উত্তর: শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা ভাবনা করলে সংশোধনের উদ্দেশ্যে অপর মুসলিম ভাই-বোনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা কিংবা তাদেরকে পরিত্যাগ করা দুই প্রকার হতে পারে। যথা:
প্রথমটি: নিজের স্বার্থে বা পার্থিব তথা দুনিয়াবী কোন বিষয়ের জন্য কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা তাকে পরিত্যাগ করা।
.
দ্বিতীয়টি: মহান আল্লাহর অধিকার সন্তুষ্টি প্রতিষ্ঠার জন্য কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। যেমন যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে সে সালাত আদায় করেনা অথবা কেউ প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করে, কিংবা বিদআতি যার কারনে অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
.
▪️উপরোক্ত দুটি প্রকারের মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ দুনিয়াবি কোন স্বার্থে কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা কাউকে পরিত্যাগ করা জায়েজ নয় বরং এটি হারাম। দলিল হচ্ছে, মহান আল্লাহ বলেন,وَ اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ لَا تَنَازَعُوۡا فَتَفۡشَلُوۡا وَ تَذۡهَبَ رِیۡحُكُمۡ وَ اصۡبِرُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ “আর তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয় আল্লাহু ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।(সূরা আনফাল: ৪৬) তিনি আরো বলেছেন, وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡكُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡكُمۡ اِذۡ كُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِكُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًا ۚ وَ كُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَكُمۡ مِّنۡهَا ؕ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَكُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বয়ান করেন, যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।(সূরা আলে ইমরান: ১০৩) হাদীসে এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৯৩ হি.] থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ( لا تَبَاغَضُوا وَلا تَحَاسَدُوا وَلَا تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا وَلا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاثٍ ) “তোমরা একে অপরের প্রতি প্রতিহিংসা করবে না, পরস্পর বিদ্বেষ করবে না এবং একে অপরের পশ্চাতে শত্রুতা করবে না। তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও। আর কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার ভাই এর সাথে তিন দিনের বেশি সময় কথা-বার্তা পরিত্যাগ করা বৈধ নয়”। (সহীহ বুখারী হা/৬০৭৬:
সহীহ মুসলিম হা/৬৪২০) অপর বর্ননায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:لَا يَحِلُّ لِـمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلَاثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ.”কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কেউ তা করলে সে মৃত্যুর পর জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’।(আবূ দাউদ: ৪৯১৪; স’হীহুল জা’মি’: ৭৬৩৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَّهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، يَلْتَقِيَانِ ؛ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِيْ يَبْدَأُ بِالسَّلَامِ.‘কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তা এমন যে, তাদের পরস্পরের সাক্ষাৎ হলো; অথচ তারা একে অপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তবে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম সালাম বিনিময় কওে’’।(আবূ দাউদ হা/৪৯১১) উক্ত হাদিসগুলো প্রমান করে,কোন মু’মিনের জন্য কোন মু’মিনকে তিনদিনের বেশি পরিহার করা বৈধ নয়। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, তিনদিনের বেশি পরিত্যাগ করা হারাম। এ পাপে জড়িত ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য।
.
