রাসূল অথবা অন্য কোন মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট শাফায়াত চাওয়ার বিধান সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মানহাজ

উত্তর: কুরআন সুন্নাহ এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ মানহাজ হচ্ছে দুনিয়াতে কোন মৃতব্যক্তি কিংবা কোন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাওয়া জায়েয নয়। এমন কি যদি এটি সাব্যস্ত হয় যে, সেই ব্যক্তি আখিরাতে সুপারিশকারী হবেন তবুও। উদাহরণস্বরূপ: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি আমার জন্য সুপারিশ করুন। কিংবা হে আল্লাহ্‌র ফেরেশতারা! তোমরা আমার জন্য সুপারিশ করিও অথবা হে অমুক পীর/অলি! আপনি আমার জন্য সুপারিশ করুন। অথচ কুরআন সুন্নাহ এবং ইজমা দ্বারা প্রমানিত যে ফেরেশতারা, নবীরা, শহীদরা, ওলি-আউলিয়ারা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন। কেননা শাফায়াত চাইতে হবে এর সময়মত। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ও উপস্থিত থাকবেন। লোকেরা তাঁর কাছে এসে তাকে বলবে আমাদের জন্য আপনার প্রভুর কাছে সুপারিশ করুন যেমনটি শাফায়াতের প্রসিদ্ধ হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে।(দেখুন মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৭২৪) কিন্তু এখন তিনি (ﷺ) দুনিয়াতে জীবিত নেই, তাই এখন তার কাছে কিংবা অনুরূপ কোন মৃত ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাওয়াটা হবে অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাওয়া; যা তার কাছে চাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই এটি হারাম হবে এবং গায়রুল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য সত্তা)-এর কাছে প্রার্থনা করা ও দোয়া করার অন্তর্ভুক্ত হবে।এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর কোন সাহাবী তাঁর কাছে শাফায়াত প্রার্থনা করেছেন মর্মে বর্ণিত হয়নি।
.
কোন মৃতব্যক্তির কাছে: ‘আমার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করুন’ কিংবা ‘আমার জন্য আপনার প্রভুর কাছে শাফায়াত করুন’ বলে দোয়া করা কিংবা শাফায়াত চাওয়া কি শির্ক হবে নাকি শির্কের বাহন হবে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। সঠিক কথা হচ্ছে যদি সরাসরি মৃতব্যক্তিকে এভাবে বলে যে ‘আমার বিপদ দূর করুন’ কিংবা ‘আমার প্রয়োজন পূরণ করুন’ কিংবা ‘আমাকে সাহায্য করুন’ কিংবা ‘শক্তিবৃদ্ধি করুন’ তাহলে এটি ইজমা তথা সর্বসম্মতিক্রমে বড় শির্ক। পাশাপাশি রাসূল (ﷺ)-এর কাছ থেকে কিংবা অন্য কোন মৃতব্যক্তির কাছ থেকে শাফায়াত (সুপারিশ) তলব করা এটি বহু আলেমদের নিকট বড় শির্ক আবার কেউ কেউ বলেছেন ছোট শিরক। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা যাওয়ার পরে তিনি এমন কিছুর মালিকানা রাখেন না।
.
শাফায়াতের মালিক আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তাআলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্য কোন মৃতব্যক্তি মৃত্যুর পর শাফায়াতের ক্ষেত্রে কিংবা কোন দোয়ার ক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোন বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপের মালিক নন।মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ لِلَّهِ الشَّــفَاعَةُ جَمــِيعًا
“বলুন, সমস্ত শাফায়াত কেবলমাত্র আল্লাহরই ক্ষমতাধীন।” [সূরা জুমার: ৪৪] আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন,مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ“তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট কে শাফায়াত (সুপারিশ) করতে পারে?” [সূরা বাকারা: ২৫৫]আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন,وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى”আসমান সমূহে কতইনা ফেরেশতা রয়েছে। তাদের শাফায়াত কোন কাজেই আসবে না। তবে হ্যাঁ, তাদের শাফায়াত যদি এমন কোন ব্যক্তির পক্ষে হয় যার আবেদন শুনতে তিনি ইচ্ছা পোষণ করেন এবং তাতে সম্মত হোন (তাহলে ভিন্ন কথা।)” [সূরা নাজম: ২৬] এমনকি স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করতে পারবেন না। যেমন: শাফায়াতের হাদিসে এসেছে: “…বলা হবে: يا مُحَمَّدُ، ارْفَعْ رَأْسَكَ، قُلْ تُسْمَعْ، سَلْ تُعْطَهْ، اشْفَعْ تُشَفَّعْ “ইয়া মুহাম্মদ! আপনার মাথা তুলুন। বলুন, আপনার কথা শুনা হবে। আপনি প্রার্থনা করুন; আপনাকে তা দেয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন; আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে”। তখন আমি মাথা উত্তোলন করব এবং আমার প্রভু আমাকে যে প্রশংসাটি শিখিয়ে দিবেন সেটা দিয়ে তাঁর প্রশংসা করব। এরপর আমি শাফায়াত করব। তিনি আমাকে একটি সীমা দিয়ে দিবেন। আমি তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনব এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব।”[সহিহ বুখারী হা/৪৪৭৬; সহিহ মুসলিম হা/১৯৩)]
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: অনেক মানুষ বলে থাকেন: ইয়া মুহাম্মদ! শাফায়াত (চাই)। এ কথাটি কি শির্ক?

জবাবে শাইখ বলেন,

“طلب الشفاعة من النبي صلى الله عليه وسلم أو من غيره من الأموات لا يجوز ، وهو شرك أكبر عند أهل العلم ؛ لأنه لا يملك شيئاً بعدما مات عليه الصلاة والسلام ، والله يقول : (قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا) الزمر/44 .فالشفاعة ملكه سبحانه وتعالى ، والنبي صلى الله عليه وسلم وغيره من الأموات لا يملكون التصرف بعد الموت في شفاعة ولا في دعاء ولا في غير ذلك ، الميت إذا مات انقطع عمله إلا من ثلاث : (صدقة جارية ، أو علم ينتفع به ، أو ولد صالح يدعو له) وإنما جاء أنها تعرض عليه الصلاة والسلام ـ عليه الصلاة والسلام ـ ولهذا قال : (صلوا علي فإن صلاتكم تبلغني حيث كنتم) .

وأما حديث إنه تعرض عليه الأعمال فما وجد فيها من خير حمد الله وما وجد فيها من شر استغفر لنا فهذا حديث ضعيف لا يصح عن النبي صلى الله عليه وسلم ، ولو صح لم يكن فيه دلالة على أننا نطلب منه الشفاعة .فالحاصل أن طلب الشفاعة من النبي صلى الله عليه وسلم أو من غيره من الأموات أمر لا يجوز ، وهو على القاعدة الشرعية من الشرك الأكبر ؛ لأنه طلب من الميت شيئاً لا يقدر عليه ، كما لو طلب منه شفاء المريض ، أو النصر على الأعداء أو غوث المكروبين أو ما أشبه ذلك ، فكل هذا من أنواع الشرك الأكبر ، ولا فرق بين طلب هذا من النبي صلى الله عليه وسلم ، أو من الشيخ عبد القادر ، أو من فلان أو فلان ، أو من البدوي أو من الحسين أو غير ذلك ؛ طلب هذا من الموتى أمر لا يجوز ، وهو من أقسام الشرك .وإنما الميت يترحم عليه إذا كان مسلماً ، ويدعى له بالمغفرة والرحمة ، والنبي صلى الله عليه وسلم إذا سلم عليه مسلم يصلي عليه ـ عليه الصلاة والسلام ـ ويدعو له ، أما أن يطلبه المدد أو الشفاعة أو النصر على الأعداء كل هذا لا يجوز ، وهذا من عمل أهل الجاهلية ومن عمل أهل الشرك ، فيجب على المسلم أن ينتبه لهذا وأن يحذر مثل

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে কিংবা অন্য কোন মৃতব্যক্তির কাছ থেকে শাফায়াত (সুপারিশ) তলব করা আলেমদের নিকট বড় শির্ক। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা যাওয়ার পরে তিনি এমন কিছুর মালিকানা রাখেন না। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “বলুন, সকল শাফায়াতের মালিক আল্লাহ্‌”।[সূরা যুমার, ৩৯: ৪৪] সুতরাং শাফায়াতের মালিক আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তাআলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্য কোন মৃতব্যক্তি মৃত্যুর পর শাফায়াতের ক্ষেত্রে কিংবা কোন দোয়ার ক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোন বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপের মালিক নন। কোন মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায় কেবল তিনটি আমল ব্যতীত: সাদাকায়ে জারিয়া, এমন ইলম যা দ্বারা অন্যেরা উপকৃত হয় এবং এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। কেবল হাদিসে এতটুকু এসেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তাঁর উপর পেশকৃত দরুদ ও সালাম উপস্থাপন করা হয়। এ জন্য তিনি বলেছেন: “তোমরা আমার প্রতি দরুদ পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরুদ পাঠ আমাকে পৌঁছানো হয়।”

পক্ষান্তরে, যে হাদিসে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে (উম্মতের) আমলগুলো উপস্থাপন করা হয়। যে আমলগুলো তিনি ভালো পান সেগুলোর জন্য আল্লাহ্‌র প্রশংসা করেন। আর যে আমলগুলো মন্দ পান সেগুলোর ব্যাপারে তিনি আমাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন” সে হাদিসটি দুর্বল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সাব্যস্ত নয়। আর যদি সহিহ হত তবুও এ হাদিসে এমন কোন দলিল নাই যে, আমরা তাঁর থেকে শাফায়াত তলব করব। সারকথা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্য কোন মৃতব্যক্তির কাছ থেকে শাফায়াত তলব করা নাজায়েয। শারই কায়েদার আলোকে এটি বড় শির্ক। কেননা তা হচ্ছে মৃতব্যক্তির কাছ থেকে এমন কিছু তলব করা যা তার ক্ষমতায় নেই। অনুরূপভাবে তাঁর কাছে যদি রোগীর আরোগ্যদান তলব করা হয়, শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়দান তলব করা হয় কিংবা বিপদগ্রস্তদের বিপদদূরীকরণ তলব করা হয় বা এ জাতীয় অন্য কিছু তলব করা হয়; এই সবগুলো বড় শির্কের প্রকার। এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তলব করা কিংবা আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে তলব করা কিংবা অন্য কোন পীরের কাছে তলব করার কিংবা বাদাওয়ীর কাছে তলব করা কিংবা হুসাইন (রাঃ) এর তলব করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মৃতব্যক্তির কাছ থেকে তলব করা নাজায়েয এবং এটি শির্কের একটি প্রকার। মৃতব্যক্তি মুসলিম হলে তার জন্য আল্লাহ্‌র রহমত চাইতে হবে, তার জন্য আল্লাহ্‌র ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করতে হবে। আর কোন মুসলিম যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাম দিবে তখন তাঁর প্রতি দরুদ পড়বে ও তাঁর জন্য দোয়া করবে। পক্ষান্তরে, তাঁর থেকে সাহায্য চাওয়া কিংবা শাফায়াত চাওয়া কিংবা শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় চাওয়া; এর কোনটি জায়েয নয়। এগুলো জাহেলী কর্ম ও মুশরিকদের কর্ম। একজন মুসলিমের কর্তব্য এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা ও সাবধান হওয়া।(বিন বায; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব; ১/৩৯২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়,শাইখ, নবী (ﷺ) এখন কবরে আছেন। এমতাবস্থায় তাঁর নিকট শাফায়াত (সুপারিশ) চাওয়া কি জায়েজ। যেমন: এভাবে বলা, “হে আল্লাহর রসূল, আমি আপনার কাছে সুপারিশ চাই। আমি একজন পাপী বান্দা-যাকে আপনার হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে?”

জবাবে শাইখ বলেন,

لا يجوز، هذا حرام بل قد يكون من الشرك؛ لأن هذا دعاء للنبي عليه الصلاة والسلام، وبدلاً من أن يقول: أسألك يا رسول الله! أن تشفع لي، يقول: يا رب! شفع فيَّ رسولك، حتى يكون الدعاء موجه إلى الله عز وجل، أما الرسول الآن لا يستطيع أن يشفع لك، ثم حتى يوم القيامة لا يستطيع أن يشفع لأحد إلا بإذن الله، فهذه الكلمة حرام، وقد تكون شركاً بالله عز وجل.

“এটা জায়েজ নয়। এটা হারাম বরং এটা শিরক (অংশী স্থাপন) ও হতে পারে। কারন এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট একটি দুআ। “হে আল্লাহর রসূল, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমার জন্য সুপারিশ করবেন।” এভাবে বলার পরিবর্তে বলুন, “হে আমার প্রতিপালক, আমার ব্যাপারে আপনার নবীর সুপারিশ কবুল করুন।” যাতে দুআটা হয় আল্লাহর তাআলাকে উদ্দেশ্য করে। যেহেতু রাসূল (ﷺ) এখন আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন না, এমনকি কিয়ামতের দিনও তিনি আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো জন্য সুপারিশ করতে পারবেন না। সুতরাং এই বাক্যটি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট সরাসরি শাফায়াত/সুপারিশ প্রার্থনা মূলক বাক্য) হারাম এবং তা মহান আল্লাহর সাথে শিরক (অংশী স্থাপন)ও হতে পারে।(উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-৭৫- শাইখের ভয়েস রেকর্ড থেকে সংগৃহীত]
..
প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন ইমাম ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ছাত্র সৌদি আরবের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শাইখ ড.খালেদ আল-মুশাইকিহ (হাফিযাহুল্লাহ্‌)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের কাছে শাফায়াত তলব করার হুকুম কী? এই খুদে বার্তাটির হুকুমের ব্যাপারে আমার কাছে খটকা লাগছে: (হে রমযান! হে কারীম! আমার জন্য দয়াময় প্রভুর কাছে সুপারিশ করিও…” ইত্যাদি)।

জবাবে তিনি বলেন:

لا شك أن هذا بدعة، وطلب الشفاعة من حي قادر لا بأس به، كما لو قلت: اشفع لي أن يغفر الله لي: يعني ادع لي أن يغفر الله لي ، فهذا لا بأس به، وطلب الدعاء من الغير محل خلاف بين أهل العلم، لكن كما قال شيخ الإسلام ابن تيمية –رحمه الله- إذا قصد الطالب نفع الداعي فإن هذا جائز ولا بأس به إن شاء الله.أما أن يطلب الشخص من الأموات أن يشفعوا له عند الله عز وجل : فهذا لا شك أنه محرم ، ولا يجوز.وبعض العلماء جعله من الشرك الأكبر، وبعضهم جعله من الشرك الأصغر.وطلب الشفاعة من رمضان محرم ونوع من الاعتداء في الدعاء؛ لأن رمضان لا يشفع ، وإنما الوسيلة برمضان هي أن يتقي المسلم ربه -عز وجل- فيه. فهذا هو الذي يقرب الشخص إلى الله –عز وجل- إذا امتثل أمره واجتنب نهيه. وبالله التوفيق”

“নিঃসন্দেহে এটি বিদআত। জীবিত ও সক্ষম ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাইতে কোন অসুবিধা নাই। যেমন কেউ যদি বলে আল্লাহ্‌র কাছে সুপারিশ করুন যেন আমাকে মাফ করে দেয়। অর্থাৎ আমার জন্য দোয়া করুন যাতে আল্লাহ্‌ আমাকে ক্ষমা করে দেন। এতে অসুবিধা নাই।অপর ব্যক্তি থেকে দোয়া চাওয়া আলেমদের মধ্যে মতভেদপূর্ণ বিষয়। কিন্তু শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন যদি দোয়াপ্রার্থী দোয়াকারী থেকে উপকৃত হওয়ার নিয়ত করে থাকে তাহলে এটি জায়েয ইনশাআল্লাহ্‌ এতে কোন অসুবিধা নাই। পক্ষান্তরে, মৃত ব্যক্তিদের কাছে তারা আল্লাহ্‌র কাছে সুপারিশ করার জন্য চাওয়া এটি নিঃসন্দেহে হারাম ও নাজায়েয।কোন কোন আলেম এটাকে বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, আর কোন কোন আলেম এটাকে ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রমযানের কাছে শাফায়াত তলব করা হারাম এবং দোয়ার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন। কেননা রমযান সুপারিশ করবে না। বরঞ্চ রমযান হল মাধ্যম; যাতে করে একজন মুসলিম রমযান মাসে তার প্রভুকে ভয় করে। এ ভয় বান্দাকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দেয়; যদি সে আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন করে ও নিষেধ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা।(লিংক দেয়া ওয়েবসাইট থেকে সমাপ্ত: https://goo.gl/7DVH1d; ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২৯২৪৭৩)।
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে অনুপস্থিত কিংবা মৃত ব্যক্তির কাছে শাফায়াত চাওয়া জায়েজ নয়।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি কবরপূজারীরা বর্তমানে মৃতদের কাছে যে শাফা‘আত চাচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রকার ইবাদতের মাধ্যমে যারা কবরবাসীদের নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করে এসব কবরপূজারীদের পূর্বসূরীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,”আর তারা ইবাদত করে আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং তাদের কোনো উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহ্কে এমন বিষয়ে অবহিত করছ, যা তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে? তিনি পবিত্র ও মহান সেসব বস্তু থেকে যাকে তোমরা শরীক করছো’’। (সূরা ইউনুস: ১৮) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন‘তবে কি ওরা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদেরকে সুপারিশকারী স্থির করে নিয়েছে? বলো, ওদের কোনো ক্ষমতা না থাকলে এবং ওরা না বুঝলেও কি? বলো, সমস্ত শাফা‘আত কেবল আল্লাহরই মালিকানাধীন। আকাশ-মন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। অতঃপর তার নিকটেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’’। (সূরা যুমার: ৪৩-৪৪) আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদেরকে শিররক বিদআত থেকে হেফাজত করেন এবং আমাদের যাবতীয় আমলগুলো কবুল করে নেন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: