প্রশ্ন: কবর উচু করা,কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ কিংবা সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হলে রাসূল (ﷺ)-এর কবর মসজিদের ভিতরে কেন? এ বিষয়ে কি বলবেন?
▬▬▬▬▬▬▬▪️🌻▪️▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমত: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) থেকে প্রমাণিত বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় কবর কেন্দ্রিক মোট ৫টি বিষয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। আর সেগুলো হচ্ছে: কবরের দেয়ালে চুনকাম করা, কবরের উপরে বসা, কবর বাঁধানো বা কবরের উপরে ঘর/মাযার জাতীয় কিছু তৈরি করা, কবরের উপরে লেখা এবং অতিরিক্ত মাটি এনে কবর উঁচু করা ইত্যাদি কাজগুলো অত্যন্ত গর্হিত এবং নিন্দনীয়। এমনকি রাসূল (ﷺ) অভিশাপ করেছেন ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে যারা কবরকে মসজিদে পরিনত করে এবং সেখানে বাতি জ্বালায়। অথচ সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন (রাঃ)-এর যুগে ইসলামী শহর সমূহে কোন কবর পাকা করা বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করা হয় নি। না নবী (ﷺ) এর কবরে না অন্য কারও কবরে। প্রখ্যাত সাহাবী জাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ“রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে চুনকাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর বিল্ডিং নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।”(সহিহ মুসলিম হা/২১৩৫) বর্ণনাকারী উসমানের বর্ণনায় রয়েছে, أَوْ يُزَادَ عَلَيْه ‘এবং ক্ববরের উপরে অতিরিক্ত কিছু যোগ করতে নিষেধ করেছেন’ (আবূ দাঊদ, হা/৩২২৬)। উক্ত হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হল যে, কবরে প্লাস্টার লাগানো, চুনকাম করা, পাকা করা, কবরের উপর বিল্ডিং ও গম্বুজ, মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণ করা হারাম ও অবৈধ। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রতিমান হয় যে, কবরের উপরে বসা, হেলান দেওয়া এবং ভর দেওয়া একটি হারাম কাজ। কেননা এর দ্বারা সমাহিত বা দাফনকৃত ব্যক্তির সম্মান নষ্ট করা হয়। তাই যেমন সমাহিত ব্যক্তির সম্মান রক্ষা করা উচিত, তেমনি তার কবরেরও সম্মান রক্ষা করা উচিত। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,قوله ” وأن يُبنى عليه ” : فيه دليل على تحريم البناء على القبر”তার (কবরের) উপর স্থাপনা নির্মাণ: এই বাক্যাংশটি নির্দেশ করে যে, কবরের উপর কিছু নির্মাণ করা হারাম”।(শাওকানী নাইলুল আওতার; খন্ড:৪; পৃষ্ঠা: ১৩) অপর বর্ননায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হচ্ছে তারা যারা কিয়ামত সংঘটনের সময় জীবিত থাকবে এবং তারা যারা কবরগুলোকে মসজিদ বানাবে।”(মুসনাদে আহমাদ (১/৪০৫), এ হাদিসটি প্রধান অংশ ‘মুয়াল্লাক’ হিসেবে সহিহ বুখারীর ‘ফিতান’ অধ্যায়ের এর ‘যুহুরুল ফিতান’ পরিচ্ছেদে ৭০৬৭) উদ্ধৃত হয়েছে এবং সহিহ মুসলিমের ‘ফিতান’ অধ্যায়ের ‘কুরবুস সাআ’ পরিচ্ছেদে ২৯৪৯) উদ্ধৃত হয়েছে; তবে সেখানে কবরকে মসজিদ বানানোর বিষয়টি বর্ণিত হয়নি।আরেক বর্ননায় আবু মারছাদ আল-গানাওয়ি (রাঃ) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে নামায পড়ো না।”(সহিহ মুসলিম হা/৯৭২) এই হাদীসগুলো থেকে যানা যায়,কবরের উপর বসা এবং সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ।
.
দ্বিতীয়ত: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর দুই সাহাবী [আবু বকর ও উমর (রাঃ) কে মসজিদে দাফন করা হয়নি, বরং তাদেরকে ‘আম্মাজান আয়শা’ (রা:)-এর ঘরে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে যখন মসজিদটি সম্প্রসারিত হয়েছিল। হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে কক্ষটি মসজিদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তার এ কাজ মসজিদে দাফনের হুকুমের আওতায় আসে না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দুই সাহাবীকে মসজিদের জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়নি, বরং যে কক্ষে তাদের দাফন করা হয়েছে সেটি ছিল। সম্প্রসারণের কারণে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। উপরে উদ্ধৃত ছহীহ হাদীছের কারণে কবরের উপর স্থাপনা নির্মাণ করা বা কবরকে উপাসনালয় হিসেবে গ্রহণ করা বা মসজিদের অভ্যন্তরে লোকজনকে দাফন করা জায়েয হওয়ার প্রমাণ হিসেবে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে না। আল-ওয়ালিদ যা করেছেন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রমাণিত সুন্নাতের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রমাণ নয়।সুতরাং যারা দাবি করেছে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর মসজিদে রয়েছে এর ওপর ভিত্তি করে কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা এবং মসজিদের মধ্যে কবর প্রবেশ করানো জায়েজ তাদের প্রতি উত্তরে তারা জবাব দিয়েছেন। আমরা এখানে আমাদের অভিজ্ঞ কিছু আলেমদের ফাতাওয়া উল্লেখ করব যাতে রয়েছে প্রশ্নের অস্পষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। যেমন:
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
” هنا شبهة يشبه بها عُبَّاد القبور ، وهي : وجود قبر النبي صلى الله عليه وسلم في مسجده ، والجواب عن ذلك : أن الصحابة رضي الله عنهم لم يدفنوه في مسجده ، وإنما دفنوه في بيت عائشة رضي الله عنها ، فلما وَسَّعَ الوليد بن عبد الملك مسجد النبي صلى الله عليه وسلم في آخر القرن الأول أدخل الحجرة في المسجد ، وقد أساء في ذلك ، وأنكر عليه بعض أهل العلم ، ولكنه اعتقد أن ذلك لا بأس به من أجل التوسعة .
فلا يجوز لمسلم أن يحتج بذلك على بناء المساجد على القبور ، أو الدفن في المساجد ؛ لأن ذلك مخالف للأحاديث الصحيحة ؛ ولأن ذلك أيضا من وسائل الشرك بأصحاب القبور ”
“এখানে একটি বিষয়ের সন্দেহ রয়েছে যার সাথে কবর পূজারীদের সাদৃশ্য করা হয়েছে। আর তা হল মসজিদে নববীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর রয়েছে। এর উত্তর হল রাসুল সাঃ কে সাহাবীগণ মসজিদে নববীতে দাফন করেননি। বরং আয়েশা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহার বাড়িতে দাফন করা হয়েছিল।যখন ওয়ালিদ বিন মালিক মসজিদে নববীকে প্রথম যুগের শেষ দিকে প্রশস্ত করতে চাইলেন তখন তিনি মসজিদে একটি ঘর প্রবেশ করালেন। এতে তিনি মনে হয় খুব একটা ভালো কাজ করলেন না ফলে এ বিষয়ে কিছু আলেমগণ অস্বীকার করলেন কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে এটি মসজিদ প্রশস্ততার কারণে করা হয়েছে ফলে এটাতে কোন সমস্যা নাই। কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে এই দলিলের মাধ্যমে কবরের উপর মাসজিদ তৈরি করা এবং মাসজিদের মধ্যে দাফন করা দলিল পেশ করা। কেননা এটা সহিহ হাদিস গুলোর বৈপরীত্য হয়ে যায় এবং এটা কবরবাসীদের মাধ্যমে শিরকের মাধ্যম হয়ে যায়। ( ফাতাওয়া মাজমু শায়েখ বিন বায রহ. ৫/৩৮৮-৩৮৯)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে “কবর আছে এমন মসজিদে সলাত আদায় করার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল?
