মুক্তাদীর জামাআতে শামিল হওয়ার বিভিন্ন অবস্থা
জামাআত শুরু হয়ে যাওয়ার পর কোন নামাযী নামাযে শামিল হতে চাইলে নিয়মিত দুই হাত তুলে তাকবীরে তাহ্রীমা দিয়ে তাকে তাই করতে হবে, যা ইমাম করছেন। তাড়াহুড়ো না করে ইমাম যে অবস্থায় থাকবেন সেই অবস্থায় ধীরে-সুস্থ শামিল হতে হবে।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “নামাযে আসার সময় ধীর-স্থিরতার সাথে এস এবং তাড়াহুড়ো করে এসো না। এরপর যা পাবে, তা পড়ে নাও এবং যা ছুটে যাবে, তা পুরা করে নাও।” (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, জামে ২৭৫নং)
তিনি বলেন, “তোমাদের কেউ নামাযে এলে এবং ইমাম কোন অবস্থায় থাকলে, সে যেন তাই করে, যা ইমাম করছে।” (তিরমিযী, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১১৮৮, জামে ২৬১নং)
ইমাম সির্রী নামাযে প্রথম রাকআতে কিয়াম অবস্থায় থাকলে মুক্তাদী যথানিয়মে দুই হাত তুলে তাকবীরে তাহ্রীমা দিয়ে ইস্তিফতাহ্র দুআ পড়ে ‘আঊযু বিল্লাহ্-বিসমিল্লাহ্’ পড়ে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করবে। কিন্তু ইমামের রুকূ চলে যাওয়ার আশঙ্কা হলে কেবল ‘আঊযু বিল্লাহ্-বিসমিল্লাহ্’ পড়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। ফাতিহা পাঠ করতে করতে ইমাম রুকূ চলে গেলে পুরো না পড়েই রুকূতে যেতে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৫৯) এ ক্ষেত্রে ফাতিহা পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা বৈধ নয়।
জেহরী নামাযে ইমামের সূরা ফাতিহা বা অন্য সূরা পাঠ করা অবস্থায় শামিল হলে মুক্তাদী ইস্তিফতাহ্ বা সানা পড়বে না। বরং চুপে চুপে কেবল ‘আঊযু বিল্লাহ্-বিসমিল্লাহ্’ পড়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৯৪)
ইমাম রুকূতে চলে গেলে মুক্তাদী তাড়াহুড়ো না করে ধীরে-সুস্থ যথানিয়মে দাঁড়িয়ে দুইহাত তুলে তাকবীরে তাহ্রীমা দেওয়ার পর রুকুতে যাওয়ার তকবীর পড়ে রুকূতে যাবে এবং রুকূর তাসবীহ পাঠ করবে। অবশ্য সময় সংকীর্ণ বুঝলে কেবল তাহ্রীমার তকবীরই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে তকবীরের পর বুকে হাতও রাখবে না এবং সানা বা ফাতিহাও পড়বে না। কারণ, ইমামের অনুসরণ জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৫৫, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৪২-২৪৩)
রুকূ পেলে রাকআত গণ্য :
ইমামের সাথে রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হবে কি না সে বিষয়টি বিতর্কিত। বর্তমান বিশ্বের সত্যানুসন্ধানী উলামাগণের সুচিন্তিত মতানুসারে রুকু পেলে রাকআত গণ্য হবে।
এ ব্যাপারে যে সকল স্পষ্ট হাদীস বর্ণিত হয়েছে তাতে কিছু কিছু দুর্বলতা থাকলেও এক জামাআত সাহাবার আমল এ কথার সমর্থন করে।
এ ব্যাপারে ইবনে মাসঊদ, ইবনে উমার, যায়দ বিন সাবেত, আব্দুল্লাহ বিন আম্র প্রভৃতি কর্তৃক রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হওয়ার কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। পক্ষান্তরে আবূ বাকরার সহীহ হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকলেও অনেকে হাদীসটিকে রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হওয়ার দলীল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। আবূ বাকরাহ্ একদা মসজিদ প্রবেশ করতেই দেখলেন নবী (সাঃ) রুকূতে চলে গেছেন। তিনি তাড়াহুড়ো করে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই রুকূ করলেন। অতঃপর রুকূর অবস্থায় চলতে চলতে কাতারে গিয়ে শামিল হলেন। একথা নবী (সাঃ)-কে বলা হলে তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, “আল্লাহ তোমার আগ্রহ্ আরো বৃদ্ধি করুন। আর তুমি দ্বিতীয় বার এমনটি করো না। (অথবা আর তুমি ছুটে এসো না। অথবা তুমি নামায ফিরিয়ে পড়ো না।)” (বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১১০নং)
উক্ত হাদীসে রুকূ পেলে রাকআত পেয়ে নেওয়ার কথা ইঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আর একটি সুন্নতের কথা বর্ণিত হয়েছে যে, যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করে ইমামকে রুকূর অবস্থায় দেখে তাহলে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই তার জন্য রুকূ করা সুন্নত। তাতে যদি সে ইমামের মাথা তোলার পর কাতারে শামিল হয় তাহলেও তার ঐ রাকআত গণ্য হয়ে যাবে। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৮৬পৃ:)
ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যখন কেউ মসজিদে প্রবেশ করে দেখে যে (জামাআতের) লোকেরা রুকূর অবস্থায় আছে, তাহলে সে যেন প্রবেশ করেই রুকূ করে। অতঃপর রুকূর অবস্থায় চলতে চলতে কাতারে শামিল হয়। কারণ, এটাই হল সুন্নাহ্।” (ত্বাবরানী, আওসাত্ব, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ১৫৭১,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২১৪, বায়হাকী ৩/১০৬, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২২৯নং, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২/২৬০-২৬৫)
মোট কথা, কেউ যদি ইমামকে রুকূর অবস্থায় পেয়ে তাঁর সাথে রুকূর (কমপক্ষে একবার) তাসবীহ পড়তে সক্ষম হয়, তাহলে তার সে রাকআত গণ্য হয়ে যাবে। কিয়াম ও সূরা ফাতিহা না পেলেও রাকআত হয়ে যাবে। সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। কিন্তু কিয়াম অবস্থায় পড়ার সুযোগ না পেয়ে ইমামের সাথে রুকূতে চলে গেলে মুক্তাদীর হ্ক্কে তা মার্জনীয়। কারণ, সাধারণ দলীল থেকে এ ব্যাপারটাও ব্যতিক্রম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৪৪) পরন্তু ইচ্ছা করে যদি কেউ কিয়ামে শামিল না হয়ে (লম্বা তারাবীহ্র) রুকূতে শামিল হয়, তাহলে তার ঐ রাকআত হবে না। কারণ সে ইচ্ছাকৃত নামাযের একটি রুক্ন কিয়াম ও সূরা ফাতিহা ত্যাগ করে।
সতর্কতার বিষয় যে, ইমাম রুকূ অবস্থায় থাকলে মসজিদে প্রবেশ করে অনেক মুক্তাদী তাকে রুকূ পাইয়ে দেওয়ার আশায় গলা ঝাড়া দিয়ে ইমামকে সতর্ক করে। এমন করা বৈধ নয়।
ইমাম কওমার অবস্থায় থাকলে যথানিয়মে দাঁড়িয়ে দুইহাত তুলে তাকবীরে তাহ্রীমা দেওয়ার পর কওমার দুআ পাঠ করবে। এ ক্ষেত্রে আর রাকআত গণ্য হবে না।