প্রশ্ন: একজন মানুষ মৃত্যুর পর থেকে চূড়ান্ত বিচার তথা জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হবে সেগুলো কি কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর কুরআন ও সুন্নাহর প্রমাণ অনুযায়ী, একজন মানুষ মারা যাওয়ার পর তাকে পৃথিবীতে করা প্রতিটি ছোট-বড় কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি তার সৎকর্মের জন্য পুরস্কৃত হবেন এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি ভোগ করবেন। এমনকি অণু পরিমাণ ভাল কাজ করলে, সে তা দেখতে পাবে এবং অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে সেও তা দেখতে পাবে’।ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে তার দুনিয়াবী ছোট-বড়, গোপন-প্রকাশ্য, কথা ও কর্ম তথা সব আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তন্মধ্যে কুরআন ও সুন্নাহতে বিশেষভাবে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে। এর উদ্দেশ্য হলো, বান্দা যেন এসব বিষয়ে সজাগ থাকে, এগুলোর প্রতি যত্নবান হয় এবং গাফিলতির শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।হিসাব-নিকাশের প্রথম ধাপ হলো কবর। সেখানে তাকে প্রথমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করা হবে। যেমন:
.
(ক). কবরে মুমিনদের সর্বমোট ৪ কাফেরদের ৩ টি প্রশ্ন করা হবে:
(১). তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তার রব কে?
(২). তারপর তাকে দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হবে, তার দ্বীন কি?
(৩). তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে ঐ (ﷺ) লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের নিকটে প্রেরণ করা হয়েছিল?
(৪). তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলে মুমিনদেরকে চতুর্থ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে এগুলো তুমি কিভাবে জেনেছ?
.
(খ). পুনরুত্থানের পর:
(১). ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর হকের মধ্যে সর্বপ্রথম সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে এবং হিসাবে নেয়া হবে।
(২). তার দুনিয়াবী জীবন কীভাবে কাটিয়েছে জানতে চাওয়া হবে।
(৩). তার যৌবনকাল কিভাবে ব্যয় করেছে তার জিজ্ঞেস করা হবে।
(৪). তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে কিভাবে তা উপার্জন করেছে।
(৫). তাকে জিজ্ঞেস করা হবে উপার্জিত সম্পদ সে কোন পথে এবং কিভাবে ব্যয় করেছে।
(৬). তাকে জিজ্ঞেস করা হবে সে যে জ্ঞান অর্জন করেছে,সেই অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কি আমল করেছে।
(৭). মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে দুনিয়াতে অসংখ্য নে‘মত দান করেছেন সেগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। যেমন:শীতল ছায়া,পবিত্র খেজুর ও ঠান্ডা পানীয়।
(৮). প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তার অধীনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।
(৯). প্রত্যেক নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা,তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে।
(১০). প্রত্যেক ব্যক্তির ইলম, কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর এসবকিছুই মহান রবের দেয়া বড় নে‘মত। আর এগুলি সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন আমাদের জিজ্ঞেস করা হবে, সেগুলি কি আল্লাহর আনুগত্যে ও সৎকাজে ব্যবহার করে এগুলির শুকরিয়া আদায় করা হয়েছে, না এগুলি আল্লাহর অবাধ্য ও পাপাচারের কাজে লাগানো হয়েছে?
(১১). জিহাদ, ইলম ও সম্পদের মত তিনটি বড় নে‘মত সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, সে এগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহর যে হক রয়েছে তা যথাযথ আদায় করেছে কি-না? কার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এগুলো করছে? সে কি এগুলির হেফাযত করেছে, না সেগুলি নষ্ট করেছে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
(১২). দুনিয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে এবং মানুষদের সাথে দেওয়া তার অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পালন করেছে কিনা সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে।
(১৩). দুনিয়াতে যারা সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহর সাথে শরীক করে,তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন কিসের ভিত্তিতে তারা এসব করেছে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
(১৪). দুনিয়াতে এক শ্রেণীর মানুষ ফেরেশতাগণের প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং তাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলে, তারা নাকি নারী জাতি। এমনকি তারা তাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে (নাউজুবিল্লাহ) কোন দলিলের ভিত্তিতে তারা এমনটি করেছে ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে।
(১৫). আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। মানুষ সেই নবী রাসূলদের দাওয়াত কবুল করেছে কি-না? ক্বিয়ামতের দিন তিনি নবীদের উম্মতদেরকে জিজ্ঞেস করবেন।
(১৬). আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকেও জিজ্ঞেস করবেন, তাঁরা তাঁদের ওপর অর্পিত রিসালতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন কি-না? তাঁরা স্বীয় উম্মতদের নিকট তা পৌঁছে দিয়েছেন কি-না?
(১৭). মানুষ দুনিয়ায় কি কি করেছেন সেগুলোর বিবরণ তার কাছে জানতে চাওয়া হবে।
.
পরিশেষে, হে আমাদের সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উপরোক্ত প্রত্যেকটি পয়েন্ট হয়তো কোনও টা আগপিছ হতে পারে তবে সবগুলো পয়েন্ট কুরআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ দলিল দ্বারা প্রমাণিত।কবর থেকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত মহান আল্লাহ আমাদের জন্য প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর সহজ করুন,আমাদেরকে তার দ্বীনের ওপরে চলা এবং খাঁটি মুসলিম ও মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফীক্ব দান করুন।ক্বিয়ামতের দিন যাবতীয় ফিৎনা থেকে আমাদের রক্ষা করে পুলছিরাত পার হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। তার অশেষ রহমতে আমাদেরকে তাঁর জান্নাত লাভে ধন্য করেন-আমীন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________
✍️জুয়েল মাহমুদ সালাফি।