প্রশ্ন: বিদআত কাকে বলে? ইবাদতের কোনো অংশে বিদআত প্রবেশ করলে কি পুরো ইবাদতই বাতিল হয়? এই মাসালায় আহলে সুন্নাহ’র মানহাজ কী?
▬▬▬▬▬▬▬

▬▬▬▬▬▬



ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:বিদআত শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে “কোন কিছু পূর্ব নমুনা ছাড়া শুরু করা” এর গণ্ডিতে আবর্তিত হয়। এ অর্থে কুরআনে কারীমে এসেছে-আসমানসমূহ ও জমিন পূর্ব নমুনা ছাড়া সৃষ্টিকারী।(সূরা বাক্বারা, ২:১১৭) শরিয়তের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে: “মহান আল্লাহর মনোনীত দ্বীনে এমন কিছু চালু করা যার স্বপক্ষে কুরআন হাদীস কোন আম দলিল; কিংবা খাস দলিল প্রমাণ বহন করে না”শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:,مَا كَانَ مِنَ الْبِدْعِ فِي الدِّيْنِ الَّتِي لَيْسَتْ فِي الْكِتَابِ، وَلَا فِيْ صَحِيْح السُّنَّةِ، فَإِنَّهَا وَإِنْ قَالَهَا مَنْ قَالَهَا، وَعَمِلَ بِهَا مَنْ عَمِلَ لَيْسَتْ مَشْرُوْعَةٌ،”দ্বীনের মধ্যে সেটাই বিদ‘আত হিসাবে পরিগণিত, আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (ﷺ)-এর সহীহ সুন্নাতে যার অস্তিত্ব নেই। সেটা যেই বলুক না কেন এবং তার প্রতি যেই আমল করুক না কেন, তা শরী‘আতসিদ্ধ নয়।(ইবনু তায়মিয়াহ, আল-উবূদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৭২)
.
উদাহরণতস্বরূপ: বাংলাদেশে প্রচলিত বিদআতী যিকিরগুলো; যেমন শুধু ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ যিকির করা। কিংবা ‘হু’ ‘হু’ ‘হু’ যিকির করা। কিংবা সম্মিলিতভাবে এক সুরে যিকির করা, রাসূল ﷺ এর জন্মদিনকে ঈদ (উৎসব) হিসেবে উদযাপন করা ও এ ধরণের অন্যান্য উৎসব। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত পালন করা ইত্যাদি এগুলো সবই ধর্মের মধ্যে নতুন ও নব-প্রবর্তিত; যার দ্বারা আল্লাহ্র ইবাদত পালনের উদ্দেশ্য করা হয়। এ ধরণের আমলের পক্ষে না আছে খাস কোন দলিল; আর না আম কোন দলিল। যাকে উসুলুল ফিকহ-এর পরিভাষায় বলা হয় ‘আল-মাসালিহ আল-মুরসালাহ’। সুতরাং এ ধরণের আমল বিদআত।(বিস্তারিত জানতে দেখুন আল-ইতিসাম খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৭-৩৯)।
.

.
প্রত্যেক মুসলিমের যাবতীয় ইবাদতগুলো আল্লাহ্র কাছে কবুল হওয়া এবং বান্দা এর সওয়াবপ্রাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে দুটো শর্ত পরিপূর্ণ হতে হবে:
.

.
