প্রশ্ন: স্বামীর হক সম্পূর্ণ আদায় না করলে কি গুনাহ হবে? শরীয়ত সম্মত কারনে যদি স্বামীর প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকে তবুও জোরপূর্বক সেই সম্পর্কে থাকাটা কি স্বামীর প্রতি অন্যায় করা হবে? এক্ষেত্রে আমার করনীয় কি?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা পুরুষকে নারীর ‘‘ক্বাওওয়াম’’ বলেছেন। ক্বাওওয়াম অর্থ হলো: অভিভাবক, তত্তাবধায়ক, ব্যবস্থাপক, পরিচালক ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজিদে বলেনالرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّـهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ . ‘‘পুরুষেরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব (কর্তৃত্ব) দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় (ভরণপোষণ) করে।’’ [সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪] তাছাড়া স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য করা পারিবারিক শান্তি ও সৌহার্দ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামে এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব, যা আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে না। বরং অনেক ‘উলামা বলেছেন, আনুগত্যের বিষয়ে স্বামীর অধিকার পিতামাতার অধিকার থেকেও অগ্রগণ্য। অর্থাৎ, যদি স্বামী ও পিতা উভয়ে তাকে কোনো নেক কাজের নির্দেশ দেন, তবে স্বামীর আদেশই অগ্রাধিকার পাবে। সুতরাং
ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলার কারণে যদি কেউ স্বামীর হক ক্ষুণ্ন করে তাহলে তা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে যদি শারঈ কোনো বৈধ কারণ যেমন শারীরিক অসুস্থতা বা মানসিক অসুবিধা থাকে, তাহলে সেই পরিস্থিতি ভিন্নভাবে বিবেচিত হবে।স্ত্রীর জন্য স্বামী আনুগত্য করা ওয়াজিব এর দলিল হচ্ছে,মহান আল্লাহ বলেছেন,
فَالصّٰلِحٰتُ قٰنِتٰتٌ حٰفِظٰتٌ لِّلۡغَیۡبِ بِمَا حَفِظَ اللّٰهُ ؕ
“নেককার স্ত্রীগণ হয় (আল্লাহ ও স্বামীর প্রতি) অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে।”(সুরা নিসা: ৩৪) আয়াতে উদ্ধৃত ‘ক্বানিতাহ’ তথা ‘অনুগতা’ বিশেষণটি সে মহিলার জন্যই প্রযোজ্য হয়, যে তদীয় স্বামীর আনুগত্য করে। এ ব্যাখ্যা করেছেন ইবনু ‘আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ও একাধিক সালাফ। সুতরাং ‘অনুগতা’ মহিলা তিনিই, যিনি নিজের স্বামীর আনুগত্য করেন। সালাফদের থেকে এমন তাফসীরই বর্ণিত হয়েছে।(তাফসীরে তাবারী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৯৪)। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ﴾“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারিনী ঐ বিষয়ে যা আল্লাহ হিফাযত করেছেন”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪] এ আয়াতের দাবি অনুযায়ী স্ত্রীর ওপর স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব, সেটি তার সাথে সফর হোক, তার সাথে আনন্দ করার সুযোগ দেওয়ার বিষয় হোক বা অন্য যে কোনো চাহিদা হোক। এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতও প্রমাণ করে।”(মাজমুউল ফাতওয়া; খণ্ড: ৩২; পৃষ্ঠা: ২৬০ ও ২৬১) সুতরাং স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব হচ্ছে, স্বামীর সাথে পারস্পরিক আচরণে সে হবে তার প্রতি আনুগত্যশীল, সন্তুষ্ট, বিনয়ী ও অবনমিত।
.
