প্রশ্ন: নাজাসাত (নাপাকি) কাকে বলে? নাপাকি কত প্রকার ও কি কি? কিভাবে নাজাসাত (অপবিত্রতা) পবিত্র করা যায়? শেষে নাপাকি সংক্রান্ত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।যিনি পৃথিবীতে রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন এবং তাঁর পরিবার পরিজন, সাথীবর্গ ও তাবে‘ঈনদের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। অতঃপর নাজাসাতের শাব্দিক অর্থ ময়লা, যেমন বলা হয় نجس الشيء نجسا বস্তুটি ময়লা হয়েছে। আবার বলা হয়, تنجس الشيء: صار نجسا: تلطخ بالقذر অর্থাৎ ময়লা মাখিয়ে দেওয়া। শরী‘আতের পরিভাষায় ‘নাজাসাত’ হলো, নির্দিষ্ট পরিমাণ ময়লা যা সালাত ও এ জাতীয় ইবাদাত করতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন পেশাব, রক্ত ও মদ।
.
▪ প্রথমত: নাজাসাত বা নাপাকি দুটি প্রকারে বিভক্ত: একটি হলো যা স্বতন্ত্রভাবে নাপাক এবং অন্যটি হলো যা অপবিত্রতা হিসেবে গণ্য হয়।
.
(১). সত্তাগত বা প্রকৃত নাজাসাত (নাজাসাতে আইনিয়্যাহ): এটি সেইসব বস্তু যা প্রকৃতিগতভাবেই অপবিত্র। যেমন মানুষের প্রস্রাব, পায়খানা, প্রবাহিত রক্ত, কুকুরের লালা এবং অধিকাংশ ইসলামী বিদ্বানের মতে মদ (অ্যালকোহল)। এই ধরণের বস্তু কোনোভাবেই ধোয়া বা পরিষ্কার করার মাধ্যমে পবিত্র করা সম্ভব নয়। এসবকে আবার ‘নাজাছাতে আইনিয়্যাহও বলা হয়। অর্থাৎ এগুলো নিজেরাই নাপক। তবে যদি কোনো প্রক্রিয়ায় এসবের প্রকৃতি বদলে যায় যেমন মদ যখন ভিনেগারে রূপান্তরিত হয় তখন তা পবিত্র হয়ে যায়।
.
(২). হুকমী তথা বিধানগত নাজাসাত: “এটি এমন অপবিত্রতা যা মূলত কোনো পবিত্র বস্তুতে নাপাকির সংস্পর্শের ফলে সৃষ্টি হয়। যেমন কোনো পোশাক, শরীর বা স্থান যদি প্রস্রাব, রক্ত বা অন্য কোনো নাপাক বস্তু দ্বারা দুষিত হয়, তবে সেটি অপবিত্র বলে গণ্য হবে। তবে এ ধরনের অপবিত্রতা সাময়িক,এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে তা সহজেই পবিত্র হয়ে যায়।
.
▪️দ্বিতীয়ত: যেসব নাজাসাত অপবিত্র এবং বিশুদ্ধ জিনিসের উপর আসে যেগুলিকে তখন শুদ্ধ করা প্রয়োজন সেগুলো হলো:
.
(১). সব স্থলচর মৃতপ্রাণী।
(২). প্রবাহিত রক্ত, যা স্থলচর প্রাণী জবেহ করার সময় প্রবাহিত হয়।
(৩). শূকরের মাংস।
(৪). মানুষের পেশাব, পায়খানা।
(৫). মযী (অর্থাৎ এমন এক প্রকার সাদা তরল পদার্থ, যা স্ত্রী সহবাসের পূর্বে বা এ জাতীয় অনুভূতির সময় শরীর থেকে নির্গত হয়)।
(৬). অদী (রোগের কারণে কারো কারো প্রস্রাবের পর এক প্রকার গাঢ় সাদা পানি বের হয়। এটা হলো অদী)
(৭). যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল নয় তার গোশত।
(৮). যেসকল প্রানী খাওয়া হালাল নয় সেগুলোর পেশাব পায়খানা
(৯).জীবিত প্রাণীর কর্তিত অংশ। যেমন জীবিত ছাগলের বাহু কেটে ফেললে।
(১০). হায়েয, নিফাসের রক্ত।
(১১). ইস্তেহাযা বা প্রদরগ্রস্ত নারীর রক্ত।
(১২). কুকুরের লালা।
(১৩). জমহুর ওলামাদের মতে মদ, অ্যালকোহল।
(১৪). রক্তহীন মৃতপ্রাণী। যেমন মৌমাছি, তেলাপোকা, পাখাবিহীন ক্ষুদ্র কীট।
(১৫). মানুষের বমি ইত্যাদি।
.
▪️তৃতীয়ত: ইসলামে অপবিত্রতাকে (নাজাসাহ) তীব্রতার ভিত্তিতে তিনটি স্তরে বিভক্ত করা যায়:
.
(ক) হালকা অপবিত্রতা: যেমন সেই শিশুর প্রস্রাব, যে এখনো শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করেনি। যদি এটি কাপড়ে লেগে যায়, তাহলে স্থানটিতে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে যতক্ষণ না পুরোপুরি (আর্দ্র) ভিজে যায়। তবে এটি কেবলমাত্র ছেলে শিশুর প্রস্রাবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মেয়েশিশুর প্রস্রাব হলে এটি ধুয়ে ফেলা আবশ্যক; শুধু পানি ছিটিয়ে দেওয়া যথেষ্ট নয়।
.
(খ) মধ্যম মাত্রার অপবিত্রতা: যেমন মানুষের প্রস্রাব-পায়খানা, মহিলাদের হায়েযের রক্ত এবং প্রসবোত্তর নিফাসের রক্তপাত। অধিকাংশ অপবিত্রতা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এসব অপবিত্রতা দূর করতে আক্রান্ত বস্তুটি ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে যতক্ষণ না তা সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে যায়। যদি কঠিন কোনো পদার্থ থেকে যায়,তাহলে প্রথমে তা সরিয়ে ফেলতে হবে, এরপর ধোয়ার পর দাগ থেকে গেলেও তা বিবেচ্য নয়।
.
(গ) তীব্র অপবিত্রতা: যেমন কুকুরের লালা। যদি কোনো পাত্রে কুকুর মুখ দেয়, তাহলে তা সাতবার ধুতে হবে, যার মধ্যে অন্তত একবার মাটি দিয়ে ধোয়া আবশ্যক।
.
▪️চতুর্থত: কিভাবে নাজাসাত (অপবিত্রতা) পবিত্র করা যায়:
.
অপবিত্রতা (নাপাকি) চার ধরনের হয়ে থাকে এবং তা শুদ্ধ করার পদ্ধতি নিম্নরূপ:
.
(১). মাটি: যদি কোনো স্থান নাপাক হয়ে যায়, যেমন মাটিতে বা ফ্লোরে প্রস্রাব কিংবা পায়খানা পড়ে, তাহলে তা পরিষ্কার করার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে:
(ক). প্রথমে সেই স্থান থেকে নাপাক পদার্থ সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে।
(খ). তারপর সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ঢালতে হবে এবং ধুতে হবে যতক্ষণ না নাপাকির কোনো দাগ বা চিহ্ন অবশিষ্ট থাকে না।
(গ). বিকল্পভাবে যদি পানি না পাওয়া যায় তাহলে সেই স্থান সম্পূর্ণভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে, যা একধরনের পরিশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
.
(২). পানি: যদি নাপাকি পানিতে মিশে যায়, তাহলে সেটিকে এমনভাবে পরিশোধন করতে হবে যেন তার গন্ধ, রং বা স্বাদে অপবিত্রতার কোনো চিহ্ন না থাকে। এজন্য অপবিত্রতা সম্পূর্ণভাবে দূর করতে হবে হোক তা প্রাকৃতিকভাবে পানির নিজস্ব প্রবাহের মাধ্যমে, প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি মিশিয়ে বা আধুনিক পরিশোধন পদ্ধতি ব্যবহার করে।
.
(৩). পোশাক এবং আসবাবপত্র: যদি নাপাকি কোনো পোশাক বা আসবাবপত্রে লেগে যায় তাহলে সেগুলিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বা বিশুদ্ধ ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে যতক্ষণ না নাপাকির সমস্ত চিহ্ন অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার চামড়ার জুতা বা খুফে নাপাকি লেগে গেলে সেগুলিকে মাটিতে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
.
(৪). পাত্র: যদি কোনো পাত্রে অপবিত্রতা লেগে যায় তাহলে সেটিকে পর্যাপ্ত পানি বা উপযুক্ত ডিটারজেন্ট, ক্লিনার ইত্যাদি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে যতক্ষণ না সমস্ত অপবিত্রতার চিহ্ন মুছে যায়।(উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইবনু উসাইমীন আশ শারহুল মুমতি খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪১৪; শারহুল-মুহায্যাব খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩২৭; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৫১০১৬৩)
.
▪️এবার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জেনে রাখুন:
.
প্রশ্ন: কোন কিছু নাপকি দূর করার জন্য একাধিকবার ধৌত করা কি শর্ত?
.
ইসলামি শরিয়ত নাপাকি ধৌত করার ক্ষেত্রে সংখ্যাকে ধর্তব্যে আনেনি; কেবল কুকুরের কারণে নাপাক হওয়া জিনিস ব্যতীত। কুকুরের কারণে নাপাক হওয়া জিনিস সাতবার ধৌত করতে হবে; তার মধ্যে কোন একবার মাটি দিয়ে। এ ছাড়া অন্যান্য নাপাকির ক্ষেত্রে কোন সংখ্যা শর্ত নয়। বরং আবশ্যক হল এমনভাবে ধৌত করা যাতে করে নাপাকি দূর হয়ে যায়; এমনকি একবার ধৌত করলে যদি হয়ে যায় সেটাও হতে পারে। একবার ধৌত করার পর নাপাকী অবশিষ্ট থাকলে দুইবার বা তিনবার ধৌত করতে হবে। মোটকথা পানিতে ডুবানোর পর নাপাকীর প্রভাব দূরীভূত হলেই সেটি পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হবে।(ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৪/১৯৬; আশ-শারহুল মুমতি‘, ১/৪২১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৬৩৮২৫)।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:والصحيح: أنه يكفي غسلة واحدة تذهب بعين النجاسة، ويطهر المحل، ما عدا الكلب فعلى ما تقدم .فإن لم تزل النجاسة بغسلة زاد ثانية، وثالثة وهكذا “সঠিক অভিমত হচ্ছে নাপাকিকে দূর করে স্থানটিকে পবিত্র করতে পারে এমন একবারের ধোয়াই যথেষ্ট; কেবল কুকুরের নাপাকি ছাড়া যেমনটি ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। যদি একবারের ধৌতকরণে নাপাকি দূর না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বার এভাবে ধোয়ার সংখ্যা বাড়াবে…”।(আল-শারহুল মুমতি; ১/৪২১)
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস আরো করা হয়: অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিনে ধৌতকৃত জামাকাপড় কি পবিত্র হবে; যে মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে কোন ব্যক্তির প্রয়োজন ছাড়া? জবাবে তিনি বলেন: বোধহয় প্রশ্নকারী বোনের প্রশ্নের উদ্দেশ্য অপবিত্র কাপড় যদি এমন ওয়াশিং মেশিনে ধৌত করা হয় যা বিদ্যুৎচালিত তাহলে কি পবিত্র হবে; নাকি নয়?
তিনি জবাবে বলেন:
أنه يطهر لأن هذا الماء ينقي والمقصود من إزالة النجاسة هو أن تزول عينها بأي مزيل حتى لو فُرض أن الإنسان نشر ثوبه على السطح ثم نزل المطر وطهره يكون طاهراً لأن إزالة النجاسة لا يشترط لها النية
“পবিত্র হবে। কেননা এ পানি নির্মল করে। “নাপাকি দূর করা” দ্বারা উদ্দেশ্য হল নাপাকির অস্তিত্ব যে কোন দূরকারীর মাধ্যমে দূরীভূত হওয়া। এমনকি যদি ধরে নেয়া হয় যে, কেউ তার কাপড় ছাদে দিয়েছে। এরপর বৃষ্টি নেমেছে ও বৃষ্টি কাপড়কে পবিত্র করেছে। সেক্ষেত্রেও কাপড়ের পবিত্রতা অর্জিত হবে। কেননা নাপাকি দূর করার জন্য নিয়ত শর্ত নয়।”(ইবনু উসাইমীন; নুরুন আলাদ দারব)
.
▪️প্রশ্ন: কার্পেট বা এ জাতীয় কোন কিছু থেকে নাপাকি পবিত্র করার ক্ষেত্রে ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে কয়েকবার মোছা কি যথেষ্ট?
.
যদি শিশু কার্পেটের উপর বা এ জাতীয় অন্য কিছুর উপর পেশাব করে দেয় তাহলে নাপাকি দূর করার জন্য আপনি স্পঞ্জ ব্যবহার করা কিংবা ন্যাকড়া ব্যবহার করা যথেষ্ট; যা পেশাবকে চুষে নিবে। এরপর আপনি সেটাকে পানি দিয়ে পরিস্কার করবেন। কার্পেটের উপর পানি দিবেন। কাজটি কয়েকবার করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার প্রবল ধারণা হয় যে, নাপাকি দূর হয়েছে। এভাবে করাটা গোটা কার্পেটে পানি ঢালার তুলনায় সহজ। কেননা আপনাকে সামান্য কিছু পানি ঢালতে হবে; শুধু নাপাকির স্থানে।
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে: বড় কার্পেটকে নাপাকি থেকে পবিত্র করার পদ্ধতি কি? নাপাকির দৃশ্যমান অবয়ব দূর করার পর নাপাকি ধৌত করার ক্ষেত্রে নিংড়ানো কি ধর্তব্য?
জবাবে তিনি বলেন:
صفة غسل الفرش الكبيرة من النجاسة : أن يزيل عين النجاسة أولاً إذا كانت ذات جِرم ، فإن كانت جامدة أخذها ، وإن كانت سائلة كالبول نشفه بإسفنج حتى ينتزعه ، ثم بعد ذلك يصب الماء عليه حتى يظن أنه زال أثره ، أو زالت النجاسة ، وذلك يحصل في مثل البول بمرتين أو ثلاث ، وأما العصر فإنه ليس بواجب ، إلا إذا كان يتوقف عليه زوال النجاسة ، مثل أن تكون النجاسة قد دخلت في داخل هذا المغسول ، ولا يمكن أن ينظف داخله إلا بالعصر فإنه لابد أن يعصر
“বড় কার্পেটগুলোর নাপাকি ধৌত করার পদ্ধতি: প্রথমে নাপাকির অবয়ব দূর করতে হবে; যদি এর কোন কাঠামো থাকে। যদি এটি শুকনো হয় তাহলে তুলে ফেলবে। আর যদি পেশাবের মত তরল কিছু হয় তাহলে স্পঞ্জে চুষিয়ে সেটাকে দূর করবে। এরপর এ জায়গার উপর পানি ঢালবে যতক্ষণ পর্যন্ত না অনুমান হয় যে, পেশাবের আলামত কিংবা নাপাকি দূরীভুত হয়েছে। পেশাবের ক্ষেত্রে দুই বা তিনবার করলেই এটি হয়ে যায়। নিংড়ানো আবশ্যক নয়। তবে যদি না নিংড়ালে নাপাকি দূর না হয় তাহলে ভিন্ন কথা। যেমন নাপাকি যদি কোন জিনিসের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে যায় এবং নিংড়ানো ছাড়া এর ভেতরের অংশ পরিস্কার করা না যায় সেক্ষেত্রে নিংড়াতে হবে।”(ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব; ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৭৫৬১২) আর যদি নাপাকি পাকা মেঝের উপরে হয় তাহলে তো বিষয়টি সহজ। কারণ মেজের ভেতরে নাপাকি ঢুকে না। সেক্ষেত্রে যদি ভেজা টাওয়াল কিংবা ন্যাকড়া দিয়ে পরিস্কার করা হয়, এর সাথে পানি ঢালেন এবং কয়েকবার পরিস্কার করা হয় তাহলে পবিত্র হওয়ার জন্য এটি যথেষ্ট। তবে শর্ত হলো নাপাকির রঙ ও গন্ধের আলামত দূর হতে হবে।
.
▪️প্রশ্ন: নাপাক কাপড় পরে ওজু করে সালাত এর সময় পবিত্র কাপড় পরলে কি ওজু থাকবে?
.
উত্তর: ওজু করার সময় নাপাক কাপড় পরে থাকলে ওজুর কোন ক্ষতি হবে না বরং এক্ষেত্রে ওযূ করা যাবে। তবে সালাতের পূর্বে অবশ্যই পবিত্র কাপড় পরিধান করতে হবে। কেননা সালাতের জন্য পবিত্রতা (শরীর, কাপড় ও ছালাতের স্থান) পূর্ব শর্ত। উল্লেখ্য যে, কাপড় পরিবর্তন করার কারণে ওযূ ভঙ্গ হবে না সতর খুলে গেলেও। তবে সতর্ক থাকতে হবে লজ্জাস্থানে যেন সরাসরি হাত না লাগে। কারণ ওযূ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও এটি অধিক বিশুদ্ধ মত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِذَا أَفْضَى أَحَدُكُمْ بِيَدِهِ إِلَىْ ذَكَرِهِ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا شَيْءٌ فَلْيَتَوَضَّأْ ‘যখন তোমাদের কেউ নিজ পুরুষাঙ্গের প্রতি হাত বাড়াবে তখন যদি উভয়ের মধ্যে কোন আড় না থাকে, তাহলে সে যেন ওযূ করে (মুসনাদুশ শাফেঈ হা/৮৮; দারাকুৎনী হা/৬; সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ,হা/১২৩৫)। অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ وَأَيُّمَا امْرَأَةٍ مَسَّتْ فَرْجَهَا فَلْتَتَوَضَّأْ ‘যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন ওযূ করে এবং কোন মহিলা যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে সে যেন ওযূ করে’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৭০৭৬, সনদ হাসান)।উল্লেখ্য যে, কাপড় পরিবর্তন করার কারণে ওজু ভঙ্গ হবে না- এমনকি সতর খুলে গেলেও না।
.
▪️হায়েযের রক্ত থেকে কাপড় পবিত্র করার পদ্ধতি কি?
হায়েযের রক্ত থেকে কাপড় পবিত্র করতে হ’লে তা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। হাদীসে এসেছে, ‘জনৈকা মহিলা নবী (ﷺ)-এর নিকট এসে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল!) বলুন, আমাদের কারো কাপড়ে হায়েযের রক্ত লেগে গেলে সে কি করবে? তিনি বললেন, ‘সে তা ঘষে ফেলবে, তারপর পানি দিয়ে রগড়াবে এবং ভাল করে ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর সেই কাপড়ে সালাত আদায় করবে’।(সহীহ বুখারী হা/২২৭; ওযূ অধ্যায়, রক্ত ধৌত করা অনুচ্ছেদ)
.
প্রশ্ন: শুকনো বা ভেজা বস্তু থেকে নাপাকি স্থানান্তরিত হওয়া প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্নের উত্তর:
.
শুকনো নাপাকি কোনো শুকনো বস্তুতে লাগলেও তা নিজের স্থান অতিক্রম করে না বা অন্য কিছুকে নাপাক করে না। এটি একটি বাস্তব ও দৃশ্যমান বিষয়, কারণ শুকনো বস্তু কেবল শুকনো নাপাকির স্পর্শে এলেও তার কোনো বৈশিষ্ট্য রং, গন্ধ বা স্বাদ বদলে যায় না।
ইমাম সুয়ূত্বী রাহিমাহুল্লাহ বলেন:قاعدة: ” قال القمولي في الجواهر: النجس إذا لاقي شيئاً طاهراً وهما جافان لا ينجسه
“নিয়ম: কামূলী তার ‘আল-জাওয়াহের’ বইয়ে বলেন: নাপাক বস্তু যদি পবিত্র বস্তুকে স্পর্শ করে এবং উভয়টি শুষ্ক হয়, তাহলে নাপাক বস্তুটি পবিত্র বস্তুকে নাপাক করে দেয় না।”(আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ের: ১/৪৩২)
শাইখ ইবনে জিবরীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ” لا يضر لمس النجاسة اليابسة بالبدن والثوب اليابس…؛ لأن النجاسة إنما تتعدى مع رطوبتها “শুকনো শরীর বা শুকনো কাপড়ে শুকনো নাপাকি স্পর্শ করলে সেটি কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। কারণ নাপাকির সিক্ততা অন্য কিছুকে নাপাক করে।’(ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা: ১/১৯৪] অপরদিকে নাপাকি যদি ভেজা হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটি নিজের স্থান ছাড়িয়ে অন্য স্থানকে নাপাক করবে; চাই সংস্পর্শে আসা সে স্থানটি ভেজা হোক কিংবা শুকনো হোক।
▪️প্রশ্ন: শুকনো নাপাকী স্পর্শ করা নিয়ে শরীয়তের বিধান কী?
.
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী শুকনো নাপাক বস্তু (যেমন শুকিয়ে যাওয়া প্রস্রাব বা পায়খানা) স্পর্শ করলে তা শরীর বা কাপড় নাপাক করে না। অর্থাৎ, যদি কেউ শুকিয়ে যাওয়া প্রস্রাবের উপর বসে, তবে তার কাপড় অপবিত্র হবে না এবং তা ধোয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যদি নাপাক বস্তুটি ভেজা থাকে অথবা স্পর্শকারীর হাত, পা বা কাপড় ভেজা থাকে, তাহলে সেই নাপাকী স্থানান্তরিত হতে পারে, যা ধোয়া বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব) হবে।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন:
وإذا لمس الإنسان نجاسة رطبة؛ فإنه يغسل ما لمسها به من جسمه؛ لانتقال النجاسة إليه، أما النجاسة اليابسة؛ فإنه لا يغسل ما لمسها به؛ لعدم انتقالها إليه
“যদি কেউ ভেজা নাপাকী স্পর্শ করে তবে শরীরের যে অংশ নাপাকীর সংস্পর্শে এসেছে সেটি ধুতে ফেলতে হবে। কারণ নাপাকী তখন স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু যদি নাপাকী শুকনো থাকে, তবে ধোয়ার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ তা স্থানান্তরিত হয় না।”(ইমাম সালেহ আল- ফাওযান, আল-মুনতাক্বা; ৪৮/১৮)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ) এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:”শুকিয়ে যাওয়া প্রস্রাব কি কাপড় নাপাক করে? উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিশু মাটিতে প্রস্রাব করে এবং তা শুকিয়ে যায়, তারপর কেউ এসে সেই শুকনো স্থানে বসে, তাহলে কি তার কাপড় নাপাক হবে?”
তিনি জবাবে বলেন:
“لا يضر لمس النجاسة اليابسة بالبدن والثوب اليابس ، وهكذا لا يضر دخول الحمام اليابس حافياً مع يبس القدمين لأن النجاسة إنما تتعدى مع رطوبتها
“শুকনো নাপাকী যদি শুকনো শরীর বা কাপড় স্পর্শ করে তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। একইভাবে, যদি কেউ শুকনো বাথরুমে খালি পায়ে প্রবেশ করে এবং তার পা শুকনো থাকে, তবে তাতেও কোনো ক্ষতি নেই। কারণ নাপাকী কেবল তখনই স্থানান্তরিত হয় যখন তা ভেজা থাকে।”(ফাতাওয়া আল-মারআ আল-মুসলিমাহ, ১/১৯৪) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।