মহান আল্লাহ বলেন, অথচ তাদেরকে এই আদেশই দেওয়া হয়েছিল যে, অন্য সব (ধর্ম) থেকে বিমুখ হয়ে দ্বীনকে আল্লাহ্র জন্য একনিষ্ঠ করে তারা আল্লাহ্র ইবাদত করবে।”[সূরা বাইয়্যেনা, আয়াত: ৫] ইখলাস (একনিষ্ঠতা) মানে: বান্দার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সকল বচন ও কর্মের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ্র সন্তষ্টি অন্বেষণ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,”তার কাছে কারো এমন কোন অনুগ্রহ থাকে না, যার প্রতিদান দিতে হবে(অর্থাৎ সে কারো কাছ থেকে এরকম কোন অনুগ্রহ পেতে চায় না), সে শুধু তার সুউচ্চ প্রভুর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে”।(সূরা লাইল, আয়াত: ১৯-২০) মহান আল্লাহ আরো বলেছেন, আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমাদেরকে খাওয়াই আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা চাইনা।(সূরা ইনসান, আয়াত: ৯] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন, “যে ব্যক্তি পরকালের ফসল (পুরস্কার) চায় তার জন্য আমি তার ফসল বাড়িয়ে দেই, আর যে ইহকালের ফসল চায় তাকে আমি তা থেকে (কিছু) দিয়ে দেই।আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না”।[সূরা শূরা, আয়াত: ২০] তিনি আরও বলেন, “যারা দুনিয়ার জীবন ও চাকচিক্য চায় আমি তাদেরকে সেখানে তাদের কাজের পুরোপুরি ফল দিয়ে থাকি, সেখানে তাদেরকে (কোন কিছু) কম দেওয়া হবে না। ওদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছু নাই। এখানে তারা যা কিছু করেছে তা নিষ্ফল হয়েছে এবং তারা যেসব কাজ করত তা বাতিল।[সূরা হুদ, আয়াত: ১৫-৬] উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে তিনি বলেন, আমলসমূহের শুদ্ধাশুদ্ধি কেবল নিয়তের উপরই নির্ভর করে প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার প্রাপ্য। অতএব,যার হিজরত হবে দুনিয়া পাওয়ার উদ্দেশ্যে কিংবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে তাহলে সে যে উদ্দেশ্যে সফর করেছে সে উদ্দেশ্যেই তার হিজরত পরিগণিত হবে।(সহিহ বুখারী; ওহীর সূচনা/১) সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:”আমি শির্ককারীদের শির্ক (অংশ) থেকে সর্বাধিক অমুখাপেক্ষী।যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যে আমলে সে আমার সাথে অন্যকেও অংশীদার করে আমি সেই ব্যক্তিকে ও সেই ব্যক্তির আমল প্রত্যাখ্যান করি।”(সহিহ মুসলিম, (আয্-যুহদ ওয়ার রাকায়েক/৫৩০০)
.

.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সুন্নাহ ও আদর্শ অনুসরণ করার এবং এ দুটোকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তোমাদের উপর আবশ্যক আমার সুন্নাহ অনুসরণ করা এবং আমার পরে সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ্ অনুসরণ করা। তোমরা এটাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধর।” তিনি বিদআত থেকে সাবধান করে বলেছেন,”তোমরা নব
চালুকৃত বিষয়াবলী থেকে বেঁচে থাক। কেননা প্রত্যেক বিদআত পথভ্রষ্টতা”।(সুনানে তিরমিযি হা/২৬০০) ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেছেন: আল্লাহ্ তাআলা ইখলাস ও অনুসরণকে আমল কবুলের দুটো হেতু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যদি কোন একটি হেতু না পাওয়া যায় তাহলে সে আমল কবুল হবে না।( ইবনু কাইয়ুম; আর-রূহ; ১/১৩৫) আল্লাহ্ তাআলা বলেন,”যিনি মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য; তোমাদের মধ্যে কে আমলে ভাল।” ফুযাইল (রহঃ) বলেন: আমলে ভাল অর্থাৎ আমলটি অধিকতর ইখলাসপূর্ণ ও অধিকতর শুদ্ধ।(বিস্তারিত দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪২৫৮)
.

.
এ বিষয়ে কথা হচ্ছে, মানুষ বিদআত করলে কিংবা মানুষের আমলে বিদআত প্রবেশ করলে সম্পন্ন আমলই বাতিল হবে কিংবা বিদআতির কোন আমলই কবুল হবেনা, এই মর্মে যতগুলো দলিল পাওয়া যায় তার সবই জাল-জয়ীফ একটিও বিশুদ্ধ নয়। উদাহরণস্বরূপ: হুযায়ফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ বিদ‘আতী ব্যক্তির সওম, সলাত, যাকাত বা দান-খয়রাত, হাজ্জ,উমরাহ, জিহাদ, ফিদ্য়া, ন্যায়বিচার ইত্যাদি কিছুই কবূল করবেন না। সে ইসলাম থেকে এমনভাবে খারিজ হয়ে যায় যেভাবে আটা থেকে চুল টেনে বের করা হয়।(ইবনে মাজা হা/৪৯) তাহক্বীক:হাদিসটির সনদ জাল কারণ উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন মিহসান সম্পর্কে ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন তাঁকে মিথ্যুক বলেছেন। ইমাম বুখারী বলেন মুনকিরুল হাদিস। আবু হাতীম রাযী তাঁকে মাজহুল ও মিথ্যুক বলেছেন। ইবনু আদী বলেন তিনি একাধিক হাদিস বানোয়াটভাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ হাদিসের বিপরীতে হাদিস বানিয়ে বর্ণনা করেন।(যঈফ তারগীব তারহীবহস/ ৪০, সিলসিলা যঈফা হা/১৪৯৩) অপর বর্ননায় আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা বিদ‘আতী ব্যক্তির নেক আমাল কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তার বিদ‘আত পরিহার করে।(ইবনে মাজা হা/৫০) তাহক্বীক: সনদ জয়ীফ, কারণ উক্ত হাদিসের রাবী ১. আবু যায়দ সম্পর্কে আবু যুররাহ আর-রাবী বলেন, আমি তাঁকে চিনি না। ইমাম যাহাবী বলেন তিনি মাজহুল। ২. আবুল মুগীরাহ সম্পর্কে আবু যুররাহ রাবী বলেন, আমি তাঁকে চিনি না। ইমাম যাহাবী বলেন তাকে কেউ চিনেন না।(সিলসিলা জয়ীফা হা/১৪৯২)
.
উল্লেখ যে, কিছু মানুষ প্রখ্যাত সাহাবী আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৪০ হি.]-এর হাদিসে যা উল্লেখ আছে তা দেখে বিভ্রান্ত হতে পারে, যে, রাসূল ﷺ এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে বলেছেন যারা মদিনায় বিদআত প্রবর্তন করে,আর আল্লাহ্ তা‘আলা তার ফরজ, নফল কোন ‘ইবাদাতই কবূল করবেন না।(সহীহ বুখারী হা/৭৩০০; সহীহ মুসলিম হা/১৩৭৯) অপর বর্ননায় আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন: “মদিনা হচ্ছে- হারাম (পবিত্রস্থান)। যে ব্যক্তি মদিনাতে কোন অন্যায় করবে কিংবা কোন অন্যায়কারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লানত, ফেরেশতাদের লানত এবং সকল মানুষের লানত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোনো ফরয কিংবা নফল আমল কবুল করবেন না।”[সহিহ বুখারী হা/১৮৬৭; ও সহিহ মুসলিম হা/১৩৭০) অনুরূপ একদল তাবিঈন থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেমন হাসান বসরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আল্লাহ তা’য়ালা বিদআতকারী ব্যক্তির সিয়াম, স্বলাত, হজ্জ কিংবা উমরা বিদআত পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত কবুল করেন না।(আল-আ-জুরী: আশ-শারীয়া’হ: পৃষ্ঠা: ৬৪, আবু শামাহ: আল-বায়িসু আলা ইনকারিল-বিদায়ি ওয়াল হাওয়াদিস: পৃষ্ঠা: ১৬)। আরো অনেকেই বর্ণনা করেছেন।আবার অনুরূপ আওযায়ী থেকে বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি (ইবনে ওয়াজ্জাহ: আল-বিদায়ি ওয়ান-নাহয়ী আনহা: পৃষ্ঠা: ২৭) গ্রন্থে এসেছে এবং ফুযাইল বিন ইয়ায হতে বর্ণিত তিনি বলেন:- ” لا يرفع لصاحب بدعة إلى الله عمل ” আল্লাহর নিকট কোন বিদআত কারীর আমল পেশ করা হবে না”। (শারহু উসুলি ই’তিক্বাদি আহলিস-সুন্নাহ ওয়াল জামাআত: ইমাম লালাকায়ী: খন্ড:১, পৃষ্ঠা: ১৩৯) এই হাদীসগুলো সম্পর্কে একদল আলেম বলেছেন, এখানে সকল বিদআতি উদ্দেশ্য নয়, আলেমগণ এই হাদীসের উপর মন্তব্য করেছেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:আল্লাহ তার কোন ফরজ বা নফল ইবাদত কবুল করবেন না”। দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন,ইমাম ক্বাযী (ইয়ায) (রহ.) বলেন: আর বলা হয়েছে যে, অর্থ হল তার ফরজ এবং তার নফল সন্তুষ্ট সহকারে গ্রহণযোগ্য হবে না। যদিও প্রতিদান স্বরূপ গৃহীত হয়। আরো বলা হয়ে থাকে, এখানে কবুল হওয়ার অর্থ হলো মূলত ঐ দুটির মাধ্যমে পাপ মোচন করার অর্থে ব্যবহৃত”।(নববী শরহ মুসলিম খন্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ১৪১)
.
ইমাম শাতিবি (রাহিমাহুল্লাহ) এই ধরনের হাদিস ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে দুটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,
” إما أن يراد: أنه لا يقبل له بإطلاق، على أي وجه وقع من وفاق سنة أو خلافها.
وإما أن يراد: أنه لا يقبل منه ما ابتدع فيه خاصة، دون ما لم يبتدع فيه.
فأما الأول: فيمكن على أحد أوجه ثلاثة:
الأول: أن يكون على ظاهره من أن كل مبتدع أي بدعة كانت فأعماله لا تقبل معها، داخلتها تلك البدعة أم لا، وهذا شديد جدا على أهل الإحداث في الدين.
الثاني: أن تكون بدعته أصلا يتفرع عليه سائر الأعمال: كما إذا ذهب إلى إنكار العمل بخبر الواحد بإطلاق، فإن عامة التكليف مبني عليه.
الوجه الثالث: أن صاحب البدعة في بعض الأمور التعبدية أو غيرها قد يجره اعتقاد بدعته الخاصة إلى التأويل الذي يُصَيِّرُ اعتقاده في الشريعة ضعيفا، وذلك يبطل عليه جميع عمله.
وأما الثاني: وهو أن يراد بعدم القبول لأعمالهم ما ابتدعوا فيه خاصة، فيظهر أيضا، وعليه يدل حديث: (كل عمل ليس عليه أمرنا فهو رد) “
“যা বুঝানো হয়েছে তা হল: (১) হয়তো এর অর্থ এই যে, ‘সাধারণভাবে তার কোন আমলই ক্ববুল করা হবে না, যে কোন উপায়ে ঘটুক না কেন, তা সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হোক অথবা এর বিপরীত হোক”। (২) অথবা এর অর্থ এই যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট করে শুধু তার ঐ আমলটা ক্ববুল করবেন না, যেটা বিদ‘আতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে যে আমলে বিদ‘আত নেই সেটি ক্ববুল হতে পারে।প্রথম অর্থের ক্ষেত্রে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে:
.
প্রথমত: এর সরল অর্থ এই যে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো প্রকার বিদআত চালু করে, তাহলে তার সব কাজই বাতিল হয়ে যায়। বিদআত তার কর্মে সরাসরি প্রভাব ফেলুক বা না ফেলুক। এটি বিদআত প্রচলনকারীদের জন্য অত্যন্ত কঠোর একটি বিধান।
.
দ্বিতীয়ত: বিদআতটি এমন একটি মূল বিশ্বাস যা তার অন্যান্য সমস্ত কর্মের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। যেমন যদি কেউ একক বর্ণনার (খবর আহাদ) প্রমাণ মানতে অস্বীকার করে, তবে এটি এমন একটি মতবাদ যা অধিকাংশ শরীয়তের বিধান অস্বীকার করার পথে নিয়ে যায়।
.
তৃতীয়ত: কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিদআত গ্রহণ করে, তবে সেটি তাকে এমন এক বিশ্বাস বা দৃষ্টিভঙ্গির দিকে পরিচালিত করে যা তার শরীয়তের উপর আস্থা দুর্বল করে দেয়। এর ফলে তার সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যায়।
.
আর দ্বিতীয়টি এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: তার যে সমস্ত আমলের মাঝে বিদআত সংঘটিত হয়েছে সে আমলগুলো কবুল হবে না। এটি একটি বাস্তব ব্যাখ্যা হতে পারে। এই অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে যা রাসূল ﷺ এর বানী দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে: তিনি বলেন:- كل عمل ليس عليه أمرنا فهو رد “এমন প্রত্যেক আমল যার প্রতি আমার আদেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”।(আল-ই’তিসাম: খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৮,১১২)।
.
لا يرفع لصاحب بدعة إلى الله عمل ‘বিদ’আতীর কোন আমল আল্লাহর দরবারে উত্থাপন করা হবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না’ (শারহু উছলি ই’তিক্বাদী আহলিস সুন্নাহ, ১/১৩৯ পৃ.)। এই মাসআলার প্রকৃত বাস্তবতা গবেষণা করে মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নাবাউয়ীর মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মানীয় ইমাম ও খতিব, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর কিতাব ” মাওকিফ আহলিস সুন্নাহ মিন আহলিল-আহওয়া ওয়াল-বিদা গ্রন্থে” বলেছেন :
” ما دلت عليه ظواهر النصوص وكلام السلف من أن صاحب البدعة لا يقبل الله له عملا ، يمكن حمله على الأوجه التالية :
الوجه الأول : أن الكلام على ظاهره ، وأن المراد رد عمل المبتدعِ كلِّه ، ما ابتدع فيه وما لم يبتدع فيه ، وهذا في حق المبتدع الكافر لا غير .
الوجه الثاني : أن المراد رد العمل المبتدَع خاصة ، سواء كان ابتداعا محضا ، أو كان شرعيا دخل عليه الابتداع فأفسده .
الوجه الثالث : إحباط البدع أجر العمل على سبيل الجزاء ، حتى كأنه لم يقبل .
الوجه الرابع : أن النصوص محمولة على الزجر عن الابتداع والتنفير منه .
والحامل لتوجيه النصوص وكلام السلف هنا هو ما يظهر من معارضة ظواهر هذه النصوص لأصول الشريعة الدالة على قبول عمل المسلم إذا توفر فيه شرطا الإخلاص والمتابعة ، دون النظر إلى ما عليه صاحب العمل من ابتداع ومعصية في غيره من الأعمال ، إذ لا تأثير لها على قبول ذلك العمل “
“স্পষ্ট নস তথা প্রকাশ্য দলীল এবং সালাফে সালিহীনের মন্তব্য থেকে এটিই প্রমাণিত হয় যে, বিদ’আতীর কোন আমল আল্লাহ তা’আলা কুবুল করবেন না। এটি নিম্মোক্ত ৪ টি ব্যাখ্যাগুলোর উপর বা দিকগুলোর উপর নির্ভর করে। যথা:
প্রথমত: বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে বিদ’আতীর সমস্ত আমল পরিত্যাজ্য। যেগুলোর মধ্যে বিদ’আত আছে এবং যেগুলোর মধ্যে বিদ’আত নেই, সবটাই পরিত্যাজ্য। এই বিধানটি তখনই প্রযোজ্য যখন শুধু ‘বিদ’আতে মুকাফিফরাহ-এর জন্য। অর্থাৎ যারা ঈমানবিরোধী বা কুফরী প্রকারের বিদআতে জড়িত অন্য কারোর জন্য নয়।
দ্বিতীয়ত: এর উদ্দেশ্যে হল নির্দিষ্টভাবে যে আমলে বিদআত প্রবেশ করেছে শুধুমাত্র সেই আমলটা অগ্রহণযোগ্য হবে। অর্থাৎ শারঈ কোন আমলে বিদ’আত প্রবেশ করলেই সেটি বাতিল হিসাবে পরিগণিত হবে।
তৃতীয়ত: বিদ’আতকে নিরুৎসাহিত ও বিফল করণার্থে শাস্তিস্বরূপ বিদ’আতীর আমলের নেকিকে বিনষ্ট করা হয়, এমনকি এটি গ্রহণ করাই হয় না।
চতুর্থত: উল্লেখিত নস তথা দলীলগুলোর দ্বারা বিদ’আতীদের বিদ’আত থেকে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর থেকে আতঙ্কিতকরণ করা হয়েছে। শারঈ দলীল এবং সালাফে সালিহীনের মন্তব্যের ভিত্তিতে এটিই প্রমাণিত হয় যে, কোন মুসলিম ব্যক্তির আমল কবুল হওয়ার জন্য দুইটি শর্ত পূরণ হতে হবে তা হল: (১) ইখলাছ তথা নিয়ত সৎ ও খাঁটি হওয়া। (২) সুন্নাতের অনুগত্য।অর্থাৎ আমলটি সুন্নাহর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া। অন্য আমলের ক্ষেত্রে বিদআত বা অন্য কোনো গুনাহের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, যদি নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী আমলটি করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে বাধা প্রাপ্ত হবে না। অর্থাৎ অন্যান্য ভালো কাজগুলোও নষ্ট হবে না”।(মাওকিফ আহলিস সুন্নাহ মিন আহলিল-আহওয়া ওয়াল-বিদা’খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ২৯২-২৯৩; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতওয়া নং-১০৭২৮৬)।
.
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, বিদ‘আতে মুকাফ্ফিরা (কুফরি বিদআত) এর মধ্যে লিপ্ত ব্যক্তির আমল আল্লাহর নিকট ক্ববুল হয় না এবং বিদ‘আতে মুকাফ্ফিরা ছাড়া অন্য কোন শারঈ ইবাদতের মধ্যে অতিরিক্ত কোন কিছু বৃদ্ধি করে ইবাদত করলে, আসল ইবাদত বাতিল হবে না; বরং শুধু সেই অতিরিক্ত অংশই বাতিল হয়ে যাবে, যদি অতিরিক্ত অংশ আসল ইবাদতের বিপরীত না হয়। মোটকথা শরী‘আত অনুমোদিত কোন ইবাদতের মধ্যে প্রচলিত অতিরিক্ত নতুন আমল, যে আমলের ব্যাপারে শরী‘আতে কোন প্রমাণ উল্লেখিত হয়নি; তা আসল ইবাদতকে বিনষ্ট করে না। তবে অতিরিক্ত প্রচলিত নতুন আমলটি প্রত্যাখ্যাত হবে। কেননা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে,আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যে ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই,তা প্রত্যাখ্যাত”। (সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৫১১)
উদাহরণস্বরূপ: সালাতের বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠের সময় ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুল তাশাহ্হুদ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিংবা সলাতের সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যন্ত ইশারা করা শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত। যেমন হাদীসে এসেছে, ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন إِذَا قَعَدَ فِى التَّشَهُّدِ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَىْ عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَىْ وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَىْ عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَىْ وَعَقَدَ ثَلَاثًا وَخَمْسِيْنَ وَأَشَارَ بِالسَّبَابَةِ “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসতেন, বাম হাতকে বাম জানুর উপর এবং ডান হাতকে ডান জানুর উপর রাখতেন। এসময় তিনি তিপ্পান্নর (৫৩) মত আঙ্গুল একত্রিত করতেন এবং তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।(সহীহ মুসলিম হা/৫৮০; মিশকাত, হা/৯০৬)। উক্ত হাদীসে وَأَشَارَ بِالسَّبَابَةِ ‘তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন’ অংশটুকুর সীমা বর্ণনায় মুহাদ্দিসগণের ঐকমত্য হল- বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিনানোর পূর্ব পর্যন্ত ইশারা করতে হবে।(মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাশাবীহ (ভারত: ইদারাতুল বুহূছিল ‘ইলময়্যিাহ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ৩য় সংস্করণন ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২৯) অথচ এই শরী‘আতসিদ্ধ আমলের মধ্যে অতিরিক্ত নতুন আকারে যেটা ঢুকেছে, তাহল- সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, ‘তাশাহ্হুদ’-এর ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠানো এবং ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামানো। অথচ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।(আল-খাত্বীব আত-তিবরীজী, মিশকাতুল মাশাবীহ, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ২য় সংস্করণ, ১৩৯৯ হি./১৯৮৯ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৫, হা/৯০৬-এর টীকা-২ দ্র) অতএব মূলনীতির আলোকে নতুন প্রবিষ্ট হওয়া বিদ‘আতী আমলের মাধ্যমে শরী‘আতসিদ্ধ আমলের পদ্ধতি বাতিল হবে না, বরং নতুন অতিরিক্ত আমলটি প্রত্যাখ্যাত হবে। যেমনটি তাশাহ্হুদে ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠানো এবং ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামানোর পদ্ধতিটা বাতিল হবে। কেননা এর স্বপক্ষে শরী‘আতের কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। এ প্রসঙ্গে ইমাম হাফিয যাইনুদ্দীন আবুল ফারজ ‘আব্দুর রহমান বিন শিহাব—যিনি ইবনু রজব -হাম্বালী বাগদাদী নামে প্রসিদ্ধ—রাহিমাহুল্লাহ [জন্ম: ৭৩৬ হি.মৃত: ৭৯৫ হি:] বলেছেন,
وإنْ كان قد زاد في العمل المشروع ما ليس بمشروع فزيادته مردودةٌ عليه بمعنى أنَّها لا تكونُ قربةً ولا يُثابُ عليها ولكن تارة يبطُلُ بها العمل من أصله فيكون مردوداً كمن زاد في صلاته ركعةً عمداً مثلاً وتارةً لا يُبطله ولا يردُّه من أصله كمن توضأ أربعاً أربعاً أو صام الليل مع النهار وواصل في صيامه
“শরী‘আতের মধ্যে যদি কোন আমল বৃদ্ধি করা হয়, আর সে ব্যাপারে শরী‘আতের কোন অনুমোদন না থাকে, তাহলে ঐ অতিরিক্ত আমলটি প্রত্যাখ্যাত হবে। অর্থাৎ সেটা মহৎ কাজ হয় না এবং তার মাধ্যমে সওয়াবও অর্জন হয় না। বরং কখনো কখনো এর দ্বারা প্রকৃত আমল বাতিল হয়ে যায়। সুতরাং তা প্রত্যাখ্যাত। যেমন কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তার সালাতের রাক‘আত সংখ্যা বৃদ্ধি করে। আবার কখনো কখনো আমলের মৌলিকত্বকে নষ্ট করে না এবং প্রত্যাখ্যানও করে না। যেমন কেউ চারবার চারবার করে ওযূ করে অথবা দিনের সাথে সাথে সিয়াম রাখে এবং সে সিয়াম অব্যাহত রাখে”।(ইবনু রজব,জামিঊল উলূম ওয়াল হিকাম (বৈরূত: দারুল মা‘আরিফাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হি.), পৃষ্ঠা: ৬০)
.
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বিদ‘আতে মুকাফ্ফিরা এর মধ্যে লিপ্ত ব্যক্তির আমল আল্লাহর নিকট ক্ববুল হয় না। মহান আল্লাহর দরবারে ইবাদত ক্ববুলের অন্যতম একটি শর্ত হল রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী ইবাদত করা। যখন ইবাদত সুন্নাত পরিপন্থী হয় তখন তা বিদ‘আতী আমলে পরিণত হয়, যা আল্লাহ তা‘আলার নিকটে ক্ববুল হয় না। যদিও মানুষ সেই আমলকে অত্যন্ত ভাল মনে করেই পালন করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قُلۡ ہَلۡ نُنَبِّئُکُمۡ بِالۡاَخۡسَرِیۡنَ اَعۡمَالًا- اَلَّذِیۡنَ ضَلَّ سَعۡیُہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ ہُمۡ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّہُمۡ یُحۡسِنُوۡنَ صُنۡعًا‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে সংবাদ দিব? ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে”।(সূরা আল-কাহ্ফ: ১০৩-১০৪) আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি আবহা, সৌদি আরব।