ইসলামে নারী নেতৃত্বের হুকুম কী এবং নারীকে শাসক বা নেতা হিসাবে মনোনীত করা যাবে কি

ভূমিকা: ইসলামে নারীর নেতৃত্ব; যেমন: শাসক, খলীফা, মন্ত্রী, বিচারক, নামাজে পুরুষদের ইমাম ইত্যাদি নারী নিজে এ-জাতীয় পদ গ্রহন করা কিংবা তাদেরকে এ-জাতীয় নির্বাচিত করা জায়েজ নেই, যদি কোন নারী নেতৃত্বের আসনে বসেন কিংবা কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী যদি নারীকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে সহায়তা করে তাহলে তারাও গুনাহের অংশীদার হবে। আর নারীর নেতৃত্ব নিষিদ্ধ এই (নিষেধাজ্ঞা) হলো মূলত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্ব ও নেতৃত্ব এবং বিচারকার্যের সাথে সম্পৃক্ত যা কুরআন সুন্নাহ এবং বহু সালাফদের ইজমা দ্বারা প্রমানিত।যেমন: ইবনু হাযম আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) ইজমা নকল করে বলেন,و اتفقوا ان الامامة لا تجوز لامراة –”সকল ওলামায়ে কেরাম এব্যপারে একমত যে, কোনো নারীর জন্য ‘রাষ্ট্র প্রধান’ হওয়া জায়েয নয়”(মারাতিবুল ইজমা, ইবনে হাযাম পৃষ্ঠা: ১২৬)
.
নারীর নেতৃত্ব নিষিদ্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এটি শরীয়তের পূর্ণতা, মাহাত্ম্য, শরিয়ত কর্তৃক নারীর ইজ্জতের সুরক্ষা দেয়া, নারীকে সম্মান দেয়া, নারীর প্রতি গুরুত্বারোপ করা, নারীকে সুরক্ষিত রাখা এবং ফিতনা ও স্খলনের পথগুলো থেকে আগলে রাখার জন্য শরীয়তের সচেতনতার অন্তর্ভুক্ত; হোক সেই ফিতনা নারীর পক্ষ থেকে কিংবা অন্যদের পক্ষ থেকে এটি এমন একটি বিষয় যা তাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।নারীর নেতৃত্ব হারাম এই মর্মে দলিল হচ্ছে, মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কুরআনে বলেন- الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ “পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে,তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে”।(সূরা নিসা: ৪/৩৪) এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পুরুষকে নারীর ‘‘ক্বাওওয়াম’’ বলেছেন। ক্বাওওয়াম অর্থ হলো: অভিভাবক, তত্তাবধায়ক, ব্যবস্থাপক, পরিচালক ইত্যাদি।
.
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম আবু ‘আব্দুল্লা-হ্ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল ক্বুরত্বুবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭১ হি.] বলেন-“قوله تعالى : ( الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ ) أي : يقومون بالنفقة عليهن ، والذب عنهن ، وأيضاً : فإنَّ فيهم الحكام والأمراء ومن يغزو ، وليس ذلك في النساء” আল্লাহর বাণী-(الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ ) “পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল” অর্থাৎ পুরুষেরা নারীদের ভরণপোষণ বহন করবে,তাদের রক্ষা করবে। শাসক, বিচারক ও যোদ্ধা ও তাদের থেকেই হবে; নারীদের থেকে নয়।(তাফসীরে কুরতুবী; খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ১৬৮)

আর ইমাম ইবনে কাসির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أي : الرجل قيِّم على المرأة ، أي : هو رئيسها وكبيرها والحاكم عليها ومؤدبها إذا اعوجت”. ( بما فضَّل الله بعضهم على بعض ) أي : لأن الرجال أفضل من النساء ، والرجل خير من المرأة ، ولهذا كانت النبوة مختصة بالرجال ، وكذلك المُلك الأعظم ، لقوله صلى الله عليه وسلم : ( لن يفلح قوم ولَّوا أمرَهم امرأة ) رواه البخاري ، وكذا منصب القضاء”

“পুরুষ হলো মহিলার কর্তৃত্বশীল ( পরিচালক, সংরক্ষক, তত্বাবধায়ক , কর্তা, শাসক)। অর্থাৎ পুরুষ মহিলার নেতা, বড়, সম্মানিত, বিচারক এবং যখন মহিলা বাঁকা হবে তখন পুরুষ তাকে আদব শিক্ষা দিবে (পুরুষ মহিলাকে সোজা ও সঠিকভাবে পরিচালনাকারী)। (আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন) অর্থাৎ,পুরুষরা এসব ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে উত্তম। এজন্যই নবুওয়াত পুরুষদের জন্য খাস (মহিলাদের জন্য নয়)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:”এমন জাতি কখনোও সফলকাম হবে না, যে জাতি তাদের নেতৃত্বের দায়িত্বভার কোন মহিলার উপর অর্পণ করবে।’’ইমাম বুখারী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ ভাবে বিচারপতি প্রভৃতি পদের জন্যেও শুধু পুরুষরাই যোগ্য। (তাফসির ইবনে কাসীর; খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৯২ )
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আলী আশ-শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৫০ হি.] বলেছেন,”فيه دليل على أن المرأة ليست من أهل الولايات ، ولا يحل لقوم توليتها ، لأنه يجب عليهم اجتناب ما يوقعهم في عدم الفلاح” উক্ত আয়াতের মধ্যে প্রমাণ করে যে, মহিলারা নেতৃত্ব গ্রহণকারী অন্তর্ভুক্ত নয়। এবং কোন জাতির জন্য বৈধ নয় যে তারা মহিলাদেরকে নেতৃত্ব অর্পণ করবে। কারণ পুরুষদের উপর ওয়াজিব হলো যা তাদের সফলতার প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় তা হতে বিরত থাকা। (নাইলুল আওত্বার: ৮/৩০৫)।
.
হাদীসে এসেছে: আবূ বাকরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُم امْرَأَةً “যে জাতি কোন মহিলাকে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দায়িত্ব দিবে তাদের কখনো মুক্তি মিলবে না।”(সহীহ বুখারী হা/৪৪২৫; তিরমিযী হা/২২৬২, সিলসিলা সহীহাহ হা/২৬১৩) উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়, নারী নেতৃত্ব হারাম যদি কোনো সম্প্রদায়ের নারী আমীর বানায় তাহলে তারা কখনো সফল হবে না। হাদীসটির বর্ণনাকারী আবূ বাকরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ঐতিহাসিক ‘জামাল’-এর হাঙ্গামার সময় (৩৬ হি.) আম্মাজান আয়েশাহ্ (রাদুয়াল্লাহু আনহা)-কে লক্ষ্য করে নারীর ময়দানে নেতৃত্ব করার অবৈধতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং আম্মাজান আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমর্থন থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর পক্ষ অবলম্বন করতে পারেননি শুধুমাত্র নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নারী নেতৃত্বের বিষয়ে উপর্যুক্ত নেবিাচক উক্তির কারণে।(বিস্তারিত দেখুন: বুখারী, মাগাযী, হা/৪৪২৫) আর ইলমে হাদীসের অধিকাংশ ইমাম এই অর্থেই হাদীসটি বুঝেছেন ও তাঁদের গ্রন্থাবলীতে শিরোনাম করেছেন। সুতরাং উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়, নারী নেতৃত্ব হারাম যদি কোনো সম্প্রদায়ের নারী আমীর বানায় তাহলে তারা কখনো সফল হবে না। হাদীসটির ব্যাখায় ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:” فليس بعد نفي الفلاح شيء من الوعيد الشديد , ورأس الأمور هو القضاء بحكم الله عز وجل , فدخوله فيها دخولاً أولياً “তারা কখনই সফল হবে না একথা বলার চেয়ে বড় কোন কঠোর সতর্কবাণী নেই। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো আল্লাহ তাআলার বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা। শাসকের কাজের মধ্যে এটাই প্রথমত কাজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।(আল-সায়েল আল-জারার: খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ২৭৩)
.
আল্লামা মাওয়ার্দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন”

ولا يجوز أن تقوم بذلك امرأة ، لقول النبي صلى الله عليه وسلم : ( ما أفلح قومٌ أسندوا أمرهم إلى امرأة ) ؛ ولأن فيها من طلب الرأي وثبات العزم ما تضعف عنه النساء ، ومن الظهور” في مباشرة الأمور ما هو عليهن محظور”

“কোন নারীর জন্য শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া বৈধ নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে। এর আরো কারণ হলো শাসনকার্য পরিচালনা অন্যের মতামত চাইতে হয় এবং দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হয় আর এই ব্যাপারে নারীরা দুর্বল। শাসকের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য প্রকাশ্যে গমনাগমন করতে হয় যা তাদের জন্য নিষিদ্ধ।” (আল আহকামুস সুলতানিয়্যাহ: ৪৬)

আল মাওযূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ, কুয়েতি ফিক্বহ বিশ্বকোষ, গন্থে বলা হয়েছে,

اتفق الفقهاء على أن من شروط الإمام الأعظم أن يكون ذكرا ، فلا تصح ولاية امرأة ، لقوله صلى الله عليه وسلم : ( لن يفلح قوم ولَّوا أمرهم امرأة ) ، ولكي يتمكن من مخالطة الرجال” ، ويتفرغ لتصريف شئون الحكم ; ولأن هذا المنصب تناط به أعمال خطيرة , وأعباء جسيمة , تلائم الذكورة”

“এই ব্যাপারে সমস্ত ফকীহ একমত যে, প্রধান শাসক হওয়ার জন্য শর্ত হলো পুরুষ হওয়া। কাজেই নারীর নেতৃত্ব শুদ্ধ হবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে।'(নেতৃত্ব নারীকে দেওয়া হয়নি বরং পুরুষকে দেওয়া হয়েছে) যাতে তারা পুরুষদের সাথে মিশতে পারে, শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। উপরন্তু এটা এক পদ যেখানে গুরুতর ও ভারী দায়িত্ব রয়েছে যা কেবল পুরুষদের জন্যই মানানসই।” (আল মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ: খন্ড: ২১ পৃষ্ঠা: ২৭০)
.
ইমাম বাগাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫১৬ হি.] শারহুস সুন্নাহ গ্রন্থে বলেন:اتفقوا على أن المرأة لا تصلح أن تكون إماماً ولا قاضياً ، لأن الإمام يحتاج إلى الخروج لإقامة أمر الجهاد ، والقيام بأمور المسلمين ، والقاضي يحتاج إلى البروز لفصل الخصومات ، والمرأة عورة ، لا تصلح للبروز ، وتعجز لضعفها عند القيام بأكثر الأمور ، ولأن المرأة ناقصة ، والإمامة والقضاء من كمال الولايات ، فلا يصلح لها إلا الكامل من الرجال “মুসলীম উম্মাহ এ ব্যপারে একমত যে, নারীর জন্য ‘রাষ্ট্র প্রধান’ হওয়া জায়েয নয়। কেননা ‘রাষ্ট্র প্রধান’-কে জিহাদ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং মুসলমানদের বিভিন্ন ব্যপারগুলোকে আনজাম দেওয়ার জন্য বাহিরে বের হওয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে পড়তে হয়। মহিলাদের জ্ঞানে কমতি রয়েছে যার ফলে তারা বিভিন্ন বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে অক্ষম হবে। আর নেতা এবং বিচারক পরিপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী হওয়া উচিত। শুধু মাত্র নিখুঁত পুরুষদের এমন কাজ প্রযোজ্য”।(শারহুস সুন্নাহ, খন্ড: ১০ পৃষ্ঠা:৭৭)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ বাকার ইবনুল ‘আরাবী আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫৪৩ হি.] “আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বলেন, رُوِيَ فِي الصَّحِيحِ ، عَنْ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَالَ حِينَ بَلَغَهُ أَنَّ كِسْرَى لَمَّا مَاتَ وَلَّى قَوْمُهُ بِنْتَهُ:( لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمْ امْرَأَةً ) ، وَهَذَا نَصٌّ فِي أَنَّ الْمَرْأَةَ لَا تَكُونُ خَلِيفَةً “সহীহ হাদিসে বর্নিত আছে যে,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যখন এ খবর পৌছল যে, পারস্যের লোকেরা কিস্‌রার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেন,সে জাতি কখনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে। হাদীসটি এ কথারই দলিল যে, নারী খলীফা (রাষ্ট্র প্রধান) হতে পারবে না। এ ব্যপারে কোনোই দ্বিমত নেই”।(ইবনুল আরাবী, আহকামুল কুরআন: খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৪৮২)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, একদল মুসলিম নারী যারা পুরুষের চেয়ে বেশি শিক্ষিত তাদের জন্য পুরুষদের নেতা হওয়া কি জায়েজ? মহিলারা নামাজের নেতা (ইমামতি) ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবন্ধকতা কি এবং কেন?

জবাবে তারা বলেন,

دلت السنة ومقاصد الشريعة والإجماع والواقع على أن المرأة لا تتولى منصب الإمارة ولا منصب القضاء ؛ لعموم حديث أبي بكرة أن النبي صلى الله عليه وسلم لما بلغه أن فارساً ولّوا أمرهم امرأة قال : ( لن يفلح قوم ولّوا أمرهم امرأة ) فإن كلا من كلمة ( قوم ) وكلمة ( امرأة ) نكرة وقعت في سياق النفي فَتَعُم ، والعبرة بعموم اللفظ لا بخصوص السبب كما هو معروف في الأصول .
وذلك أن الشأن في النساء نقص عقولهن ، وضعف فكرهن ، وقوة عاطفتهن ، فتطغى على تفكيرهن ؛ ولأن الشأن في الإمارة أن يتفقد متوليها أحوال الرعية ، ويتولى شؤونها العامة اللازمة لإصلاحها ، فيضطر إلى الأسفار في الولايات ، والاختلاط بأفراد الأمة وجماعاتها ، وإلى قيادة الجيش أحياناً في الجهاد ، وإلى مواجهة الأعداء في إبرام عقود ومعاهدات ، وإلى عقد بيعات مع أفراد الأمة وجماعاتها رجالاً ونساءً ، في السلم والحرب ، ونحو ذلك مما لا يتناسب مع أحوال المرأة ، وما يتعلق بها من أحكام شرعت لحماية عرضها ، والحفاظ عليها من التبذل الممقوت .
ويشهد لذلك أيضا إجماع الأمة في عصر الخلفاء الراشدين وأئمة القرون الثلاثة المشهود لها بالخير إجماعاً عملياً على عدم إسناد الإمارة والقضاء إلى امرأة ، وقد كان منهن المثقفات في علوم الدين اللائي يرجع إليهن في علوم القرآن والحديث والأحكام ، بل لم تتطلع النساء في تلك القرون إلى تولي الإمارة وما يتصل بها من المناصب والزعامات العامة ” .

“সুন্নাহ,শরীয়তের উদ্দেশ্য, ঐক্যমত এবং বাস্তবতা প্রমাণ করে যে একজন মহিলা রাষ্ট্র পরিচালনা এবং বিচারকের পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে না। আবু বকরের হাদিসের অর্থ ব্যাপক।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যখন এ খবর পৌছল যে, পারস্যের লোকেরা কিস্‌রার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কখনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে।(সহীহ বুখারী হা/৭০৯৯) এখানে قوم ) জাতি ও ( امرأة ) মহিলা শব্দ দুটি (نكرة) নাকেরা তথা অনির্দিষ্ট। যা (سياق النفي) না-বাচক বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়েছে। যার ফলে এটি ব্যাপকার্থে পরিণত হয়েছে। আর মূলনীতি হলো, (العبرة بعموم اللفظ لا بخصوص السبب) অর্থাৎ হুকুম (اللفظ) শব্দের ব্যাপকতার মাধ্যমে ধর্তব্য, (السبب) কারণ-এর নির্দিষ্টতার মাধ্যমে হুকুম চলবে না।(অর্থাৎ শরীয়তের বিধান সকলের সাথে সম্পৃক্ত, শুধু যাকে কেন্দ্র করে অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে বা অথবা সেই কারণের সাথে সম্পৃক্ত না)। যেমনটি উসুল-এর মধ্যে এটি প্রসিদ্ধ একটি উসুল। আর এর কারণ হলো মহিলাদের বুদ্ধিমত্তা কম ও তাদের চিন্তা-ভাবনা দুর্বল। তাছাড়াও তাদের আবেগ বেশি। ফলে তারা তাদের চিন্তা-ভাবনায় ভুল করে বসে।আর যেহেতু নেতৃত্বের বিষয়টির ক্ষেত্রে শাসকের জন্য তার প্রজাদের অবস্থা পরিদর্শন করা এবং এর সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় জনসাধারণের বিষয়গুলি গ্রহণ করা, তাই তিনি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভ্রমণ করতে ও জাতির ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সাথে মিশতে বাধ্য, আবার কখনও কখনও জিহাদে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্য, কখনো চুক্তি ও সন্ধি সম্পাদনের ক্ষেত্রে শত্রুদের মোকাবেলা করতে বাধ্য, কখনো জাতির ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পুরুষ-মহিলা সবার সাথে ক্রয় বিক্রয় সম্পাদন করতে বাধ্য; এ ধরনের অনেক বিষয় রয়েছে যা মহিলাদের সাথে উপযুক্ত নয়।আর তাদের সাথে এমন কতগুলো বিধান সম্পৃক্ত যা তাদের সম্মান রক্ষা এবং ঘৃণ্য অনৈতিক কাজ থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য শরীয়ত বিধান আরোপ করেছে, তাছাড়া এটাও প্রমাণ করে যে, খোলাফায়ে রাশেদীন এবং পরবর্তী তিন যুগেও মহিলা নেতৃত্ব ছিলো না । তাদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানে শিক্ষিত মহিলাও ছিলেন যাদেরকে কুরআন, হাদিস এবং বিধি বিধানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এতদাসত্ত্বেও সেই শতাব্দীতে মহিলারা শাসক , এর সংশ্লিষ্ট পদ এবং জননেতৃত্ব গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা করেননি।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ১৩ পৃষ্ঠা: ১৭)
.
শাইখ ইবনে বা’য রাহিমাহুল্লাহকে নিম্নোক্ত প্রশ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, মহিলা নিজেই রাষ্ট্রের প্রধান মন্ত্রীর প্রার্থী হওয়া অথবা প্রশাসনের প্রধান অথবা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হওয়ার জন্য নিজে নিজে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের অবস্থান কী?

জবাবে শাইখ বলেন,

تولية المرأة واختيارها للرئاسة العامة للمسلمين لا يجوز، وقد دل الكتاب والسنة والإجماع على ذلك ، فمن الكتاب : قوله تعالى : الرجال قوَّامون على النساء بما فضَّل الله بعضهم على بعض ، والحكم في الآية عام شامل لولاية الرجل وقوامته في أسرته ، وكذا في الرئاسة العامة من باب أولى ، ويؤكد هذا الحكم ورود التعليل في الآية ، وهو أفضلية العقل والرأي وغيرهما من مؤهلات الحكم والرئاسة .

ومن السنَّة : قوله صلى الله عليه وسلم لما ولَّى الفرسُ ابنةَ كسرى : ( لن يفلح قومٌ ولَّوا أمرَهم امرأة ) ، رواه البخاري .

ولا شك أن هذا الحديث يدل على تحريم تولية المرأة لإمرة عامة ، وكذا توليتها إمرة إقليم أو بلد ؛ لأن ذلك كله له صفة العموم ، وقد نفى الرسول صلى الله عليه وسلم الفلاح عمَّن ولاها ، والفلاح هو الظفر والفوز بالخير .

وأيضاً : فإن المصلحة المدركة بالعقل تقتضي عدم إسناد الولايات العامة لهن ، فإن المطلوب فيمن يُختار للرئاسة أن يكون على جانب كبير من كمال العقل ، والحزم ، والدهاء ، وقوة الإرادة ، وحسن التدبير ، وهذه الصفات تتناقض مع ما جُبلت عليه المرأة من نقص العقل ، وضعف الفكر ، مع قوة العاطفة ، فاختيارها لهذا المنصب لا يتفق مع النصح للمسلمين ، وطلب العز والتمكين لهم ، والله الموفق ، وصلى الله على نبيِّنا محمَّد وعلى آله وصحبه” انتهى من “مجلة المجتمع” ( العدد 890 ) .

“একজন মহিলাকে মুসলিমদের সাধারণ নেতৃত্বের জন্য শাসক বানানো ও তাকে নির্বাচন করা জায়েয নয়। এই ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার দলিল রয়েছে। কুরআনের দলীল হলো, মহান আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কুরআনে বলেন’ পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।’ (সূরা নিসা: ৩৪) পরিবারে পুরুষের শাসন ক্ষমতার ব্যাপারে আয়াতের বিধানটি সাধারণ। কাজেই অন্যান্য নেতৃত্বের ব্যাপারে ও আয়াতটি অধিকতর বেশি যৌক্তিকভাবে প্রযোজ্য হবে। বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে আয়াতে কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর সেটা হলো পুরুষের মতামত ও বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠত্ব; যা বিচার ফয়সালা ও নেতৃত্বের জন্য বড় সহায়ক। সুন্নাহ থেকে দলিল হলো- পারসিকরা সম্রাটের মেয়েকে তাদের নেত্রী হিসেবে গ্রহণ করে, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- (لن يفلح قومٌ ولَّوا أمرَهم امرأة ).”সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে”।(সহীহ বুখারী) নিঃসন্দেহে অত্র হাদীসটি ব্যাপকভাবে অথবা কোন শহরে অথবা কোন অঞ্চলের নারী নেতৃত্ব হারাম হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলিল। সাধারণ হুকুমের দাবী এমনটাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফলতা নাকচ করে দিয়েছেন, যারা নারীকে নেতৃত্ব দেয়। আর সফলতা হল বিজয়, কল্যাণ লাভ বুঝায়। বুদ্ধিবৃত্তিক দাবিও এটাই যে, সাধারণ নেতৃত্ব তাদের না দেওয়া। কেননা নেতৃত্বের জন্য মনোনীত ব্যক্তিকে জ্ঞানগত কামালিয়াত, দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা, ইচ্ছাশক্তির দৃঢ়তা, উত্তম পরিচালনা প্রভৃতি গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়। আর এসব বৈশিষ্ট্য নারী প্রকৃতির সাথে বেমানান। কেননা তারা সৃষ্টিগতভাবে জ্ঞানগত কমতি, চিন্তাশক্তিতে দুর্বল। উপরন্তু তারা ভীষণভাবে আবেগপ্রবণ। কাজেই মুসলিম কল্যাণ, সম্মান লাভ প্রভৃতি বিবেচনায় এই পদ তাদের জন্য মানানসই নয়।”(মাজিল্লাতুল-মুজতামাঈ: সংখ্যা: ৮৯০) সবশেষে বর্তমান এই স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে যেন আর কখনো কোন নারী শাসক নির্বাচিত করা না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে, আমরা নারীর নেতৃত্ব থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমীন!
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: