প্রশ্ন: গোঁফ রাখার ব্যাপারে ইসলামী নির্দেশনা কি? গোঁফ ছাটাই করতে হবে নাকি সম্পূর্ণরূপে চেঁছে ফেলতে হবে?
▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি পৃথিবীতে রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন এবং তাঁর পরিবার পরিজন, সাথীবর্গ ও তাবে‘ঈনদের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। অতঃপর: শরীয়তে যে দশটি কাজ মানুষের ফিত্বরাত বা স্বভাবসুলভঃ তারমধ্যে গোঁফ ছোট করা অন্যতম।(সহীহ মুসলিম, হা/২৬১; আবূ দাঊদ, হা/৫৩; মিশকাত হা/৩৭৯)। এমনকি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:مَنْ لَمْ يَأْخُذْ شَارِبَهُ فَلَيْسَ مِنَّا “যে ব্যক্তি গোঁফ না ছাঁটে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”।(তিরমিযী হা/২৭৬২, সহীহুল জামে হা/৬৫৩৩; সুনানে আন-নাসায়ী হা/১৩) মানুষকে গোঁফ ছোট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে এগুলো মুখের ভিতর এসে না পড়ে। কারন গোঁফ বেশী বড় হলে নাকের এবং বাইরের ময়লা মিশে মুখের ভিতরে ঢোকতে পারে। পানি পান করার সময় এবং খাদ্য আহারের সময় গোঁফে আটকে থাকা নাকের ও বাইরের রোগজীবানু বা ময়লাগুলো মুখের ভিতরে প্রবেশ করে নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। আর সেজন্যই ইসলামে গোঁফ লম্বা করে রাখতে নিষিদ্ধ করেছে। কেননা এটা স্বাস্থ্য ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিরোধীও বটে। সুতরাং সবার উচিত যথাসময়ে গোঁফ কাটা, গুপ্তস্থানের ক্ষৌরকার্য্য করা, বগলের চুল ছেঁড়া ও নখ কাটা এবং এগুলো ৪০ রাত বা দিন যেন অতিক্রম না করে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া।(বিস্তারিত দেখুন: মুসলিম হা/২৫৮; মিশকাত হা/৪৪২২)।
.
দ্বিতীয়ত: গোঁফ ছাটাই করতে হবে নাকি সম্পূর্ণরূপে চেঁছে ফেলতে হবে এই মাসালায় আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ দুটি মত পাওয়া যায়।
(১). একদল আলেমদের মতে গোঁফ পুরোপুরি মুণ্ডন করা সুন্নত। এটা হানাফী ও হাম্বলী মাযহাবের মত। তারা প্রমাণ হিসেবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথার আপাত অর্থ গ্রহণ করেছেন যেখানে রাসূল ﷺ বলেছেন:أَنْهِكُوا الشَّوَاربَ “তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে” (সহীহ বুখারী পর্ব ৭৭: /৬৫ হাঃ ৫৮৯৩, সহীহ মুসলিম ২/১৬ হাঃ ২৫৯) অনুরূপ একাধিক বর্ননা রয়েছে।
.
ইমাম ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) গোঁফ কাটা সংক্রান্ত অধ্যায় বর্ণনা করার পর বলেছেন:
:“فَثَبَتَتْ الْآثَارُ كُلُّهَا الَّتِي رَوَيْنَاهَا فِي هَذَا الْبَابِ ، وَلَا تَضَادُّ ، وَيَجِبُ بِثُبُوتِهَا : أَنَّ الْإِحْفَاءَ أَفْضَلُ مِنْ الْقَصِّ .وَهَذَا مَعْنَى هَذَا الْبَابِ ، مِنْ طَرِيقِ الْآثَارِ .وَأَمَّا مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ ، فَإِنَّا رَأَيْنَا الْحَلْقَ قَدْ أُمِرَ بِهِ فِي الْإِحْرَامِ ، وَرُخِّصَ فِي التَّقْصِيرِ .فَكَانَ الْحَلْقُ أَفْضَلَ مِنْ التَّقْصِيرِ ، وَكَانَ التَّقْصِيرُ ، مَنْ شَاءَ فَعَلَهُ ، وَمَنْ شَاءَ زَادَ عَلَيْهِ ، إلَّا أَنَّهُ يَكُونُ بِزِيَادَتِهِ عَلَيْهِ أَعْظَمَ أَجْرًا مِمَّنْ قَصَّ .فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ يَكُونَ كَذَلِكَ حُكْمُ الشَّارِبِ قَصُّهُ حَسَنٌ ، وَإِحْفَاؤُهُ أَحْسَنُ وَأَفْضَلُ .وَهَذَا مَذْهَبُ أَبِي حَنِيفَةَ ، وَأَبِي يُوسُفَ ، وَمُحَمَّدٍ .”
“আমরা এই অধ্যায়ের সকল হাদিসগুলো বর্ণনা করেছি যেগুলো একটি অপরটি বিপরীতমুখী নয়। এটা অবশ্যই প্রমাণিত হয়েছে যে গোফ খাটো করা সম্পূর্ণ কেটে ফেলার চেয়ে উত্তম। হাদিসের দিক থেকে এটাই হল তার আপাত অর্থ। আর সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জেনেছি যে ইহরাম অবস্থায় একেবারে সেভ করা অপরিহার্য ছিল। তবে খাটো করার ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছিল ফলে সেখানে খাটো করার চেয়ে একেবারে সেভ করাই বেশি উত্তম। কেউ চাইলে খাটো করতে পারে আবার কেউ চাইলে তার থেকে বেশি কাটতে পারে। তবে বেশি কাটার মাধ্যমে খাটো করার চেয়ে প্রতিদান বেশি হবে! এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত যে খাটো করা ভালো আর একেবারেই সেভ করা উত্তম। এটি ইমাম আবু হানিফা,আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদের মাযহাব। (তাহাবী; শারহু মা‘আনিল আছার; খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৩০; আরো দেখুন: ফাতহুল কাদীর ২/৩৯৮-৩৯৯)
.
(২). অপরদিকে আরেক দল আলেমদের মতে গোঁফ ছাঁটাই করা সুন্নত এবং তা সম্পূর্ণরূপে কামানো মাখরুহ (অপছন্দনীয়)। এটা মালেকী ও শাফেঈ মাজহাবের মত।আর এই মতটি পূর্ববর্তী সালাফদের থেকেও বর্ণিত হয়েছে এবং দলিলের আলোকে এই মতটি অধিক বিশুদ্ধ এবং জমহুর ‘উলামাদের মত। হাদীসের আপাত অর্থ অনুযায়ী বুঝা যায় গোঁফ ছোট করা সুন্নাহ ব্লেড বা ক্ষুর দিয়ে গোঁফ চাঁছা সুন্নাত নয়, কেননা হাদীসে যে সকল শব্দ (أَحْفُوْا، أَنْهِكُوْا، جُزُّوْا) ব্যবহৃত হয়েছে তা গোঁফ মুন্ডানো নয়,বরং ছাঁটার অর্থ বহন করে।(বিস্তারিত জানতে দেখুন;
ইমাম নববী,আল-মাজমূ‘ খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৮৭; ইমাম আলবানী আদাবুয যিফাফ; ২০৯; ইবনু উসাইমীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া; খন্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৮৪ ও ১২৮)। তাছাড়া ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন তিনি এরূপ (গোফ মুণ্ডন) আমলকারী ব্যক্তিকে প্রহার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন”।(ইমাম বায়হাক্বী; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৫১ হা/৬৮২)
.
এ মতের পক্ষের আলেমগন প্রমাণ হিসাবে হাদীস থেকে নিম্নলিখিত উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন: প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ “ফিতরাত (অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব) পাঁচটিঃ খাতনা করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভীর নিম্নে), বগলের পশম উপড়ে ফেলা,নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা”।(সহীহ বুখারী হা/৫৮৯১; সহীহ মুসলিম হা/২৫৭, মুসনাদে আহমাদ হা/৭১৪২) অপর বর্ননায় মুগীরাহ ইবনে শুবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,তিনি বলেনঃ আমার গোঁফ বেশ লম্বা হয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি আমাকে বললেন; আমি তোমার গোঁফ মিসওয়াকে রেখে কেটে দেব।(আবূ দাঊদ ১৮৮, শামায়িলে তিরমিযী ১৬৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭৪৩২, মুসনাদে আহমাদ ১৮২১২) ইমাম বায়হাকি সুনানুল কুবরায় তার সানাদে বলেন: সুরাহবিল বিন মুসলিম থেকে তিনি বর্ণনা করেছেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন পাঁচজন সাহাবীকে দেখেছি যারা গোঁফ খাটো করতেন, দাড়ি ছেড়ে দিতেন এবং রঙ্গিন করে রাখতেন। তারা হলেন: আবু উমামা বাহেলী, আব্দুল্লাহ ইবনে বিসর, উতবা ইবনু আব্দুস সালমা, হাজ্জাজ ইবনু আমির সোমালি এবং মিকদাদ ইবনে মাদিকারুবা কিন্দি। তারা তাদের গোফ ঠোঁটের কিনারা পর্যন্ত খাটো করতেন”।(ইমাম বায়হাকী সুনানুল কুবরা; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৫১)
.
দ্বিতীয় মতের পক্ষ অবলম্বনকারী আলেমগন প্রথম মতের পক্ষ অবলম্বনকারী আলেমদের দেওয়া দলিলের ব্যাপারে দুইটি উত্তর দিয়েছেন:
(এক): হাদীসের শব্দ الإحفاء والإنهاك ( ইহফা ও ইনহাক) এর উদ্দেশ্য হলো ঠোটের উপরে থাকা চুলের সাইড খাটো করা,সম্পূর্ণ কেটে ফেলা নয়। আর এর দলিল হল সেই হাদিস যেটাতে শুধুমাত্র القص শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। আবুল ওয়ালিদ বাজি “আল মুনতাকা শারহু মুয়াত্তায় বলেন: ইবনুল কাইয়ুম মালেক থেকে গোঁফ ছোট করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের ব্যাখ্যা হল সেটার শুরু হলো ঠোঁটের কিনারার লাল থেকে মুখে ঢুকে যায় ঐ অংশটুকু”।(আল মুনতাকা শারহু মুয়াত্তা; খন্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ২৬৬) শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] আল মাজমুতে বলেন: এই বর্ণনাগুলোতে শব্দগুলো ব্যবহার হয়েছে, أحفوا..أنهكوا..الشوارب “আমাদের নিকটে এর অর্থ হল ঠোটের প্রান্ত থেকে গোফকে কেটে ফেলা কিন্তু চুলের গোড়া থেকে নয়”।(নববী আল মাজমু; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৪০)
.
(দুই): الإحفاء والإنهاك ( ইহফা ও ইনহাক) এর আবিধানিক অর্থ পুরোটাই ছেঁটে ফেলা নয় বরং কিছু অংশ ছেঁটে ফেলা। আর এটাই সুন্নত।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] তার মাজমুউল ফাতাওয়ায় মেসওয়াক ও সুন্নতি তরিকা অধ্যায়ের ৫৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলেন:
” الأفضل : قص الشارب كما جاءت به السنة… وأما حلقه فليس من السنة . وقياس بعضهم مشروعية حلقه على حلق الرأس في النسك : قياس في مقابلة النص ، فلا عبرة به ، ولهذا قال مالك عن الحلق : إنه بدعه ظهرت في الناس ، فلا ينبغي العدول عما جاءت به السنة ، فإن في اتباعها الهدى والصلاح والسعادة والفلاح ”
“সর্বোত্তম হলো যেভাবে হাদিসে এসেছে সেটা অর্থাৎ গোঁফ খাটো কর সুন্নত। আর গোঁফ একেবারেই কেটে ফেলা সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত নয়।কোন কোন আলেম হজ্জে মাথা মন্ডল করার উপর কিয়াস করে বলে থাকেন যে গোফ পুরোটাই কেটে ফেলা শরীয়ত সম্মত। কিন্তু কায়দা নসের বিরোধী যা গণ্য করা ঠিক হবে না। এজন্যই ইমাম মালিক (রহিমাহুমুল্লাহ) একেবারে ছেঁটে নেওয়া সম্পর্কে বলেন এটা একটা বিদআত যেটা মানুষের মাঝে প্রচলন হয়ে গেছে ফলে হাদিসে যেভাবে এসেছে সেটা ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে এমনটি করা উচিত নয় হাদিসে যা এসেছে তা অনুসরণ করার মাধ্যমে আসবে সৌভাগ্য, সফলতা, সঠিক পথ এবং সুশৃংখল” (ইবনে উছায়মীন মাজমুউল ফাতাওয়া ১১/ মেসওয়াক ও সুন্নতি তরিকা অধ্যায়ের ৫৪ নম্বর প্রশ্ন)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগন-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে: বেশ কয়েকটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে: (গোঁফ কাটা) শেভ করা কি কাটা থেকে আলাদা? কেউ কেউ তাদের গোঁফের প্রথম অংশ কেটে ফেলেন, যা তাদের উপরের ঠোঁটের পাশে থাকে, তারা তাদের গোঁফের প্রায় অর্ধেক অংশ কেটে ফেলেন এবং বাকিটা রেখে দেন। এটা কি তার অর্থ? নাকি গোঁফ কামানো, অর্থাৎ পুরোটাই শেভ করা? যে পদ্ধতিতে গোঁফ ছাঁটা হয় সে বিষয়ে সঠিক পরামর্শ কামনা করছি।
তারা উত্তরে বলেছেন :
دلت الأحاديث الصحيحة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم على مشروعية قص الشارب ، ومن ذلك : قوله صلى الله عليه وسلم : (قصوا الشوارب وأعفوا اللحى ؛ خالفوا المشركين) متفق على صحته ، وقوله صلى الله عليه وسلم : (جزوا الشوارب وأرخوا اللحى ؛ خالفوا المجوس) ، وفي بعضها : (أحفوا الشوارب) والإحفاء هو المبالغة في القص ، فمن جز الشارب حتى تظهر الشفة العليا ، أو أحفاه : فلا حرج عليه ؛ لأن الأحاديث جاءت بالأمرين ، ولا يجوز ترك طرفي الشارب ، بل يقص الشارب كله ، أو يحفيه كله ؛ عملاً بالسنة”
“গোঁফ কাটার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সমস্ত হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো থেকে জানা যায় গোঁফ ছাঁটাই করা উত্তম। উদাহরণস্বরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো। তোমরা গোঁফ কেটে ফেলো এবং দাড়ি ছেড়ে দাও (সহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২) তিনি ﷺ আরো বলেছেন:”তোমরা গোঁফ কেটে এবং দাড়ি ছেড়ে দিয়ে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর”(সহীহ মুসলিম, হা/২৬০) কিছু বর্ননায় এসেছে “গোঁফ ছাটাই কর” ছাঁটাই মানে খুব ছোট করে কাটা। যে ব্যক্তি তার গোঁফ খুব ছোট করে বা কাটে যাতে উপরের ঠোঁট দেখা যায় তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। কেননা হাদিসের মধ্যে দুই পদ্ধতিরই কথা এসেছে। গোফের কোন এক সাইড ছেড়ে দেওয়া জায়েজ নাই বরং পুরোটাই কেটে নেওয়া হল সুন্নত সম্মত কাজ”।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা:১৪৯)
.
ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) নায়লুল আওতার গ্রন্থে বলেন:
وقد اختلف الناس في حد ما يقص عن الشارب ، وقد ذهب كثير من السلف إلى استئصاله وحلقه ، لظاهر قوله: (أحفوا) و (أنهكوا). وهو قول الكوفيين، [ورواية عن الإمام أحمد ، ويعني بالكوفيين أتباع أبي حنيفة رحمه الله] ، وذهب كثير منهم إلى منع الحلق والاستئصال ، وإليه ذهب مالك [والشافعي وأحمد في رواية عنه] .وقد شدد الإمام مالك رحمه الله في حلق الشارب فعده مُثْلَةً يستحق صاحبه التأديب، وقال بأن حلقه بدعة ظهرت في الناس ، ذكر هذا عنه النووي في “المجموع” وابن القيم في “زاد المعاد” وغيرهما، ولكن جمهور أهل العلم على خلاف هذا، إذ يرون أنه لا بأس بحلقه وقصه ، وإن اختلفوا في الأفضل”
“গোঁফ কাটার সীমার ক্ষেত্রে মানুষেরা মতভেদ করেছে। অনেক সালাফগণ মতামত দিয়েছেন যে সম্পূর্ণ কেটে নিতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট কথা হল أحفوا) و (أنهكوا (তোমরা গোফ কেটে নাও) এটা কুফিদের কথা। ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনাটি এসেছে। অর্থাৎ কুফিরা ইমাম আবু হানিফার অনুসরণ করে থাকে। আর তাদের মধ্য থেকে অনেক আলেমগণ সম্পূর্ণ কেটে নেওয়া নিষেধ করেছেন। এই মতটি ইমাম মালেক শাফিঈ আহমদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে।ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) গোঁফ কাটার ব্যাপারে খুব কঠোর ছিলে এবং গোঁফ কর্তনকারী ব্যক্তিকে আদব দেওয়ার জন্য একটি দৃষ্টান্ত করেছিলেন। তিনি বলেছেন যে এটা এমন একটা বিদআত যে মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ইমাম নববী মাজমু গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, ইবনুল কাইয়ুম যাদুল মায়াদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন ইনারা দুইজন ছাড়াও আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন কিন্তু অধিকাংশ আহলুল ইলমগন এটির বিপরীত মত পোষণ করেন এমনকি তাঁরা মনে করেন যে গোঁফ ছেটে নেওয়া এবং সম্পূর্ণ কেটে নেওয়ার ব্যাপারে কোন সমস্যা নাই। যদিও কোনটি সর্বোত্তম এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে এখতিলাফ থাকে”।(শাওকানী; নায়লুল আওতার; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা:১৪৮)
.
অএতব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে গোঁফ পরিপূর্ণ ছেঁচে ফেলা নয় বরং ছাঁটাই সুন্নাত। গোঁফ এমনভাবে ছাঁটতে হবে যেন ঠোঁট পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আর গোঁফ সম্পূর্ণ চেছে ফেলা বা শেভ করার ব্যাপারে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মত হ’ল, এটি ঠিক নয়। কেননা হাদীছে যে সকল শব্দ (أَحْفُوْا، أَنْهِكُوْا، جُزُّوْا) ব্যবহৃত হয়েছে তা গোঁফ মুন্ডানো নয়, বরং ছাঁটার অর্থ বহন করে।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)। শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা।