বিধর্মীদের উৎসবগুলোতে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো কিংবা পূজা দেখতে যাওয়ার হুকুম

প্রশ্ন: বিধর্মীদের উৎসবগুলোতে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো কিংবা পূজা দেখতে যাওয়ার হুকুম কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য।শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর এখন বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের অনেক মুসলিম‌ ভাইয়েরা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তাদের পূজার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে, অনেকেই সহকর্মীর সাথে পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময় করছে, সেখানে সংগীত পরিবেশন করছে, আবার অনেকেই বিধর্মী সেলিব্রিটিদের ফেসবুক পোস্টে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অথচ কুরআন সুন্নাহ এবং আহলুস সুন্না’র ইজমা তথা ঐক্যমর্য অনুযায়ী ও অমুসলিম কাফের মুশরিকদের বাতিল ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হারাম এবং জঘন্য গুনাহ। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে এ বিধানটি উল্লেখ করেছেন।(আহকামু আহলিয যিম্মাহ” খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৬১) তাছাড়া আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্ব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন ক্বিয়ামতের পূর্বে তার উম্মতের মধ্যে থেকে একদল মুসলিম মূর্তি পুজা করবে। যেমন:
.
(১) ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৫৬ হি.] তাঁর সহিহ গ্রন্থের একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দেন এভাবে: بَابُ تَغْيِيرِ الزَّمَانِ حَتَّى تُعْبَدَ الأَوْثَانُ” “যামানা পরিবর্তন হওয়া; এমনকি মূর্তিপূজায় লিপ্ত হওয়া” শীর্ষক পরিচ্ছেদ। এরপর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস উল্লেখ করেন: তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ عَلَى ذِي الْخَلَصَةِ “কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ ‘যুল-খালাসার’ পাশে দাওস গোত্রের মহিলারা কোমর দুলিয়ে নাচবে।’’
(সহীহ বুখারীঃ ৭১১৬, সহীহ মুসলিমঃ ৭১৯০)।নোটঃ যুল-খালাসাহ হল দাওস গোত্রের মূর্তি। ইয়ামানের যুলখালাস নামক স্থানে দাওস বংশের এই মূর্তি ছিল, কোন বর্ণনায় এই স্থানের নাম তাবালাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞতার যুগে তারা এই মূর্তির ইবাদত করতো, সেখানে তাওয়াফ (চক্কর) দেয়া হতো।

(২) মুসলিমদের কোনো কোনো বংশ মূর্তি পূজা আরম্ভ করবে আর কিছু সংখ্যক মুশরিকদের সাথে মিলে যাবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আযাদকৃত দাস সাওবান রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,وَإِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِي أُمَّتِي لَمْ يُرْفَعْ عَنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَلَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تْحَقَ قَبَائِلْ من أُمَّتِي بِال مُشْرِكِين، “আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট ইমাম বা নেতাদেরকে ভয় করছি। অচিরেই আমার উম্মাতের কোনো কোনো গোত্র বা সম্প্রদায় প্রতিমা পূজায় লিপ্ত হবে, এবং আমার উম্মতের কতগুলো গোত্র মুশরিকদের সাথে যোগ দিবে।” সুনানে আবু দাউদঃ ৪২৫২, সুনানে ইবনু মাযাহঃ ৩৯৫২; শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

(৩) ক্বিয়ামতের পূর্বে ‘লাত’ ও ‘উজ্জার’ পূজা এমনভাবে শুরু হবে যেইভাবে জাহেলিয়াতের সুময় (অন্ধকার যুগে) প্রচলিত ছিল। আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “রাত ও দিন শেষ হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না লাত ও উযযা দেবতার পূজা আবার শুরু করা হবে। এ কথা শুনে আমি (আয়িশায়) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! পবিত্র ক্বুরআনে মহান আল্লাহ নাযিল করেছেন,“তিনি তাঁর রাসুলকে পাঠিয়েছেন হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে, সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সুরা আত-তাওবাঃ ৩৩)। এই আয়াত নাযিলের পর আমি (আয়িশাহ) তো মনে করেছিলাম যে, এ প্রতিশ্রুতি পূরন করা হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তা অবশ্যই হবে। তবে যতদিন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন ততদিন পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। অতঃপর তিনি এক মনোরম বাতাস প্রেরন করবেন। ফলে যাদের অন্তরে সরিষার দানা পরিমান ঈমান আছে তাদের প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। পরিশেষে যাদের মাঝে কোন কল্যাণ (অর্থাৎ, ঈমান) নেই তারাই শুধু বেঁচে থাকবে। অতঃপর তারা আবার পিতৃ-পুরুষদের ধর্মের (শির্কের) দিকে ফিরে যাবে।”(সহীহ মুসলিমঃ ৭১৯১ (৫২/২৯০৭)।
এছাড়াও প্রখ্যাত সাহাবী ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ২৩ হি.] বলেন:(لا تدخلوا على المشركين في كنائسهم يوم عيدهم فإن السخطة تنزل عليهم)”মুশরিকদের উৎসবের দিনে তোমরা তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না।কেননা তাদের উপর আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টি/গযব নাযিল হতে থাকে।”(ইমাম বায়হাকী সুনানুল কুবরা হা/১৮৮৯৩, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ, হা/২৬৬৮৫)
.
বিধর্মীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা এত জঘন্য গুনাহ হওয়ার কারণ হল এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও শুভেচ্ছা জানানো ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু,কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। আল্লাহ বলেন:إن تكفروا فإن الله غني عنكم ولا يرضى لعباده الكفر وإن تشكروا يرضه لكم “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام ديناً “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩] অতএব,কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক হুকুম একই।
.
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেন;

” وأما التهنئة بشعائر الكفر المختصة به فحرام بالاتفاق ، مثل أن يهنئهم بأعيادهم وصومهم ، فيقول: عيد مبارك عليك ، أو تهْنأ بهذا العيد ونحوه ، فهذا إن سلم قائله من الكفر فهو من المحرمات وهو بمنزلة أن يهنئه بسجوده للصليب بل ذلك أعظم إثماً عند الله ، وأشد مقتاً من التهنئة بشرب الخمر وقتل النفس ، وارتكاب الفرج الحرام ونحوه ، وكثير ممن لا قدر للدين عنده يقع في ذلك ، ولا يدري قبح ما فعل ، فمن هنّأ عبداً بمعصية أو بدعة ، أو كفر فقد تعرض لمقت الله وسخطه .”
“কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।” (আহকামু আহলিয যিম্মাহ” খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১৬১) তিনি রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন :

ولا يجوز للمسلمين حضور أعياد المشركين باتفاق أهل العلم الذين هم أهله . وقد صرح به الفقهاء من أتباع المذاهب الأربعة في كتبهم . . . وروى البيهقي بإسناد صحيح عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه أنه قال : (لا تدخلوا على المشركين في كنائسهم يوم عيدهم فإن السخطة تنزل عليهم) . وقال عمر أيضاً : (اجتنبوا أعداء الله في أعيادهم) . وروى البيهقي بإسناد جيد عن عبد الله بن عمرو أنه قال : (من مَرَّ ببلاد الأعاجم فصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك حشر معهم يوم القيامة)

“আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে মুসলমানদের জন্য মুশরিকদের উৎসবগুলোতে উপস্থিত হওয়া নাজায়েয। চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণ তাঁদের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন…।ইমাম বাইহাকী উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে ‘সহিহ-সনদ’ এ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “মুশরিকদের উৎসবের দিনে তোমরা তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কেননা তাদের উপর আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টি (আযাব) নাযিল হতে থাকে”। তিনি আরও বলেন: “তোমরা আল্লাহ্‌র শত্রুদেরকে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে এড়িয়ে চলবে”। ইমাম বাইহাকী আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর (রাঃ) থেকে ‘জায়্যিদ-সনদ’ এ বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বিধর্মীদের দেশে গিয়ে তাদের নওরোজ ও মেলা পালন করেছে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে কাটিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের সাথে তার হাশর হবে।”(আহকামু আহলিয যিম্মাহ্‌ খন্ড; ১ পৃষ্ঠা: ৭২৩-৭২৪)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

“لا يحل للمسلمين أن يتشبهوا بهم في شيء مما يختص بأعيادهم، لا من طعام ولا لباس ولا اغتسال ولا إيقاد نيران، ولا تبطيل عادة من معيشة أو عبادة أو غير ذلك. ولا يحل فعل وليمة ولا الإهداء ولا البيع بما يستعان به على ذلك لأجل ذلك، ولا تمكين الصبيان ونحوهم من اللعب الذي في الأعياد ولا إظهار الزينة.وبالجملة: ليس لهم أن يخصوا أعيادهم بشيء من شعائرهم، بل يكون يوم عيدهم عند المسلمين كسائر الأيام، لا يخصه المسلمون بشيء من خصائصهم.

“কোন মুসলমানের জন্য তাদের উৎসবের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুর ক্ষেত্রে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। যেমন খাবার দাবার, পোশাকাদি, গোসল, আগুন জ্বালানো অথবা এ উৎসবের কারণে কোন অভ্যাস বা ইবাদত বর্জন করা ইত্যাদি। এবং কোন ভোজানুষ্ঠান করা, উপহার দেওয়া, অথবা এ উৎসব বাস্তবায়নে সহায়ক এমন কিছু বেচাবিক্রি করা জায়েয নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবে শিশুদেরকে খেলতে যেতে দেওয়া এবং সাজসজ্জা প্রকাশ করা জায়েয নয়। মোটকথা, বিধর্মীদের উৎসবের নিদর্শন এমন কিছুতে অংশ নেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েয নয়। বরং তাদের উৎসবের দিন মুসলমানদের নিকট অন্য সাধারণ দিনের মতই। মুসলমানেরা এ দিনটিকে কোনভাবে বিশেষত্ব দিবে না”। (ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৯; পৃষ্ঠা: ১৯৩)
.
ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮) বলেন: “فإذا كان للنصارى عيد، ولليهود عيد، كانوا مختصين به، فلا يشركهم فيه مسلم، كما لا يشاركهم في شرعتهم ولا قبلتهم.”
.”খ্রিস্টানদের উৎসব বা ইহুদিদের উৎসব (অর্থাৎ অমুসলিম) যেটা তাদের সাথে খাস এমন কোন উৎসবে কোন মুসলমান অংশ গ্রহণ করবে না।যেমনিভাবে কোন মুসলমান তাদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলো ও কিবলাকে গ্রহণ করে না।(তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস, মাজাল্লাতুল হিকমা, খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৯৩)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,

لا يجوز لمسلم التعاون مع الكفار بأي وجه من وجوه التعاون في أعيادهم ، ومن ذلك إشهار أعيادهم وإعلانها ، ولا الدعوة إليها بأية وسيلة،سواء كانت الدعوة عن طريق وسائل الإعلام
،أو … .
“কোন মুসলিমের জন্য কাফেরকে তাদের উৎসব পালনে কোন ধরণের সহযোগিতা করা জায়েয নেই। এ ধরণের সহযোগিতার মধ্যে পড়বে তাদের উৎসবের প্রচার করা, বিজ্ঞাপন দেওয়া। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের দাওয়াত দেয়াও জায়েয নেই; সেটা যে মাধ্যমেই হোক না কেন, মিডিয়ার মাধ্যমে হোক কিংবা…।”(ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ-দায়িমা, খন্ড: ২৬; পৃষ্ঠা: ৪০৯)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হিজরী./১৯৯৯ খ্রি.], কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: একদল মুসলমান খ্রিস্টানদের সাথে তাদের (ধর্মীয়) উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ করে; এ ব্যাপারে আপনার দিক-নির্দেশনা কি?

জবাবে তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

لا يجوز للمسلم ولا المسلمة مشاركة النصارى أو اليهود أو غيرهم من الكفرة في أعيادهم ، بل يجب ترك ذلك ؛ لأن ” مَن تشبَّه بقوم فهو منهم ” ، والرسول عليه الصلاة والسلام حذرنا من مشابهتهم والتخلق بأخلاقهم ، فعلى المؤمن وعلى المؤمنة الحذر من ذلك ، ولا تجوز لهما المساعدة في ذلك بأي شيء لأنها أعياد مخالفة للشرع ، فلا يجوز الاشتراك فيها ، ولا التعاون مع أهلها ، ولا مساعدتهم بأي شيء لا بالشاي ولا بالقهوة ولا بغير ذلك كالأواني وغيرها ؛ ولأن الله سبحانه يقول : ( وتعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الإثم والعدوان واتقوا الله إن الله شديد العقاب ) فالمشاركة مع الكفرة في أعيادهم نوع من التعاون على الإثم والعدوان .

“কোন মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য ইহুদি-খ্রিস্টান কিংবা অন্য কোন বিধর্মীদের (কাফেরদের) উৎসবে যোগদান করা জায়েয নয়। বরং এগুলো বর্জন করা ফরয। কেননা “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই দলভুক্ত”।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা কিংবা তাদের বেশ ধরা থেকে সাবধান করেছেন। তাই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য হচ্ছে- এ ব্যাপারে সাবধান থাকা। এবং মুসলিম নর-নারীর জন্য এসব কাজে বিধর্মীদেরকে কোন ধরণের সহযোগিতা করা নাজায়েয। কেননা এসব উৎসব ইসলামী শরিয়ত বিরোধী। তাই এগুলোতে অংশগ্রহণ করা কিংবা তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া নাজায়েয। এমনকি চা, কপি, কিংবা অন্য কিছু যেমন পাত্র ইত্যাদি দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করা নাজায়েয। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা নেকী ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করা; পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কেউ কাউকে সহযোগিতা করবে না। আল্লাহ্‌কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কঠিন শাস্তিদাতা”।[সূরা মায়িদা, আয়াত: ২] বিধর্মীদের সাথে তাদের উৎসবে যোগ দেয়া পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করারই নামান্তর”।(ইমাম বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/৬; পৃষ্ঠা: ৪০৬)
.
পরিশেষে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে ধর্মীয়ভাবে শক্তিশালী করেন, ধর্মের ওপর অবিচল রাখেন, যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত বর্জন করার এবং নির্ভেজাল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার তাওফীক্ব দান করেন। সেই সাথে বাংলাদেশকে শিরক-বিদ‘আতমুক্ত তাওহীদ-সুন্নাতের দেশ হিসাবে কবুল করেন, নিশ্চয় তিনি শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)
শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা‌ চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

Share: