আবু দাউদের ৪৭২৮ নাম্বার হাদীস দ্বারা কী আল্লাহর জন্য কান এবং চোখ সিফাত সাবস্ত হয়

আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (সূরা নিসাঃ ৫৮) আবূ হুরাইরা (রা:) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলকে কানে এবং তরজনীকে দু’চোখের উপর রাখতে দেখেছি।(আবু দাউদ হা/৪৭২৮) এই হাদীস দ্বারা কী আল্লাহর জন্য কান এবং চোখ সিফাত সাবস্ত হয়?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬ প্রথমত: আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করার বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ হল আল্লাহ তা‘আলাকে ঐ গুণে গুণান্বিত করা যে গুণে আল্লাহ নিজেকে গুণান্বিত করেছেন অথবা রাসূল (ﷺ) আল্লাহকে যে গুণে গুণান্বিত করেছেন সেগুলোর কোনরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন, অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্যদান, ধরন বর্ণনা ও নিস্ক্রীয়করণ ছাড়া যেভাবে এসেছে সেভাবেই বিশ্বাস ও গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কিছু মূলনীতি অনুসরণ করে থাকে। যেমন একটি মূলনীতি হলো আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর,কুরআন ও হাদিসের দলীল ছাড়া আল্লাহর জন্য কোন গুণ বা বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা যাবে না। কুরআন ও হাদিসে আল্লাহর যেসব গুণের উল্লেখ রয়েছে তাঁর জন্য শুধু সে গুণগুলো সাব্যস্ত করতে হবে এবং কোন মাখলুকের সাথে আল্লাহর গুণ বা বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যতাকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ নিজেই বলেছেন- لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُঅর্থ- “তাঁর মত কিছুই নেই,তিনি হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।”[সূরা শুরা, আয়াত: ১১]
.
দ্বিতীয়ত: হাদীসটির ব্যাখায় যাওয়ার আগে আমরা মহান আল্লাহর দেখা এবং “শোনা” সিফাত সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই।
.
মহান আল্লাহর সিফাত চক্ষু সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামাতের অভিমত হলো,আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার মর্যাদা ও বড়ত্বের জন্য যেমন দু’টি চোখ শোভনীয়, তাঁর জন্য ঠিক সেরকমই দু’টি চোখ রয়েছে। তাঁর জন্য যেভাবে উপযুক্ত তিনি সেভাবে দেখে থাকেন। কুরআনুল কারীমে العين (চোখ) শব্দটি আল্লাহর প্রতি একবচন ও বহুবচন এই উভয়ভাবেই مضاف (সম্বোধিত) হয়েছে। হাদীছেও এটিকে আল্লাহর প্রতি দ্বি-বচন হিসাবে সম্বোধিত হয়েছে। চোখ আল্লাহর সিফাতে জাতিয়্যা বা সত্তাগত গুণ তবে আল্লাহর চোখ সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। কারন আল্লাহ তাআলা বলেন: কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (সুরা শুরা ১১) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত “আল্লাহ তায়ালার দুইটি চোখ সাব্যস্ত করেছেন” এর দলিল গ্রহণ করেছেন : আব্দুল্লাহ ওমর রা: থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে। যেমন: আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ اللهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ أَلَا إِنَّ الْمَسِيْحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ “আল্লাহ এক চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া কানা নন। সাবধান, মাসিহুদ দাজ্জালের ডান চোখ নষ্ট থাকবে। তার চোখ যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মতো।” [দ্রষ্টব্য: সহিহ বুখারি, হা: ৩৪৩৯; সহিহ মুসলিম, হা: ১২৯; আরও দেখুন: সহিহ বুখারি, হা: ৩০৫৭, ৩৪৩৯, ৪৪০২, ৬১৭৫, ৭১২৩, ৭১২৭, ৭৪০৭) আরবিতে ‘আওয়ার (أعور)’ তাকে বলা হয়, যার দুটো চোখ আছে, তারমধ্যে একটি চোখের অনুভূতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে।(দ্রষ্টব্য: ইমাম ইবনু মানযুর কৃত লিসানুল আরব, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৫১) উক্ত হাদীসের আলোকে শাযইখ আব্দুল্লাহ আল গানীমান (হাফিযাহুল্লাহ)”শরহু কিতাবুত তাওহীদ মিন সহীহিল বুখারী” গ্রন্থে বলেন: (إن الله ليس بأعور ) : هذه الجملة هي المقصودة من الحديث في هذا الباب ، فهذا يدل على أن لله عينين حقيقة ؛ لأن العور فقدُ أحد العينين ، أو ذهاب نورها ” انتهى অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা এক চোখা নন। এটা প্রমাণ করছে যে আল্লাহ তাআলার দুইটি প্রকৃত চোখ রয়েছে, কেননা একচোখা এর মানে হল দুইটা চোখের একটা নাই অথবা দুইটা চোখের একটার আলো নষ্ট হয়ে গেছে।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪৫৪২৩)
.
তৃতীয়ত: মহান আল্লাহর জন্য (السمع) “সামা” তথা শোনা সিফাত প্রমাণিত এটি আল্লাহর সত্তাগত ও কর্মগত গুণাবলির অন্তর্গত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার মর্যাদা ও বড়ত্বের জন্য যেভাবে শোভনীয়, সেভাবে বাস্তবিক অর্থেই সামা”তথা শোনা তার জন্য সাব্যস্ত। এর দলিল— মহান আল্লাহর এই বাণী,وَهُوَ السَّمِيع العليم».”তিনিই সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।(সূরা বাকারা: ১৩৭) তিনি আরো বলেছেন, “আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করেছে এবং আল্লাহর নিকট অভিযোগ করেছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা,সর্বদ্রষ্টা।”(সুরা মুহাদালা: ১) তিনি আরও বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন যারা বলে থাকে, “আল্লাহ দরিদ্র, আর তারা ধনবান’ । ” [সুরা আল ইমরান: ১৮১]
তিনি আরো বলেছেন, قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا وَتَشْتَكِي إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ“আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করেছে এবং আল্লাহর নিকট অভিযোগ করেছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা,
সর্বদ্রষ্টা।”(সুরা মুহাদালা: ১) তিনি আরও বলেছেন,لَقَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ فَقِيرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاءُ “অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন যারা বলে থাকে, “আল্লাহ দরিদ্র, আর তারা ধনবান’।[সুরা আল ইমরান: ১৮১] আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ﴿أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ﴾‘তারা কি মনে করে যে আমি তাদের গোপন বিষয় গোপন পরামর্শ শুনিনা? হাঁ, শুনি। আমার প্রেরিত দূতগণ তাদের নিকটে থেকে লিপিবদ্ধ করে’’। (যুখরুফঃ ৮০) আল্লাহ তা’লা মূসা ও তাঁর ভাই হারূন (আঃ)কে লক্ষ্য করে বলেন: قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى ‘‘আল্লাহ বললেনঃ তোমরা ভয় করনা, আমি তোমাদের সাথে আছি। আমি শুনি ও দেখি। (সূরা তোহা: ৪৬) উপরোক্ত আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, বাস্তবেই আল্লাহর শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি রয়েছে। তবে তাঁর দেখা ও শুনা কোন সৃষ্টিজীবের মত নয়। কোন মানুষ যখন বন্ধ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে তখন সে বাহিরের কিছুই দেখতে পায়না এবং বাহিরের কোন কথাও শুনতে পায়না। কিন্তু মহান আল্লাহ আরশের উপর থেকে মাখলুকের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল বস্ত্তই দেখতে পান এবং সকল কথাই শুনেন।
.
আল্লাহর সামা (السمع) তথা “শ্রবণ” দুধরণের। যথা:

প্রথমত: শ্রবণযোগ্য জিনিস শোনা: এ অর্থে এটি সত্তাগত গুণাবলির অন্তর্গত।তিনি আল্লাহ সমস্ত প্রাণীর প্রকাশ্য, গোপনীয়, স্পষ্ট, অস্পষ্ট সব ধরণের আওয়াজ তিনি শুনেন এবং সব কিছুই তিনি পরিপূর্ণভাবে বেষ্টন করে আছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন,وَقَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا ».“আল্লাহ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে তোমার সাথে বাদানুবাদ করেছে।” (সুরা মুজাদালা: ১) শোনা অর্থে এই সিফাত দ্বারা কখনো কখনো সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা উদ্দিষ্ট হয়ে থাকে। যেমন মুসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামের উদ্দেশে আল্লাহ বলেছেন,إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى».“আমি তোমাদের দুজনের সাথেই আছি, আমি শুনি ও দেখি।” (সুরা তহা: ৪৬) আবার কখনো এর মাধ্যমে ধমক তথা হুঁশিয়ারি উদ্দিষ্ট হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
ولَقَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّذِين قالوا إن الله فقير ونحن أغنياء .
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের কথা শ্রবণ করেছেন যারা বলে থাকে,“আল্লাহ দরিদ্র, আর তারা ধনবান’।” [সুরা আল ইমরান: ১৮১] তিনি আরও বলেছেন,أمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا تَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُم بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ“তারা কি মনে করে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও গোপন
পরামর্শের খবর রাখি না? অবশ্যই রাখি ।”(সুরা যুখরুফ: ৮০)
.
দ্বিতীয়ত: দোয়া কবুল করা: এ অর্থে এটি কর্মগত গুণাবলির অন্তর্গত। তাঁর কাছে প্রার্থনাকারী, দো‘আকারী ও ইবাদতকারীর প্রার্থনা তিনি শুনেন এবং তাদের ডাকে সাড়া দেন, তাদের কর্মের প্রতিদান দেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন;وإِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ“নিশ্চয় আমার রব দো‘আ শ্রবণকারী।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৯] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,«سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ»“যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তার কথা শুনেন অর্থাৎ তার দো‘আ কবুল করেন।”(সহীহ বুখারী হা/৬৮৯)
.
আল্লাহর ‘সামা (السمع) শোনা এটি সত্তাগত আবার একই সাথে কর্মগত গুণ কিভাবে?
.
আহলুস সুন্নাহর একদল উলামা বলেন, যেহেতু শোনার বৈশিষ্ট্য আল্লাহ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না, সেহেতু এটি আল্লাহর সত্তাগত গুণ। একইকথা দর্শন তথা দেখা গুণটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটিও অনুরূপ কারণে সত্তাগত গুণ। পাশাপাশি শোনা ও দেখার বিষয়টি যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত, আল্লাহ যখন ইচ্ছা শ্রবণ করেন, তাঁর কোনো কোনো মাখলুকের দিকে তিনি চাইলে নাও তাকাতে পারেন, সেহেতু এটি আল্লাহর কর্মগত গুণাবলিরও অন্তর্গত।পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাহর অপরাপর উলামা মনে করেন, শোনা ও দেখা গুণদুটো আল্লাহর মহান সত্তার অপরিহার্য বিষয়। শ্রবণযোগ্য বা দর্শনযোগ্য যতকিছুর অস্তিত্ব আছে সবগুলো কেবল আল্লাহর সত্তার সাথে সম্পৃক্ত, তাঁর ইলম তথা জ্ঞানের মতো। শ্রবণযোগ্য বা দর্শনযোগ্য কিছু ঘটামাত্র তা আল্লাহর শোনা ও দেখা হয়ে যায়। বিধায় তাঁদের মতে এ দুটো সিফাতকে স্রেফ সত্তাগত গুণ হিসেবেই উল্লেখ করা হবে। একদিক থেকে সত্তাগত গুণ, আবার আরেকদিক থেকে কর্মগত গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হবে না।(বিস্তারিত যানতে দেখুন ইবনু তাইমিয়া, মাজমুউ ফাতাওয়া, খন্ড: ১৩, পৃষ্ঠা: ১৩৩-১৩৪)
.
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। অনেকে আল্লাহর সামা (السمع) শোনা সিফাত থেকে (الأُذُن) “আল-উযুন” কর্ণ তথা কান সাব্যস্ত করেন। তাঁরা মনে করেন, আল্লাহ যেহেতু শোনেন, সেহেতু তাঁর কান আছে। যারা এমনটি করেন, তারা মূলত আল্লাহর নাম ও গুণাবলির নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞানসম্পন্ন নন। আমরা ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহর একটি অনবদ্য রচনা থেকে এ বিষয়ক মূলনীতি তুলে ধরছি। ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “কিতাব ও সুন্নাহর দলিল দিয়ে আল্লাহর সিফাত তিনটি পদ্ধতিতে সাব্যস্ত হয়। যথা :

(১). সরাসরি সিফাতের কথা (কিতাব ও সুন্নাহয়) স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়। যেমন: সম্মান (আল-ইজ্জাহ), ক্ষমতা (আল-কুওয়্যাহ), রহমত, পাকড়াও (আল-বাতশু)
,চেহারা (আল-ওয়াজহু), হস্তদ্বয় (আল-ইয়াদাইন) প্রভৃতি।

(২). আল্লাহর নাম তাঁর সিফাতকে শামিল করে। যেমন: আল-গফুর (ক্ষমাশীল) নামটি মাগফিরাত তথা ক্ষমা নামক সিফাতকে অন্তর্ভুক্ত করে, আস-সামি (সর্বশ্রোতা) নামটি ‘শ্রবণ’ সিফাতকে অন্তর্ভুক্ত করে ইত্যাদি।

(৩). কোন ক্রিয়া বা বিশেষণের কথা (কুরআন-সুন্নাহয়) বলা হয়, যা আল্লাহর সিফাতের প্রমাণ বহন করে। যেমন: আরশের ওপর আরোহণ, পৃথিবীর আকাশেঅবতরণ, কেয়ামতের দিন বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য আগমন,অপরাধীদেরকে কঠিন শাস্তিপ্রদান।

মহান আল্লাহর এসব সিফাত প্রতীয়মান হয় যথাক্রমে নিম্নোক্ত দলিলগুলো থেকে: যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

(১). আল্লাহ বলেন, اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی “দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন।(সুরা তহা: ৫)।

(২). নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ينزل ربنا كل ليلة إلى السماء الدنيا»
“আমাদের রব প্রতিদিনই নিম্নাকাশে নেমে আসেন”। (সহিহুল বুখারি, হা.১১৪৫; সহিহ মুসলিম, হা. ৭৫৮)।

(৩). আল্লাহ বলেন, وَّ جَآءَ رَبُّكَ وَ الۡمَلَكُ صَفًّا صَفًّا(সেদিন) তোমার প্রতিপালক ও ফেরেশতাবর্গ সারিবদ্ধভাবে আগমন করবেন।(সুরা ফাজর: ২২)।

(৪). আল্লাহ বলেন,اِنَّا مِنَ الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُنۡتَقِمُوۡنَ”নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কঠিন শাস্তি দিব (সুরা সাজদা: ২২)।”(দ্রষ্টব্য: মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন, *আল-কাওয়ায়িদুল মুসলা ফি সিফাতিল্লাহি ওয়া আসমায়িহিল হুসনা (মদিনা: ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩য় প্রকাশ, ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.), পৃষ্ঠা: ২৮-২৯; মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন, *মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল,খন্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২৯০-২৯১)
.
সম্মানিত পাঠক! উক্ত তিন পদ্ধতিতে আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করা হয়। এর বাইরে আর কোনো পদ্ধতি নাই। সুতরাং ‘সামি’ তথা ‘সর্বশ্রোতা’ আল্লাহর একটি নাম। এই নাম থেকে একটি সিফাত পাওয়া যাচ্ছে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহর ‘সামা’ তথা ‘শ্রবণ’ সিফাত। কিন্তু উক্ত নাম থেকে ‘কান’ সাব্যস্ত করা চরমতম অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা। কারণ এই বিভ্রান্তিকর মানহাজ অনুসরণ করলে আল্লাহর জন্য আরও একগাদা সিফাত সাব্যস্ত করা অপরিহার্য হয়ে যাবে, যা আল্লাহ নিজের জন্য সাব্যস্ত করেননি। সুতরাং আমরা বলব না,আল্লাহর কান আছে। আবার এও বলব না যে, আল্লাহর কান নেই। কেননা আল্লাহর ‘সামা (শ্রবণ)’ সিফাত থেকে তাঁর কান সাব্যস্ত করা অপরিহার্য হয় না। যেমন কুরআনে এসেছে,یَوۡمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخۡبَارَهَا “সেদিন যমীন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে”(সূরা যিলযাল: ৪) অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠে যেসব ভালো বা মন্দকর্ম সম্পাদিত হয়, যেসব কথা বলা হয়, যেসব কাজ করা হয়, সবকিছু সে কিয়ামতের দিন বলে দেবে, অথচ এই পৃথিবীর বা জমিনের কান নেই! “সুতরাং যেহেতু এটি প্রমাণ করার জন্য কুরআন সুন্নায় বিশুদ্ধ কোন দলিল নেই। তাই এ বিষয়ে আমাদের থেমে যাওয়া আবশ্যক। আর আল্লাহ তাআলার জন্য এটাকে সাব্যস্ত করা বৈধ নয়।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] আকিদার মৌলিক ভাষ্যগ্রন্থে এ বিষয়ে বলেছেন,والأذن عند أهل السنة والجماعة لا تثبت لله ولا تنفى عنه لعدم ورود السمع بذلك “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকটে আল্লাহর জন্য ‘কান’ সাব্যস্ত করা যাবে না, আবার নাকচও করা যাবে না; যেহেতু এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহয় কোনো দলিল বর্ণিত হয়নি।”(দ্রষ্টব্য: ইবনু উসাইমিন,শারহুল আকিদাতিল ওয়াসিতিয়্যা খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২১১)
.
সৌদি আরবের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অনুষদ সদস্য ও অধ্যাপক,আকিদা ও ফিকহের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫২ হি./১৯৩৩ খ্রি.] বলেছেন,”أما ما لم يدل على نفيه ولا على إثباته دليل بوجه من الوجوه ، لا بالنص ولا بطريق التضمن ولا بطريق اللزوم ، فإنه يجب التوقف فيه . ومن الأمثلة في هذا: (الأُذُن) لله – تعالى – : فهذه مما يجب التوقف فيها، فلا تنفى ولا تثبت ، لأنه ليس عندنا ما يدل على إثباتها نصًا ولا لزومًا ولا تضمنًا
“যেটাকে প্রত্যাখান করা বা সাব্যস্ত করার পক্ষে কোনো‌ প্রমাণ নেই, না কোনো নস দ্বারা, না নিহিতার্থ দ্বারা, না প্রয়োজন দ্বারা, তাহলে সেখানে থেমে যাওয় আবশ্যক। যেমন: আল্লাহর কান। এটি এমন একটি সিফাত বা গুন যার বিষয়ে অবশ্যই আমাদের আলোচনা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই এটি আমরা অস্বীকার করবো না আবার সাব্যস্তও করবো না। কারণ আমাদের কাছে এটি কুরআন সুন্নার কোনো নস দ্বারা, আবশ্যকীয় বিষয় দ্বারা বা নিহিতার্থভাবেও প্রমাণিত নয়। (আত তালিক আলা ক্বওয়ায়ীদুল মাসালি ৯৬ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩০০৯৯৯)
.
চতুর্থত: যে হাদীসটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে সে হাদীসটি হচ্ছে, প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] -এর মুক্তদাস আবূ ইউনুস সুলাইম ইবনু জুবায়র (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে এ আয়াতটি পড়তে শুনেছি,إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا}‏ إِلَى قَوْلِهِ تَعَالَى ‏{ سَمِيعًا بَصِيرًا}‏ [النساء: ٥٨] ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আমানতসমূহ তার প্রাপকের নিকট পৌঁছিয়ে দিতে আদেশ করছেন…আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’ (সূরা আন-নিসাঃ ৫৮) পর্যন্ত। আবূ হুরাইরা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলকে কানে এবং তরজনীকে দু’ চোখের উপর রাখতে দেখেছি।আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (আয়াতটি) পড়তে দেখেছি এবং তাঁর আঙ্গুল দু’টি রাখতে দেখেছি। ইবনু ইউনুস বলেন,আল-মুকরী বলেছেন,إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ، يَعْنِي أَنَّ لِلَّهِ سَمْعًا وَبَصَرًا অর্থাৎ ‘‘আল্লাহ নিশ্চয়ই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’’- এর অর্থ হলো, আল্লাহর শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি আছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, وَهَذَا رَدٌّ عَلَى الْجَهْمِيَّةِ এর মাধ্যমে জাহমিয়াদের মতবাদ বাতিল হয়ে যায়।(আবু দাউদ হা/৪৭২৮)
.
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! দুঃখজনক হলেও সত্যি এই হাদীসটি দ্বারা অনেকে আল্লাহর কর্ণ তথা কান সাব্যস্ত করেন। তাঁরা মনে করেন আল্লাহ যেহেতু শোনেন সেহেতু তাঁর কান আছে। অথচ এই হাদীসটি দ্বারা মহান আল্লাহর জন্য চক্ষু কিংবা কান সিফাত কোনটিই সাব্যস্ত হয়না।কেননা এই হাদীসে একথা বলা হয়নি যে আল্লাহর কান বা চোখ রয়েছে বরং হাদীসটির সঠিক মর্ম হল: রাসূল (ﷺ) তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলকে কানে এবং তরজনীকে দু’ চোখের উপর রাখার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রবণ ও দৃষ্টিকে (গুরুত্ব দিয়ে) সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্য এমনটি করেছেন। অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা। এর মানে হলো আল্লাহ তাআলার শ্রাবণ ক্ষমতা এবং দর্শন ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ তায়ালার শ্রবণ এবং দর্শন এর গুণটি সাব্যস্ত করেছেন। সর্বশ্রোতা তিনি যার শ্রবণ ক্ষমতা রয়েছে। যার মাধ্যমে কোন কিছু শোনা যায়। সর্বদ্রষ্টা হলেন তিনি যার দর্শন ক্ষমতা রয়েছে যার মাধ্যমে কোন কিছু বুঝতে পারে বা দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকটিতে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত গুন‌। সেটা সিফাতে হাকিকি ফলে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক। কিন্তু সেটা কখনোই সৃষ্টি কুলের কারো গুনাবলির সাথে সাদৃশ্য পূর্ণ করা যাবে না, দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে না পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না, ব্যাখা করা যাবে না। রাসূল ﷺ আঙ্গুল দ্বারা কান ওর চোখের দিকে ইশারা করে বুঝিয়েছেন আল্লাহ তায়ালার শ্রবণ ও দর্শন এর সাব্যস্ততা। এ দুটোর মধ্যে মানুষের শুধু স্থান বর্ণনা করার মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। কিন্তু তিনি সৃষ্টিকর্তার সাদৃশ্যতা মাখলুকের সাথে বর্ণনা করেননি। কেননা আল্লাহ তায়ালা মাখলুকের সাদৃশ্যপূর্ণ থেকে মুক্ত ও পবিত্র।

হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম বাইহাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) “(আল-আসমাউ ওয়াস-সিফাত: গ্রন্থে এটি আবু দাউদের সানাদে উল্লেখ করেন। অতঃপর তিনি বলেন:

” وَالْمُرَادُ بِالْإِشَارَةِ الْمَرْوِيَّةِ فِي هَذَا الْخَبَرِ تَحْقِيقُ الْوَصْفِ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ , فَأَشَارَ إِلَى مَحَلَّيِ السَّمْعِ وَالْبَصَرِ مِنَّا لِإِثْبَاتِ صِفَةِ السَّمْعِ وَالْبَصَرِ لِلَّهِ تَعَالَى , كَمَا يُقَالُ : قَبَضَ فُلَانٌ عَلَى مَالِ فُلَانٍ , وَيُشَارُ بِالْيَدِ عَلَى مَعْنَى أَنَّهُ حَازَ مَالَهَ , وَأَفَادَ هَذَا الْخَبَرُ أَنَّهُ سَمِيعٌ بَصِيرٌ ، لَهُ سَمْعٌ وَبَصَرٌ لَا عَلَى مَعْنَى أَنَّهُ عَلِيمٌ , إِذْ لَوْ كَانَ بِمَعْنَى الْعِلْمَ لَأَشَارَ فِي تَحْقِيقِهِ إِلَى الْقَلْبِ ؛ لِأَنَّهُ مَحَلُّ الْعُلُومِ مِنَّا , وَلَيْسَ فِي الْخَبَرِ إِثْبَاتُ الْجَارِحَةِ ، تَعَالَى اللَّهُ عَنْ شَبَهِ الْمَخْلُوقِينَ عُلُوًا كَبِيرًا

“এ হাদিসে বর্ণিত ইশারা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শ্রবণ এবং দৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সিফাত বিশ্লেষণ করা। তিনি (ﷺ) আল্লাহ তাআলার জন্য দৃষ্টি এবং শ্রবণের গুন সাব্যস্ত করার জন্য আমাদের মধ্যে শ্রবণ এবং দৃষ্টি দ্বয়ের স্থানের দিকে তিনি ইশারা করেছেন। যেমন বলা হয়ে থাকে: অমুক ব্যক্তি অমুক ব্যক্তির সম্পদ আয়ত্তে নিয়েছে। হাত দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে সে তার সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই হাদিসটি নির্দেশ করে যে,আল্লাহ হলেন সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা।শ্রবণ করা এবং দেখা আল্লাহ তায়ালার জন্য সাব্যস্ত। এটার অর্থ এমন নয় যে, তিনি একজন জ্ঞানী।যদি এটি তাঁর জ্ঞানকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে করা হয় তবে নবী (ﷺ) তাঁর হৃদয়ের দিকে ইঙ্গিত করতেন, কেননা আমাদের কাছে জ্ঞানের স্থান হল
হৃদয়। হাদিসের মধ্যে দেহের কোন অঙ্গ সাব্যস্ত নয় যে, আল্লাহ তা’আলা মাখলুকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বরং এর থেকে তিনি সুমহান ও পবিত্র। (বায়হাকি; আল-আসমাউ ওয়াস-সিফাত: খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৬২)
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,
.
وقوله : ( يقبض الله سماواته بيده والأرض باليد الأخرى ثم يهزهن ثم يقول : أنا الملك ) فهنا هز وقبض وذكر يدين ، ولما أخبرهم رسول الله صلى الله عليه وسلم جعل يقبض يديه ويبسطها تحقيقا للصفة لا تشبيها لها ؛ كما قرأ : ( وكان الله سميعا بصيرا ) ووضع يديه على عينيه وأذنيه ؛ تحقيقا لصفة السمع والبصر ، وأنهما حقيقة لا مجازا ”

রাসূল ﷺ এর বানী:”আল্লাহ তা‘আলা এক হাতে আসমান ও অপর হাতে জমিনকে গুটিয়ে নিয়ে কাঁপাতে থাকবেন আর বলবেন,আমিই মালিক। এখানে ( هز) কাঁপানো, (قبض) গুটিয়ে নেওয়া ও দুটো হাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।আর যখন রাসূল (ﷺ) তাদেরকে (সাহাবিদের) বললেন, তখন তিনি তাঁর হাত মুষ্টিবদ্ধ করছিলেন আল্লাহ তাআলার গুণাবলী সাব্যস্ত করার জন্য কোনো কিছুর সাথে সাদৃশ্য করা ছাড়াই। অনুরূপভাবে যখন তিনি (ﷺ) পাঠ করলেন: “আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’(সূরা নিসা: ৫৮) তিনি তাঁর হাত দুটো কান ও চোখের উপর রাখলেন। আল্লাহ তাআলার শ্রবণ এবং দর্শন করার সিফাত তথা গুণাবলী বুঝানোর জন্য। আর এ দুটো ছিল হাকিকী তথা বাস্তবিকার্থে মাজাযী তথা রূপকার্থে নয়।(মুখতাসারুস সওয়ায়ীকিল মুরসালাহ পৃষ্ঠা: ৩৯১)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, কুরআন ও সুন্নায় আল্লাহর নামসমূহের ব্যাপারে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুই আমাদের গ্রহণ করতে হবে, এর ওপর কোনো কিছু বাড়ানোও যাবে না, কমানও যাবে না; কেননা আল্লাহ তা‘আলা যা কিছুর উপযোগী মানুষের আকল-বুদ্ধি দ্বারা তা আয়ত্ব করা সম্ভব নয়। অতএব কুরআন-সুন্নাহর টেক্সট তথা ভাষ্যের সীমানায় আমাদের সীমিত হয়ে যেতে হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:”যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না; নিশ্চিত কর্ন, চক্ষু, হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। [আল ইসরা: ১৭: ৩৬] অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “বলুন,‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। (আল আরাফ: ৭: ৩৩) উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলার ওপর এমন নাম আরোপ করা যা তিনি নিজেকে দেননি, অথবা তিনি নিজেকে যে নাম দিয়েছেন তা অস্বীকার করা আল্লাহর বিরুদ্ধে স্পর্ধা প্রদর্শন বই অন্যকিছু নয়। অতএব এ ব্যাপারে আদব রক্ষা করতে হবে এবং কুরআন-সুন্নাহর পাঠে যা কিছু আছে সেখানেই সীমিত হয়ে যেতে হবে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায় ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান।

Share: