আজকের যিকিরের ফজিলত অন্য সকল দু’আ থেকে ভিন্ন। তাই দেরি না করে অতীব সুন্দর দু’আ বা যিকিরটি মুখস্থ করে ফেলুন।
▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! প্রথমেই বলে রাখছি দু’আটি লম্বা দেখে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, কেননা দেখতে বড় হলেও প্রকৃতপক্ষে তা নয়,বরং দু’আটি অতি ছোট্ট এবং সহজ। এখানে একই বাক্য দ্বিতীয়বার রিপিট করা হয়েছে। তবে এই দু’আটির ফজিলত অন্য সকল দু’আর চেয়ে ভিন্ন। আমার গবেষণায় (আল্লাহু আলাম) হাদীসে বর্নিত যিকিরের মধ্যে এত বিশাল ফজিলত আর কোন যিকিরের ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ) বলেছেন বলে জানা নেই। কারণ এই যিকিরটি সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন রাত-দিন তথা ২৪ ঘন্টা একটানা বিভিন্ন (ফজিলতপূর্ণ) যিকির করার চেয়েও উত্তম (সুবহানাল্লাহ)। একবার চিন্তা করুন যিকিরটি কতটা ফজিলতপূর্ণ। হাদীসটি বর্ননা করেছেন রাসূল (ﷺ) সাহাবী আবু উমামাহ আল-বাহিলি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তিনি বলেন,একদা আমি বসা অবস্থায় আমার ঠোঁট নাড়াচ্ছিলাম (আল্লাহর যিকির করতে ছিলাম) এমন সময় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আসলেন। তিনি আমাকে বললেন, তোমার ঠোঁট নাড়াচ্ছো কেন? আমি বললাম,আল্লাহর যিকির করছি;হে আল্লাহর রাসুল! তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,”আমি কি তোমাকে এমন দু’আ শিখিয়ে দিব না যা কিনা সমগ্র দিন-রাতের (নফল) যিকির থেকেও উত্তম কিছু? আমি বললাম, হ্যাঁ,বলুন। তখন রাসূল (ﷺ) দু’আটি শিখিয়ে দিলেন- এবং বললেন তুমি নিজে এ দু’আ শিখো, এবং তোমার পরবর্তীতে যারা আসবে তাদেরকেও শিখাও।”দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে,
.
سُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ، وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ مَا خَلَقَ، وَسُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ مَا فِي الْأَرْضِ وَالسَّمَاءِ، وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ مَا فِي الْأَرْضِ وَالسَّمَاءِ، وَسُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ، وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ,وَسُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ كُلِّ شَيْءٍ، وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ كُلِّ شَيْءٍ
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِلْءَ مَا خَلَقَ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَدَدَ مَا فِي الْأَرْضِ وَالسَّمَاءِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِلْءَ مَا فِي الْأَرْضِ وَالسَّمَاءِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَدَدَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِلْءَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ, وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَدَدَ كُلِّ شَيْءٍ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِلْءَ كُلِّ شَيْءٍ
মোটামুটি উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা খলাক্বা,ওয়া সুবহানাল্লাহি মিল’আ মা খলাক্বা,ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা ফিল আরদ্বি ওয়াস সামায়ি, ওয়া সুবহানাল্লাহি মিল’আ মা ফিল আরদ্বি ওয়াস সামায়ি,ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা আ’হস্বা কিতাবুহু, ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘মিল’আ মা আ’হস্বা কিতাবুহু,ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা কুল্লি শাইয়িন,ওয়া সুবহানাল্লাহি মিল’আ কুল্লি শাইয়িন।
.
আলহামদুলিল্লাহি ‘আদাদা মা খলাক্বা,ওয়ালহামদুলিল্লাহি মিল’আ মা খলাক্বা,ওয়ালহামদুলিল্লাহি ‘আদাদা মা ফিল আরদ্বি ওয়াস সামায়ি, ওয়ালহামদুলিল্লাহি মিল’আ মা ফিল আরদ্বি ওয়াস সামায়ি, ওয়ালহামদুলিল্লাহি ‘আদাদা মা আ’হস্বা কিতাবুহু, ওয়ালহামদুলিল্লাহি মিল’আ মা আ’হস্বা কিতাবুহু,ওয়ালহামদুলিল্লাহি ‘আদাদা কুল্লি শাইয়িন, ওয়ালহামদুলিল্লাহি মিল’আ কুল্লি শাইয়িন।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন,না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার সৃষ্টি পরিপূর্ণ, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তার সমান সংখ্যক, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তার পরিপূর্ণ সংখ্যক,আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে তার সমান সংখ্যক, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে তার পরিপূর্ণ সংখ্যক,আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সকল বস্তর সংখ্যা পরিমাণ, এবং আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সকল বস্তর পরিপূর্ণ।
.
আল্লাহর প্রশংসা তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, আল্লাহর প্রশংসা তাঁর সৃষ্টি পরিপূর্ণ, আল্লাহর প্রশংসা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তার সমান সংখ্যক,আল্লাহর প্রশংসা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তার পরিপূর্ণ,আল্লাহর প্রশংসা তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে তার সমান সংখ্যক, আল্লাহর প্রশংসা তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে তার পরিপূর্ণ,আল্লাহর প্রশংসা সকল বস্তর সংখ্যা পরিমাণ এবং আল্লাহর প্রশংসা সকল বস্ত পরিপূর্ণ।(মুসনাদে আহমেদ হা/২২১৯৮ নাসায়ী সুনানুল কুবরা হা/৯৯৯৪,সহীহ আত তারগীব হা/১৫৭৫, সিলসিলা সহীহা হা/২৫৭৮,সহীহুল জামে হা/২৬১৫ হাদীসটি বিশুদ্ধ)।
#নোট: যিকিরটি দুটি অংশে বিভক্ত হলেও, তেমন কোন পার্থক্য নেই,এক স্থানে শুরুতে “সুবহানাল্লাহ” অন্য স্থানে “আলহামদুলিল্লাহ” আর মাঝখানে এক বাক্যে “আদাদা” অন্য বাক্যে “মিল’আ” এছাড়া আর কোন পরিবর্তন নেই,তাই একটি অংশ মুখস্থ করলেই অন্যটি পারবেন,আমি প্রথম অংশটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে অনুবাদ করে দিচ্ছি। আর হা” দু’আটির দুটি প্যারা আগ-পিছ করে পড়া যাবে।
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন—
.
سُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ
(সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা খলাক্বা) অর্থ:আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক,
.
وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ مَا خَلَقَ،
(ওয়া সুবহানাল্লাহি মিল’আ মা খলাক্বা) অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার সৃষ্টি পরিপূর্ণ,
.
وَسُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ مَا فِي الْأَرْضِ وَالسَّمَاءِ،
(ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা ফিল আরদ্বি ওয়াস সামায়ি) অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তার সমান সংখ্যক,
.
وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ مَا فِي الْأَرْضِ وَالسَّمَاءِ،
(ওয়া সুবহানাল্লাহি মিল’আ মা ফিল আরদ্বি ওয়াস সামায়ি) অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তার পরিপূর্ণ।
.
وَسُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ،
(ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা আ’হস্বা কিতাবুহু) অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে তার সমান সংখ্যক,
.
وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ مَا أَحْصَى كِتَابُهُ،
(ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘মিল’আ মা আ’হস্বা কিতাবুহু) অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর কিতাব যা গণনা করেছে তার পরিপূর্ণ।
.
وَسُبْحَانَ لِلَّهِ عَدَدَ كُلِّ شَيْءٍ،
(ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা কুল্লি শাইয়িন,)
অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সকল বস্তর সংখ্যা পরিমাণ,
.
وَسُبْحَانَ لِلَّهِ مِلْءَ كُلِّ شَيْءٍ
(ওয়া সুবহানাল্লাহি মিল’আ কুল্লি শাইয়িন) অর্থ: এবং আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সকল বস্ত পরিপূর্ণ।
.
প্রিয় পাঠক! আগেই বলেছি দু’আটি দেখতে সামান্য বড় হলেও, আসলে তা নয়,বরং দু’আটি ছোট্ট,সহজ এবং খুবই চমৎকার। দু’আটির অর্থ এবং ফজিলত খুবই সুন্দর ও ব্যাপক। দু‘আটির অর্থের দিকে লক্ষ করলেই এর বিরাট গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। নামে এটি একটি দু’আ হলেও মূলত এটি একটি যিকির। তাই প্রত্যেকের উচিত যিকিরটি মুখস্থ করা নেওয়া,এবং নিয়মিত একবার করে পড়া। দু’আটি সকাল-সন্ধ্যায়, নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে, লাইলাতুল কদরে এবং অন্য যেকোনো সময় পাঠ করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।