▪️অপরদিকে দ্বিতীয় প্রকারের হুকুম সম্পর্কে অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য শারঈ কোন স্বার্থে কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা কাউকে পরিত্যাগ করা। যেমন কেউ সালাত আদায় করেনা অথবা কেউ প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করে। সুতরাং এমন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মাধ্যমে যদি সে সঠিক পথে ফিরে আসার বিশেষ সম্ভাবনা থাকে তা হলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ। কারণ, তা অসৎ কাজে বাধা দেয়ার শামিল। আর শরীয়তে এর পক্ষে দলিল প্রমান রয়েছে। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের পরবর্তী দ্বীনের ইমামগণ তা করেছেন এবং আলেমগন এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন ও সুনির্দিষ্ট শর্ত উল্লেখ করেছেন। যেমন যদি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে আরো গাদ্দার অথবা আরো হঠকারী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা হলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করাই উচিৎ। বরং এক্ষেত্রে তাকে মাঝে মাঝে নসীহত করা এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত।আর পাপী ব্যক্তির সংশোধনের উদ্দেশ্যে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধতার পক্ষে দলিল হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা স্ত্রীর সাথে চল্লিশ দিন কথা বলেননি। আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রা.) তাঁর ছেলের সাথে মৃত্যু পর্যন্ত কথা বলেননি। উমর বিন্ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ্) জনৈক ব্যক্তিকে দেখে নিজ চেহারা ঢেকে ফেলেন। এর আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, বিনা অজুহাতে তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা তিনজন প্রখ্যাত সাহাবীকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাদের কাহিনী সম্পর্কে দীর্ঘ হাদিসটি বুখারী মুসলিমে বর্নিত হয়েছে আর সেই তিনজন হলেন, প্রখ্যাত সাহাবী কাব ইবনে মালিক, মুরারাহ বিন রাবী’ ও হিলাল বিন উমাইয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)। এঁরা তিনজনই ছিলেন অতি মুখলেস (খাঁটি) মুমিন। যাঁরা ইতিপূর্বে মহানবী (ﷺ)-এর সাথে বিভিন্ন জিহাদে অংশগ্রহন করেছিলেন। শুধু তাবুক যুদ্ধে অবহেলাবশত অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন। যেহেতু বিনা ওজরে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন ফলে নবী (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) গণকে সেই তিন ব্যক্তির সাথে কোন সামাজিক সম্পর্ক রাখতে, এমনকি কথাবার্তা বলতেও নিষেধ করে দেন এবং চল্লিশ দিন পর তাঁদেরকে নিজ নিজ স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ দেন। যার বিস্তারিত আলোচনা সূরা তওবার ৯৪ থেকে ৯৮ আয়াত পর্যন্ত রয়েছে। পরবর্তীতে সেই তিন জন সাহাবী মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। অতঃপর সূরা তওবার ১১৮ নং আয়াত তাঁদের তাওবাহ কবুল হওয়ার ব্যাপারে নাযিল হয়। ফলে দীর্ঘ পঞ্চাশ দিন এহেন দুৰ্বিসহ অবস্থা ভোগের পর তারা আবার আনন্দিত মনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সাথে মিলিত হন। [এ ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে তাবারী; বাগভী; ইবন কাসীর প্রমূখগণ বর্ণনা করেছেন, দেখুন সহীহ মুসলিম ই: ফা: হা/৬৭৬০)
.
পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা এবং ছিন্ন করা সম্পর্কে আল ইমামুল ‘আল্লামাহ আবু ‘উমার ইউসুফ ইবনু ‘আব্দিল বার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৬৩ হি.] বলেছেন,
” وأجمع العلماء على أنه لا يجوز للمسلم أن يهجر أخاه فوق ثلاث إلا أن يكون يخاف من مكالمته وصلته ما يفسد عليه دينه ، أو يولد به على نفسه مضرة في دينه أو دنياه ، فإن كان ذلك فقد رخص له في مجانبته وبعده ، ورب صرم [أي : مقاطعة وهجر] جميل خير من مخالطة مؤذية .
قال الشاعر:إذا ما تقضي الود إلا تكاشرا … فهجر جميل للفريقين صالح ”
“আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, কোন মুসলিমের জন্য তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা নাজায়েয। তবে যদি তার সাথে কথা বললে ও সম্পর্ক রাখলে ব্যক্তির দ্বীনদারি নষ্টের ভয় করে কিংবা তার দুনিয়া ও আখিরাতের কোন ক্ষতি হয়; যদি এমনটি হয় তাহলে তার জন্য তার থেকে দূরে থাকা ও তাকে বর্জন করার অবকাশ রয়েছে। অনেক সুন্দর সম্পর্কচ্ছেদ কষ্টদায়ক মেলামেশার চেয়ে উত্তম। কবি বলেছেন:“যদি সম্প্রীতি রক্ষা অবজ্ঞাকে অনিবার্য করে তবে উত্তম সম্পর্কচ্ছেদ উভয় পক্ষের জন্যই কল্যাণকর।”।(আত তামহীদ; খন্ড: ৬; পৃষ্ঠা:১২৭)
.
হাফিজ ইরাকি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন;
هذا التحريم محله في هجرانٍ ينشأ عن غضب لأمر جائز لا تعلق له بالدين ، فأما الهجران لمصلحة دينية من معصية أو بدعة : فلا مانع منه ، وقد أمر النبي صلى الله عليه وسلم بهجران كعب بن مالك وهلال بن أمية ومرارة بن الربيع رضي الله عنهم ، قال ابن عبد البر : وفي حديث كعب هذا دليل على أنه جائز أن يهجر المرء أخاه إذا بدت له منه بدعة أو فاحشة يرجو أن يكون هجرانه تأديباً له وزجراً عنها ، وقال أبو العباس القرطبي : فأما الهجران لأجل المعاصي والبدعة فواجب استصحابه إلى أن يتوب من ذلك ولا يختلف في هذا ،
“এমন কোন জায়েজ বিষয়ে রাগ করে কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না যে বিষয়টি দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত নয়। সম্পর্ক ছিন্ন করা বিষয়টি মূলত পাপ এবং বিদআত থেকে দ্বীনি মাসলাহাতের জন্য করা হয়ে থাকে, এ বিষয়ে কোন আপত্তি নাই।নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরকে কাব বিন মালিক, হিলাল বিন উমাইয়া এবং মারারা বিন রাবি’র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।ইমাম ইবনে আব্দুল বার্র বলেন:কা’বের এই হাদিসে প্রমাণিত হয় যে, একজন ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে কথা না বলা জায়েয হবে, যখন তার থেকে কোন বিদআত অথবা কোন অশ্লীলতা প্রকাশ পাবে। আবুল আব্বাস আল-ক্বুরতুবী বলেন: পাপ ও বিদআতের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়। সে যতক্ষণ পর্যন্ত তওবা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এভাবে থাকা আবশ্যক। এ বিষয়ে কারো মতবিরোধ নাই।(ত্বরহউত-তআসরঈব: খন্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৯৯)
.
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
وهذا الهجر يختلف باختلاف الهاجرين في قوتهم ، وضعفهم ، وقلتهم ، وكثرتهم ؛ فإن المقصود به : زجر المهجور ، وتأديبه ، ورجوع العامة عن مثل حاله .فإن كانت المصلحة في ذلك راجحة بحيث يفضي هجره إلى ضعف الشر وخفيته : كان مشروعاً ، وإن كان لا المهجور ولا غيره يرتدع بذلك ، بل يزيد الشر ، والهاجر ضعيف بحيث يكون مفسدة ذلك راجحة على مصلحته : لم يشرع الهجر ، بل يكون التأليف لبعض الناس أنفع من الهجر .والهجر لبعض الناس أنفع من التأليف ، ولهذا كان النبي صلى الله عليه وسلم يتألف قوماً ويهجر آخرين ، كما أن الثلاثة الذين خلِّفوا كانوا خيراً من أكثر المؤلفة قلوبهم ؛ لما كان أولئك كانوا سادة مُطاعون في عشائرهم ، فكانت المصلحة الدينية في تأليف قلوبهم ، وهؤلاء كانوا مؤمنين ، والمؤمنون سواهم كثير ، فكان في هجرهم عزُّ الدين ، وتطهيرهم من ذنوبهم ، وهذا كما أن المشروع في العدو القتال تارة ، والمهادنة تارة ، وأخذ الجزية تارة ، كل ذلك بحسب الأحوال والمصالح .
“সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি সম্পর্কে ছিন্ন কারীদের শক্তি দুর্বলতা স্বল্পতা এবং তাদের সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করে পরিবর্তন হতে পারে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হচ্ছে তাকে ভর্ৎসনা করা, শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া এবং সাধারণ মুসলিমদেরকে অনুরূপ কাজ থেকে বিরত রাখা। সুতরাং এক্ষেত্রে (সম্পর্কে ছিন্ন করার ক্ষেত্রে) যদি কল্যাণের দিকটি প্রাধান্য পায় যে তাকে পরিত্যাগ করার কারণে তার অশ্লীলতা কমে যায় এবং তা গোপন থাকে তাহলে তাকে পরিত্যাগ করা শরীয়ত সম্মত। আর যদি পরিত্যক্ত ব্যক্তি অথবা অন্য কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করার ফলে পাপ থেকে নিবৃত্ত না হয় বা তা থেকে সরে না আসে বরং তার অনিষ্টতা আরও বৃদ্ধি পায় এবং তাকে পরিত্যাগ করার কারণে যে কল্যাণ রয়েছে তার চেয়ে অকল্যাণ ও ফিতনার দিকটি তার ওপর প্রাধান্য পায় এবং সম্পর্ক ছিন্নকারী যদি দুর্বল হয়ে যায়,তাহলে তাকে পরিত্যাগ করা শরীয়ত সম্মত নয়। বরং কখনো কখনো কিছু মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকা তাকে পরিত্যাগ থেকে বেশি উপকারী।আবার কিছু মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা বেশি উপকারী। এ কারণে মুহাম্মাদ (ﷺ) কোন গোত্রের সাথে সম্পর্ক রাখতেন আর কোন গোত্রকে পরিত্যাগ করতেন। যেমন সে তিনজন ব্যক্তির কথা যাদেরকে (তাবুক যুদ্ধে) অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার কারনে পরিত্যাগ করা হয়েছিল যদিও তারা তাদের অধিকাংশের চেয়ে উত্তম ছিলেন,কারণ তারা ছিলেন আত্মীয় স্বজনদের সাথে সহনশীল ও আনুগত্যশীল। তাদের অন্তরে দ্বীনি মাসলাহাত ছিল,তারা মুমিন ছিলেন তাদের ছাড়াও আরো অনেক মুমিন ছিল তাদের সাথে এরূপ আচরণ অর্থাৎ পরিত্যাগ করার উদেশ্য ছিল তাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করা ও পবিত্র করা। অনুরূপভাবে শত্রুদের ব্যাপারে যা নির্দেশ করা হয়েছে তা হলো কখনো কখনো তাদের সাথে যুদ্ধ করা, কখনো তাদের সাথে যুদ্ধবিরতি করা এবং কখনো কখনো পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং উম্মাহর স্বার্থে জিযিয়া কর গ্রহণ করা।এগুলোর প্রত্যেকটি কল্যাণ ও স্বার্থের উপর নির্ভর করে অবস্থাভেদে পরিবর্তন হয়ে থাকে।(মাজমুউল ফাতাওয়া ২৮/২০৬)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: যে ব্যক্তির পাপ প্রকাশ পায়নি তবুও তার মাসলাহাতের জন্য সে ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিমাপ কতটুকু?
উত্তরে তিনি বলেন:
الضابط : أن هجر العاصي إن كان فيه مصلحة بحيث يرجع العاصي عن معصيته : فليهجر ، وأما إذا لم يكن فيه مصلحة : فهجره حرام ؛ لأن العاصي مسلم ، ولو فعل ما فعل من الكبائر ، إلا الكفر إذا كَفَر ، هذا معلوم ، وقد قال النبي صلى الله عليه وسلم : ( لا يحل لمسلم أن يهجر أخاه فوق ثلاث ، يلتقيان ، ويعرض هذا ، ويعرض هذا ، وخيرهما الذي يبدأ بالسلام ) ، فلا تهجره ؛ ولأن بعض العصاة إذا هجرته : زاد في معصيته ، وكرِهك أيضاً ، ولم يقبل منك أي نصيحة ، أما لو كان هجره ينفع ، كما لو كان أحد الأبناء ، أو أحد الإخوة وهو يقدِّرك ، وإذا هجرته ارتدع : فهنا اهجره حتى يرتدع ، فإن أخلف الظن – بمعنى: أنك هجرته ولكنه لم يرتدع – : فعُد ، وسلِّم عليه ، ولا تنس النصيحة .
“মূলনীতি হলো: পাপী ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মাঝে যদি মাসলাহাত অর্থাৎ সংশোধন থাকে যেমন পাপী যদি তার পাপ থেকে ফিরে আসে তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে।কিন্তু যদি এই মাসলাহাত তথা সংশোধন কোন কাজে না আসে তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম। কেননা পাপিষ্ট ব্যক্তি এখনও একজন মুসলিম যদিও সে কাবিরা গুনাহ করে তবে যদি সে কুফরি করে তাহলে সে কাফের এটা সর্বজনবিদিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কোন মুসলিমের জন্য জায়িয নয় যে, সে তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তা এমন যে তাদের পরস্পরের সাক্ষাৎ হলো অথচ তারা একে অপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তবে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম সালাম বিনিময় করে”। আপনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন না কেননা এমন কিছু পাপী রয়েছে যখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে তাহলে সে তার পাপ আরো বৃদ্ধি করে দেয় এবং সে আপনাকে ঘৃনাও করতে পারে এমতাবস্থায় সে আপনার কাছ থেকে নসিয়ত নাও গ্রহন করতে পারে। তবে সম্পর্ক ছিন্ন করা যদি উপকারী হয় তাহলে ভিন্ন কথা। যেমন সে যদি আপনার সন্তান বা ভাইদের একজন হয় এবং সে যদি আপনাকে সম্মান শ্রদ্ধা করে এবং সম্পর্ক ছিন্ন করাটা যখন ভয়ের কারণ হবে তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন। আর যদি ধারণার বিরোধী হয় অর্থাৎ আপনি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন কিন্তু সে ভয় করে না তাহলে আপনি তার দিকে ফিরে আসুন, তাকে সালাম দিন এবং তাকে যথাসাধ্য নসিহত করে যান।(উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং২৩১/ ৯ নং প্রশ্ন)
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, ইসলামী শরিয়ার মহান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ও মেল-বন্ধন টিকিয়ে রাখা। আর কোন মুসলিমের জন্য জায়েজ নয় তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করা।কেননা এটি কবিরা গুনাহ এবং মুসলিমে মুসলিমে সম্পর্কে বিনষ্ট করা শয়তানের অন্যতম চক্রান্ত। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসারী অনেকেই শর‘ঈ কোনো কারণ ছাড়াই মুসলিম ভাইদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে। নিহায়েত বস্তুগত কারণে কিংবা দুর্বল কোনো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ছিন্ন সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে। তারা কেউ একে অপরের সঙ্গে কথা না বলার শপথ করে, তার বাড়ীতে প্রবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাস্তায় দেখা হলে পাশ কেটে চলে যায়। মজলিসে হাযির হলে তার আগে-পিছের লোকদের সঙ্গে করমর্দন করে কিন্তু তাকে এড়িয়ে যায়। ইসলামী সমাজে দুর্বলতা অনুপ্রবেশের এটি অন্যতম কারণ। এর শর‘ঈ হুকুম চূড়ান্ত ও পরকালীন শাস্তি কঠোর। তবে হা! যদি কারো সাথে সম্পর্কছেদ করার শর‘ঈ কোনো কারণ পাওয়া যায়। যেমন সে সালাত আদায় করে না কিংবা বেপরোয়াভাবে অন্যায়-অশ্লীল কাজ করে করে চলে। তাহলে লক্ষ্য করতে হবে এবং তখন প্রশ্ন হবে যে, এমতাবস্থায় সম্পর্কচ্ছেদই তার জন্য মঙ্গলজনক নাকি সম্পর্ক রক্ষাই মঙ্গলজনক? এর উত্তরে বলা হবে যে, যদি সম্পর্কচ্ছেদে তার মঙ্গল হয় এবং সে সৎ পথে ফিরে আসে তাহলে সম্পর্কছেদ করা ফরয হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি মঙ্গলজনক না হয়ে বরং আরো বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পাপ প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করা ঠিক হবে না। কেননা তাতে সংশোধন না হয়ে বরং বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং তার সঙ্গে সংস্রব বজায় রেখে যথাসাধ্য নসীহত করে যেতে হবে। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
____________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)।