কুরবানির পশুর গোশত কিংবা চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের শারঈ হুকুম কী

ভূমিকা: কুরবানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কুরবানী দাতার জন্য কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া ইত্যাদি কোন কিছুই বিক্রি করা জায়েজ নয়। এমনকি কসাইকে তার পারিশ্রমিক কিংবা পারিশ্রমিকের অংশ বিশেষ কোরবানির পশুর গোশত থেকে দেওয়া যাবে না।যেহেতু সেটাও এক প্রকার বিনিময় যা ক্রয়-বিক্রয়ের মত যা শরীয়তে নিষিদ্ধ, কারন কুরবানীকৃত পশুর সমস্ত অংশই আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত বস্ত্ত,আর যে সকল বস্তু আল্লাহর জন্য বরাদ্দ হয়ে থাকে, সেগুলো ক্রয় বিক্রয় করা কিংবা বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ নয়। তবে যাকে কোরবানির পশুর হাদিয়া দেওয়া হল কিংবা সদকা দেওয়া হল তিনি এ গোশত বিক্রি করা কিংবা অন্য যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন। কারণ এ গোশতগুলো তার নিজস্ব কুরবানির গোশত নয়। অন্যের নিকট থেকে যা পেয়েছে সেগুলো এখন সে যা খুশি করতে পারে। ইচ্ছা করলে নিজে খেতে পারে আর যদি প্রয়োজন মনে করে বিক্রয়ও করতে পারে। তাতে কোন আপত্তি নাই। অনুরূপভাবে কেউ যদি সেগুলো ক্রয় করতে চায় তাহলে ক্রয় করতেও কোন আপত্তি নাই। কিন্তু তাকে যিনি হাদিয়া দিয়েছেন কিংবা সদকা দিয়েছেন তার কাছে বিক্রি করতে পারবেন না।

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন ‘কুরবানীর পশুর চামড়া সাদাক্বাহ করা’ সম্পর্কে (অধ্যায় নং-২৫, অনুচ্ছেদ নং-১২১)। অতঃপর হাদীস নিয়ে এসেছেন, প্রখ্যাত সাহাবী আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৪০ হি.] হতে বর্ণিত তিনি বলেন:
أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلَّتِهَا وَأَنْ لَا أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا . قَالَ : نَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর কুরবানীর উটগুলোর নিকট দাঁড়াতে এবং এগুলোর গোশ্ত, চামড়া ও ঝুল দান-খয়রাত করে দিতে নির্দেশ দিলেন এবং তা দিয়ে কসাইয়ের মজুরি দিতে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে তার মজুরি পরিশোধ করে দেব।(সহীহ বুখারী হা/১৭১৭; সহীহ মুসলিম হা/৩০৭১; ই.ফা. ৩০৪৬, ই.সে. ৩০৪৩) অপর বর্ননায় প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ بَاعَ جِلْدَ أُضْحِيّتِهِ فَلاَ أُضْحِيّةَ لَهُ “যে ব্যক্তি কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করল (অর্থাৎ বিক্রয়লব্ধ মূল্য ভোগ করল) তার কুরবানী হল না”।(মুসতাদরাকে হাকেম হা/৩৪৬৮ বায়হাকী হা/১৯৭০৮; সহীহুল জামে‘ হা/৬১১৮)।
.
হাম্বলি মাযহাবের গ্রন্থ যাদুল মুস্তাকনিতে বলা হয়েছে,
: ” ولا يبيع جلدها ولا شيئا منها ، بل ينتفع به “.
“তার (কুরবানীর পশুর) চামড়া কিংবা তার কোন কিছু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। বরং তার দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে। (ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১১০৬৬৫)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,
لا يجوز بيع شيء منها – أي من الهدي – ، وإن كان الجازر فقيرا فأعطاه لفقره سوى ما يعطيه أجرة جاز ، لأنه مستحق الأخذ منها لفقره لا لأجره فجاز كغيره
“কুরবানির কোন জিনিস বিক্রি করা জায়েজ নাই। কসাই যদি দরিদ্র হয় এবং তার পারিশ্রমিক ছাড়া দারিদ্র্যতার কারণে (সাদাকাহ হিসেবে) কুরবানীর গোশত তাকে দেওয়া হলে তা জায়েজ রয়েছে। কেননা সে দারিদ্রতার কারণে অন্যান্যদের (আরো হকদারদের মতো) মতো তা পাওয়ার অধিকার রাখে কিন্তু কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে পাবে না।(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ২২২)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.বলেন: ويحرم أن يبيع شيئا من الأضحية لا لحما ولا غيره حتى الجلد ، ولا يعطي الجازر شيئا منها في مقابلة الأجرة أو بعضها لأن ذلك بمعنى البيع
“কুরবানির পশুর যেকোনো জিনিস বিক্রি করা হারাম। তা গোশত হোক কিংবা অন্য কিছু হোক এমনকি চামড়াও বিক্রি করা হারাম। কসাইকে তার কাজের বিনিময়ে কুরবানীর পশুর কোন জিনিস দেওয়া যাবে না কেননা এটা বিক্রির অন্তর্ভুক্ত।(রিসালাতু আহকামিল হাদয়ী ওয়াল উযহিয়্যাহ: উসাইমীন মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ২৫তম খণ্ড; পৃষ্ঠা: ১৬২)

ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] তার শারহুল মুমতি” গ্রন্থে বলেন,

“ولا يبيع جلدها” بعد الذبح؛ لأنها تعينت لله بجميع أجزائها ، وما تعين لله فإنه لا يجوز أخذ العوض عليه ، ودليل ذلك حديث عمر بن الخطاب رضي الله عنه : أنه حمل على فرس له في سبيل الله ، يعني أعطى شخصاً فرساً يجاهد عليه ، ولكن الرجل الذي أخذه أضاع الفرس ولم يهتم به ، فجاء عمر يستأذن النبي صلّى الله عليه وسلّم في شرائه حيث ظن أن صاحبه يبيعه برخص ، فقال له النبي صلّى الله عليه وسلّم: (لا تشتره ولو أعطاكه بدرهم) ، والعلة في ذلك أنه أخرجه لله ، وما أخرجه الإنسان لله فلا يجوز أن يرجع فيه ، ولهذا لا يجوز لمن هاجر من بلد الشرك أن يرجع إليه ليسكن فيه ؛ لأنه خرج لله من بلد يحبها فلا يرجع إلى ما يحب إذا كان تركه لله عزّ وجل ، ولأن الجلد جزء من البهيمة تدخله الحياة كاللحم .[يعني لا يجوز بيعه كما لا يجوز بيع اللحم]
وقوله : “ولا شيئاً منها” ، أي لا يبيع شيئاً من أجزائها ، ككبد ، أو رجل ، أو رأس ، أو كرش ، أو ما أشبه ذلك ، والعلة ما سبق ”

জবাই করার পর “আর তার চামড়া ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না” কারণ তার সমস্ত অংশ আল্লাহর জন্য বরাদ্দ। আর যে সকল বস্তু আল্লাহর জন্য বরাদ্দ/ নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা থেকে অর্থ উপার্জন করা কারো জন্য জায়েয নয়। এর দলিল হল, উমার বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হাদিস। তিনি আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য এক ব্যক্তিকে ঘোড়া দান করেছিলেন। কিন্তু যাকে তিনি তা দিয়েছিলেন তিনি ঘোড়াটিকে অবহেলা করেছিলেন এবং এটির যথোচিত যত্ন নিতে পারেনি। ফলে উমর (রাঃ) এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এটি কেনার অনুমতি চাইলেন কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে এর মালিক এটি সস্তায় বিক্রি করবেন। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ “তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার (দেওয়া) সাদকাহ ফিরিয়ে নিয়ো না; যদিও সে তোমাকে তা এক দিরহামের বিনিময়ে দিতে চায়। কারণ তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দেওয়া হয়েছে এবং মানুষ যা কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে, দ্বিতীয়বার তা ফেরত নেওয়া তার জন্য জায়েয নয়। এজন্য মুশরিক রাষ্ট্র থেকে হিজরত করা ব্যক্তির জন্য দ্বিতীয়বার সে রাষ্ট্রে বসবাসের উদ্দেশ্যে প্রত্যাবর্তন করা বৈধ নয়। কারণ সে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার প্রাণপ্রিয় ও ভালোবাসাপূর্ণ রাষ্ট্র থেকে বের হয়েছে যা সে পছন্দ করে, সুতরাং যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসার কোন বস্তু বর্জন করা হয় তখন সেই দিকে দ্বিতীয়বার ফিরে যাওয়া জায়েয হবে না। আর এজন্য চামড়া যেহেতু চতুষ্পদ প্রাণীর একটি অংশ, যার মধ্যে জীবন অন্তর্ভূক্ত সুতরাং তা (চামড়া) বিক্রি করা যেমন জায়েয নয়, তেমনি এর গোশত বিক্রি করাও জায়েয নয়। আর তার উক্তি “এর অন্য কোন অংশ” এর অর্থ হল; তার কোন অংশ ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। যেমন: কলিজা, পাঁ, মাথা, ভুঁড়ি কিংবা অনুরূপ আরো যা কিছু রয়েছে ইত্যাদি। আর এর কারণটি উপরে উল্লিখিত হিসাবে একই।(শারহুল মুমতি” খন্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ৫১৪)

সূতরাং এর মাধ্যমে জানা যায় যে, শারঈ বিধান হচ্ছে কুরবানির পশুর চামড়া কুরবানী দাতার জন্য ব্যবহার করা জায়েজ অথবা এটির প্রাপ্যকে অর্থাৎ গরিব-মিসকিন ব্যক্তিদের মধ্য হতে যারা তা পাওয়ার উপযুক্ত তাদেরকে দান-খয়রাত করা যাবে। আর যদি কোরবানি দাতা যদি চামড়াটি কোন গরীবকে সদকা করে দেয় এবং সেই দরিদ্র ব্যক্তি তা বিক্রি করে তবে উভয়ের কোন গুনাহ নেই। ইমাম মুহাম্মাদ মুখতার আশ-শানক্বিত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
” أما إذا كان هناك شركة تشتري الجلد في نفس المسلخ ، وأعطيته الفقير ، ثم ذهب الفقير وباعه لهذه الشركة أو لهذه المؤسسة ، فلا بأس
“যদি এমন একটি কোম্পানি থাকে যে একই কসাইখানা থেকে চামড়া কিনে এবং তিনি একটি দরিদ্র ব্যক্তি তা প্রদান করে, অতঃপর গরীব লোকটি গিয়ে এই কোম্পানির কাছে বিক্রি করে, এতে দোষের কিছু নেই।(শারহু যাদিল-মুসতাক্বনি; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১১০৬৬৫)
.
▪️দ্বিতীয়: কুরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় করে তার মূল্য সাদাকাহ করার হুকুম:

কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি ও তার মূল্য সাদাকাহ করা জায়েজ কিনা এ ব্যাপারে আহালুল আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে, এক্ষেত্রে দুটি প্রসিদ্ধ মত পাওয়া যায়। যেমন:

(১) জমহুর আলেমগন তথা মালেকি, শাফেয়ী মাযহাব এবং হাম্বলী মাযহাবের একটি বর্ণনা অনুযায়ী এটি জায়েজ নয়।

(২) হানাফি মাজহাব এবং ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্ভল এর দুটি মতের অপর একটি মত অনুযায়ী কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা এবং এর মূল্য সদকা করা জায়েজ। যাইলায়ী তাঁর ‘তাবইনুল হাকায়েক’ গ্রন্থ বলেন,ولو باعهما بالدراهم ليتصدق بها جاز ; لأنه قربة كالتصدق بالجلد واللحم “যদি কেউ এ দুটি সাদাক্বাহ করার উদ্দেশ্য দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করে, তাহলে তা জায়েয, কারণ এটি চামড়া ও গোশত সাদাকাহ করার মতোই একটি ইবাদত।(তাবয়ীনিন-হাক্বায়েক্ব”খন্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৯)
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা,(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] তার “তুহফাতুল মাওলুদ বি-আহকামিল-মাওলুদ” গ্রন্থে বলেন:-
وقال أبو عبد الله بن حمدان في رعايته : ويجوز بيع جلودها وسواقطها ورأسها والصدقة بثمن ذلك ، نص عليه [أي الإمام أحمد]..
“আবু আব্দুল্লাহ বিন হামদান তার “রিআ’য়্যাত” গ্রন্থে বলেন যে, তার চামড়া কিংবা তার মাথা ক্রয়-বিক্রয় করা এবং তার মূল্য সাদাক্বাহ করা বৈধ রয়েছে। ইমাম আহমদ এর উপর দলিল দিয়েছেন”।(তুহফাতুল মাওলুদ বি-আহকামিল-মাওলুদ” পৃষ্ঠা: ৮৯)

ইমাম খাল্লাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
: وأخبرني عبد الملك بن عبد الحميد أن أبا عبد الله [يعني الإمام أحمد] قال : إن ابن عمر باع جلد بقرةٍ وتصدق بثمنه .
وقال إسحاق بن منصور : قلت لأبي عبد الله : جلود الأضاحي ما يصنع بها ؟ قال : ينتفع بها ويتصدق بثمنها . قلت : تباع ويتصدق بثمنها ؟ قال : نعم ، حديث ابن عمر ”

আব্দুল মালেক বিন আব্দুল হামিদ আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আবু আব্দুল্লাহ অর্থাৎ আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: ইবনে উমর একটি গরুর চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য সদকা করে দিয়েছিলেন। আর ইসহাক্ব বিন মানসুর বলেছেন: আমি আবু আব্দুল্লাহকে বললাম যে, কোরবানীর পশুর চামড়া দ্বারা কী করা হয়? তিনি বললেন: তা দিয়ে উপকৃত হওয়া যায় এবং তার মূল্য সাদাক্বাহ করা যায়। আমি বললাম: তা ক্রয় বিক্রয় করা যাবে এবং পরবর্তীতে তার মূল্য সাদাক্বাহ করা যাবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, (প্রমান) ইবনে উমারের হাদিস।(আল-ইনসআফ: খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৯৩)।
.
আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-মুফাসসির, আল-ফাক্বীহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আলী আশ-শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৫০ হি.] তার “নাইলুল আওত্বার”পৃষ্ঠা: গ্রন্থে বলেন:
-اتفقوا على أن لحمها لا يباع فكذا الجلود. وأجازه الأوزاعي وأحمد وإسحاق وأبو ثور وهو وجه عند الشافعية قالوا : ويصرف ثمنه مصرف الأضحية ”
“তারা সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছিলেন যে, তার (কুরবানির পশুর) মাংস ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। অনুরূপ কথা চামড়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে আওযায়ী, আহমাদ, ইসহাক্ব ও আবু সাওর এটিকে জায়েয বলে গণ্য করেছেন এবং এটি শাফীঈদের মতও যারা বলেছেন: এর মূল্য কুরবানীর খাতে ব্যায় করা যাবে। (নাইলুল আওত্বার” খন্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৫৩)
.
ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের আরেক দিকপাল, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] সহ উপমহাদেশীয় কিবার উলামাদের ফাতওয়া হচ্ছে, এমতাবস্থায় কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রয় করা বৈধ।কেননা,একদিকে চামড়াগুলো ফেলে দিলে অপচয় হবে,অন্যদিকে ফকির/মিসকীনরাও চামড়া নিতে চাচ্ছেনা! তাই নিরুপায় হয়ে চামড়াগুলো বিক্রি করে সেই টাকা হক্বদারদের মাঝে বিলি করে দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিক্রয়কৃত অর্থ নিজে ভোগ করা যাবেনা।(দেখুন: মির‘আতুল মাফাতীহ খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৩৬৯)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, কুরবানীর পশুর মাংস বা চামড়াসহ কোন অংশই বিক্রি করা যাবে না। কুরবানীর চামড়া কেউ যদি শোধন করে নিজেই ব্যবহার করতে চায় তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ। আর যদি নিজে ব্যবহার করতে অক্ষম হয় সেক্ষেত্রে সরাসরি চামড়াটা ফকির-মিসকীনদের দান করে দেওয়া উচিত। কিন্তু ফকির-মিসকীনরা যদি চামড়া নিতে না চায় বরং তারা নগদ অর্থ চায় সেক্ষেত্রে কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য ফকির-মেসকিনকে দান কিংবা কোন ধর্মীয় সংস্থাকে (যারা যাকাতের হকদার) তাদেরকে দেয়া জায়েয। এটি একটি উপকারী খাতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ যার মূল্য রয়েছে তা একেবারে নষ্ট করে দেয়ার চাইতে তার থেকে উপকৃত হওয়া উত্তম। তাছাড়া চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে কুরবানীদাতা স্বয়ং সেই চামড়ার মূল্য ভক্ষণকারী নয় বরং তিনি সেই মূল্য সাদাকাকারী। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)।
__________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি.)।

Share: