যাকাতের টাকা দিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা কিংবা কাউকে ইফতারি করানো যাবে কি

প্রশ্ন: যাকাতের টাকা দিয়ে রমাদান মাসে ইফতার পার্টির আয়োজন করা কিংবা কাউকে ইফতারি করানো যাবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর কুরআন-সুন্নাহর দলিল এবং এই উম্মতের সালাফদের প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাবে যাকাতের টাকা দিয়ে রমাদান মাসে ইফতার পার্টির আয়োজন করা কিংবা কাউকে ইফতারি করানো যাবে না। কেননা যাকাত একদিকে আল্লাহ্‌র ইবাদত অন্যদিকে ফকির-মিসকিনদের অধিকার। আর ইবাদত তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা শরীয়তের বিধি-বিধান অনুযায়ী পালন করা হবে। সুতরাং করণীয় হচ্ছে নগদ টাকার যাকাতের অর্থ সরাসরি প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেওয়া কিন্তু এরপর দরিদ্র ব্যক্তি সেই অর্থ কীভাবে ব্যয় করবেন তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার অধিকার কারো নেই। বরং আমাদের কর্তব্য হলো কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী এমন একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এই অর্থ প্রদান করা যিনি সেই অর্থের প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুভব করেন এবং জানেন কিভাবে তা তার জীবনে সর্বোত্তমভাবে উপকারে আসবে। নগদ টাকার যাকাত নিজ ইচ্ছে অনুযায়ী খাদ্য দিয়ে আদায় করা যাবে না এর অন্যতম দুটি কারণ হচ্ছে:
.
প্রথমত: যাকাতের খাতসমূহ নির্দিষ্ট যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। নির্ধারিত এসব খাতের বাইরে যাকাত প্রদান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং যাকাত আদায় হিসেবে গণ্য হবে না। সুতরাং যাকাতের অর্থ দিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা বা কাউকে ইফতার করানো শরিয়তের নির্ধারিত আটটি খাতের কোনো একটির অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে এভাবে যাকাত আদায় করা বৈধ হবে না।
.
দ্বিতীয়ত: কুরআন-সুন্নাহর প্রমাণ এবং জমহুর আলেমদের স্বীকৃত অভিমত অনুযায়ী নগদ অর্থের যাকাত অবশ্যই নগদ অর্থের মাধ্যমেই প্রদান করতে হবে। ব্যক্তির নিজস্ব ইচ্ছায় খাদ্য বা অন্য কোনো দ্রব্য দ্বারা যাকাত আদায় করা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রদের আর্থিক প্রয়োজন পূরণ করা। তবে যদি যাকাতের হকদাররা নিজেদের ইচ্ছায় নগদের পরিবর্তে কোনো নির্দিষ্ট পণ্য গ্রহণ করতে চান অথবা তাদের জন্য তা অধিক প্রয়োজনীয় হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ দ্বারা তাদের চাহিদামাফিক দ্রব্য কিনে দেওয়া যেতে পারে। আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: যাকাত কি নির্দিষ্ট পণ্য, যেমন খাদ্য বা অন্যান্য জিনিসপত্রের আকারে গরীবদের মাঝে বিতরণ করা যাবে? তিনি উত্তরে বলেন: لا يجوز، الزكاة لا بد أن تدفع دراهم…”এটা জায়েজ নয়; যাকাত অবশ্যই নগদে দিতে হবে।”(ইবনু উসাইমীন আল-লিক্বাউশ শাহরী, লিক্বা নং-৪১/১২) তিনি আরও বলেন: ” زكاة الدراهم لابد أن تكون دراهم ، ولا تخرج من أعيان أخرى إلا إذا وكلك الفقير فقال : إن جاءك لي دراهم فاشتر لي بها كذا وكذا ، فلا بأس …”যাকাত অবশ্যই নগদ অর্থেই প্রদান করতে হবে, অন্য কোনো বস্তু দিয়ে তা আদায় করা বৈধ নয়। তবে যদি কোনো দরিদ্র ব্যক্তি অনুরোধ করে যে, ‘যদি তুমি আমাকে যাকাতের টাকা দাও, তবে আমি তা দিয়ে এই বা সেই জিনিস কিনব,’ তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৩০৩)
.
সুতরাং ইফতারের জন্য যাকাতের টাকা ব্যবহার করা জায়েজ নয়। কারণ যাকাত প্রদানের মূল শর্ত হলো গরীব ও মিসকিনদের সম্পদের প্রকৃত মালিকানা প্রদান করা। যাকাতের অর্থ তাদের হাতে তুলে দেওয়া আবশ্যক যেন তারা নিজস্ব প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা ব্যবহার করতে পারে। যাকাত আট শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বণ্টন করতে হবে; যাদের কথা আল্লাহ্‌ তাআলা এই আয়াতে উল্লেখ করেছেন: اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰكِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَكِیۡمٌ
“নিশ্চয়ই যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তারা, দাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে যারা আছে ও মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা তাওবা, আয়াত: ৬০]
.
উক্ত আয়াতে প্রথম চারটি শ্রেণী ফকীর, মিসকীন এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; আয়াতে ‘লাম’ (মালিকানার ইঙ্গিতকারী) “অব্যয়” ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ হলো তাদের মালিকানা প্রদান করা, অর্থাৎ যাকাত তাদের হাতে প্রদান করা এবং তারা যা ইচ্ছা তা তারা করতে পারে (যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে খরচ করবে)” (ইবনু উসাইমীন “লিকাউ বাবিল-মাফতূহ) আল-মুরদাউয়ি তার ‘আল-ইনসাফ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন: يشترط في إخراج الزكاة تمليك المعطى , فلا يجوز أن يغدي الفقراء أو يعشيهم.”যাকাত প্রদান করার শর্ত হলো: যাকে যাকাত দিবে তাকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। সুতরাং ফকীরদের শুধুমাত্র খাওয়ানোর মাধ্যমে তা আদায় করা যাবে না।” (আল-ইনসাফ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৩৪)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:

” لا يجوز للإنسان أن يشتري بزكاته أشياء عينية ، يدفعها بدلاً عن الدراهم، قالوا: لأن الدراهم أنفع للفقير، فإن الدراهم يتصرف فيها كيف يشاء بخلاف الأموال العينية ، فإنه قد لا يكون له فيها حاجة، وحينئذ يبيعها بنقص.

ولكن هناك طريقة إذا خفت لو أعطيت الزكاة لأهل هذا البيت صرفوها في غير الحاجات الضرورية، فقل: لرب البيت سواء كان الأب، أو الأم، أو الأخ، أو العم، قل له: عندي زكاة، فما هي الأشياء التي تحتاجونها لأشتريها لكم وأرسلها لكم، فإذا سلك هذه الطريقة، كان هذا جائزاً، وكانت الزكاة واقعة موقعها ”

“কোনো ব্যক্তির জন্য তার যাকাত দিয়ে কোনো জিনিসপত্র কিনে দিরহামের (টাকার) বদলে সেসব জিনিস প্রদান করা জায়েয নয়। আলেমগণ বলেন: যেহেতু দিরহাম গরীব লোকের জন্য অধিক উপকারী। কেননা দিরহাম যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে খরচ করা যায়; জিনিসপত্র সেভাবে করা যায় না। হতে পারে তার এসব জিনিসপত্রের প্রয়োজন নাই। সেক্ষেত্রে গরীব লোককে এ জিনিসপত্রগুলো কম দামে বিক্রি করতে হবে।

