প্রশ্ন: রমাদান মাসে যারা বিমানে ভ্রমণ করেন, তারা কোন সময় ইফতার করবেন গন্তব্য দেশের সময় অনুযায়ী, নাকি বিমানে দেখা সূর্যাস্তের ভিত্তিতে?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এবং রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী সূর্যের পুরো বৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে ইফতারের সময় হয়। আর সে সময় হলো মাগরিবের সালাতের পূর্বে। সুতরাং রোজাদার নারী-পুরুষের জন্য সুন্নত হল সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা। ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা, যেমন তারাগুলো উদিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা, এটি মূলত ইহুদিদের অভ্যাস, যা শিয়া রাফেযি সম্প্রদায়ও অনুসরণ করে আসছে। তাই ইফতারের সময় অযথা বিলম্ব করা অনুচিত। এমনকি আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত দেরি করাও সঠিক নয়, কারণ এটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত নয়। বরং তাঁর আদর্শ হলো, দ্রুত ইফতার করা, যা বরকতময় ও কল্যাণকর। এই বিষয়ে দলিল হচ্ছে, মহান আল্লাহ বলেন: وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ) আর পানাহার করো যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।”(আল-বাক্বারাহ: ১৮৭) উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: আল্লাহর বাণী: (ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیۡلِ) “অতঃপর তোমরা সিয়াম পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত”এখানে আল্লাহ তাআলা সিয়ামের সময়-সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সিয়ামের শেষ সময় নির্ধারণ করেছেন রাতের আগমন। অন্যদিকে ইফতার, খাদ্য-পানীয়, স্ত্রী-মিলনবৈধ হওয়ার শেষ সময় ও সিয়াম শুরু করার সময় নির্ধারণ করেছেন দিনের আগমন ও রাতের শেষভাগের প্রস্থান। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, রাতের বেলায় কোন সিয়াম নেই। অপরদিকে সিয়ামের দিনগুলোতে দিনের বেলায় পানাহার বা স্ত্রী-মিলন নেই।”(তাফসীরে তাবারী; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৩২)
.
হাদিসে এসেছে, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا وَغَرَبَتْ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ ‘যখন রাত্রী ঐ দিক থেকে আবির্ভূত হয়, আর দিন এ দিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়, তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করবে”।(সহীহ বুখারী, হা/১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৫৮, ৫২৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/১১০০’ ১১০১; আবূ দাঊদ, হা/২৩৫২)। এখানে ইফতারকে সূর্যাস্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অতএব সিয়াম পালনকারী যখন সূর্য অস্তমিত হতে দেখবে তখনই ইফতার করবে।”(মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ,খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ১২৫)। আরেক বর্ননায় সাহল বিন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মানুষ ততদিন কল্যাণে থাকবে যতদিন তারা অবিলম্বে ইফতার করবে”।(সহিহ বুখারী হা/১৮৫৬ ও সহিহ মুসলিম হা/১০৯৮) উক্ত হাদীসের ব্যাখায় ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:فِيهِ الْحَثّ عَلَى تَعْجِيله بَعْد تَحَقُّقِ غُرُوبِ الشَّمْسِ , وَمَعْنَاهُ لا يَزَال أَمْر الأُمَّة مُنْتَظِمًا وَهُمْ بِخَيْرٍ مَا دَامُوا مُحَافِظِينَ عَلَى هَذِهِ السُّنَّة , وَإِذَا أَخَّرُوهُ كَانَ ذَلِكَ عَلامَة عَلَى فَسَادٍ يَقَعُونَ فِيهِ ا”এ হাদিসে সূর্য ডোবা নিশ্চিত হওয়ার পর অবিলম্বে ইফতার করার প্রতি উৎসাহ রয়েছে। যতদিন উম্মত এ সুন্নত রক্ষা করে যাবে ততদিন তারা সুশৃঙ্খল থাকবে এবং তারা কল্যাণে থাকবে। যদি তারা ইফতার করতে বিলম্ব করতে থাকে তাহলে সেটা তাদের বিশৃঙ্খলায় লিপ্ত হওয়ার আলামত।”(নববী শারহে মুসলিম; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ২০৮) ইমাম ইবনে আব্দুল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “সুন্নত হলো-অবিলম্বে ইফতার করা এবং বিলম্বে সাহরী খাওয়া। অবিলম্বে মানে সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে অবিলম্বে ইফতার করা। সূর্য অস্ত গিয়েছে কি যায়নি এ ব্যাপারে সন্দিহান থেকে ইফতার করা জায়েয নয়। কারণ “নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে যে ফরজ আমল অনিবার্য হয়েছে, সে ফরজ আমল শেষও করতে হবে নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে।”(আত-তামহীদ; খণ্ড: ২১; পৃষ্ঠা: ৯৭, ৯৮)
.
অতএব উপরোক্ত আলোচনা ভিত্তিতে রমাদান মাসে যারা বিমানে ভ্রমণ করেন তাদের ইফতারের সময় নির্ধারণের বিষয়ে ইসলামি আলেমদের মতামত হলো নিম্নরূপ:
.
প্রথমত: যারা বিমানা সফর করেন যেমন ক্রু কিংবা অন্য কোন আরোহী তারা মুসাফির। সকল আলেম এ ব্যাপারে ইজমা (ঐক্যমত্য) পোষণ করেছেন যে, মুসাফিরের জন্য রমজান মাসে সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েয; তার জন্য সিয়াম পালন করা কষ্টকর হোক অথবা নাহোক। তবে মুসাফিরের জন্য সিয়াম পালন করা কষ্টকর না হলে তার জন্য সিয়াম পালন করা উত্তম। আর কষ্টকর হলে তার জন্য সিয়াম ভঙ্গ করা উত্তম।এক্ষেত্রে তিনি সিয়াম ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে তাকে সিয়াম ভঙ্গ করা দিনগুলোর সিয়াম কাযা করতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত: একজন রোজাদার যদি বিমানে এমন কোনো দেশে সফর করছেন যেখানে সূর্য ডোবার আগেই তার ফ্লাইট ছেড়ে যায় এবং তিনি সিয়াম পূর্ণ করতে চান, তাহলে ইফতার কেবল তখনই করবেন যখন তার অবস্থানরত আকাশসীমায় সূর্য সম্পূর্ণরূপে অস্ত যাবে। এর আগে ইফতার করা বৈধ নয়। এমনকি বৈমানিকদের জন্যও ইচ্ছাকৃতভাবে এমন স্তরে বিমান নামানো অনুমোদিত নয় যেখানে সূর্য দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়, কারণ এটি কৌশল অবলম্বনের শামিল। তবে যদি উড্ডয়নের স্বার্থে বিমান এমন উচ্চতায় নামে যেখানে সূর্য ডুবে যায়, তাহলে ইফতার করা জায়েজ হবে। তদ্রূপ যদি কেউ গন্তব্যে পৌঁছে দেখে যে সূর্য এখনো অস্ত যায়নি তাহলে তাকে অবশ্যই সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যদিও তা দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়। এটি সবার জানা যে দিনের বেলায় কারো সফর যদি পূর্ব দিকে হয় তবে তার ক্ষেত্রে দিনের দৈর্ঘ্য কমে যাবে। আর যদি তার সফর পশ্চিম দিকে হয় তবে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে।সুতরাং তিনি যে স্থানে আছেন সেই স্থানের ফজরের শুরু ও সূর্যাস্ত তার ক্ষেত্রে ধর্তব্য হবে।যেহেতু ইসলামি শরিয়তে ইফতারের নির্ধারিত সময় সূর্যাস্তের পর তাই এর ব্যতিক্রম করা বৈধ নয়। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: “তোমরা রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর”।(সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৭) এবং যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন এ দিক থেকে রাত আগমন করবে এবং এ দিক থেকে দিন প্রস্থান করবে এবং সূর্য ডুবে যাবে তখন সিয়ামকারী ইফতার করবে।”(সহিহ বুখারী হা/১৯৫৪ ও সহিহ মুসলিম হা/১১০০)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,
إذا كان الصائم في الطائرة واطلع بواسطة الساعة والتليفون عن إفطار البلد القريبة منه وهو يرى الشمس بسبب ارتفاع الطائرة فليس له أن يفطر لأن الله تعالى قال: ثم أتموا الصيام إلى الليل وهذه الغاية لم تتحقق في حقه ما دام يرى الشمس.وأما إذا أفطر بالبلد بعد انتهاء النهار في حقه فأقلعت الطائرة ثم رأى الشمس فإنه يستمر مفطراً لأن حكمه حكم البلد التي أقلع منها وقد انتهى النهار وهو فيها
“যদি বিমানের আরোহী ঘড়ি ও টেলিফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, নিকটবর্তী স্থানে ইফতারের সময় হয়ে গেছে; কিন্তু বিমান উপরে থাকার কারণে সে সূর্য দেখতে পায়; তাহলে সে ইফতার করতে পারবে না। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তোমরা রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর”। যেহেতু সে সূর্য দেখতে পাচ্ছে তাই তার ক্ষেত্রে সময়ের লক্ষ্যস্থলে পৌঁছা বাস্তবায়িত হয়নি। আর যদি সেই ব্যক্তি ভূমিতে থাকাকালে ইফতার করে, এরপর বিমান ছাড়ে, এরপর সে সূর্য দেখতে পায়; তাহলে সে সিয়াম না পালনকারীর অবস্থার উপর অব্যাহত থাকবে। যেহেতু তার হুকুম সংশ্লিষ্ট স্থানের হুকুম, যেখান থেকে সে প্রস্থান করেছে এবং সে সেখানে থাকা অবস্থায় সেখানের দিন শেষ হয়েছে।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ১৩৬)
.
স্থায়ী কমিটির আলেমগন অন্য এক ফতোয়া বলেন:
إذا كان الشخص بالطائرة في نهار رمضان وهو صائم ويريد الاستمرار بصيامه إلى الليل فإنه لا يجوز أن يفطر إلا بعد غروب الشمس.”
“যদি কোন ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় বিমানে থাকেন এবং রাত পর্যন্ত তার সিয়ামটি পূর্ণ করতে চান; তার জন্য সূর্য ডোবার পূর্বে ইফতার করা জায়েয হবে না।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ১৩৭)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:“এক ছাত্র আমেরিকার কোন এক শহরে অধ্যয়নরত। সে তার ঘটনা বলল যে, একবার সে যে শহরে থেকে পড়ে সে শহর থেকে ভ্রমণ করতে বাধ্য হল। সে ফজরের সময় সিয়াম ধরেছে। যে শহরের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেছে ঐ শহরে পৌঁছেছে সেখানের সময় অনুযায়ী মাগরিবের পর। কিন্তু সে দেখতে পেল এর মধ্যে ১৮ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে কিন্তু তার সিয়াম শেষ হয়নি। অথচ সাধারণত সে ১৪ ঘন্টা রোযা রাখত। এমতাবস্থায় সে কি অতিরিক্ত ৪ ঘন্টা রোযা চালিয়ে যাবে? নাকি সে যে শহরে থাকে সে শহরের সময় অনুযায়ী ইফতার করে ফেলবে? সেই শহর থেকে ফেরার সময় বিপরীতটা ঘটল। তখন দিনের সময় ১৪ ঘন্টা কমে ৩ ঘন্টা হয়ে গেল।
এর জবাবে শাইখ বলেন:
يستمر في صومه حتى تغرب الشمس ، لأن رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال: إذا أقبل الليل من ههنا وأشار إلى المشرق وأدبر النهار من ههنا وأشار إلى المغرب وغربت الشمس ، فقد أفطر الصائم .فيلزمه أن يبقى في صيامه حتى تغرب الشمس ، ولو زاد عليه أربع ساعات. نظير هذا في المملكة العربية السعودية : لو أن أحداً سافر من المنطقة الشرقية بعد أن تسحر إلى المنطقة الغربية ، فسوف يزيد عليه حسب ما يكون في الفرق”
“সে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সিয়াম চালিয়ে যাবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন এ দিক থেকে রাত আগমন করবে; তিনি পূর্বদিকে ইশারা করেন এবং এ দিক থেকে দিন প্রস্থান করবে; তিনি পশ্চিম দিকে ইশারা করেন এবং সূর্য ডুবে যাবে তখন সিয়ামকারী ইফতার করবে।” অতএব সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সে ছাত্রকে তার সিয়ামের উপর থাকতে হবে; এমনকি যদি চার ঘন্টা বেড়ে যায় তবুও। সৌদি আরবে এর সম ধরণের উদাহরণ হচ্ছে: কেউ যদি পূর্ব প্রদেশে সাহরী খাওয়ার পর পশ্চিম প্রদেশের উদ্দেশে সফর করে তখন দূরত্ব অনুপাতে তার সময় বেড়ে যাবে।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ৩২২)
.
ড. আব্দুল্লাহ্ আস্-সাকাকির ‘নাওয়াযিলুস সিয়াম’ গ্রন্থে বলেন: “দ্বিতীয় মাসয়ালা: কোন মুসাফির তার দেশে সূর্য ডুবার কিছুক্ষণ পূর্বে যদি পশ্চিম দিকে সফর করে তাহলে তার সূর্য ডোবা বিলম্বিত হবে। উদাহরণত তার দেশে যদি সন্ধ্যা ৬টায় সূর্য অস্ত যায় আর সে ৬টা বাজার ১০ মিনিট আগে মরক্কোর উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ে সে এই পথে যত অগ্রসর হতে থাকবে তার দিন তত বড় হতে থাকবে। কেননা মরক্কোতে সূর্য ৮টার আগে অস্ত যাবে না। এভাবে এক ঘন্টা বা দুই ঘন্টা সূর্যকে উদীয়মান অবস্থায় সে পাবে। এমন ব্যক্তিকে আমরা কী বলব?
তিনি জবাবে লিখেন আমরা বলব:
لا يُفطِرُ حتى تَغرُبَ الشمسُ، حتى لو زادَ عليه ساعتان أو أربعٌ أو خمسٌ أو أكثَرُ، فهو بالخيارِ، إمَّا أنْ يأخُذَ حُكْمَ الـمُسافِرِ، فيُفطِرَ تَرَخُّصًا، وإمَّا أنْ يُمسِكَ إذا أرادَ لِصَومِه أنْ يتِمَّ؛ لِأنَّ القُرآنَ جَعَلَ لِلفِطرِ حدًّا: ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ [البقرة: 187]، والنَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم يقولُ: “إذا أقبَلَ اللَّيلُ مِن هاهنا، وأدبَرَ النهارُ مِن هاهنا، وغَرَبَتِ الشمسُ، فقد أفطَرَ الصائمُ”.فما لم تَغرُبِ الشمسُ ، فإنَّه لم يَنتَهِ اليَومُ بالنسبةِ لِهذا الإنسانِ ومِن ثَمَّ فإنَّه يجِبُ عليه أنْ يُمسِكَ حتى تَغرُبَ الشمسُ، أو يترَخَّصَ رُخصةَ السفَرِ فيُفطِرَ ويَقضيَ يَومًا مكانَه
“সূর্য না ডুবা পর্যন্ত ইফতার করবে না। এমনকি এতে করে যদি সময় দুই ঘন্টা, চার ঘন্টা, পাঁচ ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি বেড়ে যায় তবুও। তবে তার এই এখতিয়ার থাকবে যে, সে মুসাফিরের বিধিবিধান গ্রহণ করে এবং ছাড় নিয়ে রোযা ভেঙ্গে ফেলবে। আর রোযা পূর্ণ করতে চাইলে তাকে অতিরিক্ত সময়টুকুও (সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় থেকে) বিরত থাকতে হবে। কেননা কুরআনে কারীম সিয়াম ভাঙ্গার জন্য একটি সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। “অতপর তোমরা রাত পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর”।[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৭] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি রাত এ দিক থেকে আগমন করে এবং এ দিক থেকে প্রস্থান করে এবং সূর্য অস্ত যায় তখন সিয়ামকারী ইফতার করবে।”আর যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য অস্ত যাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এই লোকের দিন শেষ হবে না। অতএব, সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় থেকে বিরত থাকা তার উপর ওয়াজিব কিংবা সে সফরের ছাড় গ্রহণ করে রোযা ভেঙ্গে ফেলতে পারে এবং এই দিনের বদলে অন্য একদিন রোযাটি রাখতে পারে”[https://bit.ly/2Zq4574 থেকে সমাপ্ত] আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৩৮৮৬০ এবং ৩৭৬৭০)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে সিয়ামকারী ব্যক্তি সূর্যাস্তের আগে কোনোভাবেই সিয়াম ভঙ্গ করবেন না। তিনি পৃথিবীর যে দিকেই থাকুন না কেন পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর বা দক্ষিণ তার জন্য মূল নিয়ম একটাই: নিশ্চিতভাবে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরই ইফতার করা। সূর্যাস্তে বিলম্ব হলেও ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং যথাসময়ে ইফতার করতে হবে। কেননা এটিই সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষা।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
✍️জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়,ওস্তায ওয়াসিম আকরাম (হাফি.)
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি,সৌদি আরব।