোসল করে প্রতি সালাতের জন্য অযু কর এবং সালাত আদায় কর যদিও রক্ত প্রবাহিত হয়ে চাটাইর উপর পড়ে তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।
.
▪️যদি নারীর (জরায়ু থেকে) অনেক বেশি রক্তপাত হয় তথা সে ইস্তেহাযাগ্রস্ত হয় তাহলে কীভাবে সালাত পড়বে?
.
উক্ত প্রশ্নের জবাবে আমাদের ইমাম আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন অনবরত রক্ত প্রবাহিত হয় এমন ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর তিন অবস্থা:

(ক). প্রথম অবস্থা:

أن يكون لها حيض معلوم قبل الاستحاضة فهذه ترجع إلى مدة حيضها المعلوم السابق فتجلس فيها ويثبت لها أحكام الحيض ، وما عداها استحاضة ، يثبت لها أحكام المستحاضة .مثال ذلك : امرأة كان يأتيها الحيض ستة أيام من أول كل شهر ، ثم طرأت عليها الاستحاضة فصار الدم يأتيها باستمرار ، فيكون حيضها ستة أيام من أول كل شهر ، وما عداها استحاضة , لحديث عائشة رضي الله عنها أن فاطمة بنت أبي حبيش قالت : يا رسول الله إني أستحاض فلا أطهر أفأدع الصلاة ؟ قال : ( لا . إن ذلك عرق ، ولكن دعي الصلاة قدر الأيام التي كنت تحيضين فيها ثم اغتسلي وصلي ) رواه البخاري ، وفي صحيح مسلم : أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لأم حبيبة : ( امكثي قدر ما كانت تحبسك حيضتك ثم اغتسلي وصلي ) . فعلى هذا تجلس المستحاضة التي لها حيض معلوم قدر حيضها ثم تغتسل وتصلي ولا تبالي بالدم حينئذ .

“ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তার হায়েযের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকা। এক্ষেত্রে তিনি তার পূর্বজ্ঞাত হায়েযের সময়সীমাকে ধর্তব্য ধরবেন। এ সময়সীমাতে তিনি নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবেন। এ দিনগুলোর ক্ষেত্রে হায়েযের বিধান সাব্যস্ত হবে। আর এর অতিরিক্ত দিনগুলো ইস্তেহাযার দিন। এ দিনগুলোর ক্ষেত্রে ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর হুকুম কার্যকর হবে। এর উদাহরণ হলো কোনো নারীর প্রতি মাসের শুরুতে ছয়দিন হায়েয হত। তারপর হঠাৎ ইস্তেহাযা হয়ে অনবরত রক্তপাত হতে লাগল। এক্ষেত্রে তার হায়েয হবে প্রত্যেক মাসের প্রথম ছয়দিন। আর বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা। কারণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন ফাতেমা বিনতে আবি হুবাইশ বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইস্তেহাযাগ্রস্ত হই। তারপর আর পবিত্র হই না। আমি কি সালাত ছেড়ে দিব?” তিনি বলেন সেটি শিরা (থেকে রক্তক্ষরণ)। কিন্তু তোমার যতদিন হায়েয হত ততদিন তুমি সালাত ত্যাগ করবে। এরপর গোসল করবে এবং সালাত পড়বে।”[হাদীসটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন]। আর সহীহ মুসলিমে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হাবীবাকে বলেন: “পূর্বে তোমার হায়েয যত দিন তোমাকে বিরত রাখত সে ততদিন তুমি বিরতি নিবে। অতঃপর গোসল করবে এবং সালাত পড়বে।” পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে যে ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর হায়েযের নির্ধারিত সময় আছে সে হায়েযের সময়টুকু হায়েয হিসেবে পালন করবে। তারপর গোসল করে সালাত পড়বে এবং রক্তপাতের দিকে ভ্রূক্ষেপ করবে না।
.
(খ). দ্বিতীয় অবস্থা:

أن لا يكون لها حيض معلوم قبل الاستحاضة بأن تكون الاستحاضة مستمرة بها من أول ما رأت الدم من أول أمرها ، فهذه تعمل بالتمييز فيكون حيضها ما تميز بسواد أو غلظة أو رائحة يثبت له أحكام الحيض ، وما عداه استحاضة يثبت له أحكام الاستحاضة .مثال ذلك : امرأة رأت الدم في أول ما رأته ، واستمر عليها لكن تراه عشرة أيام أسود وباقي الشهر أحمر . أو تراه عشرة أيام غليظاً وباقي الشهر رقيقاً . أو تراه عشرة أيام له رائحة الحيض وباقي الشهر لا رائحة له , فحيضها هو الأسود في المثال الأول ، والغليظ في المثال الثاني ، وذو الرائحة في المثال الثالث ، وما عدا ذلك فهو استحاضة ، لقول النبي صلى الله عليه وسلم لفاطمة بنت أبي حبيش : ( إذا كان دم الحيضة فإنه أسود يعرف ، فإذا كان ذلك فأمسكي عن الصلاة فإذا كان الآخر فتوضئي وصلي فإنما هو عرق ) رواه أبو داود والنسائي ، وصححه ابن حبان والحاكم . وهذا الحديث وإن كان في سنده ومتنه نظر ، فقد عمل به أهل العلم رحمهم الله ، وهو أولى من ردها إلى عادة غالب النساء .

“ইস্তেহাযাগ্রস্ত হওয়ার আগে তার হায়েযের নির্ধারিত সময় না থাকা। অর্থাৎ প্রথমবার রক্ত দেখার পর থেকেই তার ইস্তেহাযা চলমান হওয়া। এক্ষেত্রে সে রক্তের ধরন আলাদা করবে। কালো রং কিংবা ঘনত্ব কিংবা দুর্গন্ধ যে রক্তে থাকবে সেটা হায়েযের রক্ত। সেটার ক্ষেত্রে হায়েযের হুকুম প্রযোজ্য হবে। আর যে রক্ত এমন নয় সেটা ইস্তেহাযার রক্ত। সেটার ক্ষেত্রে ইস্তেহাযার হুকুম প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ কোন নারী প্রথমবার রক্ত দেখল এবং এ রক্ত চলমান থাকল। কিন্তু দশদিন দেখল রক্ত কালো; আর মাসের বাকি সময় দেখল লাল রক্ত। কিংবা দশদিন দেখল ঘন রক্ত; আর বাকি সময় দেখল পাতলা রক্ত। কিংবা দশদিন হায়েযের দুর্গন্ধ পেল; আর মাসের বাকি দিনগুলো দুর্গন্ধ পেল না। সুতরাং প্রথম উদাহরণে কালো রক্ত তার হায়েয। দ্বিতীয় উদাহরণে ঘন রক্ত তার হায়েয। আর তৃতীয় উদাহরণে দুর্গন্ধযুক্ত রক্ত তার হায়েয। এর বাহিরে সব ইস্তেহাযা। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেন, “যদি হায়েযের রক্ত হয় সেটা কালো; যা চেনা যায়। যদি সে রকম হয় তাহলে সালাত থেকে বিরত থাকবে। আর যদি অন্যরকম রক্ত হয় তাহলে ওযু করে সালাত আদায় করবে। কারণ সেটা শিরা (থেকে রক্তক্ষরণ)।” [হাদীসটি আবু দাউদ হা/২৮৬ ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। যদিও হাদীসটির সনদ ও মতন নিয়ে আপত্তি আছে তদুপরি আলেমসমাজ এর উপর আমল করেছেন। অধিকাংশ নারীর অভ্যাসের উপর ছেড়ে দেওয়ার চাইতে এর ওপর আমল করা উত্তম।]
.
(গ). তৃতীয় অবস্থা:

ألا يكون لها حيض معلوم ولا تمييز صالح بأن تكون الاستحاضة مستمرة من أول ما رأت الدم ودمها على صفة واحدة أو على صفات مضطربة لا يمكن أن تكون حيضاً ، فهذه تعمل بعادة غالبالنساء فيكون حيضها ستة أيام أو سبعة من كل شهر ، يبتديء من أول المدة التي رأت فيها الدم ، وما عداه استحاضة .مثال ذلك : أن ترى الدم أول ما تراه في الخامس من الشهر ويستمر عليها من غير أن يكون فيه تمييز صالح للحيض لا بلون ولا غيره فيكون حيضها من كل شهر ستة أيام أو سبعة تبتديء من اليوم الخامس من كل شهر . لحديث حمنة بنت جحش رضي الله عنها أنها قالت : يا رسول الله , إني أستحاض حيضة كبيرة شديدة فما ترى فيها قد منعتني الصلاة والصيام ؟ فقال : ( أنعت لك [أصف لك استعمال] الكرسف [وهو القطن] تضعينه على الفرج ، فإنه يذهب الدم ، قالت : هو أكثر من ذلك . وفيه قال : ( إنما هذا ركضة من ركضات الشيطان فتحيضي ستة أيام أو سبعة في علم الله تعالى ، ثم اغتسلي حتى إذا رأيت أنك قد طهرت واستنقيت فصلي أربعاً وعشرين أو ثلاثاً وعشرين ليلة وأيامها وصومي ) . الحديث رواه أحمد وأبو داود والترمذي وصححه ، ونقل عن أحمد أنه صححه ، وعن البخاري أنه حسنه .وقوله صلى الله عليه وسلم : ( ستة أيام أو سبعة ) ليس للتخيير وإنما هو للاجتهاد فتنظر فيما هو أقرب إلى حالها ممن يشابهها خلقة ويقاربها سناً ورحماً وفيما هو أقرب إلى الحيض من دمها ، ونحو ذلك من الاعتبارات فإن كان الأقرب أن يكون ستة جعلته ستة , وإن كان الأقرب أن يكون سبعة جعلته سبعة

“যার নির্দিষ্ট অভ্যাস নেই। আবার হায়েযকে ইস্তেহাযা থেকে পৃথক করার বিশেষ আলামতও নেই। অর্থাৎ প্রথম রক্ত দেখার পর থেকে সবসময় রক্ত এক রকম থাকে কিংবা নানান রকম থাকে যেটা হায়েয হতে পারে না। এ ধরণের নারী অধিকাংশ নারীদের অভ্যাস অনুযায়ী আমল করবে। সুতরাং তার হায়েয হবে প্রতি মাসে ছয় দিন বা সাত দিন। প্রথম যখন রক্ত দেখবে তখন থেকে সময় শুরু হবে। আর বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা। উদাহরণস্বরূপ মাসের পঞ্চম দিন তিনি রক্ত দেখলেন। এরপর রক্তপাত চলতে থাকল। কোনোভাবে সেটাকে হায়েয হিসেবে চিহ্ণিত করা গেল না। না রঙের মাধ্যমে আর না অন্য কোনো মাধ্যমে। অতএব, এমন নারীর হায়েয হবে প্রতি মাসে ছয় দিন বা সাত দিন। যার সূচনা হবে মাসের পঞ্চম দিন থেকে। এর দলিল হামনা বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস; তিনি বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল! আমার খুব বেশি পরিমাণে দীর্ঘ সময় নিয়ে ইস্তেহাযার রক্তপাত হয়। আপনি কী মনে করেন এটি আমাকে সালাত-রোযা থেকে বিরত রাখবে। তিনি বললেন আমি তোমাকে একটি সুতি কাপড় ব্যবহারের পদ্ধতি বলে দিচ্ছি। তুমি কাপড়টিকে গুপ্তাঙ্গের ওপর রাখবে। এটি রক্তক্ষরণ রোধ করবে। হামনাহ বললেন রক্ত এর চেয়ে বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটি শয়তানের লাথির আঘাত। অতএব, তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা করবে; যা আল্লাহর জ্ঞানে আছে। তারপর গোসল করবে। যখন দেখবে তুমি পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন হয়েছ ও পবিত্র হয়েছ তখন তেইশ দিন বা চব্বিশ দিন সালাত পড়বে ও রোযা রাখবে।”[হাদীসটি আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আহমদ থেকে বর্ণিত আছে যে তিনিও হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন এবং বুখারী থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি হাদীসটি হাসান বলেছেন।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য: ‘ছয় দিন অথবা সাত দিন’ এটি পছন্দ করার এখতিয়ারের দেয়া নয়; বরং ইজতিহাদ (বিবেক-বিবেচনা খাটানো)-এর জন্য। অর্থাৎ সেই নারী দেখবেন যে, তার শারীরিক গঠন, বয়স ও আত্মীয়তার বিবেচনা থেকে কোন নারী তার কাছাকাছি এবং হায়েযের রক্তের বৈশিষ্ট্যের বিবেচনা ও অন্যান্য বিবেচনা থেকে কোনটি অধিকতর নিকটবর্তী। যদি দেখে ছয়দিন নিকটবর্তী তাহলে ছয়দিনকে হায়েয গণ্য করবে। আর যদি সাতদিন নিকটবর্তী হয় তাহলে সাতদিনকে হায়েয গণ্য করবে।[সমাপ্ত][শাইখ ইবনে উছাইমীনের “রিসালাতুন ফিদ দিমায়িত তাবিঈয়্যাতি লিন্নিসা”।(ইবনু উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ২৩৮)
.
পরিশেষে সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এ পর্যন্ত আমরা জানতে পারলাম যে, নারীর লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত কখনো কখনো হায়েয হিসেবে এবং কখনো ইস্তেহাযাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। যে সময়ের রক্তকে হায়েযের রক্ত বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে সে সময়টাতে তিনি হায়েযগ্রস্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং তখন হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। আর যে সময়ে হায়েয শেষ হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে সে সময়ে তিনি পবিত্র। তথা সালাত পড়বেন, রোযা রাখবেন এবং স্বামী তার সাথে সহবাস করতে পারবে। আর যখন ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে তখন ইস্তেহাযার নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে। ইতোপূর্বে আমি হায়েয ও ইস্তেহাযাহর
হুকুম-আহকাম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আশা করি মনোযোগ সহকারে পড়লে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার-আমার ইলমে আমলে আরো বেশি বারাকাহ দান করুন।(এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৬৮৮১৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: