মহান আল্লাহ কোথায় এবং রহমান আরশের উপরে উঠেছেন এই বিষয়ে বিশুদ্ধ আক্বীদা

প্রশ্ন: মহান আল্লাহ কোথায়? “রহমান আরশের উপরে উঠেছেন” এই বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ আক্বীদা কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আসমানের উর্ধ্বে তাঁর ‘আরশের উপর উঠেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয় তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তিনি উম্মতের জন্য সাক্ষী, সত্যের পথপ্রদর্শক এবং সঠিক দিশারী। আল্লাহ তাঁর সালাম বর্ষণ করুন, তাকে সম্মানিত করুন, মর্যাদাবান করুন, সালাত পাঠ করুন যা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে। অনুরূপ তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীদের ওপরও। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ‘আরশের উপরে, মাখলুকাতের উর্ধ্বে, সৃষ্টিকূলের বিপরীতে, সৃষ্টিকুলের কোনো কিছুর ভেতরে নন এবং তাঁর ইলম সর্বত্র” এ ব্যাপারে দলীল হচ্ছে কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবী, তাবিয়ী, তাবে-তাবিয়ীসহ সমস্ত সালাফের ইজমাহ। সালাফগণ আল্লাহ তাআলার আল ইসতিওয়া’ আলাল আরশ তথা আরশের উপরে উঠা’ এর ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। অতএব কোনো প্রকার তাহরীফ, তা’তীল, তাকঈফ ও তামসীল করা ব্যতীতই আল্লাহর জন্য আল ইসতিওয়া’ আলাল আরশ’ তথা আরশের উপরে উঠা’ সাব্যস্ত করা আবশ্যক। তাদের এটাই আকীদাহ ছিল কেউ যদি আল্লাহর ঊর্ধ্বে থাকাকে অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন যে, তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন। الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى “রহমান ‘আরশের উপর উঠেছেন।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৫] সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি ঈমান ও তাওহীদ তখনই পরিপূর্ণ হবে যখন মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে যে, তিনি সত্তাগতভাবে নিজ গুণাবলিসহ সম্মানিত ‘আরশের উপরে উঠেছেন। সেই ‘আরশ যা সাত আসমান ও জমিনের ঊর্ধ্বে, সমস্ত সৃষ্টির ঊর্ধ্বে, বাস্তবিক অর্থেই কোনো রূপক অর্থে নয়। তিনি তাঁর সৃষ্টিজগৎ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। তবে তাঁর উজ্জ্বল জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সার্বভৌম ক্ষমতা সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। তার আরশের উপর উঠার বিষয়ে কোনো ধরন নির্ধারণ করা যাবে না, তাঁকে কোন আকৃতি, দেহ বা গঠনের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। কোনো উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা কিংবা বিকৃত ব্যাখ্যা করা যাবে না, অর্থহীন করা যাবে না। আরও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, আসমান তাঁকে বহন করে না, তাঁকে ছায়া দেয় না, তাঁকে পরিবেষ্টন করে না। ‘আরশও তাঁকে বহন করে না, কুরসীরও তিনি সাহায্য নেন না, বরং তিনি তাঁর ‘আরশের উপর, ‘আরশকে তিনি পরিবেষ্টন করেন। তিনি ‘আরশ ও তার চেয়ে নিম্ন যা কিছু আছে সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী। নূরের পর্দা তাঁকে তাঁর সৃষ্টি থেকে পর্দাবৃত করে দেয় না, বরং তাঁর চেহারার আলোতে জলসে যাওয়া থেকে পর্দাসমূহ সৃষ্টিকে পর্দাবৃত করে।তিনি সৃষ্টিকে শত পর্দার পিছন থেকেও দেখেন, তাদের গোপন শলা-পরামর্শ শোনেন, ভালো কিংবা মন্দ যাই তারা করুক না কেন, আর তিনি জানেন অন্তরের অন্তঃস্থলে যা কিছু গোপন করেছে, যা কোনো অন্তর আড়াল করে রেখেছে। তিনি ‘আরশের উপর থেকেই তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ন্ত্রণ করেন, বরং সকল কিছুই তিনিই পরিচালনা করেন। সুতরাং যে সকল বাতিল ফিরকার লোকেরা বলে,”আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন”এই গুণের মানে ‘কর্তৃত্ব করা’ ও ‘দখল করা’, তাদেরকে আমরা নিম্নোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে খণ্ডন করব। যথা:

(১) তাদের এরূপ ব্যাখ্যা কুরআন-হাদিসের বক্তব্যের প্রকাশ্য অর্থের বিপরীত;

(২) সালাফগণ এই গুণের যে অর্থ করেছেন তার বিপরীত;

(৩) তাদের এমন (ভ্রান্ত) ব্যাখ্যার ফলে অনেক বাতিল বিষয় অপরিহার্যভাবে চলে আসে।যেমন: ‘ইস্তিওয়া আলাল আরশের’ মানে যদি তাদের কথা মোতাবেক ‘আরশ দখল করা’ বা ‘আরশের কর্তৃত্ব লাভ করা’ হয়ে থাকে, তাহলে দখল করার পূর্বে কি আরশ মহান আল্লাহর কর্তৃত্বে ছিল না? কারণ কুরআনের আয়াতের স্পষ্ট বক্তব্য অনুযায়ী আকাশ-জমিন সৃষ্টির পরে তিনি আরশে ইস্তিওয়া করেছেন। অথচ আকাশ ও জমিন সৃষ্টির পূর্ব থেকেই আরশ বিদ্যমান ছিল।(সহিহ বুখারি: ৩১৯১, ৪৬৮৪ ও ৭৪১৮)। তখন কি আরশ তাঁর দখলে কিংবা মালিকানায় ছিল না?!
.
▪️আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন কুরআন সুন্নাহ থেকে দলিল:
.
আল্লাহ্‌র কিতাবের সাত জায়গায় ইস্তিওয়া গুণটি উদ্ধৃত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পরিচয় দিয়ে বলেন, الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى “রহমান ‘আরশের উপর উঠেছেন।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ০৫] অন্যত্র বলেন, إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِىْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِىْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন”।(সূরূ আ‘রাফ: ৫৪)। এছাড়াও সূরা ইউনুস: ৩, সূরা রা‘দ: ২, সূরা ফুরক্বান: ৫৯, সূরা সাজদাহ: ৪, সূরা হাদীদ: ৪ এই সব আয়াতসহ মোট ৭টি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর উঠেছেন। তাছাড়া আল্লাহ আসমানের উপর এ মর্মে আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ নিজেই বলে দিয়েছেন (সূরা মুলক: ১৬-১৭; সূরা আলে ইমরান: ৫৫ এবং নিসা: ১৫৮)। আয়াতগুলোর প্রত্যেক স্থানেই মাত্র একটি শব্দ তথা استواء (উর্ধ্বে উঠেছেন) দ্বারা আরশের উপর উঠা সাব্যস্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে استوى على العرش ‘‘তিনি আরশের উপর উঠেছেন” ইস্তিওয়া শব্দটি এখানে আসল অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অন্য অর্থ দ্বারা ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ নেই। ইস্তিওয়া (উর্ধ্বে উঠা) আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তাআলার একটি কর্মগত সিফাত। এটি তাঁর পবিত্র সত্তার জন্য সুসাব্যস্ত। অন্যান্য সিফাতের মতই আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য শোভনীয় পদ্ধতিতেই এই সুউচ্চ সিফাতটি তাঁর জন্য সাব্যস্ত করতে হবে। আরবদের ভাষায় চারটি শব্দের মাধ্যমে ইস্তিওয়ার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যথাঃعلا وارتفع وصعد واستقر “এই চারটি শব্দের প্রথম তিনটির অর্থ উপরে উঠলেন এবং সমুন্নত হলেন। চতুর্থ শব্দটির অর্থ হচ্ছে স্থির হলেন।উপরোক্ত আয়াতগুলোতে বর্ণিত استواء শব্দের অর্থে সালাফদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে, তার ভিত্তি এই চারটি অর্থের উপরেই। আসলে ঘুরে ফিরে অর্থ একটিই। তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলা আরশের উপরে।
.
▪️আল্লাহ আরশের উপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম),সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগনের বক্তব্য থেকে প্রমান:
.
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ মাখলূক সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, তখন আরশের উপর তাঁর কাছে রক্ষিত এক কিতাবে লিপিবদ্ধ করলেন যে, অবশ্যই আমার করুণা আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে।”(সহীহ বুখারী হা/৩১৯৪; সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; সহীহ মুসলিম হা/২৭৫১, ‘তওবা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: ৪; মিশকাত হা/২৩৬৪ দু‘আ’ অধ্যায়, আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততা’ অনুচ্ছেদ) অপর বর্ননায় আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, এমন কোন ব্যক্তি আছে যে আমাকে ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব? এমন কোন ব্যক্তি আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব। এমন কোন ব্যক্তি আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব’।(সহীহ বুখারী হা/১১৪৫, তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ:১৪; সহীহ মুসলিম হা/৭৫৮, মিশকাত হা/১২২৩, সালাত’ অধ্যায়, ‘তাহাজ্জুদের প্রতি উৎসাহ প্রদান’ অনুচ্ছেদ) আরেক বর্ননায় জুবাইর ইবন মুত’ইম রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেদুঈনকে ইস্তেস্কা বা বৃষ্টি প্রার্থনার হাদীসে বলেছিলেন,وَيُحَكَ أَتَدْرِي مَا اللَّهُ ۚ إِنَّ شَأْنَهُ أَعْظَمُ مِنْ أَنْ يُسْتَشْفَعَ بِهِ عَلَى أَحَدٍ إِنَّهُ لَفَوْقَ عَرْشِهِ عَلَى سَمَاوَاتِهِ.
“তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি জানো আল্লাহ কে? তাঁর মাধ্যমে কারো সুপারিশ চাওয়া থেকে তাঁর মর্যাদা অনেক মহান। তিনি তাঁর ‘আরশের ঊর্ধ্বে তাঁর আসমানসমূহের উপর।” হাসান সনদে এই হাদীস আবু দাউদ ‘আর-রাদ্দু ‘আলাল জাহমিয়্যাহ’ পরিচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক ইবন ইয়াসার-এর সূত্রে তিনি এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এছাড়া অন্যান্যগণ বর্ণনা করেছেন।(তাবারানী, মু’জামুল কাবীর, হা/১৫৪৭; ইবন আবী আসিম, আস-সুন্নাহ খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫২)। অপর বর্ণনায় জুবাইর ইবন মুত’ইম রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,إِنَّ اللَّهَ عَلَى عَرْشِهِ فَوْقَ سَمَاوَاتِهِ، وَسَمَاوَاتُهُ فَوْقَ أَرَاضِيهِ مِثْلُ الْقُيَّةِ “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাঁর ‘আরশের উপর, তাঁর আসমানসমূহের উপর, আর তাঁর আসমানসমূহ যমীনের উপর গম্বুজের মতো।”(আবু দাউদ, আস-সুন্নাহ অধ্যায়, ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ; ১/২৩৯); ইবন আবী আসেম, আস-সুন্নাহ (১/২৫৩), নং ৫৭৫; আল-আজুররী, আশ-শরীআহ (৩/১০৯০), নং ৬৬৭; লালেকাঈ, শারহ উসুলি ই’তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ; ৩/৩৯৪)। এছাড়াও মি’রাজের হাদীস যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমানসমূহ অতিক্রম করলেন, আসমানের পর আসমান, অবশেষে তিনি তাঁর রবের নিকট পৌঁছলেন, অতঃপর আল্লাহ তাকে নিকটে নিলেন এবং নৈকট্য প্রদান করলেন। তারপর তাঁর ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিলেন, তখন তিনি মূসা ‘আলাইহিস সালাম ও তাঁর মহান রবের মাঝে বারবার আসা-যাওয়া করতে থাকলেন, তিনি তাঁর রবের কাছ থেকে মুসা ‘আলাইহিস সালামের কাছে অবতরণ করতেন, আর মূসা ‘আলাইহিস সালাম তাকে জিজ্ঞেস করতেন, আপনার ওপর কত রাকাত সালাত ফরয করা হয়েছে, রাসূল তাঁকে জানাতেন, মূসা আলাইহিস সালাম বলতেন, ফেরত যান আপনার রবের কাছে, তাঁকে আরও কমাতে বলুন, এভাবে তিনি উপরে উঠতেন এবং লাঘব করতে বলতেন।”(সহীহ বখারী, হা/৩০৩৫, ৩৬৭৪) এমন শত শত হাদিস রয়েছে পোস্ট বেশি বড় হবে তাই উল্লেখ করলাম না।
.
▪️আল্লাহ তা’আলা আসমানের ঊর্ধ্বে ‘আরশের উপরে এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগনে বক্তব্য থেকে প্রমান:

নবী (ﷺ)-এর মৃত্যু হলে প্রখ্যাত সাহাবী আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ১৩ হি.] বলেন:من كان يعبد محمدًا فإنه قد مات، ومن كان يعبد الذي في السماء فإنه حي لا يموت “যিনি মুহাম্মাদের ইবাদাত করতেন জেনে রাখুন। তিনি মারা গেছেন। আর যিনি সেই সত্তার ইবাদাত করতেন, তিনি আসমানের উপরে, তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই।”(সুনানে দারেমী, আর-রাদ্দু “আলাল মারিসী, পৃষ্ঠা: ৪৬৩; ইবন কুদামাহ, ইসবাতু সিফাতিল ‘উল্‌’উলু, পৃষ্ঠা: ১০১-১০২, নং ৭০; যাহাবী, আল-‘উলু, পৃষ্ঠা: ৬২; সহীহ বুখারী: ১২৪২)
.
প্রখ্যাত সাহাবী ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ২৩ হি.] এর বক্তব্য। আব্দুর রহমান ইবনু গুনম বলেন, আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাবকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ويل الديان من في الأرض من ديان من في السماء يوم يلقونه، إلا من أمر بالعدل، وقضى بالحق، ولم يقض على هوى، ولا على قرابة، ولا على رغب، ولا رهب، وجعل كتاب الله مرآة بين عينيه”দুনিয়ার বিচারকের জন্য দুর্ভোগ আসমানের উপরের বিচারকের কাছে; যেদিন সে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে। তবে তিনি ব্যতীত যিনি ইনসাফের আদেশ দেন, হক অনুযায়ী ফায়সালা করেন; ফায়সালা দেন না প্রবৃত্তি, আত্মীয়তা, অভিমুখী কিংবা ভয়-ভীতির উপর নির্ভর করে। আর আল্লাহর কিতাবকে দুই চোখের আয়না করে রাখেন।”(সুনানে দারেমী, আর-রাদ্দু আলাল মারীসী, পৃষ্ঠা: ৪৬২; ইবনুল কাইয়্যেম, ইজতিমা’উল জুয়ুশ, পৃষ্ঠা: ১২০। যাহাবী, আল-‘উলু, পৃ. ২৬৩; আলবানী এর সনদ সহীহ বলেছেন-মুখতাসারুল ‘উলু, পৃষ্ঠা: ১০৩)
.
প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেন-ما بين السماء القصوى والكرسي خمسمائة عام، وبين الكرسي والماء كذلك، والعرش فوق الماء والله فوق العرش، ولا يخفى عليه شيء من أعمالكم”
“শেষ আসমান ও কুরসীর মাঝে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছর এবং কুরসী ও পানির মাঝে অনুরূপ (দূরত্ব)। ‘আরশ পানির উপরে আর আল্লাহ ‘আরশের উপরে। তাঁর কাছে তোমাদের আমলের কিছুই গোপন থাকে না। এই হাদীস লালাকাঈ ও বাইহাকী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।(দারেমী, আর-রাদ্দু ‘আলাল জাহমিয়্যাহ, পৃ. ২৭৫ঃ ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ, ১/২৪২-২৪৩ হা/১৪৯; তাবরানী, আর-কাবীর, ৯/২২৮; আত-তামহীদ, ৭/১৩৯)
.
প্রখ্যাত তাবে’য়ী হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি সূরা বাকারার ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ ) يقول: ارتفع.”তারপর তিনি আসমানের উপর ইস্তিওয়া করলে তিনি বলেন এর অর্থ হচ্ছে উপরে উঠলেন।”(ইবন আবী হাতেম, আত-তাফসীর; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৭৫) হাসান বাসরী আরো বলেন ইউনুস (আ.) কংকর ও মাছের তাসবীহ পাঠ শুনলেন। তারপর তিনি তাসবীহ পাঠ শুরু করলেন। তিনি তাঁর দুআয় বলতেন:سيدي في السماء مسكنك، وفي الأرض قدرتك “হে আমার রব! তোমার অবস্থান আসমানের উপরে কিন্তু তোমার ক্ষমতা জমিনে।”(এই হাদীস ইবন কুদামাহ [ইসবাতু) সিফাতিল ‘উলূতে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।(ইবন কুদামাহ, ইসবাতু সিফাতিল ‘উল, পৃ. ৯৬, নং ৫৯; যাহাবী, আল-‘উলু, পৃ. ৫৫-৫৬; আরবা’ঈন, পৃ. ৫৭-৫৮ নং ৩৫, যাহাবী বলেন, এর সনদ সহীহ) হাসান বসরী আরো বলেন,ليس شيء عند ربك أقرب إليه من إسرافيل، وبينه وبينه سبع حجب، كل حجاب خمسمائة عام، وهو دون هؤلاء الحجب، ورجلاه في تخوم الثرى، ورأسه من تحت العرش” ইসরাফীলের চেয়ে অন্য কোনো জিনিস তোমার রবের বেশি নিকটবর্তী নয়। তাঁর মাঝে ও আল্লাহর মাঝে ৭টি পর্দা রয়েছে। প্রত্যেক পর্দা পাঁচশ বছরের। তিনি সেসব পর্দার নিচে। ইসরাফীলের দুই পা সিক্ত মাটিতে আর মাথা ‘আরশের নিচে।(আবুশ শাইখ, আল- ‘আযামাহ, ২/৬৮৬-৬৮৭, নং ২৭৮। ইবন কুদামাহ, ইসবাতু সিফাতিল ‘উলু, পৃ. ১১১-১১২, নং ৮৫: যাহাবী, আল-‘উলু, পৃ. ৯৩। সুয়ূতী, আল-লাআলিল মাসনু’আহ, ১/১৮)
.
কাতাদাহ ইবনুন নু’মান আস-সাদৃসী (রাহিমাহুল্লাহ) মৃত:১১৭ হি.) নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন, خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ اليوم السابع. “আসমান ও যমীন তিনি ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন’ আর তা হচ্ছে সপ্তম দিনে।”(যাহাবী, আল-‘আরশ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪৫০)। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,قالت بنو إسرائيل: يا رب أنت في السماء ونحن في الأرض، فكيف لنا أن نعرف رضاك وغضبك؟ قال: إذا رضيت عنكم استعملت عليكم خياركم، وإذا غضبت عليكم استعملت عليكم شراركم.”বনী ইসরাঈল তথা ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালামের বংশধররা বলেছিল: হে রব, আপনি আসমানের উপর আর আমরা যমীনের উপর, কীভাবে আমরা জানতে পারব আপনার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি? আল্লাহ বলেন, আমি যখন তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবো তখন তোমাদের ওপর তোমাদের উত্তম ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল করি। আর যখন তোমাদের ওপর ক্রোধান্বিত হই,তখন তোমাদের ওপর তোমাদের নিকৃষ্ট (পাপাচারী) লোকদের শাসক বানিয়ে দিই।”(আল-দারিমি, আর-রদ্দু ‘আলাল জাহমিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৪৯)
.
ইমাম আওযাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,كنا والتابعون متوافرون نقول إن الله تعالى فوق عرشه ونؤمن بما وردت به السنة من صفاته ‘আমরা ও তাবেঈগণ পর্যাপ্ত পরিমাণ ছিলাম। আমরা বলতাম, ‘আল্লাহ তাঁর ‘আরশের উপর এবং সুন্নাহয় আল্লাহর যেসব গুণ বর্ণিত হয়েছে, তার প্রতি আমরা ঈমান রাখি’।(আবূ সাহল মুহাম্মাদ ইবনু আব্দির রহমান, মাওসূ‘আতু মাওয়াক্বিফুস সালাফ ফিল আক্বীদা, ২য় খণ্ড (মিশর: আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তা.বি.) পৃষ্ঠা:৩৬৪; মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান আল-খমীস, ই‘তিক্বাদু আয়্যিমাতিস সালাফ আহলিল হাদীছ (কুয়েত: দারু ই’লাফিদ দাওলিয়্যাহ, ১৪২০ হি.), পৃ. ১৪৭) আবূ হাতিম রাযী ও আবূ যুর‘আ রাযী (রাহিমাহুমাল্লাহ) বলেছেন,أَدْرَكْنَا الْعُلَمَاءَ فِي جَمِيعِ الْأَمْصَارِ حِجَازًا وَعِرَاقًا وَشَامًا وَيَمَنًا فَكَانَ مِنْ مَذْهَبِهِمُ: وَأَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى عَرْشِهِ بَائِنٌ مِنْ خَلْقِهِ كَمَا وَصَفَ نَفْسَهُ فِي كِتَابِهِ , وَعَلَى لِسَانِ رَسُولِهِ ﷺ بِلَا كَيْفٍ , أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا ‘আমরা হিজায, ইরাক, মিশর, শাম, ইয়ামানসহ সকল এলাকার আলিমদের পেয়েছি এ মতের উপর যে, আল্লাহ তাঁর ‘আরশের উপর রয়েছেন, তিনি তাঁর সৃষ্টি থেকে আলাদা। যেমনটি স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মুখের মাধ্যমে নিজের বর্ণনা দিয়েছেন। কোনো ধরন নির্ধারণ ও জানা ছাড়াই। তিনি সকল কিছুকে জ্ঞানের মাধ্যমে বেষ্টন করে আছেন”।(শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৯৭; আল-‘আরশ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩২৯; আল-ঊলুয়্যু লিল ‘আলিয়্যিল গাফ্ফার,পৃষ্ঠা:১৮৮) আবূ হাতিম রাযী ও আবূ যুর‘আ রাযী (রাহিমাহুমাল্লাহ) আরো বলেছেন,أجمع أهل الإسلام على إثبات الصفات لله تعالى وأنه على عرشه بائن من خلقه وعلم الله في كل مكان من قال غير هذا فعليه لعنة الله “মহান আল্লাহর সিফাতের উপর আহলুল ইসলামের ইজমা হয়েছে যে, তিনি তাঁর আরশের উপরে তাঁর সৃষ্টি থেকে আলাদা। আল্লাহর জ্ঞান সর্বত্র, যে কেউ এর বিপরীতটি বলবে, তার উপর আল্লাহর লা‘নত”।(ই‘তিক্বাদু আয়্যিমাতিস সালাফ আহলিল হাদীস, পৃষ্ঠা: ১৪৮)
.
ইমাম বুখারীর শিক্ষক আলী ইবনু হাসান ইবনু শাকীক (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেন,قلت لعبد الله بن المبارك كيف نعرف ربنا ؟ قال : في السماء السابعة على عرشه.”আমি ‘আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারককে বললাম-আমাদের রবকে কীভাবে চিনব? তিনি বললেন: সপ্তম আসমানের ঊর্ধ্বে তাঁর ‘আরশের উপরে।”অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেছেন,على السماء السابعة على عرشه، ولا نقول كما تقول الجهمية إنه ها هنا في الأرض “সপ্তম আসমানের ঊর্ধ্বে তাঁর ‘আরশের উপরে।” আমরা জাহমিয়্যাদের মতো বলব না, তিনি এ জমিনে।”(সহীহ বুখারী,খলকু আফ’আলিল ‘ইবাদ, পৃ. ৮; ‘আব্দুল্লাহ ইবন আহমাদ, আস-সুন্নাহ, ১/১১১ হা/২২, ১/১৭৪-১৭৫, হা/২১৬;, ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ, ৩/১৫৫-১৫৬, হা/১১২; ইবন মানদাহ, আত-তাওহীদ, ৩/৩০৮, নং ৮৯৯; ইবনু ‘আব্দিল বার, আত-তামহীদ, ৭/১৪২)
.
▪️আল্লাহ আরশের উপর এ ব্যাপারে চার ইমামের আক্বীদা:
.
ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জন্ম ৮০ হি./৬৯৯ খ্রি. এবং মৃত্যু ১৫০ হি./৭৬৭ খ্রি] বলেন,ومن قال : لا أعرف ربي في السماء أم في الأرض فقد كفر لأن الله تعالى يقول : (الرحمن على العرش استوى ) وعرشه فوق سبع سماوات ( قلت ) : فإن قال : إنه على العرش ولكنه يقول : لا أدري العرش في السماء أم في الأرض قال : هو كافر : لأنه أنكر أن يكون في السماء”যে ব্যক্তি বলে, ‘আমি জানি না, আমার রব আসমানে না জমিনে’ সে কাফির হয়ে গেল। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রহমান আরশের উপর উঠেছেন’। তাঁর আরশ সাত আসমানের উপরে। আবু মৃতী’ বলেন, ‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম, যদি সে ব্যক্তি বলে, ‘আল্লাহ আরশের উপর কিন্তু আমি জানি না আরশ আসমানে না জমিনে।’ তিনি বললেন, ‘সে কাফির। কেননা সে আল্লাহর আসমানে উপরে থাকাকে অস্বীকার করেছে।”(আল-ফিকহুল আবসাত্ব, পৃষ্ঠা: ৪৬। অনুরূপ কথা বলেছেন, ইমাম ইবনু তাইমিয়া মাজমূ’ ফাতাওয়া; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৪৮,ইবনুল কাইয়িম তাঁর ‘ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়া’পৃষ্ঠা: ১৩৯, যাহাবী তাঁর আল-উলু’ পৃষ্ঠা: ১০১-১০২)অপর বর্ননায় জনৈক মহিলা ইমাম আবু হানিফা-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি যে মা’বুদের ইবাদত করেন তিনি কোথায়? উত্তরে তিনি বলেন, إِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى فِي السَّمَاءِ دُونِ الْأَرْضِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আকাশে আছেন, তিনি যমীনে নন’। তখন এক লোক তাঁকে বলল, আল্লাহর বাণী, وَهُوَ مَعَكُمْ ) তিনি তোমাদের সাথে আছেন) সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, এটা যেমন তুমি কোন লোককে লিখলে আমি তোমার সাথে আছি, অথচ তুমি তার থেকে অনুপস্থিত”।(আল-ফিকহুল আকবার, পৃষ্ঠা: ৩০১)
.
শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমামু দারিল হিজরাহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস আল-আসবাহী আল-মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৯৩ হি: মৃত: ১৭৯ হি.] এর আক্বীদা, আব্দুল্লাহ ইবন নাফে’ বলেন, মালিক ইবন আনাস বলেছেন,الله في السماء وعلمه في كل مكان” আল্লাহ আসমানের উপরে আর তাঁর ইলম সর্বত্র। ইমাম মালিক থেকে এ বক্তব্য প্রমাণিত। এ বক্তব্য ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবন হাম্বল বর্ণনা করেছেন আর-রাদ্দু ‘আলাল জাহমিয়‍্যাহ’ গ্রন্থে তার পিতা থেকে, তিনি সুরাইজ ইবন নু’মান থেকে, তিনি ইমাম মালিকের খাস ছাত্র আব্দুল্লাহ ইবন নাফে’ থেকে।”(আব্দুল্লাহ ইবন আহমাদ, আস-সুন্নাহ, ১/১০৬-১০৭, নং ১১, ১/২৮০ নং ৫৩২; আবু দাউদ, মাসায়িলু ইমাম আহমাদ, পৃ. ২৬৩; ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমু’উল ফাতওয়া, ৫/৫৩; দারুউ তা’আরুযিল ‘আকলি ওয়ান নাকল, ৬/২৬২) অপর বর্ননায় আবূ নু’আইম জা’ফর বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমরা মালেক বিন আনাসের মজলিসে ছিলাম। এ সময় এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, হে আবু আব্দুল্লাহ! রহমান (আল্লাহ) তো আরশের উপর উঠলেন। তিনি কিভাবে উঠলেন? ইমাম মালিক মাথা নিচু করে ফেললেন এবং প্রচণ্ড ঘেমে গেলেন। তারপর মাথা উঁচু করে বললেন:الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى كما وصف نفسه، ولا يقال كيف؟ وكيف عنه مرفوع، وأنت رجل سوء صاحب بدعة أخرجوه”রহমান ‘আরশের উপর উঠেছেন।”তিনি যেভাবে নিজের ক্ষেত্রে বর্ণনা দিয়েছেন। বলা যাবে না কীভাবে? ধরন তাঁর থেকে মুক্ত। তুমি খারাপ লোক, বিদ’আতী। একে তোমরা বের করে দাও।”(হিলয়াতুল আওলিয়া; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৩২৫-৩২৬। একই ঘটনা আস-শাবুনী ‘আক্বীদাতুস সালাফ পৃষ্ঠা: ১৬-১৭; ইবনু আব্দিল বার ‘আত-তামহীদ’; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৫১)
.
শাইখুল ইসলাম নাসিরুল হাদীস ফাক্বীহুল মিল্লাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফি‘ঈ আল-মাক্কী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৫০ হি: মৃত: ২০৪ হি.] বলেন,
القول في السنة التي أنا عليها، رأيت أهل الحديث عليها الذين رأيتهم، مثل سفيان، ومالك وغيرهما : الإقرار بشهادة أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله وذكر أشياء – ثم قال : “وأن الله على عرشه في سمائه، يقرب من خلقه كيف شاء، وينزل إلى سماء الدنيا كيف شاء
“আমি যে নীতির উপরে আছি এবং আমার দেখা সুফইয়ান, মালিক প্রমুখদের মতো আহলে হাদীসদের যে নীতির উপর পেয়েছি তাহল আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, আর নিশ্চয় মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল”-এ শাহাদাতের স্বীকারোক্তি দেওয়া। এরপর তিনি আরো অনেক কিছু উল্লেখ করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর আসমানে তাঁর ‘আরশের উপরে। তিনি সৃষ্টিকুলের নিকটবর্তী হন যেভাবে ইচ্ছা করেন এবং দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন যেভাবে ইচ্ছা করেন। এভাবে তিনি সমস্ত আকীদাহ উল্লেখ করেন।”(ইবনু কুদামাহ, ইসবাতু সিফাতিল ‘উলু, ১২৩-১২৪, নং ১০৮; ইবনু তাইমিয়্যাহ,মাজমু’উল ফাতাওয়া, ৪/১৮২-১৮৩) তিনি আরো বলেছেন:আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফত হক্ক ও সত্য; যা আল্লাহ তা’আলা আসমানের উপর থেকে ফয়সালা করেছেন আর তিনিই তার বান্দাদেরকে এর ওপর ঐকমত্যে পৌঁছার তাওফীক দিয়েছেন।”(ইবন কুদামাহ, ইসবাতু সিফাতিল ‘উলু, পৃ. ১৮১; আল-আরশ, ২/২৯০ অনুবাদ, ‘আব্দুল্লাহ মাহমুদ; ইবন তাইমিয়্যাহ, হামাওয়িয়‍্যাহ ৩৪৬; ইবনুল কাইয়্যেম, ইজতিমা’উল জুয়ুশ, পৃষ্ঠা: ১৬৫)
.
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল আর-রাদ্দু ‘আলায় যানাদিকাতি ওয়াল জাহমিয়্যাহ গ্রন্থে বলেন, সে গ্রন্থ সংকলন ও বর্ণনা করেছেন তার সন্তান আবদুল্লাহ-

باب بيان ما أنكرت الجهمية أن يكون الله على العرش، قلت لهم: أنكرتم أن يكون الله على العرش، وقد قال: الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى وقد قال: الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى فقالوا: هو تحت الأرض السابعة، كما هو على العرش، وفي السموات وفي الأرض.فقلنا: قد عرف المسلمون أماكن كثيرة ليس فيها من عظمة الرب شيء، أجسامكم وأجوافكم والحشوش والأماكن القذرة ليس فيها من عظمته شيء، وقد أخبرنا عز وجل أنه في السماء فقال تعالى: أأمنتم من في السَّمَاءِ أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ. أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاء أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ ، إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَى ، بَلْ رَفَعَهُ اللَّهِ إِلَيْهِ يَخَافُونَ رَبَّهُم مِنْ فَوْقِهِم فقد أخبر سبحانه أنه في السماء

“অধ্যায়: জাহমিয়্যারা আল্লাহর ‘আরশের উপরে থাকাকে অস্বীকার করে। আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা আল্লাহর ‘আরশের উপরে থাকাকে অস্বীকার করো। অথচ আল্লাহ বলেন, “পরম করুণাময় ‘আরশের উপর উঠেছেন” তারা বললো, আল্লাহ সাত যমীনের নিচে যেমনটি তিনি ‘আরশের উপরে, আসমানে, যমীনে। আমরা বললাম, মুসলিমরা এমন অনেক স্থান জানে যেখানে রবের মহত্ত্বের কিছুই নেই। তোমাদের দেহে, তোমাদের ভিতরে, পায়খানায় ও খারাপ স্থানে আল্লাহর মহত্ত্বের কিছুই নেই। আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন তিনি আসমানের উপরে। আল্লাহ বলেন,”যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের সহ যমীন ধসিয়ে দেয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ, অতঃপর আকস্মিকভাবে তা থর থর করে কাঁপতে থাকবে? যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের উপর পাথর নিক্ষেপকারী ঝড়ো হাওয়া পাঠানো থেকে তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ?” “তাঁরই পানে উত্থিত হয় ভালো কথা আর নেক আমল তিনি তা উপরে উঠান।” “নিশ্চয় আমি তোমাকে পরিগ্রহণ করব, তোমাকে আমার দিকে উপরে উঠিয়ে নিবো।” “বরং আল্লাহ তাঁর কাছে তাকে তুলে নিয়েছেন।” “তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে।” এভাবে আল্লাহ সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আসমানের উপরে।”(আর-রাদ্দু ‘আলাল জাহমিয়্যাহ, ৯২-৯৩; ইবনুল কাইয়্যেম, ইজতিমা’উল জুয়ুশ, ২০১-২০২) ইউসুফ ইবন মূসা আল-কাত্তান বলেন,وقيل لأبي عبد الله الله فوق السماء السابعة على عرشه، بائن من خلقه، وعلمه وقدرته بكل مكان؟ قال: «نعم هو على عرشه ولا يخلو شيء من علمه”আহমাদ ইবন হাম্বলকে বলা হলো, আল্লাহ সাত আসমানের ঊর্ধ্বে তাঁর ‘আরশের উপরে, তাঁর সৃষ্টি থেকে আলাদা, তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বত্র? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি তাঁর ‘আরশের উপর, কোনো কিছু তার জ্ঞানের অগোচরে নয়।”(ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ (৩/১৫৯)/হা ১১৫; লালেকাঈ, শারহু উসূলি ই’তিকাদি আহলিস সুন্নাহ (৩/৪০১-৪০২), নং ৬৭৪; ইবনু কুদামাহ, ইসবাতু সিফাতিল ‘উলু, পৃ. ১১৬, নং ৯৬; যাহাবী, আল-উলু, পৃষ্ঠা: ১২৯)
.
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার সহীহ’র শেষের অনুচ্ছেদ; ‘আর-রাদ্দু ‘আলাল জাহমিয়্যা’য় আল্লাহর বাণী: ﴾وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ﴿ “আর আল্লাহর ‘আরশ পানির উপরে ছিল” অধ্যায়ে ইমাম বুখারী বলেন, আবুল ‘আলিয়াহ বলেন, استوى إلى السماء অর্থাৎ আসমানের উপরে উঠেছেন এর অর্থ হচ্ছে, رتفع। উপরে উঠেছেন। মুজাহিদ বলেন, علا على العرض ‘আরশের উপরে হয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী যয়নাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, زوجني الله من فوق سبع سموات ‘আমার বিবাহ দিয়েছেন আল্লাহ সাত আসমানের উপর থেকে।(সহীহ বুখারী পৃ. ১৫৫৪-১৫৫৫; ইবন আবদুল হাদী, আল-কালাম আলা মাসআলাতিল ইস্তেওয়া ‘আলাল ‘আরশ, পৃ.৬৬-৬৭; যাহাবী, আল-আরশ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৯)
.
ইমাম ইয়াহইয়া ইবন মু’আয আর-রাযী (২৫৮ হি:) বলেন,إن الله على العرش بائن من الخلق، وقد أحاط بكل شيء علماً “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা ‘আরশের উপর, সৃষ্টিকুল থেকে আলাদা, আর তিনি সবকিছু জ্ঞানে পরিবেষ্টন করে আছেন।”(যাহাবী, দেখুন, মুখতাসারুল ‘উলু ১৩৯) ইমাম বাগাভী (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন,‘আহলুস সুন্নাহর (অনুসারীগণ) বলেন, কোনো পদ্ধতি ছাড়াই ‘আরশের উপর ওঠা মহান আল্লাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটার উপর ঈমান আনয়ন করা এবং এই জ্ঞান মহান আল্লাহর দিকে ন্যস্ত করা প্রতিটি মানুষের উপর ফরয’।(মা‘আলিমুত তানযীল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৬; তাফসিরে বাগাভী; খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৭৮)
.
ইমাম মুসলিম ইবন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী আন-নাইসাপূরী রাহিমাহুল্লাহ [মৃত:২৬১ হি.] তাঁর সহীহতে ‘আরশ সংক্রান্ত হাদীসগুলো নিয়ে এসেছেন, তিনি যেসব হাদীস নিয়ে এসেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিকট তাঁর ‘আরশের উপর তাঁর কিতাবে এটা লিখে রাখা যে, তাঁর ক্রোধের ওপর দয়া প্রাধান্য পাবে, যেমন তিনি বর্ণনা করেছেন,ما خَلَقَ اللهُ الْخَلْقَ ، كَتَبَ فِي كِتَابِهِ، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ: إِنَّ رَحْمَتِي تَغْلِبُ غَضَبِي.
“যখন আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাবে লিখলেন, যা তাঁর নিকট ‘আরশের উপর রয়েছে, নিশ্চয় আমার রহমত আমার ক্রোধের ওপর প্রাধান্য পাবে।”(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৫১) সূর্য কর্তৃক ‘আরশের নিচে সাজদাহ করা, তিনি বর্ণনা করেন, إِنَّ هَذِهِ تَجْرِي حَتَّى تَنْتَهِي إِلَى مُسْتَقَرُهَا تَحتَ الْعَرْشِ، فَتَخِرُ سَاجِدَةً فَلَا تَزَالُ كَذَلِكَ حَتَّى يُقَالَ هَا: أَرْتَفِعِي ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ.”এ সূর্য চলতে থাকে, অবশেষে তার সুনির্দিষ্ট অবস্থানস্থলে ‘আরশের নিচে যায়, তখন সেটি ‘আরশের নিচে সাজদায় পড়ে যায়, এভাবে প্রতিনিয়ত সে তা করতে থাকবে, অবশেষে তাকে বলা হবে, উঠ, যে দিক থেকে এসেছ সেদিকে ফিরে যাও।”(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৯)
.
ইমাম ইবনু খুযাইমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,من لم يقر بأن الله على عرشه استوى فوق سبع سماواته بالن من خلقه، فهو كافر يستتاب، فإن تاب وإلا ضربت عنقه، وألقي على مزبلة؛ لئلا يتأذى بريحه أهل القبلة وأهل الذمة “যে ব্যক্তি স্বীকার করে না-“আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশের উপর, সাত আসমানের ঊর্ধ্বে উঠেছেন, সৃষ্টি থেকে আলাদা” তাহলে সে কাফির। তাকে তাওবা করতে বলা হবে। (তাওবা করলে বেঁচে গেল অন্যথায়) তার গর্দান উড়িয়ে দিয়ে তাকে নর্দমায় নিক্ষেপ করতে হবে। যাতে তার দুর্গন্ধে মুসলিম ও যিম্মীরা কষ্ট না পায়।”(মুখতাসারুল উলূ পৃষ্ঠা: ২২৫)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] মহান আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাঁর ‘আরশের উপর উঠার বিষয়টিতে ইজমা’ বর্ণনা করে বলেন,القول بأن الله تعالى فوق العالم معلوم بالاضطرار من الكتاب والسنة وإجماع سلف الأمةبعد تدير ذلك. ولهذا كان السلف مطبقين على تكفير من أنكر ذلك.”আল্লাহ তাআলা বিশ্বজগতের ঊর্ধ্বে’ এটা কুরআন, সুন্নাহ ও সালাফদের ইজমা নিয়ে গবেষণার পর স্বতঃসিদ্ধভাবে জানা বিষয়। এ জন্য যে-ব্যক্তি তা অস্বীকার করে, তাকে কাফির বলার ব্যাপারে সালাফগণ একমত।(ইবনু তাইমিয়া; দারউ তাআরফিল আকল ওয়ান নাকল, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ২৭) শাইখুল ইসলাম ইমাম (রাহিমাহুল্লাহ) অপর ফাতাওয়া আরো বলেছেন:

ومن قال: إنه ليس على العرش رب ولا فوق السموات خالق، بل ما هنالك إلا العدم المحض والنفي الصرف فهو معطل جاحد لرب العالمين مضاء الفرعون الذي قال: يَا هَامَانُ ابْنِ لِي صَرْحًا لَعَلِّي أَبْلُغُ الْأَسْبَابَ أَسْبَابَ السَّمَاوَاتِ فَأَطَّلِعَ إِلَى إِلَهِ مُوسَى وَإِنِّي لَأَظُنُّهُ كَاذِبًا ) [غافر : ٣٦ – ٣٧].بل أهل السنة والحديث، وسلف الأمة متفقون على أنه فوق سمواته على عرشه بائن من خلقه ليس في ذاته شيء من مخلوقاته ولا في مخلوقاته شيء من ذاته، وعلى ذلك نصوص الكتاب والسنة وإجماع سلف الأمة وأئمة السنة، بل على ذلك جميع المؤمنين من الأولين والآخرين وأهل السنة وسلف الأمة متفقون على أن من تأول استوى بمعنى استولى أو بمعنى آخر ينفي أن يكون الله فوق سمواته فهو جهمي ضال . ”

“আর যে ব্যক্তি বলবে যে, ‘আল্লাহ আরশের উপর নেই’ অথবা ‘আসমানের ওপরে কোনো রব নেই’ কিংবা বলবে যে, ‘সেখানে কেবল (নাস্তি) শূন্যতা, কিছুই নেই’ সে মূলত মু‘আত্তিল (সৃষ্টিকে স্রষ্টাশূন্যকারী) এবং রাব্বুল আলামীনকে অস্বীকারকারী, সে ফির’আউনের মতোই কথা বললো, যে বলেছিল,”হে হামান! তুমি আমার জন্য একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি আসমানে পৌঁছানোর উপায় পেতে পারি এবং মূসার ইলাহকে দেখতে পাই। আর নিশ্চয় আমি তো তাকে (মূসাকে) মিথ্যাবাদী মনে করি।” (সূরা গাফির: ৩৬-৩৭) বরং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, আহলুল হাদীস এবং সালাফে সালিহীন এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ইজমা‘ (ঐকমত্য) করেছেন যে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আসমানের উপরে, আরশের উপর এবং তিনি তাঁর সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক। তাঁর সত্তাতে সৃষ্টির কোনো কিছু নেই, তেমনি সৃষ্টির মধ্যেও তাঁর সত্তার কিছুই নেই। আর এর ওপরই প্রমাণ দিচ্ছে, কুরআন, সুন্নাহ উম্মাতের সালাফ ও সুন্নাহ’র ইমামগণের ইজমা’। বরং এর ওপরই আগের ও পরের সকল মুমিন, আহলুস সুন্নাহ,সালাফুল উম্মাহ সবাই একমত, যে কেউ ‘ইস্তাওয়া’কে ‘ইস্তাওলা’ (অধিকার প্রতিষ্ঠা) দ্বারা অপব্যাখ্যা করবে অথবা অন্য কোনো অর্থ দিয়ে অপব্যাখ্যা করবে, যার মাধ্যমে সে আল্লাহ তা’আলাকে ‘আরশের উপর থাকা অস্বীকার করবে সে মূলত জাহমী (জাহম ইবন সফওয়ানের মতবাদ অনুসারী) ও পথভ্রষ্ট। “(ইবন তাইমিয়্যাহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪৬৮)।
.
ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র আল-মালিকি (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত: ৪৬৩ হি.), যিনি ইমাম ইবনু তাইমিয়া ও ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব দুনিয়াতে আসার কয়েকশো বছর পূর্বে জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,وأما قوله في هذا الحديث للجارية أين الله فعلى ذلك جماعة أهل السنة وهم أهل الحديث ورواته المتفقهون فيه وسائر نقلته كلهم يقول ما قال الله تعالى في كتابه (الرحمن على العرش استوى) وأن الله عز وجل في السماء وعلمه في كل مكان“দাসির উদ্দেশে নবিজি যে ‘আল্লাহ কোথায়’ কথাটি বলেছেন, এর ওপরেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন আহলুস সুন্নাহর জামাআত। আর তাঁরা হলেন আহলুল হাদিস এবং ফিকহ-জানা হাদিসের বর্ণনাকারীগণ। হাদিসের সমুদয় (সু্ন্নাহপন্থি) বর্ণনাকারী সেটাই বলতেন, যা মহান আল্লাহ বলেছেন তাঁর কিতাবে, ‘দয়াময় আল্লাহ আরশের ওপর ওঠেছেন (সুরা তোহা: ৫)।’ তাঁরা এও বলতেন যে, আল্লাহ আছেন আকাশের ওপরে এবং তাঁর ইলম রয়েছে সর্বত্র।” কিছুদূর এগিয়ে তিনি লিখেছেন,ولم يزل المسلمون إذا دهمهم أمر يقلقهم فزعوا إلى ربهم فرفعوا أيديهم وأوجههم نحو السماء يدعونه ومخالفونا ينسبونا في ذلك إلى التشبيه والله المستعان ومن قال بما نطق به القرآن فلا عيب عليه عند ذوي الألباب“আর মুসলিমরা সর্বদাই এ আমলের ওপরই ছিল তারা অকস্মাৎ কোনো বিপদে আক্রান্ত হলে তাদের রবের কাছে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ছুটে যায়, আকাশের দিকে নিজেদের হাত উঠিয়ে ও চেহারা তুলে তাকিয়ে দোয়া করতে থাকে। পক্ষান্তরে আমাদের বিরোধীরা এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে তাশবিহ তথা সাদৃশ্যবাদের দিকে সম্পৃক্ত করে (অর্থাৎ আল্লাহ ওপরে আছেন বলে আমরা তাদের মতে সাদৃশ্যবাদী মুশাব্বিহা হয়ে গেছি)! আল্লাহুল মুস্তাআন। যাদের বুদ্ধি আছে, তাদের নিকটে সে ব্যক্তির কোনোই দোষ নেই, যে কুরআনের কথা অনুযায়ী কথা বলেছে।” [বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: ইবনু আব্দিল বার্র কৃত আল-ইস্তিজকার, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৩৭; দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা (বৈরুত) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২১ হি./২০০০ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস,
মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]তার সারা জীবন যত আকীদাহ’র বইয়ের ব্যাখ্যা করেছেন সবগুলোতেই আল্লাহ তা’আলার ‘আরশের উপর উঠার বিষয়টির আলোচনা এনেছেন, তাঁর ব্যাখ্যাকৃত গ্রন্থসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো (১) শারহুল আকীদাতিস সাফারীনীয়্যাহ। (২) শারহু উসূলিল ঈমান (৩) শারহু লুম’আতিল ই’তিক্বাদ (৪) তালখীসু আকীদাতিল হামাওয়িয়‍্যাহ উপর্যুক্ত গ্রন্থসমূহের মধ্যে, আমরা এখানে একটি বিশেষ গ্রন্থের আলোচনা করব, যেখানে তিনি এ বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর ও সহজভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি শারহুল আকীদাতিল ওয়াসিত্বিয়্যাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন—

وقوله : (ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ : ثَمَّ) : للترتيب. و الْعَرْشِ : هو ذلك السقف المحيط بالمخلوقات، ولا نعلم مادة هذا العرش، لأنه لم يرد عن النبي صلى الله عليه وسلم حديث صحيح يبين من أين خلق هذا العرش، لكننا نعلم أنه أكبر المخلوقات التي نعرفها. وأصل العرش في اللغة السرير الذي يختص به الملك، ومعلوم أن السرير الذي يختص به الملك سيكون سريراً عظيماً فخماً لا نظير له. وفي هذه الآية من صفات الله تعالى عدة صفات، لكن المؤلف ساقها لإثبات صفة واحدة، وهي الاستواء على العرش. وأهل السنة والجماعة يؤمنون بأن الله تعالى مستوى على عرشه استواء يليق بجلاله ولا يماثل استواء المخلوقين.

“আর আল্লাহর বাণী, “সুম্মা ইস্তাওয়া ‘আলাল ‘আরশ” (তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠলেন) এখানে ‘সুম্মা’ শব্দটি ধারাবাহিকতা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর ‘আরশ’ অর্থ সে ছাদ, যা সকল সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে আছে, আমরা ‘আরশের মূল উপাদান জানি না; কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কোনো সহীহ হাদীস আসেনি যাতে ‘আরশ কিসের তৈরি তা বর্ণনা করেছে, তবে আমরা অবশ্যই জানি যে, যত সৃষ্টি আমরা জানি তন্মধ্যে ‘আরশ হচ্ছে সর্ববৃহৎ সৃষ্টি।
আর ‘আরশ’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, এমন খাট যা বাদশাহ’র জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট। আর জানা কথা যে, বাদশাহ’র জন্য যে খাটটি নির্ধারিত, সেটি হবে অনেক বৃহৎ বিশাল, নজীরবিহীন। এ আয়াতে আল্লাহর গুণাবলির মধ্যে অনেকগুলো গুণের বর্ণনা এসেছে, কিন্তু গ্রন্থকার (ইবনু তাইমিয়্যাহ) শুধু একটি গুণ সাব্যস্ত করার জন্য তা নিয়ে এসেছেন। আর তা হচ্ছে, ‘আরশের উপর উঠার গুণ সাব্যস্ত করা। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আহ ঈমান আনে যে, আল্লাহ তা’আলা ‘আরশের উপরে সমুন্নত, তিনি ‘আরশের উপরে এমনভাবে উঠেছেন যেভাবে উঠা তাঁর মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, তাঁর সে উঠা সৃষ্টিকুলের উঠার মতো নয়।”(ইবনু উসাইমীন,শারহু আক্বীদাতুল ওয়াসিতিয়া, পৃষ্ঠা: ৩৭৪-৭৫)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ). أي ثم ارتفع على العرش وعلا فوقه سبحانه وتعالى، فعلمه في كل مكان وهو فوق العرش فوق جميع المخلوقات والعرش سقف المخلوقات وهو أعلى المخلوقات والله فوقه جل وعلا استوى عليه استواء يليق بجلاله لا يشابه خلقه في شيء من صفاته.

“যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন।” [সূরা আল-আ’রাফ: ৫৪] এখানে (সুম্মা ইস্তাওয়া ‘আলাল ‘আরশ) এর অর্থ, তারপর তিনি ‘আরশের উপরে উঠলেন, তার ঊর্ধ্বে উঠলেন। সুতরাং সকল জায়গায় তাঁর জ্ঞান, কিন্তু তিনি ‘আরশের উপর, সকল সৃষ্টিকুলের উপর। আর ‘আরশ হচ্ছে সকল সৃষ্টির ছাদ। তা সবচেয়ে উপরের সৃষ্টি আর মহান আল্লাহ তার উপরে’। তিনি সে ‘আরশের উপর উঠেছেন যেভাবে উঠা তাঁর সম্মান ও মর্যাদার সাথে উপযোগী, তাঁর গুণের সাথে তাঁর সৃষ্টির কোনো সাদৃশ্য নেই।”(শারহু সালাসাতিল উসূল, পৃষ্ঠা: ৪২)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী আদ-দিমাশক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] আল্লাহর ‘আরশের উপর উঠা এবং কুরআন ও হাদীসে আসা আল্লাহ তা’আলাকে ‘আসমানে’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে, তার ব্যাখ্যা করে বলেন,

ولا يكفي أن يعتقد المسلم فقط معنى الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى) (طه:٥)، ومعنى: ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء»، دون أن يعرف أن في هنا ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء» في هذه الظرفية في هذا الحديث هي كـ «في» في قوله تعالى : ( أَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ) (الملك : ١٦) أي: من على السماء، حتى إذا جاء ذلك المعتزلي أو الأشعري ووسوس إليه وقال له : أنتم تجعلون ربكم في ظرف في السماء، فيكون الجواب عنده: لا لا منافاة بين قوله تعالى: (الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى) (طه: ٥)، وبين قوله: (آمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ ) (الملك : ١٦)؛ لأن في هنا بمعنى على هناك، والدليل كثير وكثير جداً، من هذا الحديث المتداول على السنة الناس، وهو بمجموع طرقه والحمد لله حديث صحيح: ارحموا من في الأرض، لا يعني الحشرات والديدان التي هي في الأرض، وإنما من على الأرض من الإنسان والحيوان، يرحمكم من في السماء، أي من على السماء، فمثل هذا التفصيل لا بد أن يكون المستجيبون لدعوة الحق على بينة من الأمر.

“আর মুসলিমের আকীদাহ’র জন্য শুধু “রহমান ‘আরশের উপর উঠেছেন” এটার অর্থ বুঝাই যথেষ্ট নয়।” অনুরূপ “যমীনে যারা আছে তাদের ওপর দয়া কর, আসমানে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের ওপর রহম করবেন”। এগুলোর শুধু অর্থ জানলেই হবে না,বরং তার জানা লাগবে যে, ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء এ হাদীসে ‘ফী’ বলে সেটাই বুঝানো হয়েছে যা কুরআনের)ى (المتُمْ مَنْ في السماء) (الملك :٦١ উক্ত আয়াতে ‘ফী’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এগুলোতে ‘ফী’ বলে ‘আলা’ বুঝানো হয়েছে। তখন অর্থ হবে, যিনি আসমানের উপরে আছেন। এটা এজন্য বলেছি, যাতে করে কোনো মু’তাযিলী বা আশ’আরী তার কাছে এসে যদি কুমন্ত্রণা দেয় যে, তোমরা তো আল্লাহকে আসমানের ভিতরে রাখছ, তখন যেন তার কাছে উত্তর প্রস্তুত থাকে যে, না, রহমান ‘আরশের উপর উঠেছেন এবং আসমানের উপর যিনি আছেন এ দু’য়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই; কারণ দ্বিতীয় আয়াতে আসা ‘ফী’ এর অর্থ ‘আলা’ বা উপরে, ‘মধ্যে’ অর্থ নয়। এর ওপর প্রমাণ অনেক অনেক যে ‘ফী’ হরফটি ‘আলা’ এর অর্থে ব্যবহৃত হয়।ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء এ হাদীসটি মানুষের মুখে খুব প্রচলিত, যা তার অনেক বর্ণনার কারণে আলহামদুলিল্লাহ সহীহ। হাদীসে ارحمواء من في الأرض কখনো যমীনের মধ্যে বলে যমীনের ভিতরের পোকামাকড় বুঝানো হয়নি। বরং বুঝানো হয়েছে, যারা যমীনের উপরে আছে, মানুষ ও জীবজন্তু। তেমনিভাবে يرحمكم من في السماء বলে যিনি আসমানের উপরে আছেন তাঁকে বুঝানো হয়েছে। যারা সহীহ হক আকীদাহ’র দাওয়াতে সাড়া দিবে তাদের জন্য এ ধরনের বিস্তারিত জ্ঞান থাকা আবশ্যক; যাতে তারা বিষয়টির ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণের ওপর থাকে।”(মাওসূ’আতুল আলবানী ফিল আকীদাহ; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১১)।
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত কুরআন সুন্নাহ এবং সালাফে সালেহীনের আলোচনায় বুঝা গেল আল্লাহ ত‘আলা তাঁর আরশের উপর উঠেছেন। তিনি সবকিছুর মধ্যে সর্বত্র বিরাজমান নন। তাঁর ইলম, দৃষ্টি, কুদরত সর্বত্র রয়েছে। অর্থাৎ কোন জিনিসই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। জাহমিয়্যারা মহান আল্লাহর সৃষ্টির উপর আরোহন করাকে অস্বীকার করে। তাদের দেখাদেখি পরবর্তীতে মু‘তাযিলা, আশ‘আরীরা এবং মাতুরীদীরাও এ আক্বীদা পোষণ করে। মহান আল্লাহর আরশের উপর উঠা নিয়ে বিদ‘আতী ফের্ক্বার কয়েকটি মত রয়েছে। তারা বলে ‘তিনি কর্তৃত্ব গ্রহণ করলেন’ বা ‘তিনি আরশের মালিক হলেন’ আল্লাহর কালামের এ ধরনের বিকৃত অর্থ করা হারাম। এজন্য এজন্য ইমাম ইবনে খুজাইমাহ বলেন:”যে ব্যক্তি স্বীকার করে না আল্লাহ আরশের উপরে, সাত আসমানের উর্ধ্বে উঠেছেন, সৃষ্টি থেকে আলাদা, তাহলে সে কাফির। তাকে তওবা করতে বলা হবে (সে তওবা করলে বেঁচে গেল অন্যথায় তার গ-র্দা-ন উ-ড়ি-য়ে তাকে নর্দমায় নি-ক্ষে-প করতে হবে, যাতে তার দুর্গন্ধে কোন মুসলিম ও জিম্মিরা কষ্ট না পায়।”(মুখতাসারুল উলূ পৃষ্ঠা:২২৫) আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের শাইখ আবু বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া (হাফি.)-এর “রহমান আরশের উপর উঠেছেন” এবং ওস্তায আব্দুল্লাহ মাহমুদ (হাফি.)-এর অনুবাদকৃত “কিতাবুল আরশ”বই দুটি পড়ুন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: