প্রশ্ন: সালাত আদায়ের জন্য কি আযান হওয়া শর্ত? পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সঠিক সময়সূচী জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের উপর দিবানিশি মোট ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। সাথে সাথে এগুলো আদায়ের জন্য তাঁর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী পাঁচটি সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাতে করে বান্দাহ্ এ সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে তার প্রতিপালকের সাথে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। এটা মানব অন্তরের জন্য অনেকটা বৃক্ষের গোড়ায় পানি সিঞ্চনের মত বিষয়। বৃক্ষকে যেমন বেড়ে উঠার জন্য নিয়মিত পানি দিতে হয়; মানব অন্তরকেও স্রষ্টার ভালোবাসায় স্থিতিশীল থাকার জন্য নিয়মিত সালাতের আশ্রয় নিতে হয়। একবারে সব পানি ঢেলে দিয়ে যেমন বৃক্ষের সঠিক প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না, মানব হৃদয়ও তদ্রূপ। একই ওয়াক্তে পাঁচটি নামায আদায় করা ফরয করা হলে বান্দার মাঝে ক্লান্তি ও বিরক্তিবোধ উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক ছিল। তাই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাঁচটি সালাত আদায় করা ফরয করা হয়েছে- যেন বান্দার মাঝে অবসন্নতা ও বিরক্তিবোধ না আসে। বস্তুতঃ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন অধিক প্রজ্ঞাবান।
.
জেনে রাখা ভাল যে, সালাত আদায়ের জন্য আযান হওয়া শর্ত নয় বরং নিদিষ্ট সময় হওয়া শর্ত। কারন কখনো কখনো পরিস্থিতির কারণে আজান নাও হতে পারে কিন্তু সময় সর্বদা বহমান থাকবে তাছাড়া মহান আল্লাহ বলেন:اِنَّ الصَّلٰوۃَ كَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ كِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا “নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের উপর ফরয”।(সূরা নিসা: ১০৩) উক্ত আয়াতে সালাত আদায়ের জন্য আযান হওয়া শর্তারোপ করা হয়নি,বরং সুনির্দিষ্ট সময় হওয়া শর্তারোপ করা হয়েছে। এখানে নির্ধারিত সময় বলে, সালাতের জন্য আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যেক সালাতের জন্য নির্ধারিত ওয়াক্তসমূহকে বোঝানো হয়েছে। এখানে সে ওয়াক্তসমূহ বলে দেয়া হয়নি।পক্ষান্তরে অন্য আয়াতে সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন এবং ফজরের সালাত নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।” [সূরা আল-ইসরা: ৭৮] পাশাপাশি হাদীসে সালাতের ওয়াক্তের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “জোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত। আসরের সময় হলো- যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মাগরিবেরসময় হলো- যতক্ষণ না পশ্চিমাকাশের লালিমা অদৃশ্য হয়ে যায়। এশার সময় হলো মধ্যরাত্রি পর্যন্ত।আর ফজরের সময় প্রভাতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। আর সূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।”(সহীহ মুসলিম: ৬১২)
অপর বর্ননায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবীদেরকে বললেন,”যখন সালাতের সময় হবে তখন তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে’ (সহীহ বুখারী, হা/৮১৮)। অত্র হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, সময় হলে আযান দিতে হবে। সময়ের পূর্বে আযান দেওয়া যাবে না। যদি কেউ নির্ধারিত সময়ের পূর্বে আযান দেয় তাহলে সে আযান যথেষ্ট হবে না এবং সেই আযান অনুযায়ী সালাত আদায় করলে সেই সালাত আল্লাহর কাছে ফরজ সালাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না বরং পুনরায় নিদিষ্ট সময় হলে আযান দিতে হবে। অতঃপর সেই সালাত পুনরায় পড়তে হবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত একদা বিলাল (রাঃ) সুবহে সাদিকের আগেই আযান দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় আযান দেয়ার স্থানে ফিরে গিয়ে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিলেনঃ জেনে রাখ, বান্দা (বিলাল) আযানের সময় সম্পর্কে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল।(আবু দাউদ হা/৫৩২)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,
: ” ومن صلى قبل الوقت , لم تجزئه صلاته , في قول أكثر أهل العلم , سواء فعله عمدا أو خطأ , كل الصلاة أو بعضها . وبه قال الزهري , والأوزاعي والشافعي , وأصحاب الرأي . وروي عن ابن عمر , وأبي موسى أنهما أعادا الفجر , لأنهما صلياها قبل الوقت …”
“যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সালাত আদায় করে তার সালাত শুদ্ধ হবে না এটি অধিকাংশ ওলামাদের মতামত। হোক তা ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত, সম্পূর্ণ সালাত বা এর কোনো অংশ সবক্ষেত্রেই একই বিধান প্রযোজ্য। এই মতের অনুসারী ছিলেন ইমাম যুহরি, আওযায়ী, শাফেয়ী এবং হানাফি ফকিহগণ। আব্দুল্লাহ বিন ওমর ও আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা একবার ফজরের সালাত আদায় করেছিলেন কিন্তু যখন জানতে পারলেন যে তা সময়ের আগেই আদায় হয়েছে তখন তাঁরা পুনরায় ঐ সালাত আদায় করেছিলেন”।(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৪৫)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] -কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: নির্ধারিত সময়ের আগে সালাত আদায়ের বিধান কী?
তিনি উত্তরে বলেন:
” الصلاة قبل وقتها لا تجزيء حتى ولو كانت قبل الوقت بدقيقة واحدة ، فلو كبر الإنسان للإحرام قبل الوقت فإنها لا تصح الصلاة ، لأن الله تعالى يقول : ( إن الصلاة كانت على المؤمنين كتابا موقوتا ) أي مؤقتة محددة ، فلا تصح الصلاة قبل وقتها ويجب إعادة تلك الصلاة التي صليت قبل وقتها والله الموفق”
“নির্ধারিত সময়ের আগে সালাত আদায় করলে (ঐ সালাত) শুদ্ধ হবে না, এমনকি যদি তা এক মিনিট আগেও হয়। যদি কেউ সময়ের আগে (সালাতের) তাকবিরে তাহরিমা উচ্চারণ করে, তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:(إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا) অর্থাৎ নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের উপর ফরয”।(সূরা নিসা:১০৩) সুতরাং, সালাত সময়ের আগে আদায় করলে তা শুদ্ধ হবে না এবং যে সালাত সময়ের আগে আদায় করা হয়েছে, সেটি পুনরায় আদায় করতে হবে। আল্লাহই তাওফিক দাতা।”(ইবনু উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড, ১২; পৃষ্ঠা: ২১৬)
.
অপর ফাতওয়ায় ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন:
أيضاً – : ” والصلاة لا تصح قبل الوقت بإجماع المسلمين ، فإن صلى قبل الوقت ، فإن كان متعمدا فصلاته باطلة ، ولا يسلم من الإثم . وإن كان غير متعمد لظنه أن الوقت قد دخل ، فليس بآثم ، وصلاته نفل ، ولكن عليه الإعادة ؛ لأن من شروط الصلاة دخول الوقت ”
“সমস্ত মুসলিম উম্মহর ইজমা (ঐকমত্য) এর ভিত্তিতে ওয়াক্তের আগে সালাত আদায় করা সহিহ নয়। যদি কেউ ওয়াক্ত হওয়ার আগে সালাত আদায় করে তাহলে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে করে তাহলে তার সালাত বাতিল এবং তার গুনাহ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে এই ধারণা থেকে করে যে, ওয়াক্ত প্রবেশ করেছে; তাহলে সে গুনাহগার হবে না। আদায়কৃত সালাতটি নফল সালাত হিসেবে গণ্য হবে। তবে তাকে ফরয সালাতটি পুনরায় আদায় করতে হবে; যেহেতু সালাতের জন্য ওয়াক্ত হওয়া শর্ত।(ইবনু উসাইমীন; ‘আশ শারহুল মুমতি; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৮)
.
▪️পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সঠিক সময়সূচী:
.
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “জোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত। আসরের সময় হলো- যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। মাগরিবেরসময় হলো- যতক্ষণ না পশ্চিমাকাশের লালিমা অদৃশ্যহয়ে যায়। ইশার সময় হলো মধ্যরাত্রি পর্যন্ত।আর ফজরের সময় প্রভাতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। আর সূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।”(সহীহ মুসলিম ৬১২) এই হাদীসে পাঁচটি সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে। আর ঘড়ির কাঁটায় ওয়াক্ত নির্ধারণ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন হবে। নিম্নে আমরা প্রতিটি সালাতের ওয়াক্ত বা সময়সীমা আলাদা আলাদাভাবে তুলে ধরব:
.
(১). জোহর: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “জোহরের সময় হলো, সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তার একগুণ বা সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত।” এ কথার মাধ্যমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহরের শুরু ও শেষ দুটো সময়ই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
ওয়াক্তের শুরু: সূর্যযখন মধ্যাকাশথেকে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়বে তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হবে। সূর্য হেলে পড়া তথা জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কিনা, তা বুঝে নেয়ার কৌশল হলো- ‘একটা খুঁটি বা এ জাতীয় অন্য কিছু একটা উন্মুক্ত স্থানে পুঁতে রেখে খুঁটিটির প্রতি লক্ষ্য রাখা। পূর্বাকাশে যখন সূর্য উদিত হবে তখন খুঁটিটির ছায়া পশ্চিম দিকে পড়বে। সূর্য যত উপরে উঠবে ছায়ার দৈর্ঘ্য তত কমতে থাকবে। যতক্ষণপর্যন্ত ছায়া কমতে থাকবে বুঝতে হবে যে সূর্য তখনও ঢলে পড়েনি। এভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে কমা থেমে যাবে। তারপর খুঁটির পূর্বপাশে ছায়া পড়া শুরু হবে। যখন পূর্বপাশে খানিকটা ছায়া দেখা যাবে, তার মানে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে এবং জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে। ঘড়ির কাঁটার হিসেবে সূর্যহেলে পড়ার সময় : সূর্য উদিত হওয়া থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়টাকে সমান দুইভাগে বিভক্ত করুন। ঠিক মধ্যবর্তী সময়টা হবে সূর্য হেলে পড়ার সময়। যেমন- যদি সূর্য সকাল ৬ টায় উঠে আর সন্ধ্যা ৬ টায় ডুবে তাহলে মধ্যাকাশ থেকে সূর্য হেলে পড়ার সময়টা হলো ঠিক ১২টা। এমনিভাবে, যদি ৭ টায় উঠে আর সন্ধ্যা ৭ টায় ডুবে, তাহলে মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া শুরু হওয়ার সময় হলো দুপুর ১টা…[দেখুন: আশ শারহুল মুমতি’ ২/৯৬]
জোহরের ওয়াক্তের শেষ: সূর্য মধ্যাকাশে থাকাকালীন সময়ে কোন বস্তুর যে সামান্যটুকু ছায়া থাকে সে ছায়াকে বাদ দিয়ে কোন বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ তথা ১ গুণ হওয়া পর্যন্ত।
জোহরের ওয়াক্তের সমাপ্তি অনুধাবনের বাস্তব কৌশল: আগের উদাহরণ তথা পুঁতে রাখা খুঁটির কাছে ফিরে যাই। ধরে নিলাম যে, খুঁটিটির উচ্চতা এক মিটার। লক্ষ্য করুন, সূর্য হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত খুঁটির ছায়া কমতে কমতে একটা ছোট্ট নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে ঠেকেছে। (এ বিন্দুটাকে চিহ্নিত করে রাখুন) আবার যখন ছায়া (পূর্বে) বাড়তে শুরু করল জোহরের ওয়াক্তও তখন শুরু হল। এভাবে ছায়া বাড়তে বাড়তে এক সময় খুঁটির সমপরিমাণ হয়ে যাবে। (অর্থাৎ আপনার চিহ্নিত বিন্দু থেকে এক মিটার। এ বিন্দুর পূর্বের ছায়াকে আরবিতে ফাঈ বলে। এ ক্ষেত্রে ছায়ার এ অংশটুকু ধর্তব্য নয়) আর তখনি জোহরের ওয়াক্ত শেষ হবে এবং তারপরই শুরু হবে আসরের সময়।
(২). আসর: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আর আসরের সময় হবে না যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে।” আমরা জেনেছি যে- জোহরের ওয়াক্ত শেষ হলে (অর্থাৎ বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে) আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়। আসরের শেষ সময় দু’রকম:
(১) সাধারণ সময় (وقت اختيار): রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী অনুযায়ী তা হলো- আসরের শুরু থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ হওয়া পর্যন্ত। ঋতুভেদে ঘড়ির কাঁটার হিসাবে এ সময়টি বিভিন্ন হবে।
.
(২) জরুরী সময় (وقت اضطرار): সেটা হলো সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ থেকে শুরু করে সূর্য ডুবা পর্যন্ত। কেননা, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূর্য অস্তমিত হবার আগে অন্ততঃ এক রাকাত আসরের নামাজ পড়তে পারল, সে পুরো আসরই পেল।”[বুখারী: ৫৭৯, মুসলিম: ৬০৮]
মাসয়ালা: (وقت اضطرار) বা জরুরী সময় বলতে কি বুঝায়?
কেউ যদি বাধ্য হয়ে জরুরী কোন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সাধারণ সময়ে আসরের সালাত আদায় করতে না পারে; যেমন: রোগীর ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করা (সূর্য হলুদ হওয়ার আগে সালাত আদায় করা হয়তো অসম্ভব নয়; কিন্তু কষ্টকর) তাহলে তার জন্য সূর্য ডুবার পূর্ব মুহূর্তে আসরের নামায আদায়করা বৈধ। এতে সে ব্যক্তি গুনাহগারহবে না। কেননা এটা জরুরী সময় (وقت اضطرار)। সুতরাং কেউ যদি বাধ্য হয় তাহলে সূর্য ডুবার পূর্ব পর্যন্ততার জন্য আসরের সময় থাকবে।
.
(৩). মাগরিব: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সন্ধ্যালোক অদৃশ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাগরিবের সময় বিদ্যমান থাকে।” অর্থাৎ আসরের জরুরী সময় শেষ হওয়া তথা সূর্য ডুবার পর হতে মাগরিবের সময় শুরু হয়। পশ্চিমাকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত বিদ্যমান থাকে। সুতরাং লাল আভা যখন অদৃশ্য হয়ে যাবে তখন মাগরিবের সময় শেষ হয়ে যাবে এবং ইশার সময় শুরু হবে। ঋতুভেদে মাগরিবের ওয়াক্ত ঘড়ির কাঁটায় বিভিন্ন হয়ে থাকে। মোটকথা, আকাশের লাল আভা সমাপ্তি মাগরিবের ওয়াক্ত ফুরিয়ে যাওয়ার প্রমাণ।
.
(৪). ইশা: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আর ইশার ওয়াক্ত মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে।” বোঝা গেল মাগরিবের সময় শেষের সাথে সাথেই (অর্থাৎ আকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে) ইশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত তা বিদ্যমান থাকে।
মাসয়ালা: আমরা কিভাবে মধ্যরাত নির্ধারণ করব?
উত্তর: সূর্যাস্ত থেকে ঊষাকাল (ফজরের ওয়াক্ত শুরু) পর্যন্ত সময়টুকু হিসাব করুন। এর ঠিক মধ্যবর্তী সময়টা মধ্যরাত্রি তথা ইশার নামাযের শেষ ওয়াক্ত। উদাহরণতঃ সূর্য যদি সন্ধ্যা ৫ টায় অস্ত যায় আর ফজরের ওয়াক্ত হয় ভোর ৫টায়, তার মানে মধ্যরাত হবে রাত ১১টায়। অনুরূপভাবে, সন্ধ্যা ৫ টায় সূর্য অস্ত গিয়ে ভোর ৬টায় ফজর হলে মধ্যরাত্রি হবে রাত সাড়ে ১১টায়।
.
(৫). ফজর: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আর ফজরের নামাযের ওয়াক্ত: ঊষাকাল (সুবহে সাদিক) থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। সূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাক। কেননা সূর্য শয়তানের দু’ শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।” ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় দ্বিতীয় ঊষা থেকে। দ্বিতীয় ঊষা হচ্ছে- পূর্বাকাশে বিচ্ছুরিত সাদা রেখা; যা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত থাকে। প্রথম ঊষা দ্বিতীয় ঊষার প্রায় একঘণ্টা পূর্বে বিলীন হয়ে যায়। এ দুই ঊষার মধ্যে পার্থক্য হলো-
(ক) প্রথম ঊষা লম্বালম্বিভাবে ফুটে উঠে; আড়াআড়ি ভাবে নয়। অর্থাৎ এটা পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে বিচ্ছুরিত হয়। আর দ্বিতীয় ঊষা উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়ি ভাবে ফুটে উঠে।
(খ) প্রথম ঊষা অন্ধকারের মধ্যে ফুটে উঠে। অর্থাৎ সামান্য সময়ের জন্য আলোর রেখা দেখা দিয়ে আবার অন্ধকারে ডুবে যায়। আর দ্বিতীয় ঊষার পর আলো বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়।
(গ) দ্বিতীয় ঊষা দিগন্তের সাথে যুক্ত থাকে এবং দিগন্ত ও এর মাঝে অন্ধকার থাকে না। পক্ষান্তরে প্রথম ঊষা দিগন্ত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং দিগন্ত ও এর মাঝে অন্ধকার বিদ্যমান থাকে।(আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৯৪০)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি আবহা, সৌদি আরব।