প্রশ্ন: ফিতরা পাওয়ার হকদার কারা? অনেকে বলেন হাদীসে তো শুধু মিসকীনদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সুতরাং এর বাহিরে ফকিরকেও ফিতরা দেওয়া যাবে না! এই বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর যাকাতুল ফিতরের প্রকৃত হকদার কারা এটি শুধুমাত্র ফকির -মিসকীনকে দিতে হবে নাকি কুরআনে উল্লেখিত আট শ্রেণীর মাঝে কি ফিতরা বণ্টন করা যাবে, এই মাসালায় আলেমের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি প্রসিদ্ধ মত পাওয়া যায়।
.
(১). জমহুর আলেমদের মতে ফিতরা বণ্টন করার খাত ও সম্পদের যাকাত বণ্টন করার খাত অভিন্ন।অর্থাৎ ফিতরা যাকাতের মতোই আট শ্রেণির প্রাপ্যদের মধ্যে বণ্টিত হবে এ মতের পক্ষে দলিল হলো সূরা আত-তাওবাহ’র ৬০ নং আয়াত। এতে বলা হয়েছে যে সাদাকাহ, অর্থাৎ যাকাত, নির্দিষ্ট আট শ্রেণির মানুষের জন্য নির্ধারিত। যেহেতু ফিতরাও এক প্রকার সাদাকাহ বা দান এবং যেহেতু এটি যাকাতের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই এটিও যাকাতের মতো ওই আট শ্রেণির মধ্যে বিতরণ করা হবে।এটি হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বালী মাযহাবসহ অধিকাংশ ওলামাদের মত।(আসনাল মাতালিব; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪০২ এবং কিতাবুল ফিক্বহি ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ, পৃষ্ঠা: ৩৩৯)।
.
(২). ফিতরা গ্রহণের যোগ্য একমাত্র ফকির ও মিসকীন। অর্থাৎ এটি যাকাতের মতো আট শ্রেণিতে বিভক্ত হবে না। কারণ, ফিতরা যাকাতের অনুরূপ নয়; বরং এটি ফরজ করা হয়েছে মূলত মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থা হিসেবে। সুতরাং এটি গরীব-মিসকীনদের জন্য খাস। দলিলের আলোকে এটিই বিশুদ্ধ মত। এই মতের পক্ষে রয়েছেন, মালেকি মাযহাবের ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বলের দুটি মতের একটি মত, শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া ও প্রিয় ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ইমাম বিন বায,ইবনু উসাইমীন, ইমাম আলবানী, শাইখ সালেহ আল ফাওযানসহ বহু বিশিষ্ট ফকিহ এ মতকে সমর্থন করেছেন। এই মতটি গ্রহণযোগ্য তার কারন হচ্ছে,রাসূল ﷺ মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফিতরাকে ফরজ করেছেন। তিনি অন্য কোনো খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য ফিতরাকে ফরজ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,فَرَضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الفِطرِ طُهرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعمَةً لِلمَسَاكِينِ.“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রোজা অবস্থায় কৃত অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণ থেকে রোজাদারকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এবং মিসকীনদের আহারের সংস্থান করার জন্য ফিতরাকে ফরজ করেছেন।”(আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; হাদিসটি হাসান) সুতরাং এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ফিতরা কেবল ফকির-মিসকীনকে দিতে হবে, অন্য কোনো খাতে দেওয়া যাবে না। এছাড়াও ফিতরা অনেকটা কাফ্ফারার মতোই এক প্রকার পবিত্রতা দানকারী ইবাদত। রাসূল ﷺ এটি ফরজ করেছেন, যেন রোজাদার রোজা রাখার সময় যদি কোনো অনর্থক কথা বা অশালীন আচরণ করে থাকে, তাহলে ফিতরার মাধ্যমে তা পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং ফিতরার খাদ্য কেবল তাদেরই দেওয়া উচিত, যারা কাফফারা গ্রহণের অধিকারী। আর এটি সুস্পষ্ট যে, কাফফারা গ্রহণের অধিকার কেবল ফকির ও মিসকীনেরই রয়েছে।(সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ,খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৫] এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল এ সদকাটা মিসকীনদেরকে দেওয়া। তিনি মুটে মুটে আট শ্রেণীর মাঝে ভাগ করতেন না এবং সে নির্দেশও দেননি। এবং কোন সাহাবীও এমন কাজ করেননি। সাহাবীদের পরেও কেউ করেননি। বরং আমাদের কাছে দুটো অভিমতের একটি হচ্ছে মিসকীন ছাড়া অন্যদের মাঝে ফিতরা বণ্টন করা নাজায়েয। এ অভিমতটি আট শ্রেণীর মাঝে ভাগ করে দেওয়ার অভিমতের চেয়ে অগ্রগণ্য।”(বিস্তারিত জানতে দেখুন; ইবনু ক্বাইয়্যিম; যাদুল মা‘আদ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২১)।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,وَلَا يَجُوزُ دَفْعُ زَكَاةِ الفِطْرِ إِلَّا لِمَن يَسْتَحِقُّ الكَفَّارَةُ، وَهُو مَن يَأْخُذُ لِحَاجَتِهِ لَا فِي الرِّقَابِ وَالمُؤَلَّفَةِ وَغَيرِ ذَلِكَ.“ফিতরার যাকাত কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিকে দেওয়া বৈধ, যে কাফফারা গ্রহণের উপযুক্ত (অর্থাৎ ফকির ও মিসকীন)। আর সে-ই তো মিসকীন, যে তার নিজের প্রয়োজনের কারণে (ফিতরা) গ্রহণ করে। এটি দাস মুক্তকরণ, মুআল্লাফাতুল কুলূব (যাদের হৃদয় ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়) ও অন্যান্য খাতে প্রদান করা যাবে না।”
(ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-ইখতিয়ারাত; পৃষ্ঠা: ২৮২) বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,ومصرفها الفقراء والمساكين. لما ثبت عن ابن عباس
رضي الله عنهما قال: «فرض رسول الله ﷺ زكاة الفطر طهرة للصائم من اللغو والرفث وطعمة للمساكين».
“ফিতরা বণ্টনের খাত হচ্ছে গরীব, মিসকীন। যেহেতু ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিতরা ফরয করেছেন অনর্থক কথা-কাজ ও যৌনালাপ থেকে রোযাদারকে পবিত্র করাস্বরূপ এবং মিসকীনদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থাস্বরূপ।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০২) বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে ফিতরা বণ্টনের খাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,ليس لها إلا مصرف واحد وهم الفقراء، كما في حديث ابن عباس رضي الله عنهما قال: «فرض رسول الله ﷺ زكاة الفطر طهرة للصائم من اللغو والرفث وطعمة للمساكين».”ফিতরার কেবল একটি মাত্র খাত রয়েছে, আর তা হচ্ছে,ফকির ব্যক্তিবর্গ। যেমন ইবনু ‘আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন:‘আল্লাহর রাসূল ﷺ রোজাদারের অনর্থক কথা ও অশালীন আচরণ থেকে তাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এবং অভাবগ্রস্তদের খাদ্যের সংস্থান করার জন্য ফিতরা সদকা ফরজ করেছেন।’”(আবু দাউদ, হা/১৬০৯; ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ২৫৯) সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা একথা পরিস্কার যে, ফিতরা শুধুমাত্র ফকির মিসকিন এই দুই শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের জন্য।
.
এবার দেখবো যারা ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত হাদিসের ভিত্তিতে বলেন, ফিৎরা একমাত্র মিসকিনকে দিতে হবে। এর বাইরে ফকিরকেও দেয়া যাবেনা তাদের বক্তব্য কতটুকু সঠিক!
.
যারা বলেন ফিতরা শুধুমাত্র মিসকিনদের জন্য ফকির কে দেওয়া যাবে না তাদের ফাতওয়া সঠিক নয়। বরং বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে ফিতরা ফকির ও মিসকীন উভয় শ্রেনীর মধ্যেই বন্টন করা জায়েজ। আলেমগন বলেছেন; যখন কেবল “ফকির” শব্দটি উল্লেখ করা হয়, তখন সেটি “মিসকিন”-কেও অন্তর্ভুক্ত করে। আবার যখন কেবল “মিসকিন” শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তখন সেটি “ফকির”-কেও শামিল করে। তবে যখন উভয় শব্দ একত্রে ব্যবহৃত হয়, তখন তাদের অর্থ পৃথক হয়। সেক্ষেত্রে “ফকির” দ্বারা বোঝানো হয় সেই ব্যক্তি, যিনি “মিসকিন”-এর তুলনায় আরও বেশি অভাবগ্রস্ত। ফকির ও মিসকীনেরর মধ্যে পার্থক্য হলো: ফকির বেশি দরিদ্র। ফকির হলো এমন ব্যক্তি যার কাছে তার নিজের ও তার পরিবারের অর্ধেক বছর চলার মত সম্পদ নাই। আর মিসকীনের অবস্থা ফকিরের চেয়ে ভাল। মিসকীনের কাছে তাদের প্রয়োজনের অর্ধেক বা ততোর্ধ অংশ পূরণ করার মত সম্পদ আছে; তবে সম্পূর্ণ প্রয়োজন পূরণ করার মত সম্পদ নাই। তাদেরকে তাদের প্রয়োজন নিবারণের জন্য যাকাত বা যাকাতুল ফিতর দেয়া হবে।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: ফকির ও মিসকিন এর মাঝে পার্থক্য কী?
জবাবে শাইখ বলেন:
لفرق بين الفقير والمسكين إذا ذكرا جميعاً هو أن الفقير أشد حاجة من المسكين ، لأن الفقير مأخوذ من الفقر وهو الخلو ، ومنه قولهم : هذه أرض قفر ، أي ليس فيها نبات ، فالفقير هو الذي لا يجد شيئاً أو يجد من كفايته دون النصف ، والمسكين من هو فوق ذلك لا يجد الكفاية التامة ولكنه يجد النصف فأكثر ، مأخوذ من سكن يسكن ، لأن هذا المسكين عنده من الذل لسبب قلة ذات يده ، فإذا ذكرا جميعاً كان هذا هو الفرق بينهما ، أما إذا ذكر أحدهما دون الآخر فإن معناهما واحد ، فتقول مثلاً : تصدق على الفقراء وتصدق على المساكين ، ويكون المعنى واحداً ، ويفسر هنا الفقير بأنه من لا يجد كفايته وكفاية عائلته لمدة سنة ، والمسكين يفسر بذلك أيضاً ، ولهذا نقول في هاتين الكلمتين وأمثالهما إنهما كلمتان إذا اجتمعتا افترقتا وإذا افترقتا اجتمعتا ، ومثل ذلك الإسلام والإيمان فإذا ذكرا جميعاً صار الإيمان ما في القلب والإسلام في الجوارح ، وإذا قيل الإسلام عموماً دخل فيه أعمال الجوارح وأعمال القلوب ، وكذلك إذا قيل هذا مؤمن كما في قوله : (( فتحرير رقبة مؤمنة )) شمل الإسلام والإيمان ، ولهذا نظائر في اللغة العربية أن الكلمتين تطلقان فيكون لهما معنى عند الانفراد ومعنى عند الاجتماع .
“যদি “ফকির” ও “মিসকিন” একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, তখন ফকিরের অবস্থা মিসকিনের চেয়ে আরও করুণ বুঝায়। “ফকির” শব্দটি “ফাকর” থেকে এসেছে, যার অর্থ সম্পূর্ণ শূন্য থাকা। যেমন বলা হয়, “এটি একটি অনুর্বর জমি” অর্থাৎ সেখানে কোনো উদ্ভিদ জন্মায় না। তাই ফকির এমন ব্যক্তি, যার কিছুই নেই বা যার প্রয়োজনীয় চাহিদার অর্ধেকেরও কম আছে। অন্যদিকে, মিসকিন হলো সেই ব্যক্তি, যার কিছুটা আছে, তবে তা সম্পূর্ণ প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়, বরং অর্ধেক বা তার থেকে বেশি পরিমাণে আছে। “মিসকিন” শব্দটি এসেছে “সাকানা ইয়াসকুনু” থেকে, যা শান্ত বা স্থির অবস্থাকে বোঝায়। এর অর্থ হলো, এই ব্যক্তি দারিদ্র্যের কারণে বিনয়ের সাথে থাকে, কারণ তার সম্পদের পরিমাণ খুবই সীমিত। যদি “ফকির” ও “মিসকিন” একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, তবে তাদের মধ্যে এই পার্থক্য থাকে। কিন্তু যদি একটিমাত্র শব্দ ব্যবহার করা হয়, তাহলে উভয়ই দরিদ্র ব্যক্তিকে বোঝায়। যেমন: “গরীবদের দান করুন”বা “মিসকীনদের সাহায্য করুন”এখানে উভয় ক্ষেত্রেই অর্থ অভাবগ্রস্ত মানুষ। সুতরাং গরিব হলো সেই ব্যক্তি যে নিজের ও তার পরিবারের এক বছরের জীবিকা অর্জনে অক্ষম।এ ধরনের শব্দের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা একসঙ্গে থাকলে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, কিন্তু আলাদাভাবে ব্যবহৃত হলে একই অর্থ বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, “ইসলাম” ও “ঈমান” একসঙ্গে উল্লেখ করলে, ঈমান অন্তরের বিশ্বাস বোঝায় এবং ইসলাম বাহ্যিক কর্মসমূহ বোঝায়। কিন্তু যদি কেবল “ইসলাম” বলা হয়, তবে তাতে অন্তরের বিশ্বাস ও বাহ্যিক কর্ম- উভয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়। ঠিক তেমনিভাবে, কুরআনে বলা হয়েছে: – فتحرير رقبة مؤمنة (অর্থাৎ একজন মুমিন দাস মুক্ত করা), যেখানে “মুমিন” শব্দটি ইসলাম ও ঈমান উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে।এ ধরনের অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে দুটি শব্দ আলাদাভাবে থাকলে একে অপরের অর্থ ধারণ করে, কিন্তু একসঙ্গে থাকলে তাদের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য দেখা যায়।”(ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন;ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব; ও ফাতহু যিল জালালি ওয়াল ইকরাম; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৯৫)।
.
আর ফকির মিসকীনের পরিচয় দিতে সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] ফকির ও মিসকীনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন:”ফকির হল সেই ব্যক্তি, যার সারা বছরের প্রয়োজন মেটানোর মতো সম্পদ নেই, অথবা থাকলেও তা খুব অল্প পরিমাণে রয়েছে। সুতরাং, তাকে সম্পূর্ণ বছরের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যাকাত দেওয়া হবে। আর মিসকীন হল সেই ব্যক্তি, যার কাছে সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় রসদের অর্ধেক বা অর্ধেকের কিছু বেশি আছে, অর্থাৎ তার অবস্থা ফকিরের তুলনায় কিছুটা ভালো। সুতরাং, তাকে তার পুরো বছরের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যাকাত দেওয়া হবে।” [শারহু যাদিল মুস্তাকনি‘,খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩১৯) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়:শাইখ মুহাম্মাদ নাসরুল্লাহ মাদানী (হাফি.)। লিসান্স মাদীনা বিশ্ববিদ্যালয়,সৌদি আরব।