উত্তর: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ)-এর আদর্শ হচ্ছে সবচেয়ে পরিপূর্ণ আদর্শ। তিনি ইফতারের সময় কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না পেতেন তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করতেন। এরপর মাগরিবের ফরজ নামায আদায় করতেন। এটাই হল ইফতারের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি। কিন্তু সেই সুন্নত পালনে কোন ব্যক্তি যদি ধৈর্য হারা হয়ে ইফতারের সময় ইফতার না করে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তাহলে সেটি নাজায়েজ নয়। কেননা মূলনীতি হল সুবহে সাদিক থেকে সূর্য পরিপূর্ণ অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সিয়াম পালনকারীর জন্য যে বৈধ বিষয়গুলো নিষিদ্ধ ছিল ইফতারের সময় থেকে ফজরের সময় পর্যন্ত সেগুলো সবই বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ….(সূরা বাকারাহ,২/১৮৭) ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নির্দেশ এ রকম ছিল যে, রোযার ইফতারী করার পর থেকে এশার নামায অথবা ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রীর-সহবাস করার অনুমতি ছিল। ঘুমিয়ে গেলে এগুলোর কোনটাই করা যেত না। পরিষ্কার কথা যে, মুসলিমদের জন্য এই বাধ্য-বাধকতা বড়ই কঠিন ছিল এবং এর উপর আমলও বড় কষ্টকর ছিল। মহান আল্লাহ সূরা বাকারার উক্ত আয়াতের মাধ্যমে এই দুটি নিষেধাজ্ঞাই উঠিয়ে নিয়ে ইফতারী থেকে ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রীর সাথে যৌনক্ষুধা নিবারণের অনুমতি দান করে আমাদের উপর দয়া করেছেন।
.
রাসূল ﷺ এর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) কখনো কখনো সহবাস দ্বারা ইফতার করতেন বলে প্রমান পাওয়া যায়। যেমন: আল্লামা আইনী হানাফি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) এর থেকে বর্ণিত, কখনো কখনো তিনি ইফতার করতেন স্ত্রী সহবাস করে।(ইমাম ত্বাবারাণী,আল-জামেঊল কাবীর খন্ড:১২ পৃষ্ঠা:২৬৯, হা/১৩০৮০ ইমাম হাইথামি মাজমুয়াল জাওয়াইদ জাওয়াইদে খন্ড:৩ পৃষ্ঠা: ১৫৬ সনদ হাসান, আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৫৫৩৯৩)
.
কাতারভিত্তিক বিখ্যাত ওয়েবসাইট ইসলাম ওয়েবের আলেমগনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, এটা কি সত্য যে,ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করতেন, যেমনটি কিছু বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটি কি শরীয়া অনুসারে জায়েজ?
.
জবাব তারা বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং দোয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের উপর। আমাদের জানা মতে ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে এমন বর্ননা আসেনি যে তিনি স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করতেন। তবে এটা নিষিদ্ধ নয় যে, রোজাদার ব্যক্তি সূর্য অস্ত যাওয়ার পর কিছু খাওয়া ও পান করার পূর্বে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে যদি কেউ ইফতার করে তাহলে তার রোজা বঙ্গ হবেনা বরং সঠিক হবে এবং তাকে কোন কাফফারা দিতে হবে না, কারণ সূর্যাস্তের সাথে সাথে সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি খেতে পারবে,পান করতে পারবে এবং তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারবে যা সূর্যাস্তের আগে হারাম ছিলো।অতএব সে তার ইচ্ছা অনুযায়ী করতে পারবে। এটি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যেমনটি প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃত্ব ত্বাবারাণী, আল-জামেঊল কাবীর ইমাম হাইসামি রাহিমাহুল্লাহ মাজমুয়াল জাওয়াইদ থেকে একটি হাসান সনদ সহ বর্ণনা করেছেন। যিনি বলেছেন: সম্ভবত ইবনে ওমর সহবাসের কারণে তার রোজা ভেঙ্গেছিলেন (ত্বাবারাণী, আল-জামেঊল কাবীর হা/১৩০৮০ ইসলাম ওয়েব, ফাতওয়া নং-৭৫৯৯৫)
.
পরিশেষে, আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো, প্রিয় পাঠক, স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ইফতার করা রাসূল ﷺ অথবা তার চার খলিফা অথবা সেরা ১০ জান্নাতী সাহাবীদের আমল নয় বরং উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ছেলে রাসূল ﷺ এর সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উমর মাঝেমধ্যে এমনটি করেছেন বলে ইতিহাসে প্রমান পাওয়া যায় যা ছিল তার ব্যক্তিগত বিশেষ প্রয়োজনে। আমাদের করনীয় অনুসরণীয় প্রথম এবং প্রধান ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)। যাকে পরিবার, ধন-সম্পদ ও সকল মানুষ হ’তে সর্বাধিক প্রিয় হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন হ’তে পারবে না, (সহীহ মুসলিম হা/৪৪) সুতরাং আমরা সেই মহান ব্যক্তি (ﷺ)-এর আদশ্য হিসেবে হাদীসে বর্নিত ইফতার যেমন: খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করবো তারপর সময় অনুযায়ী সালাত আদায় বা স্ত্রী সহবাসসহ অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদন করবো। আল্লাহ তৌফিক দান করুক আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।