বিড়াল পালনের হুকুম এবং বিড়ালের ব্যবসা করা কিংবা বিড়াল ক্রয় বিক্রয় করার বিধান। একটি দলিল ভিত্তিক পর্যালোচনা।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বীনের বিধি বিধান পালনে অবহেলা কিংবা বাধাগ্রস্ত না হলে যত্ন সহকারে বিড়াল প্রতিপালন করা মুবাহ তথা জায়েজ। আর এই বিষয়ে ইমামগনের ইজমা রয়েছে। ইমাম ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “أجمع أهل العلم على أن اتخاذ الهر مباح “আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী বিড়াল প্রতিফলন করা জায়েজ”।(আল-আওসাত; খন্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ২৭) প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] বিড়াল প্রতিপালনের জন্য রাসূল (ﷺ) কর্তৃক ‘বিড়ালের পিতা’ উপাধি পেয়েছিলেন (সহীহ বুখারী হা/২৫৩০-৩১) আবদুল্লাহ ইবনু রাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আবূ হুরাইরাহ (বিড়ালের বাপ) আপনার ডাকনাম হল কেন? তিনি বললেন, তুমি আমাকে কি ভয় পাও? আমি বললাম, হ্যাঁ আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আপনাকে আমি ভয় করি। তিনি বললেন, আমি আমার পরিবারের মেষপাল চড়াতাম এবং আমার একটি ছোট বিড়াল ছিল। রাতের বেলা আমি এটিকে একটি গাছে বসিয়ে রাখতাম। আর দিন হলে আমি এটাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতাম এবং এর সাথে খেলা করতাম। তাই লোকেরা আমাকে আবূ হুরাইরাহ ডাকনাম দেয়”।(সুনানে তিরমিজি হা/৩৮৪০ হাফিয ইবনু হাজার হাদীসটি হাসান সহীহ বলেছেন)
.
বিড়াল প্রতিপালন করা বৈধ হলেও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কিংবা স্বাভাবিকভাবে বিড়াল ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ কিনা এই মাসালায় মতানৈক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ দুটি মতো রয়েছে। যেমন:
▪️(১).জমহুর ওলামাদের মতে পোষা বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ। এই মতের পক্ষে রয়েছেন প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রা:) প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন, হাকাম, হাম্মাদ, ইমাম মালেক, সুফিয়ান সাওরী, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদের দুটি মতের একটি মত, ইসহাক্ব বিন রাহওয়াই,ইমাম আবু হানিফা এবং সকল আসহাবুল রায়রা অভিমত দিয়েছেন।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
بيع الهرة الأهلية جائز بلا خلاف عندنا… وبه قال جماهير العلماء… واحتج من منعه بحديث أبي الزبير قال: (سألت جابرًا عن ثمن الكلب والسنور؟ فقال: زجر النبي صلى الله عليه وسلم عن ذلك) رواه مسلم. واحتج أصحابنا بأنه طاهر منتفع به، ووُجِدَ فيه جميع شروط البيع بالخيار فجاز بيعه، كالحمار والبغل.والجواب عن الحديث من وجهين:أحدهما: أن المراد الهرة الوحشية فلا يصح بيعها لعدم الانتفاع بها.
والثاني: أن المراد نهي تنزيه، والمراد النهي على العادة بتسامح الناس فيه، ويتعاوزونه في العادة”
“গৃহপালিত বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় করা আমাদের (শাফেয়ি) মাযহাব অনুযায়ী কোন মতভেদ ছাড়াই বৈধতা রয়েছে…। আর এটি জমহুর আলেমগনের অভিমত।….আর (বিড়াল) ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধকারী আলেমগণ আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস দিয়ে দলিল দিয়েছেন। তিনি বলেন,سَأَلْتُ جَابِرًا عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ قَالَ زَجَرَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ “আমি জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট কুকুর ও বিড়াল কেনাবেচা করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন” ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর আমাদের (শাফেয়ী) মাযহাবের আলেমগন দলিল দিয়েছেন যে তা পবিত্র, তার দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ। আর তার মধ্যে যখন ক্রয়-বিক্রয়ে ইখতিয়ার তথা (বেচাকেনার মধ্যে দুদিকের ভালো ও কল্যাণকর দিক অন্বেষণ করাকে খেয়ার বলে। দুদিক বলতে ক্রয়-বিক্রয় বহাল রাখা ও না রাখাকে বুঝানো হয়েছে) এর সকল শর্ত পাওয়া যাবে,তখন তা ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ হবে। যেমন গাধা ও খচ্চর। আর উল্লিখিত হাদিসগুলোর জবাব দুভাবে দেওয়া যেতে পারে।
(১). হতে পারে হাদিসগুলোতে বন্য বিড়াল উদ্দেশ্য। সুতরাং তার দ্বারা কোন উপকার লাভ করা যায় না। এজন্য তা ক্রয়-বিক্রয় করা শুদ্ধ নয়।
(২). তা হতে মূলত বেঁচে থাকতে বলা উদ্দেশ্য। মানুষের তার প্রতি স্বভাবগতভাবে সহনশীল হওয়া এবং তাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া উদ্দেশ্য।(নববী; আল মাজম: খন্ড: ৯ পৃষ্ঠা: ২২৯)। তিনি আরো বলেনفَإِنْ كَانَ مِمَّا يَنْفَعُ ، وَبَاعَهُ : صَحَّ الْبَيْعُ ، وَكَانَ ثَمَنُهُ حَلَالًا .هَذَا مَذْهَبُنَا ، وَمَذْهَبُ العلماء كافة “যদি তা উপকারী হয় এবং সে তা বিক্রি করে তাহলে তার ক্রয়-বিক্রয় সহিহ হবে এবং তার মূল্য হালাল।এটি আমাদের (শাফেঈ) মাজহাব এবং জমহুর ওলামাদের মাজহাব”।(শারহু সহিহ মুসলিম: খন্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ২৩৩)।
.
উপরোক্ত যারা বিড়াল ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ মনে করেন তারা দলিল হিসাবে সহীহ মুসলিমে বর্নিত প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.]-এর হাদীস উল্লেখ করেন।হাদীসটি হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন,دَخَلَتْ امْرَأَةٌ النَّارَ مِنْ جَرَّاءِ هِرَّةٍ لَهَا ، أَوْ هِرٍّ ، رَبَطَتْهَا ؛ فَلَا هِيَ أَطْعَمَتْهَا ، وَلَا هِيَ أَرْسَلَتْهَا تُرَمْرِمُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ حَتَّى مَاتَتْ هَزْلًا “এক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গমন করে। সে এটিকে মজবুত করে আটকে রাখলো। সে মহিলা এটিকে খাবার দেয়নি, পানীয় দেয়নি এবং তাকে বন্ধন ছেড়ে দেয়নি যেন জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে। পরিশেষে বিড়ালটি পানাহারে কাতর হয়ে মারা যায়”।(সহীহ মুসলিম হা/৬৫৭৩; ই.ফা. ৬৪৪০, ই.সে. ৬৪৯১) এই হাদীসের আলোকে আলেমগন বলেন,الأصل في اللام أنها للملك ، أي قوله : ( هرة لها ) ، وما كان مملوكا منتفعا به ، جاز بيعه “এখানে, لام আরবি অব্যায়ের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো যে লামটি মালিকানার নির্দেশক। অর্থাৎ তার “( هرة لها ) তথা তার বিড়াল” এবং যা কিছুর মালিকানা হতে পারে এবং যার দ্বারা সে উপকৃত হয়, তাহলে তা ক্রয় বিক্রয় করা বৈধ রয়েছে। যেমন: হাম্বলি মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ ইমাম বুহুতী (রাহিমাহুল্লাহ) কাশশাফুল-কিনা গ্রন্থে বলেন:-
: ويجوز بيع هر لما في الصحيح { أن امرأة دخلت النار في هرة لها حبستها } والأصل في اللام الملك ولأنه حيوان يباح نفعه واقتناؤه مطلقا أشبه البغل ( وعنه لا يجوز بيعه اختاره في الهدي والفائق وصححه في القواعد الفقهية ) لحديث مسلم عن جابر أنه سئل عن السنور فقال زجر النبي صلى الله عليه وسلم عن ذلك . وفي لفظ أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن السنور. رواه أبو داود ويمكن حمله على غير المملوك منها , أو ما لا نفع منها .
“বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ রয়েছে। কারণ সহিহ হাদিসে এসেছে,أن امرأة دخلت النار في هرة لها حبستها”একজন মহিলা একটি বিড়াল বন্দি করে রাখার কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছিল”।আরবি ব্যাকরণে لِ (লাম) অব্যয়ের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল মালিকানা সাব্যস্ত হওয়া। আর যা কিছুর মালিকানা হতে পারে এবং লাভজনক, (যার মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায়) তা বিক্রি করা জায়েয। মূলত তা খচ্চরের সাথে সাদৃশ্য রাখে।(তাঁর থেকে আরেকটি বর্ণনা রয়েছে, যে তা ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ নয়। তিনি একথাটি ” হাদি ওয়াল ফায়ীক ” গ্রন্থে নিয়ে এসেছেন এবং আল “ক্বাওয়ায়ীদুল ফিক্বহিয়্যাহ ” গ্রন্থে এটিকে সহিহ বলেছেন। ইমাম মুসলিম জাবের (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্ণনা করেন,নিশ্চয়ই তিনি বিড়ালের মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন। অন্য শব্দে এসেছে, “নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালের বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন”। হাদিসটি আবু দাউদ হা/৩৪৮০ বর্ণনা করেছেন। আর এটিকে তার মধ্যে হতে মালিকানাধীন নয় অথবা যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় না এমন কিছুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।(কাশশাফুল-কিনা: খন্ড: ৩; পৃষ্ঠা:১৫৩)। সুতরাং যারা বিড়াল ক্রয় বিক্রয় জায়েজ বলেছেন তারা মূলত কিয়াসের আলোকে এটি বলেছেন।
.
▪️(২). অপরদিকে প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রা:), ইমাম আহমেদের অপর একটি মত, ইমাম ইবনুল মুনযির, প্রখ্যাত তাবেঈ তাউস, মুজাহিদ বিন জাবার, ইমাম ইবনু কাইয়ুম, সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ইমাম আব্দুল্লাহ বিন বায, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) সহ অপর একদল আলেমদের মতে বিড়াল ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ নয়। কেননা বিড়াল এমন একটি প্রাণী যার মালিকানা সাব্যস্ত হয় না এবং একে খাঁচাবন্দীও করা জায়েয নয়। এজন্য বিড়াল ব্যবসায়ী পণ্য না। কারণ বিড়াল মানুষের পাশেই ঘুরাঘুরি করে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ধমক দিয়েছেন। দলিলের আলোকে এটিই বিশুদ্ধ মত। যাহেরী মাযহাবের আলেমগন বলেন বিড়াল ক্রয় বিক্রয় জায়েজ না। আর এই মতের আলেমদের পক্ষে দলিল হচ্ছে, সহীহ মুসলিমে প্রখ্যাত সাহাবী জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিত হাদীস। হাদীসটি হচ্ছে,
.
আবূ যুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,سَأَلْتُ جَابِرًا عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ قَالَ زَجَرَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ “আমি জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট কুকুর ও বিড়াল কেনাবেচা করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন” (সহীহ মুসলিম, হা/১৫৬৯; ই. ফা. ৩৮৭০, ই. সে. ৩৮৬৯) আর আরবী ভাষায় السنور তথা “সিন্নাউর” অর্থ হলো বিড়াল। অপর বর্ননায় আলী ইবনু হুজর ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَمَنِ الْكَلْبِ وَالسِّنَّوْرِ “নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষিদ্ধ করেছেন।(আবু দাউদ হা/৩৪৭৯; তিরমিজি হা/১২৭৯) তাহক্বীক: হাদিসটি সহীহ জয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে এখতিলাফ রয়েছে। আলেমদের মধ্যে একটি দল এটিকে জয়ীফ বলেছেন। তারা হলেন, ইমাম তিরমিজি, বাগাবী, ইবনে মুনযির ও ইবনে আব্দুল বার। আবার তাদের মধ্যে অপর একটি দল এটিকে সহীহ বলেছেন। তারা হলেন, ইমাম মুসলিম, ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম নববী। সুতরাং গ্রহণযোগ্য কথা হচ্ছে হাদিসটি বিশুদ্ধ। ইবনু (ক্বাইয়িম; যাদুল-মা’আদ: খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৭৭৩; ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৮১৬৭৫)
.
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অন্যতম প্রিয় ছাত্র ইবনু কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যা, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] “বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় হারাম হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে মত প্রকাশ করেছেন”। তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
وبذلك أفتى أبو هريرة رضي الله عنه ، وهو مذهب طاووس ومجاهد وجابر بن زيد ، وجميع أهل الظاهر ، وإحدى الروايتين عن أحمد .وهو الصواب ، لصحة الحديث بذلك ، وعدم ما يعارضه ؛ فوجب القول به ” ا
“আর এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ফাতওয়া দিয়েছেন এবং তা তাওউস, মুজাহিদ, জাবের বিন জায়েদ ও সকল আহলুয যাহেরের মত। এমনকি ইমাম আহমাদের দুটি মতের একটি মত এ পক্ষে রয়েছে। আর এটাই সঠিক অভিমত। কারণ এ বিষয়ে সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে এবং এর বিপরীতেও কোন হাদিস নেই। সুতরাং এ কথা বলাই আবশ্যক”।(ইবনু ক্বাইয়িম; যাদুল-মা’আদ: খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৭৭৩)
.
ইমাম ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: ” إن ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم النهي عن بيعه : فبيعه باطل ، وإلا ؛ فجائز”যদি এটা প্রমাণিত হয় যে,মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়াল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, তাহলে বিড়াল বিক্রি অবৈধ,অন্যথায় তা বিক্রি করা জায়েয।(আল-মাজমূ খন্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২৬৯)।
.
ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:৭৯৫ হি:] বলেন:
” ومنهم من حمل النهي على ما لا نفع فيه كالبري ونحوه ، ومنهم من قال : إنما نهى عن بيعها لأنه دناءة وقلة مروءة ، لأنها متيسرة الوجود والحاجة إليها داعية ، فهي مرافق الناس التي لا ضرر عليهم في بذل فضلها ، فالشحُّ بذلك من أقبح الأخلاق الذميمة ، فلذلك زجر عن أخد ثمنها ”
“তাদের (আলেমদের) মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা করেছেন এমন বিড়ালগুলোকে উল্লেখ করে যার মধ্যে কোন উপকার নেই। যেমন স্থলে বিচরণশীল বন্য বিড়াল অথবা অনুরূপ আরো যা কিছু রয়েছে ইত্যাদি। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন যে এগুলো বিক্রি করা নিষিদ্ধ কারণ এগুলো বিক্রি করা হীনতা, নিকৃষ্টতা ও বদান্যতাহীন স্বভাব প্রকৃতির পরিচয় বহন করে। যেহেতু তা (বিড়ালগুলো) সহজলভ্য এবং আমাদের মাঝে খুব সহজেই পাওয়া যায়। সেহেতু প্রয়োজনাতিরিক্ত বিড়াল মানুষকে প্রদান করার ক্ষেত্রে অনুগ্রহের সহযোগিতা করে যা তাদের (মানুষের) উপর ক্ষতি করে না। আর এ ব্যাপারে কৃপণতা করা সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং নিন্দনীয় আচরণগুলির মধ্যে একটি। আর এই জন্য বিড়াল বিক্রি করা এবং তার মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।(জামিঊল ‘উলূম ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা: ৪১৮)
.
হাদিসের জগৎশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার ইমাম খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩৮৮ হি.) বলেন,
” إنما كُره … لأنه كالوحشي الذي لا يُملك قياده ، ولا يصح التسليم فيه ، وذلك لأنه ينتاب الناس في دورهم ويطوف عليهم فيها ، ثم يكاد ينقطع عنهم ، وليس كالدواب التي تربط على الأوادي ، ولا كالطير الذي يحبس في الأقفاص، وقد يتوحش بعد الأنوسة ويتأبد حتى لا يقرب ولا يقدر عليه. فإن صار المشتري له إلى أن يحبسه في بيته أو يشده في خيط أو سلسلة لم ينتفع به”.
“মূলত এটি মাকরূহ…(অপছন্দনীয়) কারণ এটি এমন বন্য প্রাণীর মতো যার পরিচালনা করার জন্য কোন মালিক নেই এবং এটি সরবরাহ (বিক্রি) করাও সম্ভব নয়। এটি এজন্য যে এটি মানুষদের বাড়িতে আসে এবং তাদের চতুর্পাশে ঘুরে বেড়ায়। অতঃপর কিছুক্ষণের জন্য মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর এগুলো ওই সকল চতুষ্পদের মতো না যেগুলো একটি অবস্থানস্থলে বাঁধা যেতে পারে কিংবা ও সকল পাখির মতো না যেগুলি খাঁচায় বন্দি থাকে। আর অবশ্যই তার সাথে মানুষের ঘনিষ্ঠের পরেও সে বন্য পশু হয়ে ফিরে যেতে পারে এমনকি এটি মরুভূমিতে এমন প্রান্তরে থাকতে পারে যে এটি মানুষের কাছাকাছি আসে না এবং তার ওপর কোন ক্ষমতা খাটানো যায় না। তাই ক্রেতার জন্য যদি এটিকে তার বাড়িতে দড়ি বা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় তাহলে তার কোনো লাভ/উপকার হবে না।”(মা’আলিমুস-সুনান: খন্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৩০)।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,
لا يجوز بيع القطط والقردة والكلاب وغيرها من كل ذي ناب من السباع؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن ذلك، وزجر عنه، ولما في ذلك من إضاعة المال، وقد نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن ذلكوبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والإفتاءالرئيس: عبدالعزيز بنعبدالله بن باز,نائب الرئيس: عبدالعزيز آل الشيخ,عضو: عبدالله بن غديان عضو: صالح الفوزان,عضو: بكر أبو زيد
“কুকুর, বিড়াল, বানর ইত্যাদি লম্বা দাঁত বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী বিক্রয় করা নিষিদ্ধ। কারণ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া এটি অর্থ-সম্পদ অপচয় /নষ্ট করার শামিল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।”
আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের উপর আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি চেয়ারম্যান ইমাম আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ্ বিন বায, ভাইস-চেয়ারম্যান শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ্ আলে-শাইখ, সদস্য আব্দুল্লাহ্ বিন শাইখ, আব্দুর রহমান আল-গাদইয়ান, শাইখ সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান, শাইখ বকর আবু যাইদ।(ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমা, ১৩ তম খণ্ড, পৃ. ৩৭ ফাতওয়া নং-১৮৫৬৪)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
اختلف العلماء في ذلك، فمنهم من أجازه، وحمل الحديث الذي فيه النهي على هرٍّ لا فائدة منه؛ لأن أكثر الهررة معتدٍ، لكن إذا وجدنا هرًّا مربى ينتفع به فالقول بجواز بيعه ظاهر؛ لأن فيه نفعاً “.
আলেমগণ এ (বিড়াল ক্রয় বিক্রয়) ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে বৈধ বলেছেন আর যে হাদিসগুলোতে বিড়াল ক্রয় বিক্রয় করতে নিষেধ করা হয়েছে সে হাদিসগুলোকে ব্যাখ্যা করে উপকারহীন বিড়ালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলেছেন। কারণ অধিকাংশ বিড়াল সীমালংঘনকারী (উপকারী হয় না)। কিন্তু যখন আমরা কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিড়াল পাব,যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়; তাহলে তা ক্রয় বিক্রয় করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে যে মতামত রয়েছে তা স্পষ্ট। কারণ এর মধ্যে কিছু উপকারিতা রয়েছে। (শারহুল মুমতি: খন্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১১৪)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন,إنما بيع القطط حرام لأن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن السنور: وهو الهر، وعن ثمن الكلب فهو حرام، ما تباع القطط ولا الكلاب.”বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম। কারণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়াল ও কুকুরের মূল্য গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং তা হারাম। বিড়াল কিংবা কুকুর ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না”।(https://www.alfawzan.af.org.sa/ar/node/14840)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে বিড়ালের ব্যবসা করা কিংবা বিড়াল ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ এই মর্মে কোরআন সুন্নায় সুস্পষ্ট কোন দলিল নেই। বরং এর বিপরীতে দলিল রয়েছে অর্থাৎ বিড়ালে ব্যবসা করা এবং তা ক্রয়-বিক্রয় করা নিষিদ্ধ। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তাছাড়া বিড়াল এমন একটি প্রাণী যার মালিকানা সাব্যস্ত হয় না এবং একে খাঁচাবন্দীও করা জায়েয নয়। এজন্য বিড়াল ব্যবসায়ী পণ্য না। বিড়াল পবিত্র, এটি মানুষের পাশেই ঘুরাঘুরি করে। আর কেউ যদি বিড়াল প্রতিপালন করতে চায় তাহলে বিড়াল বা অন্যান্য উপকারী প্রাণী প্রতিপালন করা জায়েজ। তবে তাদের যত্ন নিতে হবে এবং তাদের সময়মত খেতে ও পান করতে দিতে হবে। বিড়াল পালন করতে গিয়ে শরীয়তের বিধিবিধান পালনে অবহেলা করা যাবে না। প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বিড়াল প্রতিপালনের জন্য রাসূল (ﷺ) কর্তৃক ‘বিড়ালের পিতা’ উপাধি পেয়েছিলেন। আর إِنَّ أَحْسَنَ الحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ، وَأَحْسَنَ الهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ ﷺ “নিশ্চয়ই ‘সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী এবং সর্বোত্তম চরিত্র হচ্ছে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর চরিত্র’ (সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৮; সহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭)। আল্লাহ আমাদেরকে সিরাতাল মুস্তাকিম-এর পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
____________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।