ইসলামে গণতন্ত্রের হুকুম

প্রশ্ন: গণতন্ত্রের হুকুম কি? গণতান্ত্রিক সংসদে গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ কিংবা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে ভোট দেয়া ও নির্বাচিত করার হুকুম কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
ভুমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর: ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) এটি গ্রিক ভাষার শব্দ। দুটি শব্দের সমন্বয়ে শব্দটি গঠিত: Demos অর্থ- সাধারণ মানুষ বা জনগণ। আর দ্বিতীয় শব্দটি হচ্ছে-KRATIA অর্থ- শাসন। অতএব ডেমোক্রেসি শব্দের অর্থ হচ্ছে- সাধারণ মানুষের শাসন অথবা জনগণের শাসন। এটি একটি মানব রচিত ইসলাম বিরোধী মতবাদ। এর মানে জনগণ নিজেই নিজেকে শাসন করা। অথচ ইসলামে শাসনের অধিকার সুউচ্চ ও সুমহান আল্লাহর অধিকার। কোন মানুষকে আইন প্রণয়ন করার অধিকার দেয়া জায়েয নেই; সে মানুষ যেই হোক না কেন। অথচ এই তন্ত্রে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা জনগণের হাতে অথবা তাদের নিযুক্ত প্রতিনিধি (পার্লামেন্ট সদস্য) এর হাতে অর্পণ করা হয়।ফলে এ তন্ত্রের মাধ্যমে গায়রুল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়; বরং জনগণ ও জনপ্রতিনিধির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ তন্ত্রে জনপ্রতিনিধিদের সকলে একমত হওয়ার দরকার নেই। বরং অধিকাংশ সদস্য একমত হওয়ার মাধ্যমে এমন সব আইন জারী করা যায় জনগণ যেসব আইন মেনে চলতে বাধ্য; এমনকি সে আইন যদি মানব প্রকৃতি, ধর্ম, বিবেক ইত্যাদির সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবুও। যেমন:
.
উদাহরণতঃ এই তন্ত্রের অধীনে গর্ভপাত করা, সমকামিতা, সুদি মুনাফার বিধান ইত্যাদি জারী করা এবং ব্যভিচার ও মদ্যপানকে বৈধ করা হয়েছে। অপরদিকে ইসলামি শাসনকে বাতিল করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে জানিয়েছেন, হুকুম বা শাসনের মালিক একমাত্র তিনি এবং তিনিই হচ্ছেন- উত্তম হুকুমদাতা বা শাসক। পক্ষান্তরে অন্যকে তাঁর শাসনে অংশীদার করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং জানিয়েছেন তাঁর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কেউ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “অতএব, হুকুম দেওয়ার অধিকার সুউচ্চ ও সুমহান আল্লাহর জন্য” [সূরা গাফের, আয়াত: ১২] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন (ভাবানুবাদ): “আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেওয়ার অধিকার নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।”।[সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪০] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আল্লাহ কি হুকুমদাতাদের শ্রেষ্ঠ নন?” [সূরা ত্বীন, আয়াত: ০৮] তিনি আরও বলেন (ভাবানুবাদ): “বলুন, তারা কতকাল অবস্থান করেছে- তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের গায়েব বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন! তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি নিজ হুকুমে কাউকে অংশীদার করান না।”[সূরা কাহাফ, আয়াত: ২৬] তিনি আরও বলেন (ভাবানুবাদ): “তারা কি জাহেলিয়াতের হুকুম চায়? বিশ্বাসীদের জন্যে আল্লাহর চেয়ে উত্তম হুকুমদাতা আর কে?”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫০] আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা। তিনি জানেন, কোন বিধান তাদের জন্য উপযুক্ত; কোন বিধান তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। সব মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, আচার-আচরণ ও অভ্যাস এক রকম নয়। নিজের জন্য কোনটা উপযোগী মানুষ সেটাই তো জানে না; থাকতো অন্যের জন্য কোনটা উপযুক্ত সেটা জানবে। এ কারণে যে দেশগুলোতে জনগণের প্রণীত আইনে শাসন চলছে সে দেশগুলোতে বিশৃঙ্খলা, চারিত্রিক অবক্ষয়, সামাজিক বিপর্যয় ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না।
.
আল মাওসুআতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহেব আল-মুআসেরা’ গ্রন্থে এসেছে:

“ولا شك في أن النظم الديمقراطية أحد صور الشرك الحديثة ، في الطاعة ، والانقياد ، أو في التشريع ، حيث تُلغى سيادة الخالق سبحانه وتعالى ، وحقه في التشريع المطلق ، وتجعلها من حقوق المخلوقين ، والله تعالى يقول : ( مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآَبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ) يوسف/ 40 ، ويقول تعالى : (إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ) الأنعام/ 57”

“কোন সন্দেহ নেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর প্রতি নতি শিকার কিংবা আইন প্রণয়নের অধিকারের ক্ষেত্রে নব্য শিরকের একটি রূপ। এ পদ্ধতিতে মহামহিম স্রষ্টার কর্তৃত্বকে বাতিল করে দেয়া হয়; অথচ আইন প্রণয়নের একচ্ছত্র অধিকার হচ্ছে- স্রষ্টার; কিন্তু সে অধিকার তাঁর থেকে ছিনিয়ে মাখলুককে প্রদান করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের (প্রতিমার) ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পূর্বপুরুষগণ ও তোমরা রেখেছ; এর পক্ষে কোন প্রমাণ আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি। বিধান দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শুধুতাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে। এটাই শাশ্বত ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪০] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “বিধান দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর।” [সূরা আনআম, আয়াত: ৫৭; মাওসুআতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহেব আল-মুআসেরা’ খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০৬৬, ১০৬৭)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, ‘ইসলাম ও গণতন্ত্র দু’টি বিপরীতমুখী ব্যবস্থা। যা কখনো এক হবার নয়। একটি আল্লাহর উপর ঈমান ও আল্লাহ নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনার নির্দেশ দেয়, অপরটি ত্বাগুতের (আল্লাহ বিরোধী অনুশাসন) প্রতি ঈমান ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার উপর নির্ভরশীল (সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, অডিও ক্লিপ নং-৩৫৩)।
.
সুতরাং যে ব্যক্তি বা আলেম গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতির প্রকৃত অবস্থা জানে, ইসলামে গণতন্ত্রের হুকুম কি সেটা জানে, তারপরও এ পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করে সে ব্যক্তি ভয়াবহ শংকার মধ্যে আছে। কারণ ইতিপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে ইসলাম বিরোধী। তবে হা! কোন কোন আলেমদের মতে যে ব্যক্তি এ পদ্ধতির অধীনে নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে এ জন্য নির্বাচিত করে যাতে করে এ রাষ্ট্রীয় আইন সভাতে ঢুকে এর বিরোধিতা করা যায় এবং এ পদ্ধতির বিপক্ষে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়, সাধ্যানুযায়ী অকল্যাণ ও দুর্নীতি রোধ করা যায় এবং যেন গোটা ময়দান দুর্নীতিবাজ ও নাস্তিকদের হাতে চলে না যায়, যারা জমিনে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেয়, মানুষের দ্বীন ও দুনিয়ার সমূহ কল্যাণ নস্যাৎ করে দেয় তবে এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করে ইজতিহাদ করার তথা বিবেক-বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বরং কোন কোন আলেম মনে করেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা অপরিহার্য। যেমন:
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে নির্বাচনে অংশ নেয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন:

أنا أرى أن الانتخابات واجبة ، يجب أن نعين من نرى أن فيه خيراً ، لأنه إذا تقاعس أهل الخير ، مَنْ يحل محلهم ؟ سيحل محلهم أهل الشر ، أو الناس السلبيون الذين ما عندهم خير ولا شر ، أتباع كل ناعق ، فلابد أن نختار من نراه صالحاً .
فإذا قال قائل : اخترنا واحداً لكن أغلب المجلس على خلاف ذلك .
“আমি মনে করি এ নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়া ফরজ। আমরা যাকে ভাল মনে করি তাকে সহযোগিতা করা ফরজ। কারণ ভাল লোকেরা যদি ঢিলেমি করে তাহলে এ স্থানগুলো কে দখল করবে? খারাপ লোকেরাই দখল করবে কিংবা এমন লোকেরা দখল করবে যাদের কাছে না আছে ভাল; না আছে খারাপ; যারা সুবিধাবাদী। তাই আমাদের উচিত যাকে যোগ্য মনে করি তাকে নির্বাচিত করা। যদি কেউ বলেন: আমরা যাকে নির্বাচিত করলাম আইনসভার অধিকাংশ সদস্য তার বিপক্ষে।

আমরা জবাবে বলব:

: لا مانع ، هذا الواحد إذا جعل الله فيه البركة وألقى كلمة الحق في هذا المجلس سيكون لها تأثير ولا بد ، لكن الذي ينقصنا الصدق مع الله ، نعتمد على الأمور المادية الحسية ولا ننظر إلى كلمة الله عز وجل …. فَرَشِّحْ مَنْ ترى أنه خير ، وتوكل على الله

“কোন অসুবিধা নেই। এই একজনের মধ্যে আল্লাহ বরকত দিতে পারেন। তিনি যদি আইনসভার সামনে হক কথা বলতে পারেন তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব থাকবে, প্রভাব থাকতেই হবে। তবে যে ক্ষেত্রে আমাদের কসুর হয় সেটা হচ্ছে- আল্লাহর সাথে বিশ্বস্ত হওয়া। আমরা শুধু বৈষয়িক বিষয়ের উপর নির্ভর করি; আল্লাহর বাণী… এর দিকে তাকাই না। সুতরাং আপনি যাকে ভাল মনে করেন তাকে নির্বাচিত করুন; এরপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন”।(উসাইমীন; লিকাআতুল বাব আল-মাফতুহ থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৭১৬৬)
..
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দেয়া ও ভোট দেয়া জায়েয আছে কি? উল্লেখ্য, আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা আল্লাহর নাযিলকৃত আইনে নয়।

জবাবে তাঁরা বলেন:

“لا يجوز للمسلم أن يرشح نفسه رجاء أن ينتظم في سلك حكومة تحكم بغير ما أنزل الله ، وتعمل بغير شريعة الإسلام ، فلا يجوز لمسلم أن ينتخبه أو غيره ممن يعملون في هذه الحكومة إلا إذا كان من رشح نفسه من المسلمين ومن ينتخبون يرجون بالدخول في ذلك أن يصلوا بذلك إلى تحويل الحكم إلى العمل بشريعة الإسلام ، واتخذوا ذلك وسيلة إلى التغلب على نظام الحكم ، على ألا يعمل من رشح نفسه بعد تمام الدخول إلا في مناصب لا تتنافى مع الشريعة الإسلامية”.
الشيخ عبد العزيز بن باز ، الشيخ عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان ، الشيخ عبد الله بن قعود” .

যে সরকার আল্লাহর নাযিলকৃত আইন দিয়ে শাসন করে না, শরিয়া আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না কোন মুসলমানের জন্য সে সরকারে যোগ দেয়ার প্রত্যাশায় নিজেকে মনোনীত করা জায়েয নয়। তাই এ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য কোন মুসলমানের নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করা জায়েয নেই। তবে কোন মুসলমান যদি এ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কিংবা অন্যকে নির্বাচিত করে যে, এর মাধ্যমে এ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে, নির্বাচনে অংশ গ্রহণকে তারা বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর আধিপত্যবিস্তার করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে সেটা জায়েয। তবে, সে ক্ষেত্রেও যে ব্যক্তি প্রার্থী হবেন তিনি এমন কোন পদ গ্রহণ করতে পারবেন না যা ইসলামী শরিয়ার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক”।শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান, শাইখ আব্দুল্লাহ কুয়ুদ।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২৩; পৃষ্ঠা: ৪০৬, ৪০৭)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে আরও জিজ্ঞেস করা হয় যে আপনারা জানেন, আমাদের আলজেরিয়াতে “আইনসভার নির্বাচন” অনুষ্ঠিত হয়। কিছু কিছু দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত কায়েমের দিকে আহ্বান করে। আর কিছু কিছু দল আছে যারা ইসলামী হুকুমত চায় না। এখন যে ব্যক্তি এমন কাউকে ভোট দেয় যে প্রার্থী ইসলামী হুকুম চায় না সে ব্যক্তির হুকুম কি হবে; তবে এ ব্যক্তি নামায আদায় করে?

জবাবে তাঁরা বলেন:

“يجب على المسلمين في البلاد التي لا تحكم الشريعة الإسلامية ، أن يبذلوا جهدهم وما يستطيعونه في الحكم بالشريعة الإسلامية ، وأن يقوموا بالتكاتف يدا واحدة في مساعدة الحزب الذي يعرف منه أنه سيحكم بالشريعة الإسلامية ، وأما مساعدة من ينادي بعدم تطبيق الشريعة الإسلامية فهذا لا يجوز ، بل يؤدي بصاحبه إلى الكفر ؛ لقوله تعالى : (وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ * أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ) المائدة/49-50 ، ولذلك لما بَيَّن اللهُ كفر من لم يحكم بالشريعة الإسلامية ، حذر من مساعدتهم أو اتخاذهم أولياء ، وأمر المؤمنين بالتقوى إن كانوا مؤمنين حقا ، فقال تعالى : (يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ) المائدة/57 .وبالله التوفيق ، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم “.
اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والإفتاءالشيخ عبد العزيز بن عبد الله بن باز ، الشيخ عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان” .

“যে সব দেশে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু নাই সেসব দেশের মুসলমানদের উপর ফরজ ইসলামী হুকুমত ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োজিত করা এবং যে দল ইসলামী হুকুমত বাস্তবায়ন করবে বলে তারা ধারনা করেন সে দলকে একজোটে সবাই মিলে সহযোগিতা করা। পক্ষান্তরে, যে দল ইসলামী শরিয়া বাস্তবায়ন না করার প্রতি আহ্বান জানায় সে দলকে সহযোগিতা করা নাজায়েয। বরং এ ধরনের সহযোগিতা ব্যক্তিকে কুফরের দিকে ধাবিত করে। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দিন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যাতে করে আল্লাহ আপনার প্রতি যা নাযিল করেছেন তারা এর কোন কিছু হতে আপনাকে বিচ্যুত করতে না পারে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু পাপের শাস্তি দিতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসেক। তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? যারা (আল্লাহর প্রতি) একীন রাখে তাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কে?”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৯-৫০] এ কারণে যারা ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে না আল্লাহ তাদেরকে কাফের হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের সাথে সহযোগিতা করা থেকে, তাদেরকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করা থেকে সাবধান করেছেন। যদি মুমিনগণ প্রকৃত ঈমানদার হয় তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: “হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করেতাদেরকে এবং অন্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।”।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫৭] আল্লাহই তাওফিকদাতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড:১; পৃষ্ঠা: ৩৭৩)

পরিশেষে, মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- তাদের ধর্মকে নিয়ে গৌরববোধ করা, তাদের রবের পক্ষ থেকে দেয়া বিধানের প্রতি আস্থা রাখা; কেননা ইসলামী বিধি বিধান তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে যথেষ্ট এবং মহান আল্লাহর শরিয়ত বিরোধী সকল তন্ত্র-মন্ত্র থেকে নিজের মুক্ততা ঘোষণা করা। শাসক ও শাসিত সকল মুসলমানের কর্তব্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলা।কেননা ইসলাম ছাড়া অন্য কোন তন্ত্র বা জীবনপদ্ধতি গ্রহণ করা হারাম। আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে গ্রহণ করার দাবী হচ্ছে- প্রকাশ্যে ও গোপনে ইসলামকে আঁকড়ে ধরা, আল্লাহর শরিয়তকে সম্মান করা, নবীর আদর্শের অনুসরণ করা।আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তিনি যেন ইসলামের মাধ্যমে আমাদেরকে শক্তিশালী করেন এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। (আল্লাহই ভাল জানেন)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)।

Share: