পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা সন্তানের অন্যতম দায়িত্ব

ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর ইবাদতের নির্দেশ দেয়ার বিষয়টির সাথে পিতামাতার প্রতি সদাচরণের বিষয়টি একত্রে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “আর আপনার প্রভু আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।”[সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৩] তিনি আরও বলেন: “আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ও কোনো কিছুকে তাঁর শরীক করো না; এবং পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৩৬] এটি পিতামাতার প্রতি সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের গুরুত্বের দলিল।পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা হবে তাদের আনুগত্য করার মাধ্যমে, সম্মান ও মর্যাদা দেয়া, তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের সামনে কণ্ঠস্বর নীচু রাখা, তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, তাদের সাথে বিনয়ী হওয়া, তাদের সাথে বিরক্তি প্রকাশ না-করা, তাদের সেবা করা, তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাস্তবায়ন করা, তাদের সাথে পরামর্শ করা, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনা, তাদের সাথে হটকারিতা না-করা, তাদের জীবদ্দশায় ও তাদের মৃত্যুর পর তাদের বন্ধুকে সম্মান করা ইত্যাদির মাধ্যমে।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:

إخواننا على كثرة ‎#الدعاء لوالديهم أحياء أم امواتا لإن ذلك طريق الأولاد الصالحين الذين أمتثلوا قول الله تعالى : ﴿ واخفض لهما جناح الذل من الرحمة وقل رب ارحمهما كما ربياني صغيرا

“আমি আমার ভাইদেরকে পিতা-মাতার জন্য বেশি বেশি দোয়া করার প্রতি উৎসাহিত করি, হোক তারা জীবিত কিংবা মৃত। কেননা এটি নেককার সন্তানদের বৈশিষ্ট্য, যারা আল্লাহ তাআলার এই আদেশ পালন করে” আল্লাহ তাআলা বলেন:”তাদের জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেমনভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন পালন করেছেন”।(সূরা বনি ইসরাইল: ২৪; উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭০
.
💎পিতা-মাতার জন্য দোয়া থেকে বিরত থাকবেন না!

আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:دعاؤك لوالدك في صلاة التراويح أو صلاة التهجد ، أفضل بكثير من أن تذبح له عشر نياق “যদি তুমি তারাবিহ বা তাহাজ্জুদের নামাজে তোমার পিতা-মাতার জন্য দোয়া করো, তবে এটি তাদের জন্য দশটি উট জবেহ (সদাকা) করার চেয়েও উত্তম।”(ইবনু উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১১৫)
.
মৃত পিতা মাতার জন্য দোয়া করার ফজিলত কি?
.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়; তবে তিনটি আমল ছাড়া: সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা নেক সন্তান যে তার তার জন্য দোয়া করে।”(সহিহ মুসলিম হা/১৬৩১) অপর বর্ননায় আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহ্‌ তাআলা বান্দার মর্যাদা উন্নীত করেন। তখন বান্দা বলে, এই মর্যাদা আমি কিভাবে পেলাম? তখন আল্লাহ্‌ বলেন: তোমার জন্য তোমার সন্তানের দোয়ার কারণে।”(তাবারানীর ‘আদ-দোয়া’ গ্রন্থে পৃষ্ঠা-৩৭৫), হাইছামী তাঁর ‘মাজমাউয যাওয়ায়েদ’ গ্রন্থে ১০/২৩৪) হাদিসটিকে ‘বায্‌যার’’এর বর্ণনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বাইহাকী তাঁর ‘আস-সুনানুল কুবরা’ গ্রন্থে ৭/৭৮) হাদিসটি সংকলন করেছেন]
.
ইমাম যাহাবী তাঁর ‘আল-মুহায্‌যাব’’গ্রন্থে বলেন: হাদিসটির সনদ শক্তিশালী। হাইছামী বলেন: সনদের বর্ণনাকারীগণ সকলে সহিহ হাদিসের বর্ণনাকারী; শুধু আসেম বিন বাহদালা ব্যতীত। তিনি ‘হাসান’ হাদিসের রাবী।(আল-মুহায্‌যাব’’৫/২৬৫০)

পরিশেষে, আপনার দোয়ার মাধ্যমে হয়তো আপনার পিতা-মাতার গুনাহ মাফ হবে, তাদের জন্য জান্নাতের দরজা প্রশস্ত হবে, তাদের কবর জ্যোতির্ময় হবে। কখনোই তাদের জন্য দোয়া করতে ভুলে যাবেন না!(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: