মানুষের সামনে এমন একটা সময় আসবে যখন তাদের হৃদয়গুলো কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে যাবে

“উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ”
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: প্রখ্যাত তাবেঈ আবুল ‘আলিয়া রুফাই ইবনু মাহরান আর-রিয়াহী আল-বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৯০ বা ৯৩ হি:] বলেন:

يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ تَخْرُبُ صُدُورُهُمْ مِنَ الْقُرْآنِ وَلَا يَجِدُونَ لَهُ حَلَاوَةً وَلَا لَذَاذَةً ‌إِنْ ‌قَصَّرُوا ‌عَمَّا ‌أُمِرُوا ‌بِهِ ‌قَالُوا: إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ، وَإِنْ عَمِلُوا بِمَا نُهُوا عَنْهُ قَالُوا: سَيَغْفِرُ لَنَا إِنَّا لَمْ نُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا، أَمْرُهُمْ كُلُّهُ طَمَعٌ لَيْسَ مَعَهُ صِدْقٌ يَلْبَسُونَ جُلُودَ الضَّأْنِ عَلَى قُلُوبِ الذِّئَابِ، أَفْضَلُهُمْ فِي دِينِهِ الْمُدَاهِنُ

“মানুষের সামনে এমন একটা সময় (যুগ) আসবে, যখন তাদের হৃদয়গুলো কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে যাবে। তারা কুরআনের মিষ্টতা ও স্বাদ অনুভব করতে পারবে না। আল্লাহর নির্দেশিত বিষয়গুলো পালনের ক্ষেত্রে তারা শিথিলতা প্রদর্শন করবে আর বলবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অসীম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। আবার যখন তারা নিষিদ্ধ কাজ করবে তখন বলবে, আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিবেন, কারণ আমরা তো আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করিনি। তাদের পুরো ব্যাপারটাই হবে লোভ এবং কামনাপূর্ণ, যেখানে সত্যের কোনো ছিঁটে ফোটা থাকবে না। তারা নেকড়ের অন্তরে ছাগলের চামড়া পরিধান করবে। তাদের মধ্যে যেসব ব্যক্তি তোষামোদকারী, তারা দ্বীনদারিতায় শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য হবে”।(ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল, কিতাবুয যুহদ, পৃষ্ঠা: ২৪৫)
.
এই উক্তিটি একজন প্রখ্যাত তাবেঈ’ ইমামের অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শিতার পরিচায়ক, যেখানে তিনি আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে ভবিষ্যতের একটি বিপজ্জনক অবস্থা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।তার বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে:
.
(১). কুরআন থেকে বিমুখতা: এক সময় আসবে যখন মানুষ কুরআন পড়বে, শুনবে, মুখে উচ্চারণ করবে, কিন্তু তা তাদের হৃদয়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তারা কুরআনের সৌন্দর্য, মিষ্টতা ও গভীরতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবে।
.
(২). ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা: যখন তাদের সামনে আল্লাহর আদেশ-নিষেধের দায়িত্ব আসবে, তারা সেটি পালনে অবহেলা/গাফিলতি করবে,কিন্তু নিজেদের কার্যকলাপ বৈধ প্রমাণ করতে বলবে”— “নিশ্চয়ই আল্লাহ অসীম দয়ালু ও ক্ষমাশীল।” আবার যখন হারাম কাজে লিপ্ত হবে, তখন বলবে— “আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন, কারণ আমরা তো শিরক করিনি।”অর্থাৎ তারা আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার অপব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর আদেশ পালনে গাফিলতি করবে এবং তারা বড় গুনাহকে ছোট মনে করবে এবং কেবল শিরক না করলেই নিজেদের নিরাপদ ভাববে। অথচ ইসলামে ছোট গুনাহও অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
.
(৩). কপটতা ও ভণ্ডামি: বাহ্যিকভাবে তারা ধার্মিক সেজে থাকবে কিন্তু ভেতরে তাদের অন্তর হবে হিংস্র, প্রতারণাপূর্ণ ও ধোঁকাবাজ।তারা নেকড়ের অন্তরে ছাগলের চামড়া পরিধান করবে।”এখানে “নেকড়ের অন্তরে ছাগলের চামড়া” পরিধান করার উপমাটি মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তারা বাইরে থেকে বিনয়ী ও নরম দেখাবে কিন্তু ভিতরে ভয়ংকর ও ক্ষতিকর।”
.
(৪). তোষামোদকারীদের প্রাধান্য: এমন এক সময় আসবে যখন সত্যবাদী ও সৎ ব্যক্তিরা অবহেলিত হবে, আর তোষামোদকারী ও সুবিধাবাদীরা “দ্বীনদার” হিসেবে গণ্য হবে। এটি এমন সমাজের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে সত্যের পরিবর্তে মিথ্যা ও চাটুকারিতাই প্রাধান্য পাবে,যারা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবে। এমন নিকৃষ্ট আচরণগুলো থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
.
পরিশেষে উপরোক্ত বক্তব্য প্রাপ্ত শিক্ষা:

(১). কুরআনের সত্য শিক্ষা থেকে বিমুখ হওয়া একটি ভয়ংকর বিপদ।
(২). আল্লাহর ক্ষমার ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভর করে গুনাহকে হালকা মনে করা ধ্বংসাত্মক।(৩). বাহ্যিক ধার্মিকতা দিয়ে প্রকৃত ঈমানদার হওয়া যায় না; অন্তরের বিশুদ্ধতা ও আমলের আন্তরিকতাই আসল।

(৪). সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মূল্যায়ন না করে তোষামোদকারীদের প্রশংসা করলে সমাজে ন্যায়বিচার নষ্ট হয়ে যায়।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: