শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক সামর্থ্যবান নর-নারীর জন্য কুরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এক্ষেত্রে কোন নারী বিবাহিত হওয়া কিংবা অবিবাহিত হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
.
ইমাম ইবনে হাযম আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “মুকীমের জন্য কুরবানী করা যেমন মুসাফিরের জন্যেও তেমন। কোন পার্থক্য নেই। অনুরূপভাবে নারীর জন্যেও। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তোমরা ভাল কাজ কর”। নিঃসন্দেহে কুরবানী একটি ভাল কাজ। আমরা যাদের কথা উল্লেখ করলাম তারা সকলে ভাল কাজ করার প্রতি মুখাপেক্ষী এবং ভাল কাজের দিকে আহুত। আমরা কুরবানীর ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে বাণী উল্লেখ করেছি এতে তিনি শহরবাসী থেকে গ্রামবাসীকে, মুকীম থেকে মুসাফিরকে, নারী থেকে পুরুষকে খাস করেননি। সুতরাং এক্ষেত্রে কাউকে খাস করা বাতিল ও নাজায়েয।(আল-মুহাল্লা’খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৩৭)
যদি কোন নারী নিজের পক্ষ থেকে কিংবা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে চান তাহলে একজন পুরুষকে যা যা করতে হয় তাকেও তা তা করতে হবে।অর্থাৎ যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানীদাতা চুল, নখ ইত্যাদি কাটতে পারবেন না।উম্মে সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,‘যখন যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ তারিখ শুরু হয়, আর তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেন নিজের চুল বা শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন চুল না কাটে এবং নখ না কাটে। অন্যত্র রয়েছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জের নতুন চাঁদ দেখে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন নিজের চুল না ছাঁটাই করে এবং নখসমূহ না কাটে’।(ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭; তিরমিযী, হা/১৫২৩, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১৪৫৯ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৭০১৬০)
উক্ত হাদীস সম্পর্কে বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,‘কুরবানী দাতার পরিবার তথা সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীদের জন্য এই হুকুম নয়। আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, তারা চুল ও নখ কাটার নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। হুকুমটি কেবল কুরবানী দাতার জন্য খাছ, যিনি তার সম্পদ থেকে কুরবানীর পশুটি ক্রয় করেছেন। (ফাতাওয়া আল-ইসলামিয়্যা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১৬-৩১৭)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার বিধানটি শুধু কুরবানী দাতার জন্য খাছ। তিনি যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করবেন তাদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি নিজের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করেন, তাহলে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার হুকুমটি শুধু কুরবানীদাতার উপর বর্তাবে। পরিবারের বাকী সদস্যদের নখ-চুল কাটাতে কোন সমস্যা নেই। পক্ষান্তরে যে সকল আলেম বলেন, পরিবারের বাকী সদস্যদেরও নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকা যরূরী, তাদের এই মতটি দুর্বল। কেননা এখানে হাদীসের ভাষ্য স্পষ্ট, হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেয়ার ইচ্ছা রাখে’। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা বলেননি যে, ‘অথবা যার পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া হয়’। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন, কিন্তু তাদেরকে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেননি (ফাতাওয়া উসায়মীন, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ১৮৮; ইসলাম, সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৫ম খণ্ড, ৪৫৪০ পৃ.) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।