মুসলিম অত্যাচারী শাসকের শরীয়ত বিরোধী কাজে আনুগত্য করা যাবে কি

উত্তর: আসমানের নিচে জমিনের উপরে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ব্যতীত অন্য কারোর নিরঙ্কুশভাবে আনুগত্য করা যাবে না। যেমন ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ليس أحد بعد النبي صلى الله عليه وسلم إلا ويؤخذ من قوله ويترك، إلا النبي صلى الله عليه وسلم.রাসূল (ﷺ)-এর পরে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথাই গ্রহণীয় বা বর্জনীয়, একমাত্র রাসূল (ﷺ) ব্যতীত’।(ইমাম ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ৬/১৪৫) তাছাড়া মুসলিম শাসকের আনুগত্যের বিষয়টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্যের অধীনস্থ‌। শাসক যদি অবাধ্যতার আদেশ দেন তবে অবশ্যই তাঁর আনুগত্য করা যাবে না, এমনকি তার অন্যায় কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না। বরং যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার সামনে দ্ব্যর্থহীনভাবে হকের মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে হবে,শাসকের সামনে সত্য ও সঠিক কথা বলতে হবে,তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করতে হবে এবং তার হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মুসলিমদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য এবং ফিতরাত। আর সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ইসলামে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হল অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৩৪৪, সনদ সহীহ)। আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি কোন বিষয়ে যদি বিরোধ সৃষ্টি হয় তবে বিষয়টি কিতাব ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিবাদমান বিষয়ে মীমাংসার দায়িত্ব রাসূল (ﷺ)-এর উপর ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য করে দিয়েছেন এবং এটাকে ঈমানের শর্ত হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡكُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوۡلِ اِنۡ كُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِكَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ‘উলুল আমর’ বা ক্ষমতাশীলদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটিই কল্যাণকর এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”।(সূরা আন-নিসা: ৫৯)। এ আয়াত থেকে বৈধ কাজে শাসকের প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ প্রমাণিত হয়।উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, قوله تعالى : ( إن كنتم تؤمنون بالله واليوم الآخر) ،دل على أن من لم يتحاكم في محل النزاع إلى الكتاب والسنة ولا يرجع إليها فليس مؤمناً بالله ولا باليوم الآخر “আয়াতে ‘যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ’ নির্দেশ করছে, যে ব্যক্তি বিবাদমান বিষয়ের মীমাংসা কুরআন ও সুন্নাহ হতে গ্রহণ করে না এবং এ দু’টির কাছে ফিরে আসে না সে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি ঈমানদার নয়।(তাফসীরে ইবন কাসীর, খন্ড’ ২ পৃষ্ঠা: ৩৪৬)।
.
অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবাধ্যতায় আনুগত্যের সীমা নির্ধারণ করে বলেন,
لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ
‘আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতায় কোনরূপ আনুগত্য নেই। আনুগত্য করতে হয় কেবল ন্যায়সঙ্গত কাজে (সহীহ বুখারী, হা/৭২৫৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪০)। অন্যত্র তিনি বলেন,لَا طَاعَةَ لِمخْلُوْقٍ فيِ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।”(ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৩৮১; সহীহুল জামি‘, হা/৭৫২০, সনদ সহীহ) আরেক বর্ননায় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে অনেক আমীর হবে, যাদের কোন কাজ তোমরা ভাল মনে করবে, কোন কাজ মন্দ মনে করবে। এক্ষণে যে ব্যক্তি ঐ মন্দ কাজের প্রতিবাদ করবে, সে মুক্তি পাবে। যে ব্যক্তি ঐ কাজকে অপসন্দ করবে, সেও নিরাপত্তা পাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি ঐ মন্দ কাজে সন্তুষ্ট থাকবে ও তার অনুসরণ করবে (সে মুক্তিও পাবে না, নিরাপত্তাও পাবে না)।সাহাবীগণ বললেন, তাহলে কি আমরা তখন ঐ শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না, যতক্ষণ তারা সালাত আদায় করে’।(সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৪; মিশকাত, হা/৩৬৭১) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ إِلاَّ أَنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيَةٍ فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ ‏ “মুসলিম ব্যক্তির অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হচ্ছে—নিজের প্রতিটি প্রিয় ও অপ্রিয় বিষয়ে (শাসকের কথা) শোনা ও মানা; যতক্ষণ না তাকে আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেওয়া হয়। যদি তাকে আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে তা শুনবেও না, মানবেও না।”(সহিহ বুখারি, হা: ৭১৪৪; সহিহ মুসলিম, হা: ১৮৩৯] হাদিসে উদ্ধৃত ‘আলা’ শব্দটি থেকে প্রতীয়মান হয়, এ বিষয়টি ওয়াজিব। নবিজি হাদিসে বললেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হচ্ছে নিজের প্রতিটি পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় বিষয়ে (শাসকের কথা) শোনা ও মানা।’ পছন্দ বা অপছন্দের কারণ যাই হোক না কেন, আনুগত্য করতে হবে। ‘যতক্ষণ না তাকে আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দেওয়া হয়।’ সুতরাং এতে বুঝা গেল কোন শাসকের শরী‘আত বিরোধী নির্দেশ মানা যাবে না। কাজী ইয়াজ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:(فيه ما يَلزَمُ من طاعةِ الأئِمةِ إذا كانوا مُتَمَسِّكينَ بالإسلامِ والدَّعوةِ لكِتابِ اللهِ كيفَما كانوا هم في أنفُسِهم وأنسابِهم وأخلاقِهم) “যতক্ষণ পর্যন্ত শাসকেরা ইসলামকে আকড়ে ধরে থাকবে এবং আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শাসকের আনুগত্য করা আবশ্যক।এতে তাদের নিজেদের মধ্যে,বংশদের মধ্যে এবং নৈতিকতার মাঝে যাই থাকুক না কেন”(https://dorar.net/aqeeda/3248)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,

إنَّهم أي أهلَ السُّنَّةِ والجَماعةِ لا يُجوِّزونَ طاعةَ الإمامِ في كُلِّ ما يَأمُرُ به، بَل لا يُوجِبونَ طاعَتَهُ إلَّا فيما تَسوغُ طاعَتُه فيه في الشَّريعةِ، فلا يُجَوِّزونَ طاعَتَهُ في مَعصيةِ اللهِ وإن كان إمامًا عادِلًا، فإذا أمرَهم بطاعةِ اللهِ أطاعوهُ، مِثلُ أن يَأمُرَهم بإقامةِ الصَّلاةِ، وإيتاءِ الزَّكاةِ، والصِّدقِ، والعَدْلِ، والحَجِّ، والجِهادِ في سَبيلِ اللَّهِ، فهم في الحَقيقةِ إنَّما أطاعوا اللَّهَ، والكافِرُ والفاسِقُ إذا أَمَرَ بما هو طاعةٌ للهِ لم تَحرُمْ طاعةُ اللَّهِ، ولا يَسقُطُ وُجوبُها لأجلِ أمرِ ذلك الفاسِقِ بها، كما أنَّه إذا تَكَلَّمَ بحَقٍّ لم يَجُز تَكذيبُه، ولا يَسقُطُ وُجوبُ اتِّباعِ الحَقِّ لكَونِه قد قالهُ فاسِقٌ.
فأهلُ السُّنَّة لا يُطيعونَ وُلاةَ الأمورِ مُطلَقًا، إنَّهم يُطيعونَهم في ضِمنِ طاعةِ الرَّسولِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم، كما قال تعالى: أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ [النِّساء: 59] ، فأمرَ بطاعةِ اللَّهِ مُطلَقًا وأمرَ بطاعةِ الرَّسولِ؛ لأنَّه لا يَأمُرُ إلَّا بطاعةِ اللَّهِ مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ [النِّساء: 80] ، وجَعَل طاعةَ أُولي الأمرِ داخِلةً في ذلك، فقال: وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ولم يَذكُر لَهم طاعةً ثالِثةً؛ لأنَّ وَلِيَّ الأمرِ لا يُطاعُ طاعةً مُطلَقةً، إنَّما يُطاعُ في المَعروفِ) .

“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত শাসক যে বিষয়ে আহ্বান করে সেদিকে আনুগত্য করা শুধু জায়েজ মনে করেন না বরং শরীয়তের দিকে আহ্বান করা হলে শাসকের আনুগত্য করা ওয়াজিব মনে করেন আর আল্লাহ তাআলার নাফরমানীর ক্ষেত্রে আনুগত্য করা জায়েজ মনে করেন না যদিও সে ন্যায়পরায়ণ শাসক হয়। যখন সে প্রজাদের আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের দিকে ডাকবে তখন সকল প্রজার উচিত তার আনুগত্য করা যেমনভাবে সালাত প্রতিষ্ঠিত করতে বলছে, যাকাত প্রদান করতে বলছে, সত্যের পথে চলতে বলে, হজ করতে বলে এবং আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করতে আহ্বান করে এগুলো মূলত আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের কথা। ফাসিক কিংবা কাফের শাসক যখন আল্লাহর আনুগত্যের দিকে আহবান করবে তখন তার আনুগত্য করা আবশ্যক কেন সে আল্লাহর অবাধ্যর থেকে আহ্বান করেনি ফলে সে ফাসিক কিংবা কাফের হওয়ার কারণে তার আনুগত্য করতে হবে না বিষয়টি এমন নয় (শাসককে দেখে আনুগত্য করতে হবে না বরং তার আদেশের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে এটা শরীয়ত বিরোধী আদেশ নাকি শরীয়ত সম্মত আদেশ সে দিকে লক্ষ্য করে আনুগত্য করতে হবে)। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতেরা কখনোই ওই সমস্ত শাসকদের আনুগত্য করে না যারা শরীয়ত বিরোধী আদেশ করে। যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত থেকে আদেশ করে তাদের আনুগত্য তারা করে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: সুরা নিসা ৫৯) আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার আদেশ করা হয়েছে যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করবে সে আল্লাহ তায়ালা আনুগত্য করবে। শাসকের আনুগত্য করাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উলিল আমরি মিনকুম অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যিনি শাসক থাকবেন তার এখানে তৃতীয় ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়নি কেননা সকল আমিরের আনুগত্য করা সব সময় যাবেনা।আনুগত্য কেবলমাত্র ভালো কাজের ক্ষেত্রে করা হয়”(ইবনু তাইমিয়্যাহ, মিনহাজুস সুন্নাহ, খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা; ৩৮৭-৩৮৮)
.
ইবনু জুযাই (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: تَجِبُ طاعَتُهم فيما أحَبَّ الإنسانُ وكَرِهَ، إلَّا إن أَمَروا بمَعصيةٍ، فلا طاعةَ لمَخلوقٍ في مَعصيةِ الخالِقِ)”যতক্ষণ পর্যন্ত শাসক অন্যায় কাজের আদেশ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেক প্রজাকে তার আনুগত্য করা আবশ্যক সে আদেশকৃত বিষয়টি প্রজাদের পছন্দ হোক আর নাই হোক। কিন্তু স্রষ্টার অবধ্যতাই সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না”(https://dorar.net/aqeeda/3248)
.
তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, শাসকের শরী‘আত বিরোধী নির্দেশ মানা যাবে না। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, তার শরী‘আতসম্মত নির্দেশগুলোও অমান্য করতে হবে। বরং এক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা অপরিহার্য। আর মুসলিম শাসকের ভুল বা অন্যায় কার্যকলাপের জন্য প্রতিবাদ করা যাবে এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি যেন সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকেন। কিন্তু তার আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিদ্রোহ করা যাবে না।কেননা মানুষ হিসাবে একমাত্র রাসূল (ﷺ)-ই নিষ্পাপ। মুসলিম শাসকেরাও মানুষ হিসাবে ভুল করেন। নিঃসন্দেহে তাদের অনেক ভুল রয়েছে। তারা কেউ নিষ্পাপ নন। কিন্তু আমরা তাদের ভুলকে নিন্দার ক্ষেত্র মনে করে তাদের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিব না, তারা প্রকাশ্য কুফরী না করা পর্যন্ত আমরা তাদের আনুগত্য করব।যেমনটা নবী করীম (ﷺ) আদেশ করেছেন (আক্বীদাতুত্ব ত্বাহাবী, পৃ. ৩৭৯)। আব্দুল্লাহ‌ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,”আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা লক্ষ‍্য করবে এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা অপসন্দ করবে। তখনও তোমরা তাদের হক্ব পূর্ণরূপে আদায় করবে, আর তোমাদের হক্ব আল্লাহর কাছে চাইবে”।(সহীহ বুখারী, হা/৭০৫২; তিরমিযী, হা/২১৯০)। অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে লোক নিজ আমীরের কাছ থেকে অপসন্দনীয় কিছু দেখবে সে যেন তাতে ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে লোক সুলতানের আনুগত্য হতে এক বিঘতও বিচ্ছিন্ন হবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্য’।(সহীহ বুখারী, হা/৭০৫৩, ৭০৫৪, ৭১৪৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৮৭)।শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, اَلصَّبْرُ عَلَى جَوْرِ الْأَئِمَّةِ أَصْلٌ مِّنْ أُصُوْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ ‘স্বৈরাচার শাসকদের উপর ধৈর্যধারণ করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মূলনীতি’।(মিনহাজুস সুন্নাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৫২৭)
.
তবে শরীয়ত বিরোধী কাজে কিভাবে প্রতিবাদ করতে হবে সে বিষয়ে ইসলাম স্বীকৃত প্রতিবাদের পদ্ধতি রয়েছে। অসৎ কাজে বাধা দেয়ার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্রমধারা অবলম্বন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাবধান করা, (হুকুম) স্মরণ করিয়ে দেয়া। এরপর জান্নাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা ও জাহান্নাম থেকে সাবধান করা। তারপর ধমকি দেয়া ও তিরস্কার করা। এরপর হাত দিয়ে প্রতিরোধ করা। অতঃপর বেত্রাঘাত ও শাস্তির ব্যবস্থা করা। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা ও বিচারের সম্মুখীন করা।(আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা, খণ্ড: ৩৯, পৃষ্ঠা: ১২৭) এই মর্মে দলিল হচ্ছে,আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন,তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে বা শক্তি প্রয়োগ করে পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে মুখ দ্বারা এর পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করবে। এটা ঈমানের দুর্বলতম স্তর।(সহীহ মুসলিম, হা/৮১)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: