প্রশ্ন: হাদিসে এসেছে,”সবচেয়ে কুৎসিত নারী হলো ‘সালফা’ এখানে সালফা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
.
প্রখ্যাত সাহাবী ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ২৩ হি.] বলেন: أقبحالنساء السلفع .”সবচেয়ে নির্লজ্জ মহিলা হচ্ছে সালফা।” (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ হা/৩২৫০২)
.
অপর বর্ননায়, সাহাবি আবু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন:شر نسائكم السلفعة ، التي تسمع الأضراسها قعقعة ، ولا تزال جارتها مفزعة “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী হলো সালফা, সে এত কঠোর ভাষায় কথা বলে যে, তার দাঁতের কড়াকড় শব্দ শোনা যায় এবং সে সবসময় তার প্রতিবেশীকে আতঙ্কিত করে রাখে।”(ইবনে কুতায়বা, উয়ুনুল আখবার)
.
সালফা শব্দের ব্যাখ্যাঃ সালফা হচ্ছে, এমন নারী যে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে, পুরুষদের সাথে নির্লজ্জভাবে মিশে এবং পুরুষদের সামনে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করে না। এমন নারীরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কারণ যে নারী পরপুরুষদের সাথে সহজেই মিশে বা চলা-ফিরা করে তাদের লজ্জা-শরম কমে যায়। ফলে খুব শীঘ্রই তারা জ্বিনা বা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। ইবনুল মুনযির তার লিসানুল আরব’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “সালফা হলো সেই নারী, যিনি কঠোর এবং অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন,যার মধ্যে লজ্জা নেই।”(লিসানুল আরব; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ২৩৫) দ্বিতীয় বর্ননায় প্রখ্যাত সাহাবী আবু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নারীদের মধ্যে যে ধরনের আচরণ ও চরিত্রের প্রতি সমালোচনা করেছেন, তা হলো, সালফা নামে এক ধরনের নারী যিনি খুবই তীক্ষ্ণ ও কঠোর ভাষা ব্যবহার করেন। তাঁর কথার শব্দ এতটা তীক্ষ্ণ ও বেদনাদায়ক যে, তার দাঁতের কড়াকড় শোনা যায়। এমন নারী প্রায়ই তার প্রতিবেশীদের আতঙ্কিত করে রাখে, অর্থাৎ তার ভাষা ও আচরণে অন্যরা বিরক্ত বা চিন্তিত হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে তিনি এমন নারী চরিত্রের সমালোচনা করছেন, যারা সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে পারেন না এবং অন্যান্যদের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করেন।
.
আজকের সমাজে এমন নারীদের সংখ্যা কতই না বেশি! যারা পুরুষদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে গর্ব অনুভব করে, উচ্চস্বরে কথা বলে এবং বিশেষ করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের প্রদর্শন করতে ব্যস্ত থাকে! মহান আল্লাহ তাআ’লা নারী পুরুষদেরকে এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে, একে অন্যেকে আকর্ষণ করে। সুতরাং যে নারী পুরুষদের কাছে যাবে,এরা শীঘ্রই কলুষিত হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমান সমাজে নারীদের মধ্যে লজ্জা ও শরম যেন হারিয়ে যাচ্ছে! অথচ,প্রকৃতপক্ষে লজ্জাই হলো নারীর সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য এবং শ্রেষ্ঠ গুণ। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِّنَ الْإِيْمَانِ- “লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অংশ।”(বুখারি ও মুসলিম;মিশকাত হা/৫০৭০) তাছাড়া আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:فَجَآءَتۡهُ اِحۡدٰىهُمَا تَمۡشِیۡ عَلَی اسۡتِحۡیَآءٍ”অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন লাজুকভাবে হেঁটে তার (মূসা আঃ-এর) কাছে এসে বলল যে, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন..”(সূরা কাসাস: ২৫) উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আয়াতের এ বাক্যাংশটির এরূপ ব্যাখ্যা করেছেনঃ “সে নিজের মুখ ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে লজ্জাজড়িত পায়ে হেঁটে এলো। সেই সব ধিংগি চপলা, মেয়েদের মতো হন হন করে ছুটে আসেনি, যারা যেদিকে ইচ্ছা যায় এবং যেখানে খুশী ঢুকে পড়ে।” উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম ইবন কাসির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:أي: مشي الحرائر، جاءت مستترة بكم درعها. قال عمر رضي الله عنه جاءت تمشي على استحياء، قائلة بثوبها على وجهها، ليست بسلفع من النساء ولاجة خراجة “এটি হলো সম্ভ্রান্ত নারীদের চলাফেরা। সে নিজেকে আবৃত করে ছিল। উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন: “সে এমনভাবে আসছিল যে, নিজের কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিল। সে ছিল না ‘সালফা’দের মতো, যারা নির্লজ্জভাবে বাইরে বের হয়ে এবং সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়।”(ইবনু কাসির সূরা কাসাস ২৫ নং আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য) এ বিষয়বস্তু সম্বলিত কয়েকটি বর্ণনা সাঈদ ইবনে মানসুর, ইবনে জরীর, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনুল মুনযির নির্ভরযোগ্য সনদ সহকারে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উদ্ধৃত করেছেন। এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, সাহাবায়ে কেরামের যুগে কুরআন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বদৌলতে এ মনীষীগণ লজ্জাশীলতার যে ইসলামী ধারণা লাভ করেছিলেন তা অপরিচিত ও ভিন পুরুষদের সামনে চেহারা খুলে রেখে ঘোরাফেরা করা এবং বেপরোয়াভাবে ঘরের বাইরে চলাফেরা করার সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পরিষ্কার ভাষায় এখানে চেহারা ঢেকে রাখাকে লজ্জাশীলতার চিহ্ন এবং তা ভিন পুরুষের সামনে উন্মুক্ত রাখাকে নির্লজ্জতা গণ্য করেছেন।(আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন, ইমাম বাগভী; কুরতুবী; ইবনু কাসীর; ফাতহুল কাদীর; আত-তাফসীরুস সহীহ) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।