হাদিসেও এসেছে, আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমাজানের সিয়াম রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, তাহলে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” ইবনু হিব্বান তাঁর ‘সহিহ’ গ্রন্থে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আল-আলবানি বলেছেন, এ হাদিসের সনদ: হাসান লি গাইরিহি।(ইবনু হিব্বান, হা/৪১৬৩; তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৯৮; সহিহ তারগীব, হা/২৪১১; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)। আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমাজানের সিয়াম রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।”(আহমাদ, হা/১৬৬১; সহিহ তারগীব, হা/১৯৩২; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)
এখানে দলিল হচ্ছে: হাদিসে উল্লিখিত বিধানগুলোর সংযোগ। বলা হয়েছে, ‘কোন মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে’, আর এ কাজ ফরজ। এরপর বলা হয়েছে, ‘রমাজানের সিয়াম রাখে’, এটাও ফরজ বিধান। তারপর বলা হয়েছে, ‘যৌনাঙ্গের হেফাজত করে’, এটাও ফরজ। সবশেষে বলা হয়েছে, ‘আর স্বামীর অনুগত্য করে’, এটাও ফরজ বিধান। এ বিধানগুলো পালন করলে তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো। উপরন্তু যে রমনী স্বামীর আনুগত্য করে না, তার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “দু ব্যক্তির সালাত তাদের মাথা অতিক্রম করে না।” অর্থাৎ, মাথার ওপরে ওঠানো হয় না, সালাতের সওয়াব দেওয়া হয় না। হ্যাঁ, সালাত পড়ার মাধ্যমে সালাতের দায়িত্ব পালন হয় বটে। কিন্তু তাদের দুজনকে সালাতের সওয়াব দেওয়া হয় না। তারা কারা? নবিজি ﷺ বলেছেন, “একজন সেই গোলাম, যে তার মনিবের নিকট থেকে পলায়ন করেছে; যতক্ষণ না সে মনিবের কাছে ফিরে আসছে। অপরজন সেই মহিলা, যে তার স্বামীর অবাধ্য হয়েছে; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।” ত্বাবারানী ও হাকিম এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আলবানী এ হাদিসকে সহিহ ও হাসান বলেছেন।(তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৩৬২৮; হাকিম, হা/৭৩৩০; সহিহুল জামি‘, হা/১৩৬; সিলসিলাহ সহিহাহ, হা/২৮৮; সহিহ তারগীব, হা/১৮৮৮ ও ১৯৪৮)।
.
দ্বিতীয়ত: স্বামীর অন্যায়ের কারণে যদি তার প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকে তবুও জোরপূর্বক সেই সম্পর্কে থাকাটা কি স্বামীর প্রতি অন্যায় করা হবে? এক্ষেত্রে করনীয় কি?
.
প্রশ্নকারী বোন, আপনি বলেছেন আপনার স্বামী যদি আপনার প্রাপ্য অধিকার যথাযথভাবে আদায় না করে, আপনার সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা না করে, তিনি হারাম কাজে লিপ্ত থাকেন, এমনকি তিনি আপনার মা-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন, যার ফলে তার প্রতি আপনার মায়া-মমতা ও আবেগ অনুভূতি কমে গেছে। এতে আপনার কোনো গুনাহ হচ্ছে কি না? আর হলে এ অবস্থায় আপনার করণীয় কী?
.
সন্মানিত বোন! প্রথমেই আমাদের জানা উচিত যে, এই দুনিয়া জান্নাত নয়, এখানে পূর্ণতা নেই। দুনিয়ায় মানুষ কষ্ট পাবে, দুঃখ ভোগ করবে এটাই দুনিয়ার চিরন্তন সত্য নীতি। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡ كَبَدٍ “নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে।” (সূরা বালাদ: ৪) অর্থাৎ দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন কষ্টের মধ্যে পতিত আছে, এমনকি দুনিয়ার প্রতিটি ঘরেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। কখনো তা সামান্য, কখনো জটিল। যে কেউ যদি নিজের সমস্যার সমাধান চান, তবে প্রথমেই তাকে সমস্যার প্রকৃত কারণ এবং সে অনুযায়ী সঠিক সমাধান তাকে খুজে বের করতে হবে। তাই বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রাথমিকভাবে আপনার জন্য করণীয় হলো:
.
