প্রশ্ন: মহাগ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহর বানী;যে বলবে কুরআন মাখলুক সে উম্মতের ইজমার ভিত্তিতে কাফের।
▬▬▬▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: রাসূল (ﷺ)-এর ইন্তিকালের পর মুসলিম উম্মাহ নানা ফিৎনার সম্মুখীন হয়, যা এখনো বিদ্যমান। হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে উমাইয়া খিলাফতের সময়ে ওয়াছিল বিন আত্বার-এর হাত ধরে মু’তাযিলা মতবাদের উদ্ভব ঘটে। এই দল মুসলিম সমাজে বহু ভ্রান্ত আক্বীদার প্রসার ঘটায়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কুরআনকে আল্লাহর কালাম নয়, বরং সৃষ্ট বস্তু (মাখলূক) বলে দাবি করা। এই ভয়ংকর ফিৎনার বিরুদ্ধে সত্যের দীপশিখা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি ও তাঁর সাথীদের কঠোর নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়, এমনকি কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয়। একের পর এক চাবুকের আঘাত সহ্য করেও তিনি একটুও বিচলিত হননি। যখনই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছে “আপনি কি স্বীকার করেন যে কুরআন মাখলূক?” তিনি দৃঢ়তার সাথে একটিই উত্তর দিয়েছেন “কুরআন আল্লাহর কালাম। যদি তোমাদের দাবি সত্য হয়, তবে কুরআন বা হাদীস থেকে তার প্রমাণ উপস্থাপন কর।” ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর এই অবিচলতা ও আত্মত্যাগ ইসলামের শুদ্ধ আক্বীদাকে সংরক্ষণ করেছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট করে দিয়েছে।
.
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মহান ইমাম, শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) জন্ম ১৬৪ হি./৭৮০ খ্রি. এবং মৃত্যু ২৪১ হি./৮৫৫ খ্রি.। বলেছেন:
والقرآن كلام الله، ليس بمخلوق، فمن زعم أن القرآن مخلوق فهو جهمي كافر ومن زعم أن القرآن كلام الله عز وجل ووقف ولم يقل مخلوق ولا غير مخلوق: فهو أخبث من الأول،
“কুরআন আল্লাহর কালাম (বাণী); মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি মনে করে যে কুরআন আল্লাহর মাখলুক (সৃষ্ট) সে জাহমী-কা/ফির। আর যে ব্যক্তি কুরআন আল্লাহর কালাম বলে চুপ থাকে মাখলুক না কি মাখলুক নয় সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে না সে ১ম ব্যক্তির থেকেও নিকৃষ্ট।”(আল-আক্বীদাহ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, আবদুস আল-আত্তার কর্তৃক বর্ণিত, আবু বকর আল-খাল্লাল কর্তৃক বর্ণিত আল-আক্বীদাহ সহ মুদ্রিত, পৃষ্ঠা ৭৯, মুদ্রণ,) দারু কুতাইবা/দামেস্ক, ১৪০৮ হিজরি – ১৯৮৮ খ্রি.)
.
কুরআন আল্লাহর কথা, আল্লাহর কথা সৃষ্ট হতে পারে না; কারণ আল্লাহর কথা তাঁর বৈশিষ্ট্য, যা তাঁর সত্তা থেকে বের হয়। তাবেয়ি আমর বিন দিনার (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১২৬ হি.) বলেছেন,أَدْرَكْتُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ ﷺ فَمَنْ دُونَهُمْ مُنْذُ سَبْعِينَ سَنَةً يَقُولُونَ: اللَّهُ الْخَالِقُ، وَمَا سِوَاهُ مَخْلُوقٌ، وَالْقُرْآنُ كَلَامُ اللَّهِ، مِنْهُ خَرَجَ، وَإِلَيْهِ يَعُودُ.“আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিবর্গ ও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে (তাবেয়িবৃন্দকে) সত্তর বছর যাবৎ পেয়েছি। তাঁরা বলতেন, আল্লাহ স্রষ্টা, তিনি ছাড়া যা আছে তার সবই সৃষ্টি। কুরআন আল্লাহর কথা, যা তাঁর থেকে বের হয়েছে এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবে।” (উসমান বিন সায়িদ আদ-দারিমি, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যা, তাহকিক: বাদর বিন আব্দুল্লাহ আল-বাদর (কুয়েত: দারু ইবনিল আসির, ২য় প্রকাশ, ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি.), বর্ণনা নং : ৩৪৪, পৃ. ১৮৯, বর্ণনার মান: মুহাক্কিব বাদর আল-বাদর বর্ণনাটিকে ‘সহিহ’ বলেছেন]
.
কাযী ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
” أَجْمَع الْمُسْلِمُون أَنّ الْقُرْآن الْمَتْلُوّ فِي جَمِيع أَقْطَار الأَرْض الْمَكْتُوب فِي الْمُصْحَف بِأَيْدِي الْمُسْلِمِين مِمَّا جَمَعَه الدَّفَّتَان من أَوَّل (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العالمين ) إِلَى آخِر ( قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ) أنَّه كَلَام اللَّه وَوَحْيُه المُنَزَّل عَلَى نَبِيّه مُحَمَّد صَلَّى اللَّه عَلَيْه وَسَلَّم ، وَأَنّ جَمِيع مَا فِيه حَقّ ، وَأَنّ من نَقَص مِنْه حَرْفًا قَاصِدًا لِذَلِك أَو بَدَّلَه بِحَرْف آخَر مَكَانَه أَو زَاد فِيه حَرْفًا مِمَّا لَم يَشْتَمِل عَلَيْه المُصْحَف الَّذِي وَقَع الإِجْمَاع عَلَيْه وأُجْمِع عَلَى أَنَّه لَيْس مِن الْقُرْآن عَامِدًا لِكُلّ هَذَا : أَنَّه كَافِر ” .
মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে ইজমা করেছেন যে, কুরআন হচ্ছে- আল্লাহর বাণী ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আল্লাহর নাযিলকৃত ওহি; যা পৃথিবীর সর্ব অঞ্চলে তেলাওয়াতকৃত,মুসলমানদের স্বহস্তে লিপিবদ্ধ, মুসহাফের দুই মলাটের মধ্যে সন্নিবেশিত, যার শুরু হয়েছে-الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العالمين দিয়ে এবং শেষ হয়েছে- قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ দিয়ে। কুরআনের মধ্যে যা কিছু আছে সবই সত্য। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এর একটি হরফ কমাবে অথবা একটি হরফের স্থানে অন্য একটি হরফ দিয়ে পরিবর্তন করবে অথবা এমন কিছু বৃদ্ধি করবে যা মুসলমানদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত মুসহাফে ছিল না এবং যেটার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে- তা কুরআন নয়; যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত এসব করবে সে কাফের”।(আল-শিফা; ২/৩০৪-৩০৫), আরো দেখুন: ইবনে আমিরুল হাজ্জ এর আল-তাকরির ওয়াল তাহবির, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা:২১৫)
.
আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যাতে বলা হয়েছে
-الْقُرْآنُ كَلاَمُ اللَّهِ الْمُعْجِزُ الْمُنَزَّل عَلَى رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَنْقُول بِالتَّوَاتُرِ، فَيَحْرُمُ تَعَمُّدُ اللَّحْنِ فِيهِ ، سَوَاءٌ أَغَيَّرَ الْمَعْنَى أَمْ لَمْ يُغَيِّرْ ؛ لأِنَّ أَلْفَاظَهُ تَوْقِيفِيَّةٌ نُقِلَتْ إِلَيْنَا بِالتَّوَاتُرِ ، فَلاَ يَجُوزُ تَغْيِيرُ لَفْظٍ مِنْهُ بِتَغْيِيرِ الإْعْرَابِ أَوْ بِتَغْيِيرِ حُرُوفِهِ بِوَضَعِ حَرْفٍ مَكَانَ آخَرَ
“কুরআন হচ্ছে- আল্লাহর বাণী, মোজেযা (চ্যালেঞ্জ), যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নাযিলকৃত, যা মুতাওয়াতির সূত্রে আমাদের নিকট পৌঁছেছে, যার মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করা হারাম; চাই সে ভুলের কারণে অর্থ পরিবর্তিত হোক অথবা না হোক। যেহেতু কুরআনের শব্দগুলো তাওকিফিয়্যা (আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত) এবং তা আমাদের নিকট মুতাওয়াতির সূত্রে পৌঁছেছে। অতএব, এর কোন একটি শব্দের হরকত পরিবর্তন করার মাধ্যমে অথবা এক হরফের পরিবর্তে অন্য হরফ বসানোর মাধ্যমে এতে পরিবর্তন করা নাজায়েয।(আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা; খণ্ড: ৩৫; পৃষ্ঠা: ২১৪)
.
সৌদি আরবের বিশিষ্ট সালাফি দায়ি শাইখ আব্দুল আজিজ আর-রইস (হাফিজাহুল্লাহ) বলেছেন, وقد أجمع العلماء على أن من اعتقد أن كلام الله مخلوق فهو كافر، عافاني الله وإياكم، سواء كان القرآن، أو التوراة، أو الإنجيل “আলেমগন এ বিষয়ে একমত হয়েছেন, যে ব্যক্তি এ আকিদা পোষণ করে, আল্লাহর কালাম মাখলুক, সে কা–ফি–র। আল্লাহ আমাকে ও আপনাদেরকে নিরাপদে রাখুন। চাই সে কুরআনের ব্যাপারেই এমন আকিদা রাখুক, কিংবা তাওরাতের ব্যাপারেই রাখুক, অথবা ইনজিলের ব্যাপারেই রাখুক।” [দ্রষ্টব্য: শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ইসলামঅ্যানশান্ট (islamancient) ডট কমের আর্টিকেল: https://tinyurl.com/3s2k9emf]
(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।