প্রশ্ন:”যে ব্যক্তি জানা ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন করলো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দিবেন” হাদীসটির বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা জানতে চাই!
▬▬▬▬▬▬▬▬ ◈ ▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে হক্ব প্রচারে যার কোন প্রতিবন্ধকতা নেই, বরং উৎসাহিত হয়ে এবং কোন স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে তা গোপন করে, আল্লাহ তা‘আলা এবং অভিশম্পাতকারীরা তাকে অভিশাপ দেন।কেননা হক গোপন করা হলো ইয়াহুদীদের বৈশিষ্ট্য। আর যারা কু-প্রবৃত্তির অনুসরণে হক্ব গোপন করে, মানুষের নিকট তা প্রচার করে না; এ বৈশিষ্ট্য তাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাদের নিকট কোন বিষয়ের বিধান জানতে চাওয়া হলে হক্ব ছাড়াই তারা জবাব দেয়। অথচ তারা সঠিক জবাব জানে। এটাকেই বলে হক্ব গোপন করা। আল্লাহ তা‘আলা হক্ব বলার আদেশ দেন যদিও তা নিজের ক্ষেত্রেও হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ)
হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা কাছে আত্মীয়দের বিরূদ্ধে হয় (সূরা আন নিসা ৪: ১৩৫)। তাই প্রকাশ্যে ও যে কোন অবস্থায় হক্ব-সত্য প্রচার করা ওয়াজীব। সত্য সাক্ষ্য গোপন করা মারাত্নক অপরাধ। মানুষের জীবন পরিচালনা ও সঠিক পথ নির্দেশনার জন্য ওয়াজীব ইলম-বিদ্যা গোপন করাও অপরাধ। সুতরাং কোন তোষামদ ছাড়াই হক্ব-সত্য প্রচার করা ওয়াজীব-আবশ্যক। সুতরাং মানুষ যখন কোন বাতিল, কুসংস্কার ও শিরক দেখতে পাবে তখন নিরব থাকবে না; বরং তা প্রকাশ করে দেয়া তার উপর ওয়াজীব। আর কবর ও প্রতিমাপূজা এবং ভ্রান্ত বিদ‘আত চালু করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে না। যে নিরব থেকে বলে যে, মানুষের প্রতি আমার করার কিছুই নেই অথবা মানুষকে হারামে লিপ্ত হতে দেখেও চুপ থাকে, তাহলে এটাই হবে তার বিদ্যা গোপন করা এবং নসিহতের (কল্যাণ কামনা) খেয়ানত করা। এই ধরনের ব্যক্তিদের সম্পর্কে হাদিসে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। যেমন: আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ فَكَتَمَهُ أَلْجَمَهُ اللَّهُ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যে ব্যক্তি জানা ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন করলো, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দিবেন”।(মুসনাদে আহমাদ হা/ ৭৮৮৩, আবু দাউদ হা/৩৬৫৮; তিরমিজি হা/২৬৪৯; ইবনে মাজা হা/২৬৪)
.
হাদীসটির সরল অর্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যদি কোন আলেমকে দ্বীনি বিষয় তথা শারী‘আত সম্পর্কে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে এবং জিজ্ঞাসাকারী ঐ বিষয়ে ‘ইলম ধারণ করার যোগ্যতা রাখে এবং জিজ্ঞাসার বিষয় যদি দ্বীনের আবশ্যকীয় কোন বিষয় হয় যেমন- ইসলাম, সালাতের শিক্ষা, হারাম ও হালাল তাহলে অবশ্যই সম্ভাব্যতা অনুযায়ী জিজ্ঞাসু ব্যক্তিকে উত্তর দিতে হবে। যদি জিজ্ঞাসাকারীকে উত্তর দেয়া না হয় তাহলে ক্বিয়ামাত দিবসে বিদ্বান ব্যক্তিকে বাকশক্তিহীন চতুষ্পদ জন্তুর মতো মুখে আগুনের লাগাম লাগিয়ে উপস্থিত করা হবে। পক্ষান্তরে যদি দ্বীনের কোন নফল বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাহলে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির এ বিষয়ে উত্তর দেয়া বা না দেয়া ইচ্ছাধীন। কিংবা যে ব্যক্তি হক্ব প্রচারে অক্ষম অথবা তা বর্ণনা করতে মারাত্নক ফিতনার আশঙ্কা করে; তা ওজর-কৈফিয়ত হিসাবে গণ্য হবে।
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখায় হাদিসের জগৎশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার ইমাম খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩৮৮ হি.) বলেন,
“وهذا في العلم الذي يلزمه تعليمه إياه ، ويتعين عليه فرضه، كمن رأى كافراً يريد الإسلام يقول علموني: ما الإسلام وما الدين؟، وكمن يرى رجلاً حديث العهد بالإسلام لا يحسن الصلاة وقد حضر وقتها يقول: علموني كيف أصلي؟، وكمن جاء مستفتياً في حلال أو حرام ، يقول : أفتوني وأرشدوني ، فإنه يلزم في مثل هذه الأمور أن لا يمنعوا الجواب عما سألوا عنه من العلم، فمن فعل ذلك كان آثماً مستحقاً للوعيد والعقوبة.
وليس كذلك الأمر في نوافل العلم التي لا ضرورة بالناس إلى معرفتها.وسئل الفضيل بن عياض عن قوله صلى الله عليه وسلم: (طلب العلم فريضة على كل مسلم)، فقال: كل عمل كان عليك فرضاً، فطلب علمه عليك فرض، وما لم يكن العمل به عليك فرضاً ، فليس طلب علمه عليك بواجب”
এটা হল সেই ইলমের ক্ষেত্রে যেই ইলম শেখানো আবশ্যক এবং তার উপরে ফরজ বিধানগুলো নির্দিষ্ট ভাবে শেখা একান্ত জরুরী যেমন কোন ব্যক্তি কাফেরকে দেখল যে সে ইসলাম গ্রহণ করতে চায় এবং সে বলল আপনারা আমাকে শিখিয়ে দিন ইসলাম কাকে বলে এবং দ্বীন কাকে বলে? অথবা কোনো ব্যক্তি একজন লোককে দেখে যে ইসলামে নতুন (নওমুসলিম এবং নামায পড়ার সময় এসে গেছে, সে বলে: আমাকে শিখাও কিভাবে নামায পড়তে হয় অথবা কোন ব্যক্তি হালাল-হারামের ক্ষেত্রে ফাতাওয়া জানতে আসে যে আমাকে ফতোয়া দিন। তারা যে জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে তার উত্তর না দেওয়া আবশ্যক । কেননা যে এমনটি করবে সে শাস্তির হকদার হবে। এটি নফল জ্ঞানের ক্ষেত্রে নয় যা মানুষের জানার প্রয়োজন নেই। ফুযাইল ইবনে আইয়াজকে রাসূল সাঃ এর কথা ” প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অর্জন করা ফরজ” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেছেন: যে সমস্ত আমল তোমার জন্য ফরজ, তার জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ আর যে সমস্ত আমল তোমার জন্য ফরজ নাই, তার জ্ঞান অর্জন করাও আবশ্যক নয়। (মাআলিমুস সুনান খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা:৮৫)
.
ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের আরেক দিকপাল, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন,
” قوله: (من سئل عن علم) : نافع ، يحتاج إليه السائل ، في أمر دينه ، وكان السائل أهلاً لذلك العلم.
(ثم كتمه) : “ثم” فيه : استبعادية؛ لأن تعلم العلم ، إنما كان لنشر العلم ونفعه الناس، وبكتمه يزول ذلك الغرض، فكان بعيداً ممن هو في صورة العلماء والحكماء.
(ألجم يوم القيامة بلجام من نار) أي : أدخل في فمه لجام من نار ؛ شَبه ما يوضع في فمه من النار ، بلجام في فم الدابة، وهو إنما كان جزاء إمساكه عن قول الحق. وخُص اللجام بالذكر ، تشبيهاً للكاتم بالحيوان الذي سُخر ومُنع مِن قصدِه ما يريد.
وفي رواية لابن ماجه: (ما من رجل يحفظ علماً فيكتمه إلا أتى يوم القيامة ملجوماً بلجام من نار) .
وظاهره : أن المراد : حضر في المحشر كذلك، ثم أمره إلى الله بعد ذلك؛ لأنه أمسك فمه عن كلمة الحق وقت الحاجة والسؤال، فجوزي بمثله، حيث أمسك الله فمه ، في وقت اشتداد الحاجة ، للكلام والجواب عند السؤال عن الأعمال .
وهذا في العلم الضروري الذي يلزم تعليمه ، ويتعين عليه، كمن يريد الإسلام ، أو تعليم الصلاة وقد حضر وقتها، أو فتوى في الحل والحرمة. وأما نوافل العلم فهو مخير في تعليمها.”
(যাকে জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়): অর্থাৎ উপকারী জ্ঞান সম্পর্কে যেটা প্রশ্নকারীর জানা দরকার তার দ্বীনি বিষয়ে যার কাছে প্রশ্ন করছে সে ওই বিষয় সম্পর্কে জানে। (সে সেই ইলমকে গোপন করেছে) অর্থাৎ যে বিষয়ে প্রশ্ন করেছে সে বিষয় থেকে সে দূরে থাকে কেননা সে এলেম অর্জন করেছে এলেমকে প্রচার-প্রসার এবং মানুষের উপকার করার জন্য আর গোপনীয় দ্বারা বোঝা যাচ্ছে তার উদ্দেশ্যটা সরিয়ে দেওয়া হলে সে আলেম এবং জ্ঞানীদের থেকে দূরে চলে গেল।
ألجم يوم القيامة بلجام من نار
“অর্থাৎ, তার মুখে আগুনের লাগাম পড়ানো হবে। তার মুখের মধ্যে রাখা আগুনকে পশুর মুখে লাগামের সাথে তুলনা করেছেন। এটা ছিল সত্য কথা বলা থেকে বিরত থাকার পুরস্কার মাত্র। লাগামটিকে বিশেষভাবে একটি প্রাণীর সাথে তুলনা করা হয়েছে যাকে উপহাস করা হয় । ইবনে মাজাহ গ্রন্থে রয়েছে:
مَا مِنْ رَجُلٍ يَحْفَظُ عِلْمًا فَيَكْتُمُهُ إِلاَّ أُتِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلْجَمًا بِلِجَامٍ مِنَ النَّارِ
” “কোন ব্যক্তি (দ্বীনের) জ্ঞানের কথা শিক্ষা করার পর তা গোপন করে রাখলে, কিয়ামাতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরানো অবস্থায় উপস্থিত করা হবে।(ইবনু মাজা হা/২৬১) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল কোন মজলিসে সে উপস্থিত রয়েছে অতঃপর সে বিষয়কে আল্লাহ তাআলার দিকে ঠেলে দেয় কেননা সে প্রয়োজনের সময় সত্য কথা বলতে মুখ বন্ধ রেখেছিল তার প্রতিদান তার মতই হবে এমনকি আল্লাহ তায়ালা তার মুখ বন্ধ করে দিবেন তার কঠিন প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ার কারণে। এটা এমন একটা জ্ঞানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে জ্ঞানটা অর্জন করা আবশ্যক শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক যেমন কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করল অথবা কোন ব্যক্তি সরাতে উপস্থিত সময় সারা শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলো অথবা কোন হালাল-হারাম সম্পর্কে ফতোয়া চাইলো আর নফল এলেমের ক্ষেত্রে ইচ্ছাধীন রয়েছে। (মিরআতুল মাফাতিহ শারহু মিশকাতুল মাসাবিহ;খন্ড;১ পৃষ্ঠা;৩২৫)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” হাদিসটি কী সহিহ? হাদিসটির ব্যাখা জানতে চাই এবং কিভাবে ইলম গোপন করা হয়?
উত্তরে তিনি বলেছেন:
كتمان العلم يكون بإخفائه حين تدعو الحاجة إلى بيانه ، والحاجة التي تدعو إلى بيان العلم بالسؤال ، إما بلسان الحال ، وإما بلسان المقال .
فالسؤال بلسان الحال : أن يكون الناس على جهل في دين الله ، بما يلزمهم في الطهارة في الصلاة ، في الزكاة ، في الصيام، في الحج ، في بر الوالدين ، في صلة الأرحام ، فيجب حينئذٍ بيان العلم .
أو بلسان المقال : بأن يسألك إنسان عن مسألة من مسائل الدين ، وأنت تعرف حكمها ، فالواجب عليك أن تبينها ، ومن كتم علماً مما علمه الله ، فهو على خطر عظيم قال الله تعالى : (إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنْ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُوْلَئِكَ يَلْعَنُهُمْ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمْ اللاَّعِنُونَ * إِلاَّ الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُوْلَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ) وقال تعالى : (وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلا تَكْتُمُونَهُ) .