তিনি উত্তর দিয়েছেন:
” الصلاة في مسجد فيه قبر على نوعين :
الأول : أن يكون القبر سابقاً على المسجد ، بحيث يبنى المسجد على القبر ، فالواجب هجر هذا المسجد وعدم الصلاة فيه ، وعلى من بناه أن يهدمه ، فإن لم يفعل وجب على ولي أمر المسلمين أن يهدمه .
والنوع الثاني : أن يكون المسجد سابقاً على القبر ، بحيث يدفن الميت فيه بعد بناء المسجد ، فالواجب نبش القبر ، وإخراج الميت منه ، ودفنه مع الناس .
وأما المسجد فتجوز الصلاة فيه بشرط أن لا يكون القبر أمام المصلي ، لأن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن الصلاة إلى القبور .
أما قبر النبي صلى الله عليه وسلم الذي شمله المسجد النبوي فمن المعلوم أن مسجد النبي صلى الله عليه وسلم بُنِيَ قبل موته فلم يُبْنَ على القبر ، ومن المعلوم أيضاً أن النبي صلى الله عليه وسلم لم يدفن فيه ، وإنما دفن في بيته المنفصل عن المسجد ، وفي عهد الوليد بن عبد الملك كتب إلى أميره على المدينة وهو عمر بن عبد العزيز في سنة 88 من الهجرة أن يهدم المسجد النبوي ويضيف إليه حجر زوجات النبي صلى الله عليه وسلم ، فجمع عمر وجوه الناس والفقهاء وقرأ عليهم كتاب أمير المؤمنين الوليد فشق عليهم ذلك ، وقالوا : تَرْكُها على حالها أدعى للعبرة ، ويحكى أن سعيد بن المسيب أنكر إدخال حجرة عائشة ، كأنه خشي أن يتخذ القبر مسجداً فكتب عمر بذلك إلى الوليد فأرسل الوليد إليه يأمره بالتنفيذ فلم يكن لعمر بُدٌّ من ذلك ، فأنت ترى أن قبر النبي صلى الله عليه وسلم لم يوضع في المسجد ، ولم يُبْنَ عليه المسجد ، فلا حجة فيه لمحتج على الدفن في المساجد أو بنائها على القبور ، وقد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : ” لعنة الله على اليهود والنصارى اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد ” ، قال ذلك وهو في سياق الموت تحذيراً لأمته مما صنع هؤلاء ، ولما ذكرت له أم سلمة رضي الله عنها كنيسة رأتها في أرض الحبشة وما فيها من الصور قال : ” أولئك إذا مات فيهم الرجل الصالح ، أو العبد الصالح بنوا على قبره مسجداً ، أولئك شرار الخلق عند الله ” ، وعن ابن مسعود رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ” إن مِن شرار الناس مَن تدركهم الساعة وهم أحياء ، والذين يتخذون من القبور مساجد ” أخرجه الإمام أحمد بسند جيد .
والمؤمن لا يرضى أن يسلك مسلك اليهود والنصارى ، ولا أن يكون من شرار الخلق .
“যে মসজিদে কবর আছে সেখানে সালাত পড়া দুই পদ্ধতিতে হতে পারে:
প্রথম পদ্ধতি: যদি মসজিদের পুর্বেই ঐ স্থানে কবর হয়, অতঃপর কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তাহলে আবশ্যক হলো মসজিদটি স্থানান্তরিত করা এবং তাতে সালাত পড়া থেকে বিরত থাকা। আর যিনি এটা বানিয়েছে তার জন্য আবশ্যক হলো তা ধ্বংস করা। যদি তিনি এটা না করেন তাহলে মুসলিম শাসকদের জন্য আবশ্যক হলো তা ধ্বংস করা।
.
দ্বিতীয় পদ্ধতি: মসজিদ যদি আগে নির্মিত হয় অতঃপর মসজিদ নির্মাণের পর সেখানে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়। সেক্ষেত্রে আবশ্যক হলো কবর খনন করে মৃতের দেহাবশেষ সেখান থেকে বের করা এবং অন্যান্য মৃত মানুষদের সাথে (মুসলিম গোরস্থানে) তাকে দাফন করা।
এ ধরনের মসজিদে সালাত পড়া জায়েয, যতক্ষণ না সালাতরত ব্যক্তির সামনে কবর থাকে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের দিকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের ব্যাপারে যা মসজিদে নববীতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এটা সর্বজনবিদিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্বে মসজিদে নববী নির্মাণ করা হয়েছিল। কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। এটাও সর্বজনবিদিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামকে মসজিদে দাফন করা হয়নি। বরং মসজিদ থেকে বিচ্ছিন্ন তাঁর নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছিল। ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের শাসনামলে তিনি মদিনার গভর্নর উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে ৮৮ হিজরীতে চিঠি লিখেছিলেন যে, মসজিদে নববী ভেঙে ফেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের কক্ষ সংযুক্ত করার। উমর লোকজনদেরকে এবং ফুকাহাদের-কে ডেকে তাদের সামনে খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিকের দেওয়া চিঠিটা পড়ে শোনালেন। এই জিনিসটা তাদের সবার কাছে কঠিন মনে হলো। ফলে তারা বলল: “এটিকে যে অবস্থায় আছে তেমনই রেখে দাও, এটাই উত্তম। এমনকি এটি বর্ণিত হয়েছে যে,”সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রাহিমাহুল্লাহ) আয়েশা (রা:)-এর ঘরকে মসজিদে অন্তর্ভুক্ত করার নিন্দা করেছিলেন এই ভয়ে যে, অনেকেই সেটাকে মাসজিদ রূপে গ্রহণ করে নিবে। তখন উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রাহিমাহুল্লাহ)-এই কথাটি খলিফা ওয়ালিদের কাছে লিখে পাঠালেন, ওয়ালিদ তাকে (উমর ইবনে আব্দুল আজিজকে) তার আদেশ পালন করার নির্দেশ দিয়ে তাকে একটি বার্তা পাঠান। ফলে উমর ইবনে আব্দুল আজিজের খলিফার নির্দেশ পালন করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
সুতরাং দেখতে পাচ্ছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর মসজিদের বিতর স্থাপন করা হয়নি এবং এর উপর মসজিদ নির্মিত হয়নি, সুতরাং যারা এটিকে প্রমাণ হিসাবে উদ্ধৃত করার চেষ্টা করে তাদের পক্ষে কোন দলিল নেই যে রাসূল (ﷺ) কে মসজিদে দাফন করা হয়েছে কিংবা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইহুদি খ্রিস্টান এর উপর আল্লাহ তাআলার লানত, যারা তাদের নবীর কবরকে মসজিদের হিসেবে গ্রহণ করেছে। এটা দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে সতর্ক করেছেন যাতে করে তাদের মাঝে কোন বুজুর্গ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার কবরকে সিজদার স্থান হিসেবে গ্রহণ না করে। উম্মে সালমা গির্জার কথা উল্লেখ করেছেন যেটা তিনি আবিসিনিয়ায় দেখেছিলেন যে তাদের সিজদার স্থানে ছবি রয়েছে। তিনি (ﷺ) বলেন, যারা তাদের মাঝে সৎ ব্যাক্তিদের কবরকে মসজিদের হিসেবে তৈরি করে তারাই হলো আল্লাহ তাআলার নিকটে সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি যারা তাদের বুজুর্গ ব্যক্তিদের কবরকে মসজিদ রূপে গ্রহণ করে”। এটি ইমাম আহমাদের বর্ণনা। সুতরাং মুমিনের উচিত নয় ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পথ অনুসরণ করা বা সবচেয়ে নিকৃষ্টতম সৃষ্টিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া।(মাজমুউ ফাতাওয়া শায়েখ বিন উছায়মীন ১২/২৯২)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)।