নবী-রাসূলদের চরিত্রে অভিনয় করা এবং জান্নাত ও জাহান্নামের কাল্পনিক ভিডিও তৈরি ও প্রচারের বিধান

প্রশ্ন: শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে নবী-রাসূলদের চরিত্রে অভিনয় করা এবং জান্নাতের নেয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কাল্পনিক ভিডিও তৈরি ও প্রচারের বিধান কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।অতঃপর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নবী-রাসূলদের চরিত্রে অভিনয় করা, আসমানের দরজা অংকন, জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত কাল্পনিক ভিডিও তৈরি করে প্রচার করা জায়েয নয় এগুলো হারাম। কারন এগুলো সবই ইসলামের মৌলিক আদর্শের পরিপন্থী। সাহাবায়ে কেরাম এমনকি তাবিঈ, তাবে তাবেঈনগণ কিংবা পরবর্তী যুগের কোন প্রসিদ্ধ আলেমগনও কখনো নবী রাসূলদের চেহারা বা চরিত্রের চিত্রায়ণ করেননি, যা প্রমাণ করে যে এটি শরিয়তের পরিপন্থী। তাছাড়া মৃত্যু পরবর্তী জীবন, জান্নাত-জাহান্নাম, আযাব, নেয়ামত এগুলো সবই গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে গায়েব (অদৃশ্য) সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতি ঈমান আনয়ন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর অপরিহার্য। বিশেষ করে মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, জান্নাত-জাহান্নাম ও বারযাখের জীবন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিসর সীমিত। কেননা বারযাখের জীবনের ধরণ ও স্বরূপ সম্পর্কে আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কেউ জানে না। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে যে সব গায়েবী বিষয় জানিয়েছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের উপর ওয়াজিব হলো এই কথা বলা ‘আমরা ঈমান আনলাম ও বিশ্বাস করলাম’। নানারকম আপত্তি তোলা নয়। কারণ বিষয়টি আমাদের বিবেক বুদ্ধির ঊর্ধ্বে। আল্লাহ্‌ ও তাঁর মাখলুক সংক্রান্ত গায়েবী বিষয়ে এটাই হলো একটি সূত্র।
.
আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:عٰلِمُ الۡغَیۡبِ فَلَا یُظۡهِرُ عَلٰی غَیۡبِهٖۤ اَحَدًا,اِلَّا مَنِ ارۡتَضٰی مِنۡ رَّسُوۡلٍ“তিনি গায়েবের আলেম (জ্ঞানওয়ালা) এবং স্বীয় গায়েবের খবর কারো কাছে প্রকাশ করেন না; তাঁর মনোনীত কোন রাসূল ব্যতীত।”[সূরা জ্বিন, ৭২: ২৬-২৭] এবং তিনি আরও বলেন:قُلۡ لَّا یَعۡلَمُ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ الۡغَیۡبَ اِلَّا اللّٰهُ“বলুন, আসমানসমূহ ও জমিনে যারা আছে তারা গায়েব জানে না; তবে আল্লাহ্‌ ব্যতীত।”[সূরা নামল, আয়াত: ৬৫] এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করা হয়েছে যে, আপনি লোকদেরকে বলে দিন, যত মাখলুক আকাশে আছে; যেমন ফেরেশতা, যত মাখলুক যমীনে আছে; যেমন মানবজাতি, জিন জাতি ইত্যাদি তাদের কেউই গায়েবের খবর রাখে না। কেবলমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই সেসবের খবর রাখেন। গায়েব একমাত্র একজনের কাছে দৃশ্যমান। তিনি হচ্ছেন মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তাঁর কাছে কোন জিনিস অদৃশ্য নয়। সবকিছুই তাঁর কাছে সুস্পষ্টভাবে পরিদৃশ্যমান। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ এ জ্ঞানের অধিকারী নয়। এটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান যতটুকু চান জ্ঞান দান করেন। কোন অদৃশ্য বা কতগুলো অদৃশ্য জিনিসকে তার সামনে উন্মুক্ত করে দেন। কিন্তু অদৃশ্য জ্ঞান সামগ্রিকভাবে কেউ লাভ করতে পারে না এবং “আলেমুল গায়েব” অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলমীনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ বলেনঃ “আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিগুলো, সেগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।” [সূরা আল-আন’আম: ৫৯]
.
তাছাড়া ঈমানের ছয়টি রুকনের অন্যতম হচ্ছে শেষ দিবস তথা গায়েবের প্রতি ঈমান; যে রুকনগুলো ছাড়া ঈমান প্রতিষ্ঠিত হয় না। যে ব্যক্তি এ ছয়টির কোনোটির প্রতি ঈমান আনবে না সে ব্যক্তি মুমিন নয়। সে ছয়টি বিষয় হচ্ছে: আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান, শেষ দিনের প্রতি ঈমান এবং ভালমন্দের তাকদির আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে এর প্রতি ঈমান। সুতরাং গায়েবি বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর প্রকাশ্য কথার বাইরে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।গায়েবি কোন বিষয়ে যেমন জান্নাত, জাহান্নাম ও কিয়ামতের ভয়াবহতা ইত্যাদির চিত্রায়ন ও অভিনয় করা, কল্পনানির্ভর ভিডিও বা চিত্রায়ণের মাধ্যমে এগুলোর রূপ ও প্রকৃতি নির্ধারণ করা শরিয়তসম্মত নয়, বরং তা গায়েবের প্রতি ঈমানের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। একমাত্র পথভ্রষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ এসব শরীয়ত বিরোধী কাজ করতে পারে না।এর কারণ হলো, এতে অদৃশ্য বিষয়সমূহের সম্পর্কে বাড়াবাড়ি ও অহেতুক অনুমান করা হয়। আল্লাহ বলেন:বলুন,গায়েবের জ্ঞান তো শুধু আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত।”(সূরা ইউনুস:২০) এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আখিরাতের বিষয়গুলো সঠিকভাবে কেবলমাত্র আল্লাহই জানেন এবং সেই বিষয়গুলোর প্রকৃতি কেমন হবে, তা একমাত্র তিনিই জানেন।যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন;ليس في الجنة مما في الدنيا إلا الأسماء”জান্নাতে দুনিয়ার কোনো কিছুই নেই, শুধুমাত্র তাদের নামগুলো ছাড়া।”(ইমাম আলবানী, সহীহ আল-তারগীব হা/৩৭৬৯)
.
হাদিসে এসেছে, আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘মহান আল্লাহ বলেছেন,”আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, ‘‘কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’’ (সূরা সাজদাহ ১৭; সহীহুল বুখারী ৩২৪৪, ৪৭৭৯, ৪৭৮০, ৪৭৯৮, মুসলিম ২৮২৮৪, তিরমিযী ৩১৯৭, ইবনু মাজাহ ৪৩২৮, আহমাদ ২৭৩৬০, ৮৬০৯, ৯০২৬, ৯১২৫, ৯৩৬৫, ৯৬৪১, ৯৬৮৮, ১০০৫১, ১০১৯৯, দারেমী ২৮২৮) এই হাদীসটি প্রমাণ করে জান্নাতে মানুষদের জন্য কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে সেটা মানুষের বোধগম্যের বাইরে। তাহলে কিভাবে মিথ্যা ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রতিকী ভিডিও তৈরি করা যেতে পারে? আমরা এসব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছি।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, أما الغيب فلا يعلمه إلا الله وحده، وإنما يعلم الرسول – ﷺ – وغيره من الخلف من الغيب ما أطلعهم الله عليه مما ورد في القرآن الكريم والسنة المطهرة بيانه من أمور الجنة والنار وأحوال القيامة وغير ذلك مما دل عليه القرآن الكريم والأحاديث الصحيحة، كأخبار الدجال وطلوع الشمس من مغربها وخروج الدابة ونزول المسيح عيسى ابن مريم في آخر الزمان وأشباه ذلك، لقول الله في سورة النمل: قُلْ لا يَعْلَمُ مَن فِي السَّماواتِ والأرْضِ الغَيْبَ إلّا اللَّهُ وما يَشْعُرُونَ أيّانَ يُبْعَثُونَ. “এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পরবর্তী যুগের অন্য ব্যক্তিবর্গ কেবল ততটুকু গায়েব জানেন, যতটুকু আল্লাহ তাঁদেরকে জানিয়েছেন। যেই জ্ঞাত বিষয়গুলোর বিবরণ মহান কুরআন ও পবিত্র সুন্নাহয় এসেছে, যেমন জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়াদি, কেয়ামতের পরিস্থিতি প্রভৃতি; যেগুলো প্রতীয়মান হয়েছে মহান কুরআন ও সহিহ হাদিসের মাধ্যমে। যেমন দাজ্জাল, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, বিশেষ জন্তুর আবির্ভাব, শেষ যুগে মারইয়াম তনয় ইসার অবতরণ প্রভৃতি সম্পর্কিত সংবাদসমগ্র। কারণ সুরা নামলের মধ্যে আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি বলে দাও, আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও জমিনে কেউই গায়েব জানে না; আর তারা উপলব্ধিও করে না কখন তাদের পুনরুত্থান হবে’ (সুরা নামল: ৬৫)।”(বিন বায;মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাতুম মুতানাওয়্যাআহ, খণ্ড: ২; পৃৃষ্ঠা: ৩৮১-৩৮২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন–কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: জান্নাতকে বাগান দ্বারা এবং জাহান্নামকে আগুন দ্বারা প্রতীকীভাবে চিত্রায়িত করার বিধান কী?

তিনি উত্তরে বলেছেন:

هذا لا يجوز ؛ لأننا لا نعلم كيفية ذلك ، كما قال عز وجل: ( فَلا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ) السجدة/17 ، ولا يعلم كيفية النار ، فهي فضلت على نار الدنيا بتسع وستين جزءاً بما فيها النار الغليظة كنار الغاز وغيرها وما هو أشد ، فهل أحد يستطيع أن يمثل النار؟ لا أحد يستطيع ، ولهذا بلِّغ من يفعل ذلك أن هذا حرام ، ومع الأسف الشديد أن الناس الآن بدءوا يجعلون الأمور الأخروية كأنها أمور حسية مشاهدة ، وقد رأيت ورقة مكتوب فيها مربعات كذا الموت وآخر القبر وآخر القيامة وهكذا ، فهذا كأنه صور ما بعد الموت خطوط ومربعات هندسية ، جرأة عظيمة والعياذ بالله ، ثم يقال : ما الذي أدراك أن هذا بعد هذا ؟ نحن نعرف أن القبر بعد الحياة الدنيا وأن البعث بعد القبر ، ولكن تفاصيل ما يكون يوم القيامة من الحساب والموازين وغير ذلك مَنْ يعلم الترتيب ؟ لكن هذه جرأة عظيمة ، والغريب أن هذه الورقة توزع ، فيجب الحذر والتحذير من هذه الأوراق ” ا

“এটি জায়েজ নয়। কারণ আমরা জান্নাত ও জাহান্নামের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে অবগত নই। আল্লাহ তাআলা বলেন:”অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!”(সূরা সাজদাহ: ১৭) আমরা জাহান্নামের আগুনের প্রকৃতি সম্পর্কেও জানি না। এটি সাধারণ আগুনের মতো নয়, বরং দুনিয়ার আগুনের তুলনায় ঊনসত্তর গুণ বেশি ভয়াবহ। এটি অত্যন্ত তীব্র আগুন যেমন লাভার আগুনের মতো বরং এর চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ, যা আমাদের কল্পনার বাইরে। তাহলে কেউ কি জাহান্নামের প্রকৃত আগুনকে রূপায়িত করতে পারে? কেউ পারে না।এজন্য যারা জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়ে প্রতীকী চিত্র অঙ্কন করে, তাদের জানিয়ে দেওয়া উচিত যে এটি হারাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজকাল মানুষ পরকালীন বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে শুরু করেছে, যেন সেগুলো দৃশ্যমান ও প্রত্যক্ষ বিষয়। আমি এমন একটি কাগজ দেখেছি, যেখানে বিভিন্ন বক্স তৈরি করে লেখা হয়েছে: “মৃত্যু,” “কবর,” “কিয়ামত,” ইত্যাদি। এতে দেখানো হয়েছে, মৃত্যুর পর কী কী ঘটবে, তা রেখা ও জ্যামিতিক চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে! এটি কত বড় স্পর্ধা! আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই! তারপর বলা হয়: “তুমি কীভাবে জানলে যে ঘটনাগুলো এই ক্রমানুসারে ঘটবে?” আমরা জানি, কবর পার্থিব জীবনের পরে আসে, পুনরুত্থান কবরের পরে হবে। কিন্তু কিয়ামতের দিন যেসব ঘটনা ঘটবে হিসাব, মিযান (আমলের পাল্লা), এবং অন্যান্য ঘটনাগুলোর সুনির্দিষ্ট ক্রম কী হবে এ ব্যাপারে কে নিশ্চিতভাবে বলতে পারে? এটি চরম ধৃষ্টতা। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ধরনের কাগজপত্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে! অতএব, এমন বিভ্রান্তিকর কাগজপত্র থেকে সতর্ক থাকা এবং অন্যদেরও সতর্ক করা আবশ্যক।”(ইবনু উসাইমীন;লিকাউল বাবিল মাফতুহ ২১/২২০)
.
সৌদি আরবের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অনুষদ সদস্য ও অধ্যাপক, আকিদা ও ফিকহের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫২ হি./১৯৩৩ খ্রি.] বলেছেন,
حقائق الغيب من الماضي والحاضر والمستقبل لا يمكن تصورها فضلا عن تصويرها ! ومن ذلك: أحوال القيامة كالبعث والصراط والميزان، وما يسبق ذلك من النفخ في الصور، وما ينشأ عنه من فزع وصعق وتغيرات في العالم العلوي والسفلي وما يصاحب ذلك من أهوال. ا
“গায়েবের বাস্তবতাগুলো যা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের অন্তর্ভুক্ত তা কল্পনা করা তো দূরের কথা, সেগুলোর চিত্র অঙ্কন করাও সম্পূর্ণ অসম্ভব! এর মধ্যে রয়েছে কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা, যেমন: পুনর্জীবন, সিরাত (পুলসিরাত), এবং মিজান (ন্যায়বিচারের পাল্লা)। এছাড়াও এর আগে যা ঘটবে, যেমন: সিংগায় ফুঁক দেওয়া, এবং এর ফলে যা সংঘটিত হবে ভয়, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং আকাশ ও পৃথিবীর ব্যাপক পরিবর্তন এবং এর সঙ্গে যা কিছু ভয়াবহ ঘটনা ও আতঙ্ক আসবে”(ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩০৯৯৮৫)
.
অতএব, যদি এসব কাল্পনিক ভিডিও তৈরি করা হারাম বলে বিবেচিত হয়, তবে তা দেখা এবং শুনাও হারাম হবে। কারণ বহু ফকিহের মতে ইসলামের মৌলিক নীতির একটি হলো ইসলামে যা কিছু হারাম, তা দেখাও এবং তাতে অংশগ্রহণ করাও হারাম। “শারহুল খাতিব” গ্রন্থের উপর বুজাইরিমির হাশিয়াতে বলা হয়েছে:وما هو حرام في نفسه، يحرم التفرج عليه؛ لأنه رضا به. كما قاله ابن قاسم على المنهج।”যা নিজে হারাম, তার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করাও হারাম। যেমনটি ইবনে কাসিম তাঁর ‘মানহাজ’ গ্রন্থে বলেছেন।”এছাড়া, “তুহফাতুল মুহতাজ”-এর উপর শারওয়ানির হাশিয়াতে লেখা আছে:وكل ما حرم، حرم التفرج عليه؛ لأنه إعانة على المعصية۔”যে বস্তু হারাম, তার দিকে তাকানোও হারাম, কারণ এতে গুনাহের কাজে সহযোগিতা হয়।”(তুহফাতুল মুহতাজ; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ২২১) এছাড়া, “আদাবুল মালিকি” ও “কেফায়াতুত তালিব”-এর হাশিয়াতে বলা হয়েছে:والحاصل أن ما يحرم فعله، يحرم النظر إليه۔”সংক্ষেপে, যে কাজটি হারাম, তার দিকে তাকানোও হারাম।” সুতরাং এই সব থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, হারাম বস্তু বা কাজের প্রতি কোনোভাবে প্রশংসা বা সহযোগিতা প্রদর্শনও ইসলামে নিষিদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:
“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।”(সুরা আন-নূর ২৪: ৩০) আয়াতের উদ্দেশ্য অবৈধ ও হারাম পন্থায় কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা এবং তার সমস্ত ভূমিকাকে নিষিদ্ধ করা।এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামী স্কলাররা বলেন, হারাম বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে বেঁচে থাকাও আবশ্যক। এছাড়াও, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:”(অনিচ্ছাকৃত) প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য (ক্ষমার যোগ্য), কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার জন্য হারাম।”(সুনান আবু দাউদ হা/২১৪৯, তিরমিজি হা/২৭৭৭) এর উদ্দেশ্য এই যে, প্রথম দৃষ্টিপাত অকস্মাৎ ও অনিচ্ছাকৃত হওয়ার কারণে ক্ষমার্হ। নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম দৃষ্টিপাতও ক্ষমার্হ নয়। হাদীসে এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই “আল্লাহ তাআলা বনী আদমের জন্য কিছু কিছু ব্যভিচারের কথা জানিয়ে দিয়েছেন, যা তারা অবশ্যই করবে। যেমন তার মধ্যে একটি, চক্ষুর যিনা হলো হারাম কিছু দেখা।”(সহীহ বুখারী হা/ ৬২৪৩, ৬৬১২, মুসলিমঃ ২৬৫৭) অতএব টিভি, ইন্টারনেট, ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন শরীয়ত বিরোধী ভিডিও, নগ্ন-অর্ধনগ্ন, যৌন উত্তেজনাকর দৃশ্য দেখা চোখের যেনা। লাখো যুবক-যুবতী চোখের যেনা করছে এরই মাধ্যমে। এজন্য পর্ণোগ্রাফীর আগ্রাসন থেকে বাঁচার প্রধান মাধ্যম হল দৃষ্টিশক্তি সংযত রাখা।মহান আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় নিষিদ্ধ কর্মকান্ড থেকে হেফাজতে রাখুন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: