ভূমিকা: মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ইবাদতগুলোর মধ্যে সালাত হচ্ছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। যা ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। এটা মুমিন ও কাফিরের মাঝে পার্থক্যকারী। আর এ ইবাদত পালনের অন্যতম স্থান হলো মসজিদ। মসজিদ পৃথিবীর মধ্যে আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। প্রত্যেক মুমিন প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার তার প্রভুর আদেশ পালনার্থে সেখানে সমবেত হয়। এই মসজিদে আসা-যাওয়া ও অবস্থানের অনেক ফযীলত ও নিয়ম-কানুন রয়েছে। মানুষের জীবন পরিক্রমায় অনেক সময় অনেক জিনিস হারিয়ে যায়, কেউ তা পায় আবার কেউ তা পায় না। অনেকেই অনেক পদ্ধতিতে হারানো জিনিস খোঁজেন, কিন্তু কিছু লোক আছেন যারা হারানো জিনিস খোঁজার জন্য মসজিদ ব্যবহার করে থাকে। কেউ জামা‘আতে সালাত আদায়ের পর, আবার কেউ মসজিদের মাইকে। যা অবশ্যই পরিহার করা আবশ্যক। কারণ হাদীসে সাব্যস্ত হয় যে, উচ্চস্বরে হারানোর বস্ত্ত ঘোষণা দেয়া হারাম। কেননা মাসজিদ এজন্য তৈরি হয়নি, বরং তৈরি হয়েছে আল্লাহর যিকর, সালাত আদায়, ইলম নিয়ে আলোচনা ইত্যাদির জন্য। তাই মসজিদের মাইক আযান ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। এ সম্পর্কে একাধিক হাদীস পাওয়া যায়- বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একটি লোক মসজিদের মধ্যে (হারানো বস্তু সম্পর্কে) ঘোষণা পূর্বক বলল, ‘আমাকে আমার লাল উটের সন্ধান কে দিতে পারবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে তা সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।’(সহীহ মুসলিম ৫৬৯, ইবনু মাজাহ ৭৬৫, আহমাদ ২২৫৩৫, রিয়াদুস সলেহিন ১৭০৭)
.
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কাউকে (মসজিদে) হারানো জিনিস সন্ধান (ঘোষণা) করতে শোনে, সে যেন বলে, ‘আল্লাহ যেন তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন। কারণ, এজন্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি।’(সহীহ মুসলিম ৫৬৮, তিরমিযী ১৩২১, আবু দাউদ ৪৭৩, ইবনু মাজাহ ৭৬৭, আহমাদ ৮৩৮২, ৯১৬১, দারেমী ১৪০১, রিয়াদুস সালেহীন, হাদিস নং ১৭০৫)
.
আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজার ঘোষণা দিতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী ৩২২, আবু দাঊদ ১০৭৯, আহমাদ ৬৬৩৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৭৬৬, সনদ হাসান)
.
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তোমার এ ব্যবসায়ে তোমাকে লাভবান না করুন। এভাবে কাউকে মসজিদে হারানো জিনিস অনুসন্ধান করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তা তোমাকে ফেরত না দিন। (তিরমিযী ১৩২১, ইরওয়া ১২৯৫, দারিমী ১৪৪১ মিশকাত,৭৩৩ সনদ সহীহ)
.
অনুরূপ মৃত সংবাদও প্রচার করতে রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন। হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমার মৃত্যু হলে এই বিষয়ে তোমরা কোন ঘোষণা দিবে না। আমার ভয় হয় যে, এটা মৃত্যুর সংবাদ প্রচার বলে ধরা হবে। আমি মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিষেধ করতে শুনেছি। (ইবনু মাজাহ ১৪৭৬; তিরমিযী হা/৯৮৬ সনদ সহীহ)। এমনকি সরকারী ঘোষণা ও চিকিৎসার ঘোষণার সাথে মসজিদের কোন সম্পর্ক নেই।
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা পরিস্কার যে, মসজিদে হারানো জিনিসের ঘোষণা দেওয়া যাবে না। কেননা মসজিদ শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্যই তৈরী করা হয়েছে। তবে দ্বীনী আলোচনা ও দ্বীনী ঘোষণা প্রদান করা যাবে। কারো যদি কোন কিছু খোয়া যায় মসজিদের দরজায় বসে প্রবেশকারী ও বের হওয়া ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা যাবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ, ৭০৬ হাদিসের ব্যাখ্যা) মহান আল্লাহ সবাইকে মসজিদের মর্যাদা উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।