❒ প্রথমত: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) থেকে প্রমাণিত বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় কবর কেন্দ্রিক মোট ৫টি বিষয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। আর সেগুলো হচ্ছে কবরের দেয়ালে চুনকাম করা, কবরের উপরে বসা, কবর বাঁধানো বা কবরের উপরে ঘর/মাযার জাতীয় কিছু তৈরি করা, কবরের উপরে লেখা এবং অতিরিক্ত মাটি এনে কবর উঁচু করা ইত্যাদি কাজগুলো অত্যন্ত গর্হিত এবং নিন্দনীয়। এমনকি রাসূল (ﷺ) অভিশাপ করেছেন ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে যারা কবরকে মসজিদে পরিনত করে এবং সেখানে বাতি জ্বালায়। অথচ সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন (রাঃ)-এর যুগে ইসলামী শহর সমূহে কোন কবর পাকা করা বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করা হয় নি। না নবী (ﷺ) এর কবরে না অন্য কারও কবরে। প্রখ্যাত সাহাবী জাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ“রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে চুনকাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর বিল্ডিং নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।”(সহিহ মুসলিম হা/২১৩৫)। উক্ত হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ হল যে কবরে প্লাস্টার লাগানো, চুনকাম করা, পাকা করা, কবরের উপর বিল্ডিং ও গম্বুজ, মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণ করা হারাম ও অবৈধ। এই হাদীসটির দ্বারা এটা প্রতিমান হয় যে, কবরের উপরে বসা, হেলান দেওয়া এবং ভর দেওয়া একটি হারাম কাজ। কেননা এর দ্বারা সমাহিত বা দাফনকৃত ব্যক্তির সম্মান নষ্ট করা হয়। তাই যেমন সমাহিত ব্যক্তির সম্মান রক্ষা করা উচিত তেমনি তার কবরেরও সম্মান রক্ষা করা উচিত। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,قوله ” وأن يُبنى عليه ” : فيه دليل على تحريم البناء على القبر”তার (কবরের) উপর স্থাপনা নির্মাণ: এই বাক্যাংশটি নির্দেশ করে যে কবরের উপর কিছু নির্মাণ করা হারাম”।(শাওকানী নাইলুল আওতার; খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৩) অপর বর্ননায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হচ্ছে তারা যারা কিয়ামত সংঘটনের সময় জীবিত থাকবে এবং তারা যারা কবরগুলোকে মসজিদ বানাবে।”(মুসনাদে আহমাদ (১/৪০৫), এ হাদিসটি প্রধান অংশ ‘মুয়াল্লাক’ হিসেবে সহিহ বুখারীর ‘ফিতান’ অধ্যায়ের এর ‘যুহুরুল ফিতান’ পরিচ্ছেদে ৭০৬৭) উদ্ধৃত হয়েছে এবং সহিহ মুসলিমের ‘ফিতান’ অধ্যায়ের ‘কুরবুস সাআ’ পরিচ্ছেদে ২৯৪৯) উদ্ধৃত হয়েছে; তবে সেখানে কবরকে মসজিদ বানানোর বিষয়টি বর্ণিত হয়নি। আরেক বর্ননায় আবু মারছাদ আল-গানাওয়ি (রাঃ) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে সালাত পড়ো না।”(সহিহ মুসলিম হা/৯৭২) এই হাদীসগুলো থেকে জানা যায় কবরের উপর বসা এবং সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ।
❒ দ্বিতীয়ত: মাজার ভাঙ্গা সম্পর্কে ইসলামি হুকুম কী? এই দায়িত্ব কার?
মানব ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে যুগে যুগে সকল সমাজের মুশরিকদেরই ধারণা যে নেককার মানুষ মৃত্যুর পরে আরো বেশি অলৌকিক ক্ষমতা ও অধিকার লাভ করে। তারা দেহের খোলস থেকে মুক্ত হয়ে পুরো আত্মিক আধিপত্য ও ক্ষমতা অর্জন করে। এজন্য জীবিত নেককারদের চেয়ে মৃত নেককারদের ইবাদত করা বা তাদেরকে আল্লাহর শরীক বাননোর প্রবণতা সব মুশরিকদের মধ্যেই বেশি। ফলে তারা মৃতের কবরের উপর মাযার তৈরি করে। সেখানে ইবাদত করা, মৃতব্যক্তিদের কাছে বিপদমুক্তি প্রার্থনা করা কিংবা সাহায্য প্রার্থনা করা কিংবা মদদ চাওয়া, অথবা অভাব দূর করার জন্য তাদেরকে ডাকা, কিংবা দুশ্চিন্তা দূর করা, কল্যাণ আনয়ন ও অকল্যাণ দূর করার জন্য প্রার্থনা করা শির্কে আকবার (বড় শির্ক); এটি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যাবে এবং এটি তাকে পৌত্তলিক উপাসকে পরিণত করবে। কারণ দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা এক আল্লাহ ছাড়া কেউ দূর করতে পারে না; তাঁর কোন শরিক নেই্। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তিনিই আল্লাহ্ তোমাদের রব। আধিপত্য তাঁরই। আর তোমরা তাঁর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো খেজুর আঁটির আবরণেরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না এবং শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর তোমরা তাদেরকে যে শরীক করেছ তা তারা কিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞ আল্লাহর মত কেউই আপনাকে অবহিত করতে পারে না।”।[সূরা ফাতির, আয়াত: ১৩-১৪] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ্ মনে কর তাদেরকে ডাক, অতঃপর দেখবে যে, তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার বা পরিবর্তন করার শক্তি তাদের নেই। তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিটকতর হতে পারে, আর তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার রবের শাস্তি ভয়াবহ।”[সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৫৬-৫৭]
.
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম দেশের ইসলামি সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হল উঁচু কবর, মাজার ইত্যাদি ভেঙ্গে ফেলা। এ মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রখ্যাত তাবেয়ি আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমাকে প্রখ্যাত সাহাবী আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৪০ হি.] (তার খেলাফত কালে সরকারী ফরমানে) বললেন,أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَ“আমি তোমাকে কি এমন একটি কাজের দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবো না যে কাজের দায়িত্ব দিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হলো, কোন মূর্তি বা প্রতিকৃতি পেলে তাকে মুছে দিবে আর কোন উঁচু কবর পেলে তা ভেঙ্গে বরাবর করে দিবে।” (সহিহ মুসলিম হা/২১৩৩) উক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম তিরমিজি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেন। ভূমি হতে কবর অধিক উচু করাকে তারা মাকরুহ মনে করেন। ইমাম শাফিঈ বলেন, কবর উচু করাকে আমি মাকরূহ বলে মনে করি। তবে এটুকু উচু তো অবশ্য করতে হবে যাতে করে লোকেরা বুঝে এটা কবর। এর ফলে কবরের উপর দিয়ে তারা চলাফিরা করবে না এবং এর উপর বসবে না।(তিরমিজি হা/১০৪৯ টিকা দ্রষ্টব্য)
.
উক্ত হাদীসের ব্যাখায় ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
قوله ” ولا قبراً مشرفاً إلا سويتَه ” فيه : أن السنة أن القبر لا يُرفع رفعاً كثيراً مِن غير فرقٍ بين مَن كان فاضلا ومَن كان غير فاضل .
والظاهر : أن رفع القبور زيادة على القدر المأذون فيه محرم ، وقد صرح بذلك أصحاب أحمد وجماعة من أصحاب الشافعي ومالك .
والقول بأنه غير محظور لوقوعه من السلف والخلف بلا نكير كما قال الإمام يحيى والمهدي في ” الغيث ” لا يصح لأن غاية ما فيه أنهم سكتوا عن ذلك والسكوت لا يكون دليلا إذا كان في الأمور الظنية وتحريم رفع القبور ظني .
ومِن رفع القبور الداخل تحت الحديث دخولاً أوليّاً : القُبب والمشاهد المعمورة على القبور وأيضا هو من اتخاذ القبور مساجد وقد لعن النبي صلى الله عليه وآله وسلم فاعل ذلك .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা : “কোন কবর উঁচু করবে না সবগুলোই তুমি সমান করে দাও”। এই হাদিসে বুঝানো হয়েছে কোন কবরকে উঁচু করা যাবে না যদিও সেটা নেককার ব্যক্তি হয় কিংবা সাধারণ ব্যক্তি হয় অর্থাৎ (নেককার ব্যক্তির কবর আর সাধারন ব্যক্তির কবরের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই)।
স্পষ্ট কথা হল: কবর যতটুকু উঁচু করা শরীয়ত সম্মত তার চাইতে বেশি উঁচু করা হারাম। এটি আহমেদের সাহাবীগণ, ইমাম শাফেঈ এবং মালেকী মাজহাবের এক দলের মতামত। এটা বলা নিষিদ্ধ নয় যেটা পূর্বসূরীদের কাছ থেকে ঘটেছে যেমন ইমাম ইয়াহিয়া এবং মাহাদী “গাইস” গ্রন্থে বলেছেন সেটা শুদ্ধ নয় যে এমন কাজ তাঁদের সময়ে হচ্ছিল আর তাঁরা চুপ ছিলেন আর চুপ থাকাটা শরীয়তের দলিল হয়ে যায় না। এবং কবর উঁচু করা হারাম এ বিধানটি রহিত হয়ে যায় না।
কবর উত্থাপনের উদাহরণ যা হাদিসের অধীনে আসে তা হল প্রথমত গম্বুজ , কবরের উপর খোদাই করা দৃশ্য, এটিও তার অন্তর্ভুক্ত যে কবরকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করা । যারা এমন কাজ করে তাদের উপরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন।(নায়লুল আওত্বার, খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা:১৩০)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
القول المفيد شرح كتاب التوحيد” :
” قوله : ( ولا قبرا مشرفا ) : عاليا .
قوله : ( إلا سويته ) . له معنيان :
الأول : أي سويته بما حوله من القبور .
الثاني : جعلته حسنا على ما تقتضيه الشريعة ، قال تعالى : ( الذي خلق فسوى ) ( الأعلى : 2 ) أي : سوى خلقه أحسن ما يكون ، وهذا أحسن ، والمعنيان متقاربان .
والإشراف له وجوه :
الأول : أن يكون مشرفا بكبر الأعلام التي توضع عليه ، وتسمى عند الناس ( نصائل ) أو ( نصائب ) ، ونصائب أصح لغة من نصائل .
الثاني : أن يبنى عليه ، هذا من كبائر الذنوب ، لأن النبي صلى الله عليه وسلم : ( لعن المتخذين عليه المساجد والسرج ) .
الثالث : أن تشرف بالتلوين ، وذلك بأن توضع على أعلامها ألوان مزخرفة .
الرابع : أن يرفع تراب القبر عما حوله ليكون ظاهرا .
فكل شي مشرف ، ظاهر على غيره متميز عن غيره يجب أن يسوى بغيره ، لئلا يؤدي ذلك إلى الغلو في القبور والشرك
তাঁর অর্থাৎ রাসূল ﷺ এর কথা: (উঁচু কবর) অর্থাৎ কবর।(তবে তা সমান করে দাও) এর দুটি অর্থ রয়েছে।
(১).অর্থাৎ কবরের আশপাশ সমান করে দাও।
(২).শরীয়তের দাবি অনুযায়ী তা ভালোতে পরিণত করো। আল্লাহ তা’আলা বলেন:”যিনি সৃষ্টি করেছেন,অতঃপর যথাযথভাবে সমন্বিত করেছেন”।(সূরা আলা: ২) আর এটি অধিক উত্তম। দুটি অর্থ পাশাপাশি।
কবর উঁচু করার কয়েকটি অর্থ রয়েছে।
প্রথম: বড় প্রতীকের মাধ্যমে উঁচু করা; যা তার উপরে স্থাপন করা হয়। আর এটি মানুষের কাছে খুঁটি নামে পরিচিত।
দ্বিতীয়: তার উপরে কোন কিছু নির্মাণ করা হয়। আর এটি কাবিরা গুনাহ। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপরে মাসজিদ ও বাতি গ্রহণকারীদের লা’নত করেছেন।
তৃতীয়: কবরকে রং দ্বারা রাঙ্গানো। কবরের চারদিক বিভিন্ন রং দিয়ে রাঙানো হয় যাতে করে তিনি সম্মানিত ছিলেন তা বুঝানোর উদ্দেশ্য। চতুর্থ: কবরের মাটিকে তার আশপাশের চাইতে উঁচু করা; যাতে করে তা স্পষ্ট থাকে। তাই সামান্য পরিমাণ উঁচু রাখতে হবে; যা অন্যগুলো থেকে স্পষ্ট থাকে এবং পৃথক করা যায়। বাকি গুলো অন্য গুলোর সাথে মিলিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। যাতে করে তা কবরের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও শিরকের দিকে না নিয়ে যায়” (উসাইমীন; আল কাওলুল মুফিদ আলা কিতাবিত তাওহীদ, ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮৩১৩৩)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,” البناء على القبور بدعة منكرة ، فيها غلو في تعظيم من دفن في ذلك وهو ذريعة إلى الشرك ، فيجب على ولي أمر المسلمين أو نائبه الأمر بإزالة ما على القبور من ذلك وتسويتها بالأرض ؛ قضاء على هذه البدعة ، وسدا لذريعة الشرك “কবরের উপর কিছু নির্মাণ করা নিন্দনীয় (জঘন্যতম) বিদআত। এর মাঝে রয়েছে যাকে দাফন করা হয়েছে তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি অতিরঞ্জন এবং শির্কের বড় মাধ্যম। তাই মুসলমানদের নেতা ( সরকার, আমীর, অভিভাবক) বা তাঁর প্রতিনিধিকে অবশ্যই কবরের উপর যা কিছু আছে তা অপসারণের আদেশ দেওয়া এবং তাদের সমান করা আবশ্যক। যাতে করে এই জঘন্যতম বিদআত থেকে এবং শিরকের পন্থা থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করতে পারে”। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪১৩)
.
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:لَمْ يُشَرِّعْ النبيّ صَلى اللهُ عَليْه وسلّم لِأُمَّتِهِ أَنْ يَبْنُوا عَلَى قَبْرِ نَبِيٍّ وَلَا رَجُلٍ صَالِحٍ ، لَا مِنْ أَهْلِ الْبَيْتِ وَلَا غَيْرِهِمْ ، لَا مَسْجِدًا وَلَا مَشْهَدًا . وَلَمْ يَكُنْ عَلَى عَهْدِهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فِي الْإِسْلَامِ مَشْهَدٌ مَبْنِيٌّ عَلَى قَبْرٍ ، وَكَذَلِكَ عَلَى عَهْدِ خُلَفَائِهِ الرَّاشِدِينَ وَأَصْحَابِهِ الثَّلَاثَةِ وَعَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَمُعَاوِيَةَ ، لَمْ يَكُنْ عَلَى عَهْدِهِمْ مَشْهَدٌ مَبْنِيٌّ لَا عَلَى قَبْرِ نَبِيٍّ وَلَا غَيْرِهِ ، لَا عَلَى قَبْرِ إِبْرَاهِيمَ الْخَلِيلِ وَلَا عَلَى غَيْرِهِ ““নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মতকে কোন নবী বা ধার্মিক ব্যক্তির কবর নির্মাণের জন্য শরীয়ত সম্মত করেননি। আহলে বাইত বা অন্যদের জন্যেও করেননি। করবের উপর মাসজিদ করতে এবং পূজার স্থান করতেও নির্দেশ দেননি। ইসলামে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় কোন কবরের উপর উঁচু কোন দৃশ্য ছিল না এবং খোলাফায়ে রাশেদিন, তাঁর তিনজন সাহাবী, আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এবং মুয়াবিয়া এর জামানাতেও এরূপ ছিল না। তাঁদের সময়ে কোন নবীর কবরে কিংবা অন্য কারো কবরে অথবা ইব্রাহিম খলিল আ: এবং অন্য কোন নবীর কবরেও উঁচু কোন দৃশ্য ছিল না।(মানহাজুস সুন্নাতিন নববিয়্যাহ; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৭৯)
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,كَانَتْ قُبُورُ أَصْحَابِهِ صلى الله عليه وسلم لَا مُشْرِفَةً، وَلَا لَاطِئَةً ، وَهَكَذَا كَانَ قَبْرُهُ الْكَرِيمُ ، وَقَبْرُ صَاحِبَيْهِ ، فَقَبْرُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسَنَّمٌ مَبْطُوحٌ بِبَطْحَاءِ الْعَرْصَةِ الْحَمْرَاءِ لَا مَبْنِيَّ وَلَا مُطَيَّنَ ، وَهَكَذَا كَانَ قَبْرُ صَاحِبَيْهِ “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবীদের কবর উঁচু ছিল না তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানিত কবর এবং তাঁর সাহাবী দ্বয়ের (উমর ও আবু বকর রা. ) অনুরূপ উঁচু ছিল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর লাল মাটি দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল কিন্তু তার উপর কোন কিছু নির্মাণ করা হয়নি এমনিভাবে তাঁর সাহাবী দ্বয়ের কবরও ছিল।(যাদুল মাআদ: খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৫০৫)
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, “কবরের উপর কোন কিছু নির্মাণ করা হারাম। যেমন কবর পাকা করা, কবরের চার পাশে প্রাচীর নির্মাণ করা, গম্বুজ, মাজার ইত্যাদি তৈরি করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এতে কবরবাসীকে অতিরিক্ত সম্মান করার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কবরবাসীদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করারও ভয় রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ কবরের অবস্থাই তাই। অধিকাংশ মানুষই কবরবাসীদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে থাকে। আল্লাহর কাছে কিছু পাওয়ার আশায় কবরবাসীর উসীলায় দো‘আ করে থাকে। কবরবাসীদের কাছে দো‘আ করা এবং বিপদাপদ দূর করার জন্য তাদের কাছে ফরিয়াদ করা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আমরা মহান আল্লাহর নিকট এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। জেনে রাখা ভাল যে কবরের উপর নির্মিত মাজার ভাঙ্গার দায়িত্ব ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুসলিম শাসকের কোন আম জনতার নয়। তবে সাধারণ মানুষ যদি নিশ্চিত থাকে যে তারা তাদের এলাকার মাজার ভাঙ্গার ফলে কোন সমস্যা কিংবা ফিতনা সৃষ্টির আশংকা থাকবে না তাহলে তারাও ভাঙ্গতে পারে কিন্তু মাজার ভেঙ্গে দেওয়ার কারনে যদি সমস্যা/হানাহানি তৈরি হবে এমন আশংকা থাকে তবে অবশ্যই তারা এ-কাজ থেকে বিরত থাকবে। বরং দেশের মুসলিম সরকার তার প্রশাসন দিয়ে মাজার ভাঙ্গার কাজ সম্পন্ন করবে।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)