وليعلم طالب العلم أنه كلما بيَّن العلم ، ازداد هذا العلم ؛ فإن العلم يزيد بزيادة نفسه ، قال الله تعالى : (وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْواهُمْ) ”
“জ্ঞানকে গোপন করা হল যখন ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় তখন তা গোপন রাখা, প্রয়োজন হল কোন জ্ঞানের প্রশ্নের ব্যাখ্যা করার দাবি রাখা সেটা পরিস্থিতির ভাষাতে হোক কিংবা আলোচনার ভাষাতে হোক।
পরিস্থিতির ভাষায় প্রশ্ন: মানুষ যদি আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ হয়, তাহলে নামাজে,যাকাতে, রোজায়, হজ্জে, পিতা-মাতার সম্মানে, পরিবারের সম্মানের ক্ষেত্রে পবিত্রতার ক্ষেত্রে তাদের কী প্রয়োজন? ফলে এমন অবস্থায় ইলমের ব্যাখ্যা করা ওয়াজিব।
আলোচনার ভাষায় প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে দ্বীনী বিষয়ে প্রশ্ন করে,এবং আপনি তার হুকুম জানেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই তা ব্যাখ্যা করতে হবে এবং যে যে ব্যক্তি ইলম গোপন করে যেটা আল্লাহ তায়ালা তাকে শিখিয়েছেন তাহলে সে ব্যক্তি মহা ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত হবে।আল্লাহ তা’আলা বলেন;”নিশ্চয় যারা গোপন করে সু-স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়াত যা আমি নাযিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেন এবং লা‘নতকারীগণও তাদেরকে লা‘নত করে। তারা ছাড়া, যারা তাওবা করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব, আমি তাদের তাওবা কবূল করব। আর আমি তাওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু। সূারা বাকারা ১৫৯-১৬০) আল্লাহ আরো বলেন, আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ কিতাবপ্রাপ্তদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, ‘অবশ্যই তোমরা তা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না’।সূরা আলে ইমরান: ৩/১৮৭) জ্ঞান অন্বেষণকারী ব্যক্তির জন্য জেনে রাখা উচিত যে সে যত জ্ঞানের ব্যাখ্যা করবে তত তার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। জ্ঞান তার নিজের বৃদ্ধির মাধ্যমেই বৃদ্ধি হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْواهُمْ
“আর যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে আল্লাহ তাদের হিদায়াত প্রাপ্তি আরো বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে তাদের তাকওয়া প্রদান করেন”।(সূরা মুহাম্মদ: ১৭; উসাইমীন; ফাতাওয়ায়ে নুরুন আলাদ দারব: ২/৬)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, প্রকাশ্যে ও যে কোন অবস্থায় হক্ব-সত্য প্রচার করা ওয়াজীব। সত্য সাক্ষ্য গোপন করা মারাত্নক অপরাধ। মানুষের জীবন পরিচালনা ও সঠিক পথ নির্দেশনার জন্য ওয়াজীব ইলম-বিদ্যা গোপন করাও অপরাধ। সুতরাং কোন তোষামদ ছাড়াই হক্ব-সত্য প্রচার করা ওয়াজীব-আবশ্যক। কারন নিরব থাকার জন্য আল্লাহ মানুষকে ইলম-জ্ঞান দান করেননি। মানুষকে সতর্ক করা, প্রমাণসহ আল্লাহর দিকে আহবান করা এবং অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং হক্বের ব্যাপারে আলেমদের নিরব থাকা বৈধ নয়। যেহেতু তারা হক্ব প্রচারে সক্ষম, বিশেষত ভ্রষ্টতা, শিরক, বিদ‘আত ও কুসংস্কারে যখন মানুষকে লিপ্ত দেখবে তখন তারা নিরব থাকবে না। যদি তারা এক্ষেত্রে নিরব থাকে তাহলে এটাই হবে ইলম-বিদ্যা গোপন করা, যে বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে দোষারোপ করেছেন। তাই জানা সত্ত্বেও আলেম কিভাবে হক্বের বিরোধিতা করতে পারেন এবং মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন অথবা হক্ব বিরোধী কর্ম-কান্ড চলতে দেয়া অথবা মানুষ যে রীতির উপর বহাল আছে সেক্ষেত্রে তালমিলানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে হক্বের বিরূদ্ধে ফাতওয়া দিতে পারেন কি?! সুতরাং হক্বের অনুসরণই বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে; অধিকাংশ মানুষ বাতিলের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই তাদের সন্তুষ্টি অর্জন কাম্য নয়। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
من التمس رضا الله بسخط الناس رضي الله عنه وأرضى عنه الناس، ومن التمس رضا الناس بسخط الله، سخط الله عليه وأسخط عليه الناس
“মানুষের ক্রোধেও যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং মানুষকে তার উপর তুষ্ট রাখেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধে মানুষের সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর রগান্বিত হন এবং মানুষকে তার উপর ক্রোধান্বিত করেন।(তিরমিযী ২৪১৯, ছহীহ জামে ৬০৯৭) মহান আল্লাহ আমাদের হকের পথে অটল রাখুন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)।