তবে আপনি যদি কোন পরিবারের ব্যাপারে আশংকা করেন যে, তাদেরকে যাকাতের অর্থ দিলে তারা অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচ করে ফেলবে সেক্ষেত্রে একটি রাস্তা আছে। তাহলো আপনি পরিবারের প্রধানকে বলবেন, সে বাবা হোক, মা হোক, ভাই হোক, চাচা হোক। আপনি তাকে বলবেন: আমার কাছে কিছু যাকাতের অর্থ আছে। আপনাদের কোন জিনিসগুলো প্রয়োজন আমি আপনাদেরকে সেগুলো খরিদ করে পাঠিয়ে দিব। যদি এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাহলে জায়েয হবে এবং যাকাত যথাযথভাবে আদায় হয়ে যাবে।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৪৮১)
.
ইসলাম ওয়েবের আলেমগনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন:”একজন ব্যক্তি তার যাকাত পরম করুণাময়ের দস্তরখানায় (রমজান মাসে ইফতার বিতরণের স্থান) দান করতে চান। এভাবে তার যাকাত দেওয়া কি শরীয়তসম্মত এবং বৈধ হবে?”

উত্তরে তারা বলেন:

الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى آله وصحبه، أما بعد: فالأصل أن تدفع الزكاة إلى الفقير من جنس المال المزكى، فزكاة النقود تخرج نقودا لا طعاما، فيما عدا عروض التجارة فإنها تقوم وتخرج قيمتها نقدا، والأصل كذلك أن تدفع الزكاة إلى الفقير ليتصرف فيها بما يشاء مما هو مباح شرعا، وعلى هذا فلا يجوز إخراج الزكاة طعاما لإفطار الصائمين، وهذا ما عليه جمهور العلماء، وقد بينا هذا في الفتوى رقم:
“আলহামদুলিল্লাহ! দুরুদ ধার্য হোক আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর উপর, তাঁর পরিবার এবং সাহাবীদের উপর। অতঃপর মূলনীতি হলো যে, যাকাত প্রদান করতে হবে সেই ব্যক্তির নিকট যিনি তা গ্রহণ করার উপযুক্ত এবং যাকাত গরীবদের কাছে তাদের নিজস্ব সম্পদের প্রকৃতি অনুসারে প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ যাকাত হিসেবে যে সম্পদ রয়েছে,সেটির ধরনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে তা দিতে হবে। সুতরাং যদি তা টাকার যাকাত হয় তবে তা টাকা দিয়েই প্রদান করতে হবে খাদ্য দিয়ে নয়। তবে ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন। ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত দেয়ার সময়, তাকে তার বাজার মূল্যের সমমূল্যে টাকা হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।মূলনীতি হলো, যাকাত প্রদান করতে হবে যাতে গ্রহণকারী তা নিজের ইচ্ছামতো, ইসলামে অনুমোদিত কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারে। অতএব,রমজান মাসে সিয়াম পালনকারীদের ইফতার করানোর জন্য যাকাতের খাদ্য বিতরণের বিষয়টি শরীয়তগত ভাবে সঠিক নয় এবং এটি অধিকাংশ আলেমের মতামতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আমরা এই বিষয়ে অনেক ফতোয়ায় বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।”(ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-৩৯২০৮)
.
▪️কখন নগদ অর্থের যাকাত অন্য কিছু দ্বারা দেওয়া বৈধ?
.
“যদি কোনো দরিদ্র ব্যক্তি জরুরি প্রয়োজন যেমন ঔষধ বা খাবার কিনতে না পারে এবং তাকে নগদ অর্থ দিলে সে সঠিকভাবে তা ব্যবহার করতে না পারে কিংবা তা তার জন্য ক্ষতিকর কিছুতে খরচ করতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে তাহলে কিছু আলেম মনে করেন যে, যাকাত নগদ অর্থের পরিবর্তে সরাসরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য (যেমন ঔষধ বা খাবার) আকারে দেওয়া জায়েজ। বিশেষ করে যদি দরিদ্র ব্যক্তি শারীরিক বা মানসিকভাবে দুর্বল হয়, অপরিণত বা বোকা হয় এবং নগদ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম না হয় অথবা সে এমন কিছুতে তা ব্যয় করবে যা তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাহলে এর ফলে তার অভাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, যা তার এবং তার উপর নির্ভরশীলদের আরও কষ্টের সৃষ্টি করতে পারে।”
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:
” إخْرَاجُ الْقِيمَةِ لِغَيْرِ حَاجَةٍ وَلا مَصْلَحَةٍ رَاجِحَةٍ مَمْنُوعٌ مِنْهُ …؛ وَلأَنَّهُ مَتَى جُوِّزَ إخْرَاجُ الْقِيمَةِ مُطْلَقًا فَقَدْ يَعْدِلُ الْمَالِكُ إلَى أَنْوَاعٍ رَدِيئَةٍ ، وَقَدْ يَقَعُ فِي التَّقْوِيمِ ضَرَرٌ؛ وَلأَنَّ الزَّكَاةَ مَبْنَاهَا عَلَى الْمُوَاسَاةِ ، وَهَذَا مُعْتَبَرٌ فِي قَدْرِ الْمَالِ وَجِنْسِهِ ، وَأَمَّا إخْرَاجُ الْقِيمَةِ لِلْحَاجَةِ أَوْ الْمَصْلَحَةِ أَوْ الْعَدْلِ فَلا بَأْسَ بِهِ
“(যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে) প্রয়োজন বা সুস্পষ্ট স্বার্থ না থাকলে সমমূল্যের জিনিসপত্র দান করা নিষিদ্ধ। কারণ, যদি সমমূল্যের জিনিসপত্র দান করার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে দাতা খারাপ মানের পণ্য দিতে পারেন ফলে তাতে ক্ষতি হতে পারে(মূল্যায়ন সঠিক নাও হতে পারে) যাকাত দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য নির্ধারিত,এবং এটি ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পদের পরিমাণ ও ধরণের সাথে সম্পর্কিত। তবে যখন প্রয়োজন, স্বার্থ, বা ন্যায্যতা অর্জনের জন্য সমমূল্যের জিনিসপত্র প্রদান করা হয়,তখন এতে কোনো দোষ নেই।” (ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৮২)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,ويجوز أن يخرج عن النقود عروضاً من الأقمشة والأطعمة وغيرها ، إذا رأى المصلحة لأهل الزكاة في ذلك مع اعتبار القيمة ، مثل أن يكون الفقير مجنوناً ، أو ضعيف العقل ، أو سفيهاً ، أو قاصراً ، فيخشى أن يتلاعب بالنقود ، وتكون المصلحة له في إعطائه طعاماً ، أو لباساً ينتفع به من زكاة النقود بقدر القيمة الواجبة ، وهذا كله في أصح أقوال أهل العلم“এটি অনুমোদিত যে, নগদ অর্থের পরিবর্তে যাকাতের গ্রহীতাকে কাপড়,খাবার ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে, যদি সে শাখা অনুযায়ী এমন উপকারিতা লাভ করতে পারে, এবং যদি এর মাধ্যমে সে ভালোভাবে উপকৃত হতে পারে। যেমন, যদি দরিদ্র ব্যক্তি পাগল, দুর্বল, বোকা বা অপরিণত হয় এবং তাকে নগদ অর্থ দিলে সে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না, তাহলে তার উপকারের জন্য তাকে টাকার সমমূল্যে খাবার বা পোশাক দেওয়া উচিত। অধিকাংশ আলেমের মতে,এটাই সঠিক মতামত।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা:২৫৩)
.
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে ইসলামী শরিয়াহ অনুসারে নগদ অর্থের যাকাত নগদেই প্রদান করা আবশ্যক ও বিধিসম্মত। তবে দরিদ্রের প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে তার অনুরোধ অনুযায়ী তা নির্দিষ্ট পণ্যে রূপান্তর করা যেতে পারে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
আল্লাহর ক্ষমাভিখারী বান্দা:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি,সৌদি আরব।

Share: