(১) প্রশ্ন: একজন হায়েজ (ঋতুমতী) নারী সূর্যাস্তের আগে পবিত্র হলে, তিনি কি শুধু আসরের নামাজ পড়বেন, নাকি যোহর ও আসর উভয় নামাজই পড়বেন? আর যদি তিনি এশার সময়ে পবিত্র হন, তাহলে কি শুধু এশা পড়বেন, নাকি মাগরিব এবং এশা উভয় পড়বেন?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:একজন ঋতুমতী নারী যদি সূর্যাস্তের পূর্বে হায়েজ থেকে পবিত্র হয়ে যায়,তাহলে তিনি কি শুধু আসরের নামাজ পড়বেন, নাকি যোহর ও আসর উভয় নামাজই পড়বেন? অনুরূপ যদি তিনি এশার সময়ে হায়েজ থেকে পবিত্র হন, তাহলে কি শুধু এশা পড়বেন, নাকি মাগরিব এবং এশা উভয় পড়বেন? এই মাসালায় আহালুল ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি প্রসিদ্ধ মত পাওয়া যায়। আর তা হচ্ছে:
(১). প্রথম মত অনুযায়ী কোনও ঋতুমতী নারী যদি সূর্যাস্তের পূর্বে হায়েজ থেকে পবিত্র হয়ে যায় তাহলে তার জন্য প্রথমে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ। অতঃপর তাকে ঐ দিনের যোহর এবং আসর উভয় সালাত আদায় করতে হবে। যেহেতু আসরের আগে যোহরের নামাজ রয়েছে এবং সাধারণত দুই নামাজকে একই সময়ের একটি ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই তাকে যোহর নামাজও আদায় করতে হবে। অনুরূপ তিনি যদি এশার সময়ে হায়েজ থেকে পবিত্র হন তাহলে তাকে মাগরিব এবং এশা উভয় সালাতই আদায় করতে হবে। এটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতিপয় সাহাবীর ফাতওয়া এবং এটি অধিকাংশ আলেমদের অভিমত। এই মতের পক্ষে রয়েছেন প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনু আওফ, আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস, তাওউস, মুজাহিদ, ইব্রাহিম আন নাখায়ী, ইমাম জুহরি, রাবিয়াহ, ইমাম মালিক, ইমাম আশ-শাফি‘ঈ, ইমাম আহমেদ, সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটি,এবং ইমাম বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) সহ জমহুর আলেমগন।বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৮২১০৬; ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-৫১৭০২)
.
ইমাম বারহানউদ্দীন ইবনুল মুফলিহ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থ “আল-মুব্দি’ ফি শারহি আল-মুগনী -তে উল্লেখ করেছেন:” ولم يعرف لهما في الصحابة مخالف “”সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে কেউ এর বিপরীতে কোনো মতামত প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়নি।”(আল-মুব্দি’ ফি শারহি আল-মুগনী খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩১২) হাফিয ইবনু হাজার আসকালানি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থ তালখীসুল হাবীর এ বলেন: “ইমাম আবু বকর ইবনে ইসহাক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لا أعلم أحدا من الصحابة خالفهما “সাহাবাদের মধ্যে কেউ এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বলে আমার জানা নেই।”(তালখীসুল হাবীর; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৪৪)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন:
إِذَا طَهُرَتْ الْحَائِضُ , قَبْلَ أَنْ تَغِيبَ الشَّمْسُ , صَلَّت الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ , وإن َطَهُرَتْ قَبْلَ أَنْ يَطْلُعَ الْفَجْرُ , صَلَّت الْمَغْرِبَ وَالعِشَاءَ ؛ لما رَوَى الْأَثْرَمُ , وَابْنُ الْمُنْذِرِ , وَغَيْرُهُمَا , بِإِسْنَادِهِمْ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ , وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ , أَنَّهُمَا قَالَا فِي الْحَائِضِ تَطْهُرُ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ بِرَكْعَةٍ : تُصَلِّي الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ , فَإِذَا طَهُرَتْ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ , صَلَّتْ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا .
وَلِأَنَّ وَقْتَ الثَّانِيَةِ وَقْتٌ لِلْأُولَى حَالَ الْعُذْرِ , فَإِذَا أَدْرَكَهُ الْمَعْذُورُ لَزِمَهُ فَرْضُهَا , كَمَا يَلْزَمُهُ فَرْضُ الثَّانِيَةِ ”
“যদি কোনো হায়েযগ্রস্ত নারী সূর্যাস্তের আগে পবিত্রতা অর্জন করেন তাহলে তিনি যোহর এবং আসরের নামাজ আদায় করবেন। আর যদি ফজরের আগে পবিত্র হন তাহলে মাগরিব এবং ইশার নামাজ পড়বেন। এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায় যে আব্দুর রহমান ইবন আউফ এবং আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বলেছেন,”যদি কোনো হায়েযগ্রস্ত নারী ফজরের পূর্বে এক রাকআত নামাজের সময় পান তবে তিনি মাগরিব এবং ইশার নামাজ আদায় করবেন। আর যদি সূর্যাস্তের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করেন তবে যোহর এবং আসরের নামাজ আদায় করবেন”।(বায়হাকি) কারণ প্রয়োজনীয় অবস্থায় দ্বিতীয় নামাজের সময় প্রথম নামাজের সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই যদি কোনো অজুহাতযুক্ত ব্যক্তি (মহিলা) দ্বিতীয় নামাজের সময় পান তাহলে প্রথম নামাজও তার জন্য আবশ্যক হয়ে যায়, যেভাবে দ্বিতীয় নামাজ তার জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে।”(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৩৯)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:
إذا طهرت المرأة من الحيض أو النفاس في وقت العصر وجب عليها أن تصلي الظهر والعصر جميعًا في أصح قولي العلماء؛ لأن وقتهما واحد في حق المعذور؛ كالمريض، والمسافر، وهي معذورة بسبب تأخر طهرها، وهكذا إذا طهرت وقت العشاء وجب عليها أن تصلي المغرب والعشاء جميعًا كما سبق، وقد أفتى جماعة من
“কোনও মহিলা যদি আসরের সময় হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্রতা অর্জন করে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল যোহর ও আসর উভয়টি পড়া। এটাই আলেমদের দুটি মতের মধ্যে অধিক বিশুদ্ধ। কারণ ওজর গ্রস্ত ব্যক্তি (যেমন রোগী ও মুসাফির) এর জন্য যোহর ও আসর সালাতের সময় একটি। আর এই মহিলাও ওজর গ্রস্ত তার পবিত্রতা বিলম্বিত হওয়ার কারণে। অনুরূপভাবে সে যদি ইশার সময় পবিত্র হয় তাহলে তার জন্য মাগরিব এবং ইশা উভয় সালাত আদায় করা আবশ্যক যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মর্মে একদল সাহাবির ফতোয়া রয়েছে।””(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ২১৭)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,
إذا طهرت المرأة من الحيض أو النفاس قبل خروج وقت الصلاة الضروري لزمتها تلك الصلاة وما يجمع إليها قبلها ، فمن طهرت قبل غروب الشمس لزمتها صلاة العصر والظهر، ومن طهرت قبل طلوع الفجر الثاني لزمتها صلاة العشاء والمغرب ، ومن طهرت قبل طلوع الشمس لزمتها صلاة الفجر ” انتهى .
وذهب الأحناف إلى أنه لا يلزمها إلا الصَّلاة التي أدركت وقتها فقط ؛ لأن وقت الصلاة الأولى خرج وهي معذورة ، فلا يلزمها قضاؤها .وانظر
“যদি কোনো নারী হায়েজ বা নেফাস থেকে এমন সময়ে পবিত্র হয়ে যান যখন কোনো নামাজের বাধ্যতামূলক সময় এখনো পুরাপুরি শেষ হয়নি তাহলে তার জন্য উক্ত নামাজ এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পূর্বের নামাজ আদায় করা আবশ্যক। অর্থাৎ যদি তিনি সূর্যাস্তের আগে পবিত্র হন তাহলে তার জন্য যোহর এবং আসরের নামাজ আদায় করা ফরজ। যদি তিনি ফজরের আগে পবিত্র হন তাহলে মাগরিব ও ইশার নামাজ পড়তে হবে। আর যদি তিনি সূর্যোদয়ের আগে পবিত্র হন তাহলে ফজরের নামাজ অবশ্যই আদায় করতে হবে।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ১৫৮)
.
(২). পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা, হাসান বসরি, সুফিয়ান সাওড়ি, আসহাবুর রায় এবং বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) সহ অপর একদল আলেমদের মতে ঋতুমতী নারী যখন পবিত্র হন শুধুমাত্র সেই সময়ের নামাজই তার উপর ফরজ হয় পূর্বের নয়। যেহেতু যোহরের সময় অতিবাহিত হয়ে আসরের সময় শুরু হয়েছে সুতরাং তাকে শুধু আসরের নামাজই আদায় করতে হবে। আর এই মতটি আমার কাছেও কিছুটা পছন্দনীয় মনে হয় (আল্লাহু আলাম)। এর কারণ হচ্ছে তার উপর যোহরের নামায ওয়াজিব হওয়ার বিশুদ্ধ কোন দলীল নেই। আর মানুষের আসল হলো সে দায়মুক্ত। তাছাড়া হায়েজ নিফাস অবস্থায় সালাত, সিয়াম হারাম। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلاَةَ، وَإِذَا أَدْبَرَتْ فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّي. ‘হায়েয দেখা দিলে সালাত ছেড়ে দাও। আর হায়েযের সময় শেষ হয়ে গেলে রক্ত ধুয়ে নাও এবং সালাত আদায় কর’।(বুখারী হা/৩৩১ ‘হায়েয’ অধ্যায়) অপর বর্ননায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাতেমা বিনতে হুবাইশকে বলেছেন: “নিশ্চয় হায়েযের রক্ত কালো রঙের পরিচিত রক্ত। যদি সেটা হয় তাহলে তুমি নামায ছেড়ে দিবে। আর যদি অন্য কোন রক্ত হয় তাহলে ওযু করে নামায পড়বে।”[সুনানে নাসাঈ (২১৬), আলবানী হাদিসটিকে সহিহু সুনানে নাসাঈ গ্রন্থে সহিহ বলেছেন] সুতরাং একজন নারী যদি সূর্যাস্তের পূর্বে হায়েজ থেকে পবিত্র হন তার অর্থ হচ্ছে তিনি যোহরের সময় হায়েজ অবস্থায় ছিলেন তার জন্য যোহর পড়া ওয়াজিব না হওয়াই অধিক যুক্ত সঙ্গত।(আল্লাহই ভাল যানেন)।(এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দেখুন আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, ১৩/৭৩)
.
ইমাম হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:১১০হি:] বলেছেন:لا تجب إلا الصلاة التي طهرت في وقتها وحدها(হায়েজ-নেফাস গ্রস্ত নারী) যে ওয়াক্তে পবিত্র হয়েছে একমাত্র তা ছাড়া অন্য কোনও সালাত তার জন্য ওয়াজিব নয়।(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৩৮)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
لا يلزمها إلا الصَّلاة التي أدركت وقتها فقط ، فأما ما قبلها فلا يلزمها ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( من أدرك ركعةً من الصَّلاة فقد أدرك الصَّلاة ) ، و(أل) في قوله : ( الصَّلاة ) للعهد ، أي : أدرك الصَّلاة التي أدرك من وقتها ركعة ، وأما الصَّلاة التي قبلها فلم يدرك شيئاً من وقتها ، وقد مَرَّ به وقتها كاملاً ، وهو ليس أهلاً للوجوب فكيف نلزمه بقضائها ، وقال عليه الصلاة والسلام ( من أدرك ركعة من العصر قبل أن تغرب الشمس فقد أدرك العصر ) ، ولم يذكر وجوب قضاء الظُّهر .
أما النَّظر : فإننا متَّفقون على أنه لو أدرك ركعةً من صلاة الظُّهر ثم وُجِدَ مانعُ التكليف ، لم يلزمه إلا قضاء الظُّهر فقط ، مع أن وقت الظُّهر وقتٌ للظُّهر والعصر عند العُذر والجمع ، فما الفرق بين المسألتين ؟! كلتاهما أتى عليه وقت إحدى الصَّلاتين وهو ليس أهلاً للتكليف ، لكن في المسألة الأولى مَرَّ عليه وقت الصَّلاة الأُولى ، وفي المسألة الثانية مَرَّ عليه وقت الصَّلاة الثانية ”
“তার উপর শুধুমাত্র সেই (ওয়াক্তের) সালাত আদায় করা বাধ্যতামূলক,যে ওয়াক্তের সময় সে যথাযথভাবে পেয়েছে। এর আগের (ওয়াক্তের) সালাত তার উপর আদায় করা ফরজ নয়। কারণ,রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:”যে ব্যক্তি কোনো সালাতের এক রাক‘আত পায়, সে ( পরিপূর্ণ) সালাত পেয়েছে”। (বুখারী; হাদিস নং: ৫৮০) এখানে ‘সালাত’-এর পূর্বে ব্যবহৃত ‘আল’ শব্দটি নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ,সে সেই সালাত (পরিপূর্ণ ভাবে) পেয়েছে, যার এক রাক‘আত সময়মতো আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। অপরদিকে, যেই (ওয়াক্তের) সালাতের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয়ে গেছে এবং সেই সময়ে সে মুকাল্লাফ (শরয়ি ভারপ্রাপ্ত) ছিল না, সেই সালাতের কাযা আদায় করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কারণ শরিয়তের বিধিবিধানের আওতায় তখন সে ছিল না। তদুপরি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন,“যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আছরের এক রাকআত পেল সে পুরো আছরের নামায পেল।”(বুখারী; হাদিস নং: ৫৮০) এখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেননি যে সে যোহরের নামাযও পেল। (আর যোহরের নামায যদি তার উপর ওয়াজিবই হত তাহলে নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) তা বলে দিতেন)। যদি আমরা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা এ বিষয়ে একমত হব যে যদি কেউ যোহরের নামাজের এক রাকাআত আদায় করার সুযোগ পায় এবং এরপর এমন এক অবস্থায় পৌঁছে যায় যেখানে তার ওপর নামাজের দায়িত্ব আরোপ করা হয় না তবে তার শুধু যোহরের নামাজই কাজা করতে হবে। যদিও যোহরের এমন একটি সময় রয়েছে যেখানে প্রয়োজনে যোহর এবং আসরের নামাজ একসঙ্গে (জমা) আদায় করা যায়। এখন প্রশ্ন হলো উভয় অবস্থার মধ্যে পার্থক্য কী? দুই ক্ষেত্রেই একটি নামাজের সময় পার হয়ে যায়। যখন ব্যক্তি এমন অবস্থায় ছিল যে তার ওপর নামাজের দায়িত্ব কার্যকর হয়নি। তবে পার্থক্য হলো: প্রথম ক্ষেত্রে, প্রথম নামাজ (যোহর) সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, দ্বিতীয় নামাজ (আসর) সময় অতিক্রান্ত হয়েছে।”(ইমাম ইবন উসাইমীন,আশ-শারহুল মুমতি‘ আলা যাদিল মুস্তাকনি‘,খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৩৩)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্তা আলোচনা থেকে এ কথা পরিষ্কার যে, হায়েজ (ঋতুমতী) নারী সূর্যাস্তের আগে পবিত্র হলে তিনি কি শুধু আসরের নামাজ পড়বেন নাকি যোহর ও আসর উভয় নামাজই পড়বেন? আর যদি তিনি এশার সময়ে পবিত্র হন তাহলে কি শুধু এশা পড়বেন নাকি মাগরিব এবং এশা উভয় পড়বেন? বিষয়টি মতভেদ পূর্ণ মাস’আলা। আমি দুটি মতই উল্লেখ করেছি সুতরাং কেউ যদি দীন ও ঈমানের স্বার্থে অধিক নিরাপদ থাকার জন্য প্রথম অভিমতটি (অর্থাৎ যোহর ও আসর উভয় সালাত একসাথে আদায় করা) গ্রহন করেন সেটাও যেমন নিরাপদ ও বৈধ, তেমনি কেউ যদি দ্বিতীয় মত তথা শুধুমাত্র আসর বা ইশার নামাজ পড়েন তাহলে আশা করা যায় যে এর জন্য কোনো পাপ হবে না ইনশাআল্লাহ। অতএব আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী একটি মত গ্রহন করে আমল করতে পারেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
.
(২) প্রশ্ন: যদি একজন নারীর মাসিক (ঋতুস্রাব) যোহরের নামাজের সময় প্রবেশের (আনুমানিক ৩০-৪০ মিনিট) পর শুরু হয় তাহলে তার ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার পর ঐ ছুটে যাওয়া যোহরের সালাত আদায় করতে হবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:
প্রথমত: এই বিষয়ে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে যদি কোনও নারীর মাসিক (ঋতুস্রাব) শুরু হয় পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে কোন এক ওয়াক্তের নামাজের সময় প্রবেশ করার পরে, আর তার সেই সময়ে একটি রাকাআত নামাজ পড়ার মতো সময় ছিল,কিন্তু তিনি পড়েননি তাহলে মাসিক শেষ হলে ঐ নামাজ তার জন্য আদায় করা আবশ্যক।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] -কে প্রশ্ন করা হয়েছিল,একজন নারী যদি নামাজের সময় প্রবেশের পরে একটি রাকাআত পড়ার সময় পান এবং তারপর তার মাসিক শুরু হয়, তবে কি মাসিক শেষে তার ঐ নামাজ আদায় করা আবশ্যক?
তিনি উত্তরে বলেন:
المرأة إذا حاضت بعد دخول وقت الصلاة فإنه يجب عليها إذا طهرت أن تقضي تلك الصلاة التي حاضت في وقتها إذا لم تصلها قبل أن يأتيها الحيض، وذلك لقول النبي صلى الله عليه وسلم: “من أدرك ركعة من الصلاة فقد أدرك الصلاة”، فإذا أدركت المرأة من وقت الصلاة مقدار ركعة ثم حاضت قبل أن تصلي فإنها إذا طهرت لزمها القضاء. وكذلك إذا طهرت من الحيض قبل خروج وقت الصلاة فإنه يجب عليها قضاء تلك الصلاة فلو طهرت قبل أن تطلع الشمس بمقدار ركعة وجب عليها قضاء صلاة الفجر، ولو طهرت قبل غروب الشمس بمقدار ركعة وجب عليها قضاء صلاة العصر، لقول النبي صلى الله عليه وسلم: “من أدرك ركعة من العصر قبل أن تغرب الشمس فقد أدرك العصر
“যদি কোনো নারী নামাজের সময় শুরুর পর ঋতুমতী হয়ে পড়েন এবং সেই সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় না করে থাকেন তবে ঋতুস্রাব শেষ হলে তাকে সেই নামাজ কাজা করতে হবে। কারণ নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো নামাজের একটি রাকাআত সময় পায় সে ওই নামাজ পেয়ে গেছে। “অতএব, যদি কোনো নারী নামাজের সময়ের মধ্যে অন্তত একটি রাকাআত আদায়ের সময় পান কিন্তু নামাজ শুরুর আগেই ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায় তাহলে পবিত্র হওয়ার পর তাকে সেই নামাজ কাজা করতে হবে। একইভাবে যদি কোনো নারী ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর নামাজের সময় শেষ হওয়ার আগে নামাজ আদায়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান, তবে সেই নামাজ কাজা করা তার জন্য বাধ্যতামূলক। উদাহরণস্বরূপ যদি একজন নারী সূর্যোদয়ের ঠিক আগে একটি রাকাআতের পরিমাণ সময় পান তবে তার উপর ফজরের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। আবার যদি সূর্যাস্তের ঠিক আগে একটি রাকাআতের সময় পান তবে আসরের নামাজ পড়া তার জন্য আবশ্যক। কারণ নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আসরের একটি রাকাআত সূর্যাস্তের আগে পায়, সে আসরের নামাজ পেয়েছে।”(ইবনু উসাইমীন, মাজমু ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, খণ্ড ১২; ইসলাম প্রশ্নোত্তর ফাতাওয়া নং: ১১১৫২২)।
.
পরিশেষ সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! উক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, সালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট সময় পরে কোন নারী হায়েজ গ্রস্ত হলে এবং তিনি সেই হাযেজের পূর্বে পবিত্র অবস্থায় ঐ ওয়াক্তের সালাত আদায় না করে থাকলে পরবর্তীতে যখনই মাসিক শেষ হবে এবং তিনি শুদ্ধ হবেন তখনই গোসল করে ঐ ছুটে যাওয়া নামাজের কাযা আদায় করতে হবে। এমনকি সেটি ঐ নামাজের সময়ের বাইরে হলেও। এটি পরবর্তী সময়ের জন্য বিলম্ব করা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها “যে সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তার কাফফারাহ হলো সে যখনই তা মনে করবে তখনই (সাথে সাথে) সালাত আদায় করে নিবে।”(সহীন বুখারী হা/৫৭২; ও মুসলিম হা/৬৮৪) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।