প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র যেমন কাপড়-চোপড় বা অন্যান্য জিনিসপত্র কি দান করা বাধ্যতামূলক? এসব জিনিসের ব্যবহার কীভাবে হওয়া উচিত?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর যা কিছু রেখে গেছেন তা ছোটখাটো জিনিস হোক বা বড় জিনিস যেমন আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, খেতা-বালিশ, প্লেট গ্লাস, ঘড়ি এমনকি চশমার মতো জিনিসপত্রও মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ। মৃত্যুর তৃতীয় দিনের মধ্যে এগুলো দান সদকা করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। বরং এগুলো মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশ, যা তার উত্তরাধিকারীদের (ওয়ারিশগণ) মধ্যে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বণ্টিত হবে।এই ভাগ বণ্টন করতে হলে প্রথমে মৃতের ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং তাদের যে কোনো বৈধ ওসিয়ত (ইচ্ছা অনুযায়ী দান) সম্পাদন করতে হবে (যদি তা শারিয়াহ-বিরোধী না হয়)।সবকিছুর সম্পূর্ণ হলে বাকি সম্পদ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হবে। উত্তরাধিকারীগণ চাইলে এগুলো নিজেদের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, চাইলে বিক্রি করতে পারেন বা অন্য কাউকে দান করতে পারেন। ওয়ারিশগণের মধ্যে যদি কেউ কোনো নির্দিষ্ট জিনিস নিতে চান তবে তা শুধুমাত্র অন্য সকল উত্তরাধিকারীদের অবগত করার পর এবং তাদের অনুমতি সাপেক্ষেই নেওয়া যাবে। যারা তা গ্রহণ করবেন সেটি তাদের প্রাপ্য সম্পত্তির অংশ হিসেবে গণ্য হবে। পাশাপাশি যদি তাদের (ওয়ারিশগণের) মধ্যে কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালক) থাকে তাহলে তার সম্পত্তি তার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে কিংবা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত তার সম্পদের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে থাকবে।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য কি মৃত ব্যক্তির কাপড় ব্যবহার করা জায়েয? তিনি (রহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বললেন:
نعم إذا مات الميت فجميع ما يملكه ملك للورثة من ثياب وفرش وكتب وأدوات كتابة وماصة ( منضدة ) وكرسي كل شيء حتى شماغه وغترته التي عليه ، تنتقل إلى الورثة ، وإذا انتقلت إلى الورثة فهم يتصرفون فيها كما يتصرفون بأموالهم ، فلو قالوا – أي الورثة – وهم مرشدون : ثياب الميت لواحد منهم ، ولبسها ، فلا بأس . ولو اتفقوا على أن يتصدقوا بها فلا بأس ، ولو اتفقوا على أن يبيعوها فلا بأس ، هي ملكهم يتصرفون فيها تصرف الملاك في أملاكهم ”
“হ্যাঁ, যদি একজন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার মালিকানাধীন সবকিছুই তার উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি হয়ে যায়। যেমন পোশাক, আসবাবপত্র, বই, লেখার সরঞ্জাম, ডেস্ক, চেয়ার এবং সবকিছু, এমনকি তার টুপি বা মাথার স্কার্ফ। এগুলো উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি হয়ে যায়। তখন তারা তাদের মালিকানাধীন অন্য সম্পত্তির মতো এগুলোও ব্যবহার করতে পারে। যদি তারা ঐক্যমত্যে পৌঁছে এসব কাপড় পরিবারের একজনকে পরার জন্য দিতে চান, সেটাও করতে পারেন। যদি তারা দান করতে চান, তাহলেও তা বৈধ। যদি তারা বিক্রি করতে চান, তা করতেও কোনো সমস্যা নেই। এটি তাদের নিজস্ব সম্পত্তি এবং তারা তা যেকোনোভাবে ব্যবহার করতে পারেন।”(ইবনু উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ৯/২: এবং ইসলাম সালওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-১০২৪০৩)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: মৃত ব্যক্তির কাপড় রাখা কি জায়েজ, এবং যদি তা জায়েয না হয়, তাহলে এ বিষয়ে উত্তম পদ্ধতি কি?
তিনি উত্তরে বললেনঃ
” يجوز الانتفاع بملابس الميت لمن يلبسها من أسرته ، أو أن تعطى لمن يلبسها من المحتاجين ولا تهدر ، وعلى كل حال هي من التركة إذا كانت ذات قيمة فإنها تصبح من التركة تلحق بتركته وتكون للورثة . والاحتفاظ بها للذكرى لا يجوز ولا ينبغي ، وقد يحرم إذا كان القصد منها التبرك بهذه الثياب ، وما أشبه ذلك ، ثم أيضًا هذا إهدار للمال ، لأن المال ينتفع به ، ولا يجعل محبوسًا لا ينتفع به ”
“মৃত ব্যক্তির জামাকাপড় পরিবারের কোন সদস্যের জন্য রাখা জায়েয যে তা পরিধান করতে পারে। অথবা যেকোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করা উচিত, যাতে সে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। এসব কাপড় নষ্ট করা উচিত নয়। তবে, যদি তা মূল্যবান হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো ওয়ারিশদের মধ্যে ত্যাজ্য সম্পদ হিসেবেই গণ্য হবে। স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে এগুলো রাখা জায়েয নয় এবং উপযুক্তও নয়, এবং যদি এই কাপড় ইত্যাদি থেকে বরকত চাওয়া হয় তাহলে তা হারাম হতে পারে।কাপড় নষ্ট করা বা অযথা জমিয়ে রাখা অর্থের অপচয়। বরং এগুলো ব্যবহারযোগ্য হাতেই তুলে দেওয়া উচিত”।(আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালিহ আল-ফাওযান: খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৭১)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.
অধ্যয়নরত, কিং খালেদ ইউনিভার্সিটি আবহা, সৌদি আরব।