স্ত্রী হিসেবে অবশ্যই আপনার স্বামীকে উত্তম পন্থায় উপদেশ দিন, স্বামীকে উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর উচিত ধৈর্য ভালোবাসা ও কোমলতা বজায় রাখা। তার ভুলগুলো স্মরণ করিয়ে দিন, তবে তা যেন কঠোর ভাষায় না হয়, বরং হৃদয়গ্রাহী ও মধুর বাক্যে হয়।গম্ভীর বা রূঢ় আচরণ নয়, বরং স্নেহময় ও সদাচরণ দিয়ে যেন হয়। যদি ভালোবাসা ও নম্রতার সাথে বোঝানোর পরও তিনি ভুল এবং হারাম কাজ থেকে ফিরে না আসেন, তাহলে প্রজ্ঞার সাথে তার পরিবারের নিকটস্থ কোনো সৎ ও বিচক্ষণ ব্যক্তির মাধ্যমে তাকে উপদেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।কিংবা যদি সম্ভব হয়,আপনার পরিচিত কারো মাধ্যমে আপনার স্বামীকে একজন বিশুদ্ধ সালাফি মানহাজের আমলধারী আলেমের শরণাপন্ন করান; যিনি আপনার স্বামীকে হেকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে কিছু নসিহত করবেন। হতে পারে এর মাধ্যমে তিনি নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হবেন এবং সঠিক পথে ফিরে আসবেন। পাশাপাশি একটু ভেবে দেখুন তো, আপনার প্রতি আপনার স্বামী কর্তৃক স্থাপিত মুসিবতের পেছনে আপনিও কিছুটা দায়ী কিনা? কেননা বিজ্ঞজনরা বলে থাকেন, যে স্ত্রীর যবান চলে বেশি আর স্বামীর হাত চলে বেশি। যদি এমনটি হয় তাহলে যবান সংযত করার ব্যাপারে নিজে সর্বোচ্চ সচেষ্ট হোন। স্বামীর রাগ ওঠে এমন কথা ও কাজ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। অনেক সময় পুরুষ তার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সুতরাং তিনি বিশেষ কাজে আহবান করলে আপনার সম্মতি যেন থাকে। প্রয়োজনে কৃত্রিমভাবে হলেও আপনি এবিষয়ে আগ্রহ বেশি দেখাবেন। দেখবেন, এটাও তার রাগ প্রশমনে খুব দ্রুত কাজ করবে। মনে রাখবেন আপনি হয়তো মুসিবতে আছেন। কিন্তু আপনার চাইতেও বেশি মুসিবতে আছে এ দুনিয়ায় এমন স্ত্রীও আছে। এমন নরপশুও তো আছে যে স্ত্রীকে কেবল মারধোর করে না; বরং যৌতুকের দাবি নিয়ে স্ত্রীর পরিবারের জীবনকেও বিষিয়ে তোলে। মাতাল হয়ে এসে স্ত্রীর হাত পা ভেঙ্গে দেয়। এদের কথা ভাবুন আপনার দুঃখ কিছুটা হলেও হালকা হবে। আপনার স্বামী যতই খারাপ হোক না কেন; নিশ্চয় তার মাঝে কিছু ভালো গুণও আছে। যেমন হয়ত তিনি সালাত আদায়কারী, আপনার সন্তানদের প্রতি সহনাভূতিশীল। । কিংবা অন্য কোন গুণও তার মাঝে থাকতে পারে। সেগুলো দেখুন, এতে তার প্রতি আপনার অনাসক্তি কিছুটা হলেও কমবে। কিছুটা হলেও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়া ভালোবাসা পুনরজ্জীবিত হবে। সর্বোপরি একজন স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো দোয়া। বিশেষত সিজদার মধ্যে ও শেষ রাতের একাকী মুহূর্তে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ ভাবে প্রার্থনা করুন যেন তিনি স্বামীকে হেদায়েত দান করেন, অন্তরকে প্রশান্ত করেন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহর রহমত ও দয়া ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়, তাই ধৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে দোয়া চালিয়ে যেতে হবে।
.
পাশাপাশি আপনার স্বামীর বুঝা উচিত যে, একটি আদর্শ দম্পতির মূল দায়িত্ব হলো একে অপরের প্রতি সদাচারী হওয়া, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় করা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, পবিত্র ও মধুর সম্পর্কগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। এ সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও দায়িত্বশীলতা।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দু’জনের পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিবাহের চেয়ে উত্তম কিছু নেই।” (ইবনু মাজাহ, হা/১৮৪৭) তবে দুঃখজনকভাবে, সয়তানের চক্রান্তের কারনে আজ অনেক পরিবারে অশান্তি ও কলহ বিরাজ করছে। কেননা শয়তান মানুষের মাঝে শত্রুতা, বিচ্ছিন্নতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করে। তার কাছে সবচেয়ে পছন্দের কাজ হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করা।সাথে রয়েছে ব্যক্তির নির্বুদ্ধিতা, অযৌক্তিক আবেগ, নিয়ন্ত্রণহীন রাগ এবং অতিরিক্ত চাহিদা। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, পারিবারিক জীবনে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সদাচরণ অপরিহার্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,”তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে উত্তম আচরণ করো। যদি তাদের কোনো বিষয়ে তোমাদের অপছন্দ হয়, তাহলে হতে পারে, তোমরা যা অপছন্দ করছো, তাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন” (সূরা আন-নিসা: ১৯)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, “তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে।” (সহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪) সুতরাং শান্তিপূর্ণ ও সুখী দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি হলো পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ধৈর্য এবং ইসলামি আদর্শ মেনে চলা। একজন স্বামী যেমন তার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বশীল, তেমনি একজন স্ত্রীও তার স্বামীর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হবে। এভাবেই দাম্পত্য জীবন হবে প্রশান্তির এক সুন্দরের নীড়।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:لا يجوز للزوج أن يعامل زوجته معاملة سيئة ؛ لأن الله تعالى يقول : ( وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ) النساء/19 ، ويقول صلى الله عليه وسلم : ( وإن لزوجك عليك حقًا ) – رواه البخاري من حديث عبد الله بن عمر بن العاص رضي الله عنهما – ، وإذا أساء عشرتها : فإنه ينبغي لها أن تقابل ذلك بالصبر ، وأن تؤدي ما له عليها من حق ؛ ليكون لها الأجر في ذلك ، ولعل الله أن يهديه ، قال الله تعالى : ( وَلا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ ) فصّلت/34 “স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা জায়েয নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ঘৃণা কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে”(সহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوْهُ. তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ কর’।(তিরমিযী, হা/৩৮৯৫) প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা বর্জন করে, একে অপরের অসদাচরণ, অসদ্ব্যবহার ও অন্যায়াচরণে যথাসাধ্য ধৈর্যধারণ করতে হবে। মন্দ আচরণকে ভালো ব্যবহার দ্বারা প্রতিহত করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করুন তা দ্বারা যা উৎকৃষ্ট, ফলে আপনার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত’। (সূরা আল-ফুসসিলাত: ৩৪; আল-মুনতাক্বা ইবনে ফাওযান: খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১১৭)।
.
কাতার ভিত্তিক ফাতওয়া বোর্ড ইসলাম ওয়েবের আলেমগনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: আমি সাত মাস আগে একজন দ্বীনদার তাকওয়াশীল যুবককে বিয়ে করেছি। তিনি আমাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন কিন্তু আমি তাকে একইভাবে ভালোবাসতে পারছি না, তার প্রতি কোনো অনুভূতি আসছে না কেননা বিয়ের আগে অন্য একজনকে পছন্দ করতাম, যা এখনো আমার মনে প্রভাব ফেলছে।আমি এখন তালাকের কথা ভাবছি, কিন্তু নিশ্চিত নই ধৈর্য ধরব নাকি সম্পর্ক থেকে সরে আসব। দয়া করে সঠিক পথের পরামর্শ দিন।
জবাবে তারা বলেন:
فإن كان هذا الشاب صاحب دين وخلق، فنوصيك بالصبر والبقاء في عصمته، فصاحب الدين والخلق إن أحب الزوجة أكرمها وإن أبغضها لم يظلمها، ومن هنا حث الشرع على قبوله زوجا، كما في الحديث الذي أشرت إليه. وعدم الشعور بالحب تجاهه لا يستلزم فراقه، إذ ليس على الحب وحده تبنى البيوت، كما قال عمر ـ رضي الله عنه ـ وأين تجد المرأة رجلا ترتضى جميع خصاله، أو أن يجد الرجل امرأة ترتضى من جميع الجوانب؟ ومن هنا قال النبي صلى الله عليه وسلم ـ كما في الحديث الذي رواه مسلم: لا يفرك مؤمن مؤمنة، إن كره منها خلقا رضي منها آخر.فمهما أمكنك الصبر على زوجك هذا فافعلي، ويمكنك تسلية نفسك بتذكيرها بأنك ربما لو فارقت هذا الشاب وتزوجت من آخر أن تجدي فيه من رقة الدين وسوء الخلق ما قد ينكد عليك حياتك.وعلى كل، فإن لم تصبري على البقاء في عصمة زوجك هذا، وخشيت أن يكون كرهك له سببا في تفريطك في حقه جاز لك أن تطلبي منه الخلع، ليفارقك مقابل عوض تدفعينه إليه، وإذا كان ما تجدينه تجاه زوجك سببه التفكير من ذلك الشخص الأول الذي تقدم لخطبتك، فإنك تدميرن حياتك وتخربين بيتك بيدك، وليس من خلق المؤمنة المصونة أن تكون في عصمة رجل ثم تفكر في غيره، فتفكيرها وتعلقها بذلك الغير يؤدي إلى فساد عظيم وشر مستطير.
“যদি এই যুবক ধর্মপরায়ণ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হন, তাহলে আমরা আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতে এবং তার সংসারেই অবিচল থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা যে ব্যক্তি দ্বীন ও সচ্চরিত্রের অধিকারী সে যদি তার স্ত্রীকে ভালোবাসে তবে তাকে সম্মান করবেন, আর যদি তাকে অপছন্দ করেন তবুও তার প্রতি জুলুম করবেন না। এ কারণেই শরীয়ত এমন ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে, যেমন আপনি যে হাদিসের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, তাতেও এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। স্বামীর প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি না থাকা তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ নয়। কেননা, কেবল ভালোবাসার ভিত্তিতেই ঘর-সংসার টিকে থাকে না। যেমন খলিফা উমর (রাঃ) বলেছেন: “নারী কোথায় এমন পুরুষ খুঁজে পাবে, যার সব গুণে সে সন্তুষ্ট হবে? অথবা একজন পুরুষ কোথায় এমন নারী পাবে, যে সব দিক থেকে তার মনঃপূত হবে?” এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যেমনটি মুসলিম তার সাহিহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন “কোন মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীর (স্ত্রীর) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করে। কারণ, যদি সে তার কোনো একটি স্বভাব অপছন্দ করে, তবে অন্য কোনো স্বভাব পছন্দ করবে।”(সহীহ মুসলিম হা/১৪৬৯) অতএব, যতটুকু সম্ভব তোমার স্বামীর সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করেন। আপনি নিজেকে এই চিন্তায় সান্ত্বনা দিতে পারেন যে, হয়তো যদি আপনি এই স্বামীকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন, তবে সেখানে আপনি দ্বীনের ক্ষেত্রে শৈথিল্য ও খারাপ চরিত্রের এমন কিছু পাবেন যা আপনার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। যাই হোক, যদি আপনি আপনার স্বামীর সঙ্গে ধৈর্য ধরে সংসার করতে না পারেন এবং আশঙ্কা করেন যে, আপনার বিরাগ আপনাকে তার হক নষ্ট করতে বাধ্য করবে, তাহলে তোমার জন্য স্বামীকে ‘খুলা’ (বিচ্ছেদের বিনিময়ে স্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত অর্থের মাধ্যমে তালাক) চাওয়ার অনুমতি রয়েছে। আর যদি আপনার স্বামীর প্রতি বিরাগের কারণ হয় সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে আপনার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, তাহলে আপনি নিজ হাতে নিজের জীবন ধ্বংস করছেন এবং নিজের সংসার ভেঙে দিচ্ছেন। একজন সচ্চরিত্রবান মুমিন নারীর জন্য এটা মোটেও শোভনীয় নয় যে, সে এক পুরুষের সংসারে থেকেও অন্যের কথা চিন্তা করবে। কেননা, এমন চিন্তা ও আসক্তি বড় ধরনের অনিষ্ট ও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”(ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-১৩৮৮৯২)।
.
অতঃপর স্ত্রী হিসেবে আপনার যথার্থ প্রচেষ্টার পরেও যদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, স্বামী সঠিক পথে ফিরে না আসে এবং তার প্রতি আপনার মায়া-মমতা, ভালোবাসা ও সহানুভূতি পুনরায় জাগ্রত না হয়, বরং তার সাথে সংসার করার কারণে আপনার ঈমান-আমল, আখলাক ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সেই স্বামীর নিকট স্ত্রী হিসেবে আপনার জন্য খোলা তালাক চাওয়া বৈধ। স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রী কোর্টের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে। তবে একজন বুদ্ধিমান নারীর করণীয় হলো, স্বামীর মাঝে দোষ-ত্রুটি দেখলে তাকে ধৈর্যের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করা, নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে চেষ্টা করা, স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া। মোটকথা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া করবে না এবং সন্তান-সন্ততির কথা বিবেচনা করে সবর অবলম্বন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিখারার সালাত আদায় করবে। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করবেন।পাশাপাশি জেনে রাখা ভালো, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এক সুদৃঢ় ও মযবুত বন্ধন, যা সহজে ছিন্ন হওয়ার নয়। এটা ছিন্ন হয় তালাকের মাধ্যমে। যথাযোগ্য শারঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক চাওয়া হারাম। এরূপ করলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে নারী বিনা কারণে স্বামীর নিকটে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম।’ (তিরমিযী হা/১১৮৬-৮৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/৮৩৩) তবে হা শরীয়ত সম্মত কারণে খোলা চাওয়া বৈধ এই মর্মে সুন্নাহ্ থেকে এর-দলিল হচ্ছে, সাবেত বিন ক্বাইস বিন শাম্মাস এর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি সাবেত বিন ক্বাইসের উপর চারিত্রিক বা দ্বীনদারির কোন দোষ দিব না। কিন্তু, আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হতে অপছন্দ করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি কি তার বাগানটি ফিরিয়ে দিবে? সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল। সে বলল: জ্বি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বাগানটি গ্রহণ করে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দাও”(সহিহ বুখারী হা/ ৫২৭৩) হাদিসের ব্যাখায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আবুল ফাদল আহমাদ বিন আলি ইবনু হাজার আল-আসকালানি,(রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৭৭৩ হি: মৃত:৮৫২ হি:] বলেন:ولكني أكره الكفر في الإسلام”أي أكره أن أعمل الأعمال التي تنافي حكم الإسلام من بغض الزوج وعصيانه وعدم القيام بحقوقه .. ونحو ذلك
“কিন্তু আমি মুসলিম হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হওয়া পছন্দ করি না” অর্থাৎ আমি সেই সব কাজ করতে পছন্দ করি না, যা ইসলামের বিধানের বিপরীত, যেমন স্বামীকে ঘৃণা করা, তার অবাধ্য হওয়া এবং তার অধিকার পূর্ণভাবে পালন না করা ইত্যাদি।(ফাতহুল বারী ফী শারহিল বুখারী, খণ্ড: ৯ পৃষ্ঠা: ৪০০) এই ঘটনা থেকে আলেমগণ গ্রহণ করেন যে, কোন নারী যদি তার স্বামীর সাথে অবস্থান করতে না পারে সেক্ষেত্রে বিচারক স্বামীকে বলবেন তাকে তালাক দিয়ে দিতে; বরং স্বামীকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দিবেন। এর পদ্ধতি হচ্ছে স্বামী বিনিময় গ্রহণ করবেন কিংবা তারা দুইজন এ বিষয়ে একমত হবেন; এরপর স্বামী তার স্ত্রীকে বলবেন: আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম কিংবা আমি তোমাকে খুলা তালাক দিলাম, কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন শব্দ।তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। দলিল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তালাক তারই অধিকার যার রয়েছে সহবাস করার অধিকার” অর্থাৎ স্বামীর।(সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২০৮১), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ হা/২০৪১) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] -কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: একজন মহিলা এমন এক স্বামীর অধীনে আছেন, যে কিছু বড় ধরনের পাপ ও অপরাধমূলক কাজ করে, যেমন মাদক সেবন ইত্যাদি। অথচ সে মহিলা একজন ধর্মপ্রাণ ও নেককার নারী (আমরা তাকে তেমনই মনে করি, আল্লাহই প্রকৃত বিচারক)। তিনি তার স্বামীকে বহুবার উপদেশ দিয়েছেন এবং চেষ্টা করেছেন যেন সে এসব অপরাধ পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ অবস্থায় তার করণীয় কী? তিনি কি তার পরিবারের কাছে চলে যাবেন, নাকি ধৈর্য ধারণ করবেন, যাতে হয়তো আল্লাহ তার স্বামীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন? তদ্ব্যতীত, স্বামী তার সন্তানদের নামাজ পড়তেও বাধা দেয়।”
.
শাইখ উত্তরে বলেন:
هذا الرجل الذي يفعل المحرمات هل يصلي أم لا يصلي
“এই ব্যক্তি কি সালাত আদায় করে, নাকি সে সালাতও ছেড়ে দিয়েছে?”
প্রশ্নকারী বললেন:يصلي بتهاون ، أحياناً في البيت ، وأحياناً في العمل ، وأحياناً يتأخر “সে অলসতার কারণে সালাতের ব্যাপারে গাফিলতি করে। কখনো বাসায় পড়ে, কখনো কর্মস্থলে পড়ে, আবার কখনো দেরি করে।”
শাইখ উত্তরে বলেন:
أرى أنها إذا نصحته ولم يستفد : فلها الحق في طلب الفسخ ، ويفسخ النكاح ، لكن على كل حال مثل هذه الأمور قد يكون هناك أشياء ما تتمكن معها من الفسخ ؛ لأنها معها أولاد ، يحصل مشاكل في الفسخ ، فإذا لم تصل معصيته إلى حد الكفر : فلا حرج عليها أن تبقى معه ؛ خوفاً من المفسدة ، أما إذا وصلت إلى حد الكفر مثل كونه لا يصلي : فهذا لا تبقى معه طرفة عين
“আমি মনে করি, যদি স্ত্রী তাকে উপদেশ দেওয়ার পরও কোনো উপকার না পায়, তাহলে তার জন্য বৈধ হবে যে, সে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করবে এবং এই বিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হবে। তবে এমন কিছু বিষয় থাকতে পারে, যা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বিচ্ছেদ করতে বাধা দিতে পারে যেমন তার সন্তানদের বিষয়টি। কারণ বিচ্ছেদ করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি স্বামীর এই পাপ কাজগুলো এমন পর্যায়ে না পৌঁছে যে, তা কুফরির পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে স্ত্রী চাইলে তার সাথে থাকতে পারে, যদি সংসার চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনো বড় ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। কিন্তু যদি স্বামীর অবস্থা এমন হয় যে, সে সালাত আদায় করে না, তাহলে স্ত্রী তার সাথে এক মুহূর্তও থাকা বৈধ নয়।”(ইবনু উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, পর্ব: ১৩; প্রশ্ন নং-১৮) মহান আল্লাহ আমাদের শয়তানের যাবতীয় কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহই মহা জ্ঞানী।
▬▬▬▬◐◯◑▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।