ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর ঘুম ওজু ভঙ্গ করে কি না এই বিষয়ে আহলুল ইলমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একাধিক অভিমত পরিলক্ষিত হয়, যার মধ্যে তিনটি মত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
(১).একদল আলেমদের মতে ঘুমের পরিমাণ ও অবস্থান যেমনই হোক না কেন সকল প্রকার ঘুমই ওযু ভঙ্গ করে। সুতরাং কেউ শুয়ে থেকে কিংবা কোনোকিছুতে হেলান দিয়ে ঘুমালে অথবা রুকুরত বা সিজদারত অবস্থায় ঘুমালে তার ওজু নষ্ট হয়ে যাবে; সেক্ষেত্রে ঘুম কম হোক, চাই বেশি হোক, সেটা ধর্তব্য হবে না, বরং ঘুমালেই ওজু নষ্ট হয়ে গেছে বলে বিবেচনা করা হবে। এ মতামতের পক্ষে ইসহাক, আল-মুজানি, হাসান বসরী এবং ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) প্রমুখ আলেমগণ অবস্থান করেছেন।”এই মতের পক্ষে দলিল হচ্ছে: সফওয়ান ইবনু ‘আসসাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা যখন সফরে থাকতাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিতেন, আমরা যেন নাপাকির গোসল ছাড়া তিন দিন তিন রাত আমাদের মোজা না খুলি; এমনকি মলত্যাগ-পেশাব ও ঘুম হতে ওঠার পর ওযু করার সময়ও (মোজা না খুলি)। তিরমিজি হা/৯৫; ইবনু মাজাহ হা/৪৭৮ সনদ হাসান) ।
.
(২).আরেক দল আলেমদের মতে ঘুম সব অবস্থায় ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। তাদের দলিল আনাস ইবনু মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীস, যেখানে বলা হয়েছে, كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم يَنْتَظِرُونَ الْعِشَاءَ الآخِرَةَ حَتَّى تَخْفِقَ رُءُوسُهُمْ ثُمَّ يُصَلُّونَ وَلَا يَتَوَضَّئُونَ».“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ এশার নামাজের জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করতেন যে, (ঘুমে) তাঁদের মাথা ঢলে পড়ত। এরপর তাঁরা নামাজ আদায় করতেন অথচ (নামাজের জন্য পুনরায়) ওজু করতেন না।”(আবু দাউদ, হা ২০০, বর্ণনার মান: সহিহ) এছাড়া ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবিজির সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কান ধরে তাঁকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি নামাজের মধ্যে কৃত সামান্য ঘুমকে ওজু নষ্টের কারণ মনে করতেন না।(দ্রষ্টব্য: সহিহ মুসলিম, হা/৭৬৩) এ থেকে বোঝা যায়, ঘুম সব সময় ওযু ভঙ্গ করে না বরং পরিস্থিতিভেদে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। এই বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন আবু মূসা আল-আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব (রাহিমাহুল্লাহ)।
.
(৩).উপরোক্ত দুটি মত পর্যালোচনার ভিত্তিতে জমহুর (বেশিরভাগ) আলেমগণের মাঝে যে ভারসাম্যপূর্ণ তৃতীয় মতটি গৃহীত হয়েছে, তা হলো ঘুম সব অবস্থায় ওযূ ভঙ্গকারী নয়; বরং নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে ঘুম ওযূ ভঙ্গ করে, আবার কিছু পরিস্থিতিতে ওযু ভঙ্গ করে না।দলিল ও প্রমাণের আলোকে এটাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ মত। কারণ সহীহ হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে ঘুম অবস্থায় ওযূ ভঙ্গ হয় তখনই যখন ঘুম গভীর হয় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তি নিজের শরীর থেকে বায়ু নিঃসরণের অনুভব হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ এমন ঘুম যেখানে বায়ু নিঃসরণ হলে সে তা অনুভব করতে পারে না তখন ওযূ ভেঙে যাবে। অন্যদিকে যদি ঘুম হালকা হয় যেমন বসা অবস্থায় সামান্য তন্দ্রা যার মধ্যে ঘুমন্ত ব্যক্তি এখনও নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং বায়ু নিঃসরণ হলে তা উপলব্ধি করতে পারে তাহলে এই ধরনের ঘুম দ্বারা ওযূ ভঙ্গ হবে না। এই মতটি শরীয়তের উদ্দেশ্য সহীহ হাদীস ও যুক্তির সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ এটি ঘুমের প্রকৃতি ও মানুষের শারীরিক সচেতনতার পার্থক্যকে ভিত্তি করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রদান করে।
.
আরেকটি বিষয়ে জেনে রাখা ভাল আর তা হচ্ছে ঘুম বা জ্ঞানশূন্যতা দু ধরনের:
.
(ক) অস্থায়ী জ্ঞান হারানো যা ঘুম, অসুস্থতা এবং নেশাগ্রস্তের কারণে হয়ে থাকে এর ফলে কিছু ক্ষেত্রে অযু ভঙ্গ হয় আবার কিছু ক্ষেত্রে হয় না।
.
যেমন- রাসূল (ﷺ) নির্দেশ দিতেন, أَنْ لاَ نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ لَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ. ‘আমরা যেন (সফর অবস্থায়) তিন দিন যাবৎ পেশাব-পায়খানা এবং ঘুমের কারণে আমাদের মোজা না খুলি। তবে জানাবাতের অবস্থা ব্যতীত’।(সুনানু ইবনে মাজাহ, হা/৪৭৮) অন্য হাদীসে এসেছে, আলী ইবনু আবু তালেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : الْعَيْنُ وِكَاءُ السَّهِ، فَمَنْ نَامَ فَلْيَتَوَضَّأْ. ‘চক্ষু হ’ল গুহ্যদ্বারের ঢাকনা। অতএব যে ব্যক্তি ঘুমাবে সে যেন ওযূ করে’।(সুনানু আবু দাউদ, হা/২০৩, সুনানু ইবনু মাজাহ, হা/৪৭৭, হাদীসটি হাসান; দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল; ১/১৪৮) এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওযূ অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যায়। তবে তা এমন ঘুম যে, ঘুমের মধ্যে বায়ু নিঃসরণ হ’লে তা উপলব্ধি করা যায় না। পক্ষান্তরে যদি এমন ঘুম হয় যে ঘুমে বায়ু নিঃসরণ উপলব্ধি করা যায় সে ঘুমের কারণে ওযূ ভঙ্গ হবে না।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২১; পৃষ্ঠা: ২৩০) এ প্রসঙ্গে আনাস (রাঃ) বলেন,كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْتَظِرُوْنَ الْعِشَاءَ الآخِرَةَ حَتَّى تَخْفِقَ رُءُوْسُهُمْ ثُمَّ يُصَلُّوْنَ وَلاَ يَتَوَضَّئُوْنَ. রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবীগণ এশার সালাতের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। এমনকি (ঘুমের কারণে) তাদের মাথা আন্দোলিত হচ্ছিল। অতঃপর তারা সালাত আদায় করলেন। কিন্তু ওযূ করলেন না।(মুসলিম, হা/৩৭৬, আবূদাঊদ, হা/২০০)
.
(খ) স্থায়ীভাবে জ্ঞান হারানো: যখন কেউ স্থায়ীভাবে জ্ঞান হারায়, যেমন পাগল হয়ে গেলে তখন তার ওযূ ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা অস্থায়ীভাবে জ্ঞান হারানো (যেমন গভীর ঘুম বা অজ্ঞান হওয়া) অবস্থায় যদি ওযূ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে স্থায়ীভাবে জ্ঞান হারানো অবস্থায় তো তা আরও আগে থেকেই নষ্ট বলে বিবেচিত হবে। এতে বুঝা যায়, জ্ঞান হারানোই মূল কারণ; তা অস্থায়ী হোক বা স্থায়ী, বেশি হোক, চাই কম হোক উভয় অবস্থাতেই ব্যক্তির ওযূ ভঙ্গ হয়ে যায়। এ বিষয়ে শরিয়তের সকল বিদ্বান একমত পোষণ করেছেন।(দ্রষ্টব্য: ইবনু কুদামা, আল-মুগনি, খণ্ড: ১,পৃষ্ঠা: ২৩৪)
.
কখন এবং কোন ধরনের ঘুম ওযু ভঙ্গ করে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] তার উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল গ্রন্থে ওযূ ভঙ্গের কারণসমূহ তালিকা করার সময় বলেছেন: ” النوم إذا كان كثيراً بحيث لا يشعر النائم لو أحدث، فأما إذا كان النوم يسيراً يشعر النائم بنفسه لو أحدث فإنه لا ينقض الوضوء، ولا فرق في ذلك أن يكون نائماً مضطجعاً أو قاعداً معتمداً أو قاعداً غير معتمد، فالمهم حالة حضور القلب، فإذا كان بحيث لو أحْدث لأحسَّ بنفسه فإن وضوءه لا ينتقض، وإن كان في حال لو أحْدث لم يحسّ بنفسه، فإنه يجب عليه الوضوء، وذلك لأن النوم نفسه ليس بناقض وإنما مظنة الحدث، فإذا كان الحدثُ مُنتفياً لكون الإنسان يشعر به لو حصل منه، فإنه لا ينتقض الوضوء. والدليل على أن النوم نفسه ليس بناقض أن يسيره لا ينقض الوضوء، ولو كان ناقضاً لنقض يسيرهُ وكثيرهُ كما ينقض البولُ يسيرهُ وكثيره “যদি ঘুম দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়, এমনভাবে যে ঘুমন্ত ব্যক্তি তার ওযূ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা অনুভব করতে পারে না, তাহলে তার ওযূ ভেঙে যাবে। কিন্তু যদি ঘুম স্বল্প হয়, এমনভাবে যে ঘুমন্ত ব্যক্তি তার ওযূ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা অনুভব করতে পারে, তাহলে তার ওযূ ভাঙবে না। এখানে কোনো পার্থক্য নেই যে ঘুমন্ত ব্যক্তি শুয়ে আছে নাকি বসে ঘুমাচ্ছে নাকি আধা শুয়ে ঘুমাচ্ছে। মূল কথা হলো অন্তরের উপস্থিতি। কারণ স্বয়ং ঘুম উযু ভঙ্গের কারণ নয়। বরং এটি উযু ভঙ্গের সম্ভাবনার কারণ। যদি ওযূ ভঙ্গের সম্ভাবনা বিদ্যমান না থাকে, অর্থাৎ ব্যক্তি যদি ঘুমন্ত অবস্থায় ওযূ ভঙ্গ হলে তা বুঝতে পারত, তাহলে ওযূ ভাঙবে না। এর প্রমাণ হলো ঘুম যদি নিজেই ওযূ ভঙ্গকারী হতো, তাহলে অল্প ঘুমেও ওযূ ভেঙে যেত, যেমন মূত্রের ক্ষেত্রে হয়।মূত্র অল্প বা বেশি পরিমাণ উভয়ই ওজু ভঙ্গ করে।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ১১; আশ শারহুল মুমতি; খণ্ড; ১/২২৫-২২৭;ইসলামি সাওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-৩৬৮৮৯)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:النوم ينقض الوضوء إذا كان مستغرقا قد أزال الشعور؛ لما روى الصحابي الجليل صفوان بن عسال المرادي رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأمرنا إذا كنا مسافرين أن لا ننزع خفافنا ثلاثة أيام ولياليهن إلا من جنابة ولكن من غائط وبول ونوم أخرجه النسائي والترمذي واللفظ له، وصححه ابن خزيمة.ولما روى معاوية رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: العين وكاء السه، فإذا نامت العينان استطلق الوكاء رواه أحمد والطبراني، وفي سنده ضعف، لكن له شواهد تعضده، كحديث صفوان المذكور، وبذلك يكون حديثا حسنا……..، أما النعاس فلا ينقض الوضوء، لأنه لا يذهب معه الشعور، وبذلك تجتمع الأحاديث الواردة في هذا الباب
“যদি ঘুম সম্পূর্ণরূপে অচেতন করে ফেলে এবং অনুভূতি বিলুপ্ত করে দেয়, তাহলে তা ওযু ভঙ্গ করে। কারণ,মহান সাহাবী সাফওয়ান ইবনু আসসাল আল-মুরাদী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিতেন যে, সফরে আমরা যেন তিন দিন ও তিন রাত জুনুবি ছাড়া মোজা না খুলি। তবে শৌচ, প্রস্রাব, বা ঘুমের কারণে এটি খুলতে হবে।” এই হাদীসটি নাসায়ী এবং তিরমিজি বর্ণনা করেছেন এবং এটি ইবনু খুযাইমাহ সহিহ বলেছেন। এছাড়াও, মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন:চোখ হলো পিছন দ্বারের বন্ধন, আর যখন দুটি চোখ ঘুমিয়ে যায়, তখন বন্ধন খুলে যায়’। এটি আহমদ ও তাবারানি বর্ণনা করেছেন,যদিও এর সনদে কিছু দুর্বলতা রয়েছে, তবে এটিকে সমর্থনকারী কিছু অন্যান্য হাদীস রয়েছে, যেমন সফওয়ান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর বর্ণিত হাদীস। সুতরাং, এই হাদীসটি ‘হাসান’ (গৃহীতযোগ্য) হিসেবে গণ্য হয়।কিন্তু শুধুমাত্র তন্দ্রা (নিমগ্ন না হওয়া সামান্য ঘুম) ওযু ভঙ্গ করে না, কারণ এতে অনুভূতি সম্পূর্ণরূপে চলে যায় না। এভাবেই এই বিষয়ে বর্ণিত হাদীসগুলো একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড; ১০; পৃষ্ঠা: ১৪৪) ।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন:النوم المستغرق مظنة لنقض الوضوء فمن نام نوماً مستغرقاً في المسجد أو غيره وجب عليه إعادة وضوئه، سواء كان قائماً أو قاعداً أو مضطجعاً، وسواء كان في يده سبحة أم لا، أما إن كان غير مستغرق كالنعاس الذي لا يفقد معه الشعور فلا تجب عليه إعادة الوضوء لما ورد في ذلك من الأحاديث الصحيحة عن النبي صلى الله عليه وسلم الدالة على التفصيل المذكور ”
“গভীর নিদ্রা ওজু ভঙ্গের সম্ভাবনাময় কারণ হতে পারে। সুতরাং কেউ যদি মসজিদে বা অন্য কোথাও গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার উপর পুনরায় ওজু করা আবশ্যক সে দাঁড়িয়ে থাকুক, বসে থাকুক বা শুয়ে থাকুক, এবং তার হাতে তাসবীহ থাকুক বা না থাকুক। তবে,যদি ঘুম গভীর না হয়, যেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা, যাতে তার অনুভূতি/চেতনা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি তাহলে পুনরায় ওজু করা আবশ্যক নয়। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যা উল্লেখিত পার্থক্যের প্রমাণ প্রদান করে।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৬২) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফিযাহুল্লাহ)।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি,সৌদি আরব।