প্রশ্ন: আক্বীদা শব্দের অর্থ কী? সঠিক আক্বীদা বলতে কী বুঝায়? ইসলামী শরীয়তে আক্বীদার গুরুত্ব কী? আক্বীদাকে তাওহীদের কিতাবগুলোতে সর্বপ্রথম কে অন্তর্ভুক্ত করেন?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি পৃথিবীতে রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন এবং তাঁর পরিবার পরিজন, সাথীবর্গ ও তাবে‘ঈনদের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। অতঃপর একজন মুসলমানের জন্য আক্বীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা এবং সে বিশ্বাসের যথার্থতা নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারন আকৃতির দিক দিয়ে বিশ্বের সকল মানুষই সমান। তাদের মধ্যে পারস্পরিক পার্থক্য হয় শুধুমাত্র আক্বীদা-বিশ্বাসের কারণে। একই কারণে একই বনু আদমের কেউ মুমিন, কেউ কাফির, কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান। মূলত আল্লাহ্কে একক সৃষ্টিকর্তা ও বিধানদাতা হিসাবে মেনে নেওয়া এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর প্রেরিত শরী‘আতের অনুসরণ করা ও না করার মধ্যেই এই পার্থক্যের কারণ নিহিত। নাবী রাসূলগণ যুগে যুগে মানুষকে এককভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতি আহবান জানিয়ে গেছেন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের পরে বিগত সকল এলাহী ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। সর্বশেষ রাসূলের মাধ্যমে প্রেরিত ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম। এই ধর্মের আক্বীদা তাওহীদের উপর ভিত্তিশীল। মুমিনের সার্বিক জীবন তাওহীদ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। রাসূল (ﷺ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের মৃত্যুর পরবর্তী যুগে মুসলিম উম্মাহর আক্বীদার মধ্যে বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী আক্বীদার সংমিশ্রণ ঘটে। হকপন্থী আলেমগণ এইসব মিশ্রণ থেকে ইসলামী আক্বীদাকে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টায় নিরলস পরিশ্রম করেন। সেকারণ তাঁরা ইতিহাসে সালাফি কিংবা ‘আহলেহাদীস’ নামে পরিচিত হয়েছেন। আর সালাফিদের আক্বীদাই মূলতঃ সঠিক ও নির্ভেজাল ইসলামী আক্বীদা। আক্বীদা হলো এমন জিনিস যা অন্তর বিশ্বাস করে, সত্যায়ন করে, অন্তর ওই বিষয়ের প্রতি নিশ্চিতভাবে ঝুঁকে পড়ে, প্রশান্তি লাভ করে,আক্বীদা তার অনুসারীদের নিকট দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে যায়। কোন সন্দেহ বা সংশয় মিশ্রিত থাকে না প্রত্যেক সন্দেহাতীত বিষয়কে স্পষ্ট করে দেয়।
.
▪️আক্বীদা শব্দের অর্থ কী?
.
আভিধানিক অর্থে আক্বীদা এমন একটি শব্দ যাকে عقد মূল মাদ্দাহ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে যার মূল বিষয়টি প্রমাণ করে প্রতিশ্রুতি, দৃঢ়তা এবং নিশ্চিততার উপর। অর্থাৎ আক্বীদা শব্দের অর্থ হচ্ছে, শক্ত করা, বাঁধা, মজবুত করা, সুদৃঢ় করা। যেমন কুরআনে এসেছে:لا يؤاخذكم الله باللغو في أيمانكم ولكن يؤاخذاكم بما عقدتم الأيمن “তোমাদের বৃথা শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছে করে কর সেগুলোর জন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন।(সূরা মায়েদাহ: ৮৯) শপথ সংঘটিত হয় শুধুমাত্র অন্তরের ইচ্ছা ও দৃঢ় সংকল্পের কারণে। বলা হয়, (عقد الحبل) রশি দিয়ে গিট মারা: এর অর্থ একটি অংশ অন্যটির সাথে শক্ত করে বাঁধা। অপর আয়াতে এসেছে, (عُقۡدَۃُ النِّکَاحِ) ‘উক্বদাতুন নিকাহ’ বা বিবাহের বাঁধন বলা হয়েছে।(সূরা বাক্বারাহ: ২৩৫ ও ২৩৭)। বাঁধনের মাঝে কী আছে তা না দেখেই শুধু শুনে চূড়ান্ত বিশ্বাস করার নামই আক্বীদা। মূলত কর্ম ছাড়া কোন বিষয়ে সন্দেহাতীত চূড়ান্ত বিশ্বাসই আক্বীদা। আরবীতে বলা হয় اِعْتَقَدْتُّ كَذَا “আমি এ বিষয়ের উপর আমার হৃদয় ও অন্তরকে বেঁধেছি”। আক্বীদা ও ঈমান একই অর্থবোধক। অর্থাৎ বিশ্বাসের অপর নাম আক্বীদা। বলা হয়, لَهُ عَقِيْدَةٌ حَسَنَةٌ “তার আক্বীদা ভালো” তথা সন্দেহ থেকে মুক্ত। আক্বীদা হল আন্তরের ইবাদত। আর তা হল: إيمان القلب بالشيء وتصديقه به “হৃদয় দিয়ে কোন বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা এবং তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা”।(বিস্তারিত জানতে দেখুন: ইবনু উসাইমীন; শারহু লুমআতিল ইতিকাদ; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৫১,৩২০৯৪১)
.
এ সম্পর্কে সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]বলেন,“আক্বীদা হল, ما يصدقه العبد ويدين به “মানুষ যা সত্য বলে বিশ্বাস করে এবং যাকে সে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে”। এ আক্বীদাটি যদি আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূলগণের দ্বীন এবং তার অবর্তীণ কিতাবসমূহ অনুযায়ী হয়, তাহলে তা সহীহ আক্বীদা হিসাবে গণ্য হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্য লাভ করা যাবে। আর এ আক্বীদা যদি আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত রাসূলগণের আনীত আক্বীদার বিরোধী হয় এবং তাঁর অবতীর্ণ আসমানী কিতাবসমূহের পরিপন্থী হয়, তাহলে সেটা বাতিল আক্বীদা হবে। এবং বাতিল আক্বীদার অনুসারীরা শাস্তির সম্মুখীন হবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে হতভাগ্য হবে”।(মানহাজ: আল আজবিবাতুল মুফীদাহ আন আসয়িলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ, প্রশ্ন নং-৪৪)।
.
ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় আক্বীদা হচ্ছে অন্তরের বিশ্বাসের নাম। স্রষ্টার সত্তা, কর্ম, নাম, গুণ ও অধিকারসমূহের আন্তরিক স্বীকৃতি প্রদান করা এবং কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই অন্তর দিয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। কেননা আল্লাহ তায়ালা ঐসব (আক্বীদার) বিষয়ে তার কিতাবের মাধ্যমে সংবাদ দিয়েছেন অথবা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট ওহী প্রেরণের মাধ্যমে সংবাদ দিয়েছেন। ইসলামি আক্বীদার সংজ্ঞা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, العقيدة الإسلامية: هي الإيمان الجازم بالله، وملائكته، وكتبه، ورسله، واليوم الآخر، والقدر خيره وشره، وبكل ما جاء في القرآن الكريم، والسنة الصحيحة من أصول الدين، وأموره، وأخباره.”শরীয়তের পরিভাষায় ইসলামি আক্বীদা হচ্ছে, মহান আল্লাহ তাআলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, শেস দিবস তথা মৃত্যু পরবর্তী যাবতীয় বিষয় ও তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি এবং আল-কুরআনুল হাকিম ও সহিহ হাদিসে উল্লেখিত দীনের সকল মৌলিক বিষয়ের প্রতি অন্তরের সুদৃঢ় মজবুত ও বিশুদ্ধ বিশ্বাসের নাম আক্বীদা”।(রিসালাতুম শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম ফিল আক্বীদা,৭/২) ৮ম শতকের প্রসিদ্ধ অভিধানবেত্তা আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-ফাইঊমী (৭৭০হি) তাঁর আল-মিসবাহুল মুনীর গ্রন্থে লিখেছেন:العقيدة ما يدين الإنسان به، وله عقيدة حسنة: سالمة من الشك‘‘মানুষ ধর্ম হিসেবে যা গ্রহণ করে তাকে ‘আক্বীদা’ বলা হয়। বলা হয় ‘তার ভাল আক্বীদা আছে’, অর্থাৎ তার সন্দেহমুক্ত বিশ্বাস আছে।’’(আল-মিসবাহুল মুনীর; খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৪২১) আধুনিক ভাষাবিদ ড. ইবরাহীম আনীস ও তাঁর সঙ্গিগণ সম্পাদিত ‘আল-মু’জামুল ওয়াসীত’ গ্রন্থে বলা হয়েছে:العقيدة: الحكم الذي لا يُقْبَلُ الشكُّ فيه لدى معتقده، و(في الدين) ما يقصد به الاعتقاد دون العمل‘‘আক্বীদা অর্থ এমন বিধান বা নির্দেশ যা বিশ্বাসীর বিশ্বাস অনুসারে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ রাখে না…. ধর্মীয় বিশ্বাস যা কর্ম থেকে পৃথক…।’’(আল-মুজাম আল ওয়াসীত; খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৬১৪) আক্বীদার মূলনীতি হচ্ছে, যে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বিশ্বাস স্থাপন করার ব্যাপারে আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যেটি আল্লাহ তার কুরআনে এবং রাসূল (ﷺ) হাদীসে উল্লেখ করেছেন। ঈমানের ছয়টি রুকন হচ্ছে আক্বীদার মৌলিক বিষয় এগুলোকে আরকানুল ঈমান বা ঈমানের ভিত্তিও বলা হয়। তাই আল্লাহকে না দেখে, ফেরেশতা, জান্নাত, জাহান্নাম, হাশর, ক্বিয়ামত, কবরের আযাব ইত্যাদি অদৃশ্য বিষয় না দেখেই শুধু পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের বর্ণনায় সুদৃঢ় বিশ্বাস করার নামই হচ্ছে আক্বীদা। এ জন্য পবিত্র কুরআনের শুরুতেই মুত্তাক্বীদের প্রথম গুণ হিসাবে ‘অদৃশ্যে বিশ্বাস করার’ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَلَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ “যারা অদৃষ্ট বিষয়গুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করে”।(সূরা আল-বাক্বারাহ: ৩) এ বিষয়ে কুরআন এবং সহীহ-সুন্নাহতে আরো অনেকগুলো দলিল রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন:لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡهَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ”ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনবে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি” (সূরা বাকারাহ: ২/১৭৭) আল্লাহ আরো বলেন,اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ “রাসূল তার প্রভুর পক্ষ থেকে যা তার কাছে নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তার ফেরেশতাগণ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগনের কারও মধ্যে তারতম্য করি না”।(সূরা বাকারাহ: ২/২৮৫) তিনি অন্য আয়াতে বলেন,یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ الۡکِتٰبِ الَّذِیۡ نَزَّلَ عَلٰی رَسُوۡلِهٖ وَ الۡکِتٰبِ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنۡ قَبۡلُ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیۡدًا হে মুমিনগণ! তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা আল্লাহ তার রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। আর সে গ্রন্থের প্রতিও যা তার পূর্বে তিনি নাযিল করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ, তার ফিরিশতাগণ, তার কিতাবসমূহ, তার রাসূলগণ ও শেষ দিবসের প্রতি কুফর করে সে সুদূর বিভ্রান্তিতে পতিত হলো।(সূরা নিসা: ৪/১৩৬)
.
এছাড়াও অনেকগুলো হাদীস রয়েছে তন্মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ হাদীস হলো: উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের সামনে আবির্ভূত হলো। তার পরনের কাপড়-চোপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুলগুলো ছিল মিশমিশে কালো। সফর করে আসার কোন চিহ্নও তার মধ্যে দেখা যায়নি। আমাদের কেউই তাকে চিনেও না। অবশেষে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে বসলো। সে তার হাটুদ্বয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে দিলো এবং দুই হাতের তালু তার (অথবা নিজের) উরুর উপর রাখলো এবং বলল, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে ঈমান সম্বন্ধে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
” أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ
“ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তার ফেরেশতাকুল, তার কিতাবসমূহ, তার প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে।(সহীহ বুখারী হা/৫০; সহীহ মুসলিম হা/১) এই ছয়টি মৌলিক বিষয় থেকে সমস্ত কিছুর উদ্ভব হয় যা মুসলমানকে আল্লাহ তায়ালার হক সম্পর্কে পরকালের বিষয়ে এবং অদৃশ্যের বিষয়ে অনেকগুলো তথ্য আসবে যেগুলোর উপর মুসলিমদের বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব।(আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন: ড.সালিহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান, আক্বীদাতুত তাওহীদ ওয়া বায়ানু মা ইউযাদ্দুহা আও ইয়ানকুছুহা মিনাশ শিরকিল আকবার ওয়াল আছগার ওয়াত তা‘ত্বীল ওয়াল বিদ‘আহ ওয়া গাইরি যালিকা (রিয়াদ: মাকতাবাতু দারিল মিনহাজ, ১৪৩৪ হি.), পৃ. ৯)
.
▪️ইসলামী শরীয়তে আক্বীদার গুরুত্ব কী?
.
আক্বীদা বা বিশ্বাস মানুষের মূল সম্পদ এবং মানুষের যাবতীয় আমল কবুল হওয়ার জন্য অপরিহার্য বিষয়। বিশুদ্ধ আক্বীদা ছাড়া আমলের কোন মূল্য নেই। তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হল নিজের আক্বীদাকে পরিশুদ্ধ করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সঠিক আক্বীদা দিয়েই রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন আল্লাহ বলেন: “আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর”।(সূরা আন-নাহল: ৩৬), কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করে বলেছেন: “আলিফ-লাম-রা, এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট, সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত, প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার কাছে থেকে; যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করো না”।(সূরা হূদ: ১-২) এবং সমস্ত জিন-ইনসানের উপর এটি কবুল করে নেয়াকে আবশ্যক করে বলেছেন:”আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে”।(সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)। সকল নবী-রাসূল এ সহীহ আক্বীদার দাওয়াত নিয়ে এসেছেন। সমস্ত আসমানী কিতাবই এর বিশদ বিবরণ দেয়ার জন্য এবং উহাকে ক্রটিযুক্তকারী বিষয়গুলো স্পষ্ট করার জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মানুষকেই এটা গ্রহণ করার আদেশ করা হয়েছে। সুতরাং আক্বীদার বিষয়টি যেহেতু এত মর্যাদাবান ও গুরুত্বপূর্ণ, তাই সর্বপ্রথম এর প্রতি গুরুত্ব দেয়া, এ নিয়ে গবেষণা করা এবং এ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা জরুরী। কেননা পরিশুদ্ধ আক্বীদার উপরই মানুষের ইহকালীন-পরকালীন সৌভাগ্য নির্ভর করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,لَاۤ اِکۡرَاہَ فِی الدِّیۡنِ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی لَا انۡفِصَامَ لَہَا وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ “দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হেদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব যে ব্যক্তি ত্বাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মযবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৫৬)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই সঠিক আক্বীদা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিবে, সে এ বিষয়ে নিজস্ব খেয়াল-খুশী ও বাতিল ধারণার দিকে ধাবিত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবে, সে তার সামনে বাতিল ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِہٖ ہُوَ الۡبَاطِلُ”নিশ্চয় আল্লাহই সত্য; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা বাতিল’ (সূরা আল-হজ্জ: ৬২)। সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত লোকের পরিণাম জাহান্নাম। কতই না নিকৃষ্ট বাসস্থান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالۡاِیۡمَانِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُہٗ وَ ہُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে কুফরী করবে, তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ৫)। তাই আমল যত সুন্দরই হোক, আক্বীদা সহীহ না হলে তা আল্লাহর নিকট কখনই কবুল হবে না।
.
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا وَابْتُغِىَ بِهِ وَجْهُهُ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কোন আমল কবুল করবেন না, যদি তাঁর জন্য তা খালেস হৃদয়ে ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করা না হয়’।(সুনানুন নাসাঈ পৃষ্ঠা: ৪৮৪; হা/৩১৪০; সনদ সহীহ।) অন্য হাদীসে তিনি বলেন, أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُوْنَةٌ مَلْعُوْنٌ مَا فِيْهَا إِلَّا ذِكْرُ اللهِ وَمَا وَالَاهُ وَعَالِمٌ أَوْ مُتَعَلِّمٌ ‘নিশ্চয় পৃথিবীটা অভিশপ্ত এবং এর মাঝে যা কিছু আছে সেগুলোও অভিশপ্ত। তবে আল্লাহর যিকির ও তার বন্ধুত্ব, দ্বীনি আলেম ও দ্বীনের শিক্ষার্থী ছাড়া’।(সুনানুত তিরমিযী পৃষ্ঠা: ৫২৫; হা/২৩২২; ‘যুহদ’ অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-১২; মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা; ১৪৩১, হা/৫১৭৬; সিলসিলা সহীহা পৃ. ২৯৬, হা/২৭৯৭; সনদ হাসান) অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আক্বীদাভ্রষ্ট আমলকারীদের সম্পর্কে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। ‘আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্য হতে একটি সম্প্রদায় বের হবে, যাদের সালাতের তুলনায় তোমাদের সালাতকে, সিয়ামের তুলনায় তোমাদের ছিয়ামকে এবং আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে হালকা মনে করবে। তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন ইসলাম থেকে অনুরূপ বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকার ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। শিকারী তখন তীরের ফলার দিকে তাকায়, কিন্তু তাতে শিকারের কোন অংশ দেখতে পায় না। সে তীরের পার্শ্ব ও পাতার দিকে তাকায়, কিন্তু সেখানেও কিছু দেখতে পায় না। অবশেষে সে তীরের ফলার মাথায় কিছু আছে কি-না সন্দেহ পোষণ করে’।(সহীহুল বুখারী, পৃ. ৬৪৬, হা/৫০৫৮; মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৫২, হা/৫৮৯৪) উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমল বিশুদ্ধ হলেই যে কবুল হবে, তা কিন্তু নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমানতদারিতা সম্পর্কে কারো অন্তরে কুধারণা থাকলে তার সালাত, ছিয়ামসহ যাবতীয় আমল সুন্দর হলেও গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং সে ইসলাম থেকে এমনভাবে বহিষ্কৃত হবে যে, তার সাথে ইসলামের কোন অংশই অবশিষ্ট থাকবে না।তাই উক্ত দলীল সমূহের আলোকে মুহাদ্দিস ওলামায়ে কেরাম বলেন, .مَعْلُوْمٌ بِالْأَدِلَّةِ الشَّرْعِيَّةِ مِنَ الْكِتَابِ وَالسُّنّةِ أَنَّ الْأَعْمَالَ وَالْأَقْوَالَ إِنَّمَا تَصِحُّ وَتَقْبَلُ إِذَا صَدَرَتْ عَنْ عَقِيْدَةٍ صَحِيْحَةٍ فَإِنْ كَانَتِ الْعَقِيْدَةُ غَيْرَ صَحِيْحَةٍ بَطَلَ مَا يَتَفَرَّعُ عَنْهَا “শারঈ বিধি-বিধান তথা কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, যাবতীয় আমল ও কথা কেবল তখনই বিশুদ্ধ হবে এবং গৃহীত হবে, যখন তা বিশুদ্ধ আক্বীদার মাধ্যমে প্রকাশিত হবে। আর যদি আক্বীদা বিশুদ্ধ না হয়, তবে তার থেকে যা কিছু বের হবে, সবই বাতিল বলে গণ্য হবে’।এজন্য বলা হয়,اَلْعَقِيْدَةُ الصَّحِيْحَةُ هِىَ أَصْلُ دِيْنِ الْإِسْلاَمِ وَأَسَاسُ الْمِلَّةِ “বিশুদ্ধ আক্বীদা দ্বীন ইসলামের শিকড় এবং মুসলিম মিল্লাতের সুদৃঢ় ভিত্তি”।(শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, আল-আক্বীদাতুস সহীহাহ ওয়ামা ইউযাদ্দুহা (রিয়াদ: দারুল ক্বাসেম, ১৪১৫ হি.), পৃষ্ঠা: ৩; ভূমিকা দ্রঃ)
.
▪️আক্বীদাকে তাওহীদের কিতাবগুলোতে সর্বপ্রথম কে অন্তর্ভুক্ত করেন?
.
আক্বীদা শব্দটির ব্যবহার ইসলামের প্রাথমিক যুগে কম হতো। পবিত্র কুরআনে কারীমে সরাসরি আক্বীদা শব্দটি আসেনি। তবে কুরআনের সাত জায়গায় আক্বীদার মূল শব্দ মাদ্দাহ অর্থাৎ মূল অক্ষর থেকে অন্যান্য শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যেমন:
(১) যবানের জড়তা অর্থে। আল্লাহ বলেন, وَٱحۡلُلۡ عُقۡدَةً مِّن لِّسَانِي “হে আল্লাহ! আমার যবানের জড়তা খুলে দাও”(সূরা ত্বহা: ২০/২৭)।
(২) বিবাহের আকদ অর্থে।وَلَا تَعۡزِمُواْ عُقۡدَةَ ٱلنِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبۡلُغَ ٱلۡكِتَٰبُ أَجَلَهُ “ইদ্দত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহের আকদের জন্য দৃড় সংকল্প করবে না”(সূরা বাকারা: ২/২৩৫)।
(৩) মহর মাফ করার ক্ষেত্রে:الَّذِیۡ بِیَدِهٖ عُقۡدَۃُ النِّكَاحِ”যার হাতে বিবাহের বন্ধন সে (স্ত্রী) যদি মাফ করে দেয়”।(সূরা বাকারা: ২৩৭)
(৪) অঙ্গীকারবদ্ধ অর্থে:وَ الَّذِیۡنَ عَقَدَتۡ اَیۡمَانُكُمۡ “এবং যাদের সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার রয়েছে”(সূরা নিসা: ৩৩)
(৫) সুতায় গিঁট দেয়ার অর্থে। وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِي ٱلۡعُقَدِ (সুতার) গিটে ফুঁক প্রদানকারিণী মহিলা”(সূরা ফালাক: ১১৩/৪)।
(৬) কসম’কে মযবূত করা অর্থে। بِمَا عَقَّدتُّمُ ٱلۡأَيۡمَٰن “যে কসম সমূহকে তোমরা মযবূত বা দৃঢ়ভাবে করেছো” (সূরা মায়েদা: ৫/৮৯)।(৭) ওয়াদা ও চুক্তি অর্থে। أَوۡفُواْ بِٱلۡعُقُود “তোমরা ওয়াদা ও চুক্তি পূর্ণ কর”(সূরা মায়েদা: ৫/১)।
.
পক্ষান্তরে হাদীসে আক্বীদা শব্দটি সরাসরি ব্যবহৃত হয়েছে সুনান দারেমীতে আসা সহীহ হাদীসে। যেমন: রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,لَا يَعْتَقِدُ قَلْبُ مُسْلِمٍ عَلَى ثَلَاثِ خِصَالٍ، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ». قَالَ: قُلْتُ: مَا هُنَّ؟ قَالَ: «إِخْلَاصُ الْعَمَلِ، وَالنَّصِيحَةُ لِوُلَاةِ الْأَمْرِ، وَلُزُومُ الْجَمَاعَةِ،”যে মুসলিমের অন্তরে তিনটি বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস থাকবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” তিনি বলেন, আমরা বললাম, সেই বিষয়গুলি কী কী? তিনি বললেন, (১). আমলে একনিষ্ঠতা, (২). শাসকের কল্যাণ কামনা করা এবং (৩). জামা’আত আকঁড়ে থাকা।(সহীহ ইবনু হিব্বান হা/ ৬৭,৬৮০ সুনানে দারেমী হা/২৩৫ সনদ বিশুদ্ধ) এই হাদীসে يَعْتَقِدُ শব্দ রয়েছে।এছাড়াও আক্বীদা শব্দটি তাবেঈগণ এবং পরবর্তী ইতিহাস বিখ্যাত ইমামগণের মুখে এবং তাদের লিখিত বই এসেছে। আক্বীদা” বা ” ই’তিক্বাদ ” নামটি ব্যবহার করা হয়েছে এমন কয়েকটি কিতাবের অন্তর্ভুক্ত হলো: (১).হাফিজ আবু উসমান আল সবুনী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু: ৪৪৯ হি:]-এর কিতাব ” আকীদাতুস সালাফ আসহাবুল হাদীস ” (২).ইমাম লালিকাই (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু:৪১৮ হি:]-এর “শারহু উসুলুল ই’তিকাদ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত “(৩).ইমাম বায়হাকী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু: ৪৫৮ হি:]-এর আল ইতিকাদ। (বিস্তারিত জানতে দেখুন:ইমাম ইব্রাহিম বুরাইকান এর “মাদখাল লি দিরাসাতিল আকিদা ইসলামিয়া” পৃষ্ঠা: ৮ এবংনাসির বিন আব্দুল কারিম এর ” মাবাহেস ফি আকিদাতি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাত পৃষ্ঠা: ১০) আক্বীদা পরিভাষার ধারাবাহিক ইতিহাস জানতে দেখা যেতে পারে ডঃ উসমান জামআ জমিরীয়্যাহ এর ” মাদখাল লিদিরাসাতিল আকিদা আল ইসলামিয়া” কিতাবটি।
.
“আক্বীদা” শব্দটির ব্যবহারের উৎস সম্পর্কে ডঃ উসমান যামিরিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
إن من أكثر الكلمات والألفاظ تداولاً على الألسنة بين الناس كلمة (العقيدة) وما يقاربها ويتفق معها في الاشتقاق، كالاعتقاد والعقائد.. وعلى كثرة استعمال هذه الكلمة التي غدت مصطلحاً شائعاً، فإننا لا نجد لها استعمالاً في القرآن الكريم وفي الحديث الشريف. ولذلك يرى بعض الباحثين: أنها مستحدثة في العصر العباسي للمعنى الذي استعملت فيه، وأن اللفظ المستعمل في القرآن الكريم والحديث الشريف هو … (الإيمان) . وقد استعمل لفظ (العقيدة) أجيال من المسلمين، بمعنى: الأفكار الأساسية التي يجب على المؤمن بدينٍ أن يقبلها ويصدق بها. واستعمال السلف. من العلماء والأئمة لهذه الكلمة دليل على جواز ذلك وإطلاقها على هذا الجانب من … جوانب الدين” انتهى من “مدخل لدراسة العقيدة الإسلامية”،
“মানুষের মুখে সবচেয়ে সাধারণ শব্দগুলোর মধ্যে একটি হল আক্বীদা শব্দ। মানুষের নিকটে খুবই পরিচিত শব্দ হলো আক্বীদা এবং ইতিকাদ। তবে এই শব্দটি আমরা কুরআন হাদিসে তেমন দেখতে পাই না। অতএব কিছু গবেষক মনে করেন যে এই শব্দটি আব্বাসী যুগে প্রচলন হয়েছিল যেটা তার অর্থে ব্যবহার করা হয়। আর ব্যবহারিত শব্দটি কুরআন এবং হাদিসে রয়েছে তা হল ঈমান। আবার কখনো কখনো মুসলমানদের প্রজন্ম অনুপাতে আকিদা শব্দটিও ব্যবহার হয়েছে যেটা মুমিনদের দিন বিশ্বাস করতে গ্রহণ করতে এবং সত্যায়ন করতে আবশ্যক করে।দ্বীন ও ধর্মের দিকে লক্ষ্য করে এ শব্দটি ব্যবহার করাতে কোন সমস্যা নাই বলে জানিয়েছেন সালাফি আলেমগণ”।(মাদখাল লি দিরাসাতিল আকিদা ইসলামিয়া পৃষ্ঠা: ৭৩)
.
পরিশেষে জেনে রাখুন হে প্রিয় পাঠক! (মহান আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদেরকে তাওফিক দান করুন) ইসলামী আকিদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার। এটা করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। আকিদা বলতে কী বুঝায়, আকিদার উপর আর কী কী জিনস নির্ভর করে, বিপরীত আকিদাগুলো কী কী, কী কারণে আকিদা নষ্ট হয় বা তাতে কমতি সৃষ্টি হয় যেমন: বড় শিরক, ছোট শিরক ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিটি মুসলিমের জানা বা শিক্ষা অর্জন করা অপরিহার্য। কেননা এ পরিশুদ্ধ আকীদার উপরই মানুষের ইহ-পরকালীন সৌভাগ্য নির্ভর করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ‘জেনে রাখুন যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১৯)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) বলেন, اَلْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ ‘কথা বলা ও আমল করার পূর্বেই জ্ঞানার্জন করা’।(সহীহুল বুখারী, পৃষ্ঠা: ২০; ‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০) এরপর তিনি এ শিরনামের স্বপক্ষে পূর্বোক্ত আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত তার দ্বীনের উপর অটল রাখুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________________
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)।
শিক্ষক, চর বাগডাঙ্গা সেরাজুল হুদা লতিফিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ।