প্রশ্ন: একজন ব্যক্তি যদি ইমামের সঙ্গে তৃতীয় রাকাআতে রুকুর পর গিয়ে সালাতে শামিল হয় এবং ইমাম সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করেন, তাহলে সে ব্যক্তি কীভাবে নিজের বাদ পড়া রাকাআতগুলো পূর্ণ করবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর যদি কোনো ব্যক্তি চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ সালাতে (যেমন যোহর, আসর বা এশা) ইমামের সাথে তৃতীয় রাকাআতে এসে শরিক হন, তাহলে তিনি ইমামের সালাম ফিরানোর পর উঠে দাঁড়িয়ে বাকি রাকাআতগুলো পূর্ণ করবেন। দলিল হচ্ছে,
.
নবী (ﷺ) বলেন,”যখন তোমরা ইক্বামত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে ধাবিত হবে, তোমাদের উচিত ধীরস্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাবে তা আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নেবে।”(সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬, ৯০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৬০২)। ‘সম্পূর্ণ করবে’ কথাটির অর্থ হল পূর্ণ করে নেবে, যেমনটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে (ফাৎহুল বারী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১১৮)। এর অর্থ দাঁড়ায় মাসবূক্ব (অর্থাৎ রাকআত ছুটে যাওয়া ব্যক্তি) ইমামের সাথে সালাতের যতটুকু পাবে, ততটুকু তার প্রথম হিসাবে গণ্য হবে। যেমন হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,أن ما أدركه المسبوق مع الإمام هو أول صلاته ‘মাসবুক্ব ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে যতটুকু পাবেন সেটাই তার প্রথম সালাত হিসাবে বিবেচিত হবে”।(ফাৎহুল বারী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১১৮ আল-মাজমূঊ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪২০)। শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমামের জন্য সেটি তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআত হলেও কিন্তু মাসবুক্বের জন্য মূলত সেটি প্রথম ও দ্বিতীয় রাকআত হিসাবে বিবেচিত হবে এবং সেই হিসাবেই তিনি তার অবশিষ্ট সালাত শেষ করবেন’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৪২৬ ও ৪৯০৩৭)।
.
এক্ষেত্রে মাসবুক্ব ব্যক্তি (নারী-পুরুষ) ইমামের সাথে যে রাকাআতটি পেয়েছেন যেটা ইমামের তৃতীয় রাকাআত হলেও তা তাঁর (মাসবুক্বের) নিজের প্রথম রাকাআত হিসেবে গণ্য হবে। এরপর ইমাম সালাম ফিরালে তিনি দাঁড়িয়ে যাবেন এবং নিজের দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করবেন। এতে তিনি সূরা ফাতিহা ও অতিরিক্ত কেরাত (অন্য কোনো সূরা) পাঠ করবেন। দ্বিতীয় রাকাআত শেষে তাশাহহুদের জন্য বসবেন। তাশাহহুদ পাঠ শেষে আবার উঠে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআত আদায় করবেন, যেখানে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন, অতিরিক্ত কেরাত (অন্য কোনো সূরা) পড়বেন না। শেষে চতুর্থ রাকাআতের পর বসে তাশাহহুদ, দুরুদ ও অন্যান্য দো‘আ পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে সালাত সম্পন্ন করবেন। মাসবুক্বের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতেহা ছাড়া অন্য কোন সূরা পাঠ করতে হবে না। দলিল হচ্ছে প্রখ্যাত সাহাবী জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,”আমরা যোহর ও আসর সলাতের প্রথম দু’রাকআতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা এবং শেষ দু’রাকাআতে কেবল সূরা ফাতিহা পড়তাম।”(ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।