সকাল-সন্ধ্যার ফযিলতপূর্ন ও নিজের নিরাপত্তার জন্য কিছু নিয়মিত আমল

সকাল ও সন্ধ্যার কিছু বিশেষ নিয়মিত দোয়ার আমল রয়েছে যা জন্য অত্যন্ত উপকারী, প্রয়োজনীয় ও ফযিলতপূর্ন এবং রক্ষা-কবজ হিসেবে কাজ করে। নিচে সেগুলো সহীহ দলিল ও ফযীলতসহ দেওয়া হল।

🛑 আয়াতুল কুরসী (১ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

উচ্চারণ: আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূমু লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহূ মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী। ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযীম।

অর্থ: আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।”

ফযিলত: যে ব্যক্তি সকালে তা পড়বে সে বিকাল হওয়া পর্যন্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে, আর যে ব্যক্তি বিকালে তা পড়বে সে সকাল হওয়া পর্যন্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে।

রেফারেন্স: বুখারী: ২৩১১

********************************************

🛑 সূরা ইখলাস (৩ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  ۝ قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ  ۝ۚ اَللّٰهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ ڏ وَلَمْ يُوْلَدْ ۝ وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ ۝ۧ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লাহুস্ সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ)।

অর্থ: রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘সামাদ’ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।

🛑 সূরা ফালাক (৩ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  ۝ ﴿قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ۝ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ۝ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ۝ وَمِنْ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِي الْعُقَدِ  ۝ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ ۝

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল আ‘উযু বিরব্বিল ফালাক্ব। মিন শাররি মা খালাক্ব। ওয়া মিন শাররি গা-সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়া মিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ)।

অর্থ: রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি  ঊষার রবের। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। ‘আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গিরায় ফুঁক দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।”

🛑 সূরা নাস (৩ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ  ۝ ﴿قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۝ مَلِكِ النَّاسِ ۝ اِلٰهِ النَّاسِ ۝ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ ڏ الْخَنَّاسِ ۝ الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ ۝ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ۝ۧ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল ‘আউযু বিরাব্বিন্না-স। মালিকিন্না-সি, ইলা-হিন্নাসি, মিন শাররিল ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স, আল্লাযি ইউওয়াসউইসু ফী সুদূরিন না-সি, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।)।

অর্থ: রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহের কাছে, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে; যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।”

ফযিলত: হাদীসে এসেছে, রাসূল বললেন, যে ব্যক্তি সকাল ও বিকালে ‘সূরা ইখলাস’, ‘সূরা ফালাক’ ও ‘সূরা নাস’ তিনবার করে পড়বে, এটাই তার সবকিছুর সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট হবে।

রেফারেন্স: আবূ দাউদ: ৫০৮২; তিরমিযী: ৩৫৭৫

********************************************

🛑 সব কিছুর ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া (৩ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ: বিস্‌মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইস্‌মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম।

অর্থ: আল্লাহ্‌র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি  সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।

ফযিলত: যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এবং বিকালে তিনবার এই দোয়া পড়বে, কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।

রেফারেন্স: আবূ দাউদ: ৫০৮৮; তিরমিযী: ৩৩৮৮; ইবন মাজাহ: ৩৮৬৯

********************************************

🛑 সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার (১ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنوبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।

ফযিলত: যে ব্যক্তি সকালবেলা অথবা সন্ধ্যাবেলা এটি (‘সায়্যিদুল ইসতিগফার’) অর্থ বুঝে দৃঢ় বিশ্বাসসহকারে পড়বে, সে ঐ দিন রাতে বা দিনে মারা গেলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।”

রেফারেন্স: বুখারী: ৬৩০৬

********************************************

🛑 ক্ষমা, সুস্থতা এবং সর্বদিকের বিপদাপদ থেকে আশ্রয় চাওয়া (১ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ: فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي، وَمَالِي، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَينِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্‌লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্‌তী।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে।

জুবাইর ইবনু আবূ সুলাইমান, ইবনু জুবাইর ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) সূত্র হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে উপরের দোয়াটি পড়া কখনো ছেড়ে দিতেন না।

রেফারেন্স: আবূ দাউদ: ৫০৭৪; ইবন মাজাহ: ৩৮৭১; নাসায়ী: ৫৫২৯, ৫৫৩০

********************************************

🛑 সকল বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা (১ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِيْ كُلَّهُ وَلَا تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ

উচ্চারণ:  ইয়া- ‘হাইউ ইয়া ক্বাইউমু, বিরা’হমাতিকা আসতাগীছু, আসলি’হ লী শা’নী- কুল্লাহু, ওয়া লা- তাকিলনী ইলা- নাফ্‌সী তারফাতা ‘আইন।

অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে মহারক্ষক ও অমুখাপেক্ষী তত্ত্বাবধায়ক, আপনার রহমতের ওসীলা দিয়ে উদ্ধার কামনা করি। আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন। আর আমাকে একটি মুহূর্তের জন্যও, চোখের পলকের জন্যও আমার নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দিবেন না।

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) ফাতেমা (রাঃ)-কে বলেন, “আমি ওসীয়ত করছি যে, তুমি সকালে ও সন্ধ্যায় এ কথা বলবে।”

রেফারেন্স: সিলসিলাতুল সহীহা: ২২৭

********************************************

🛑 দরুদ পাঠ করবে (১০ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

اَللَّھُمَّ صَلِّ عَلَی مُحَمَّدٍ وَّعَلَی آلِ مُحَمَّدٍ کَمَا صَلَّیْتَ عَلَی اِبْرَاھِیْمَ وَعَلَی آلِ اِبْرَاھِیْمَ اِنَّكَ حَمِیْدٌ مَّجِیْدٌ، اَللَّھُمَّ بَارِكْ عَلَی مُحَمَّدٍ وَّعَلَی آلِ مُحَمَّدٍ کَمَا بَارَکْتَ عَلَی اِبْرَاھِیْمَ وَعَلَی آلِ اِبْرَاھِیْمَ اِنَّكَ حَمِیْدٌ مَّجِیْدٌ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আলী মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা ‘হামীদুম্ মাজীদ।

অর্থ: হে আল্লাহ্‌ আপনি মুহাম্মাদ (ﷺ) ও তাঁর পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করুন যেমন আপনি সালাত প্রদান করেছেন ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিজনের উপর, নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহাসম্মানিত। এবং আপনি বরকত প্রদান করুন মুহাম্মাদের উপরে এবং মুহাম্মাদের পরিজনের উপরে যেমন আপনি বরকত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের উপরে এবং ইবরাহীমের পরিজনের উপরে। নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহা সম্মানিত।

ফযিলত: রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি সকালে দশ বার ও সন্ধ্যায় দশ বার আমার উপর দুরুদ পড়বে, সে কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত লাভ করবে।” আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ্‌ তার উপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০টি পাপ মোচন করে দিবেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন।

রেফারেন্স: তাবারানী, সহীহ তারগীব ১/২৭৩

********************************************

🛑 সুস্থতা ও নিরাপত্তা প্রার্থনার দোয়া (৩ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

اَللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اَللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِي سَمْعِي اَللَّهُمَّ عَافِنِيْ فِي بَصَرِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ‘আফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আফিনী ফী সাম’য়ী, আল্লা-হুম্মা ‘আফিনী ফী বাসারী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাক্বরি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি। লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ্‌, আমার দেহে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ্‌, আমার শ্রবণযন্ত্রে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ্‌, আমার দৃষ্টি শক্তিতে আমাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা-নিরাপত্তা দান করুন। আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত মাবুদ নেই। হে আল্লাহ্‌, আমি আপনার কাছে কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্‌, আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই।

আবু বাকর (রাঃ) প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এ দোয়া গুলো ৩ বার করে বলতেন। তাঁর পুত্র আব্দুর রহমান (রাঃ) তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ)-কে এই দোয়াগুলো বলতে শুনেছি। আমি তাঁরই সুন্নাত অনুসরণ করে চলতে পছন্দ করি।”

রেফারেন্স: আবু দাউদ: ৫০৯০

********************************************

🛑 চারটি কালেমা সারা সকাল ইবাদতের চেয়েও ওজনে ভারী (৩ বার শুধু সকালে):

سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَى نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ

উচ্চারণ: সুব’হা-নাল্লা-হি ওয়াবি’হামদিহী, ‘আদাদা খাল্‌ক্বিহী, ওয়ারিদ্বা- নাফ্‌সিহী, ওয়া ঝিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমাতিহী।

অর্থ: পবিত্রতা আল্লাহ্‌র এবং প্রশংসা তাঁরই, তাঁর সৃষ্টির সমসংখ্যক, তাঁর নিজের সন্তুষ্টি পরিমাণে, তাঁর আরশের ওজন পরিমাণে এবং তাঁর বাণীসমূহ লেখার কালি পরিমাণ (অগণিত অসংখ্য)।

ফযিলত: উম্মুল মুমিনীন জুআইরিয়্যা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) ফজরের সালাতের পরে তাকে তার সালাতের স্থানে যিক্‌র-রত অবস্থায় দেখে বেরিয়ে যান। এরপর তিনি অনেক বেলা হলে দুপুরের আগে ফিরে এসে দেখেন তিনি তখনও সে অবস্থায় তাসবিহ তাহলীলে রত রয়েছেন। তিনি বলেন: “তুমি কি আমার যাওয়ার সময় থেকে এ পর্যন্ত এভাবেই যিক্‌রে রত রয়েছ?” তিনি বললেন: “হ্যা।” তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) বললেন: “আমি তোমার কাছ থেকে বেরিয়ে চারটি বাক্য তিন বার করে বলেছি (উপরের বাক্যগুলো)। তুমি সকাল থেকে এ পর্যন্ত যত কিছু বলেছো সবকিছু একত্রে যে সাওয়াব হবে, এ বাক্যগুলোর সাওয়াব একই পরিমাণ হবে।

রেফারেন্স: মুসলিম: ২৭২৬

********************************************

🛑 বিষধর প্রানীর ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার দোয়া (৩ বার শুধু সন্ধ্যায়):

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ: আ‘ঊযু বি কালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক্ব।

অর্থ: আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।

ফযিলত ১: যে ব্যক্তি বিকাল বেলা এই দোয়াটি ৩ বার পড়বে, সে রাতে কোন বিষধর প্রানী তার ক্ষতি করতে পারবে না।

রেফারেন্স: মুসলিম: ২৭০৮, ২৭০৯

ফযিলত ২: খাওলা বিনতুল হাকীম আস-সুলামিয়াহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যদি কোন জায়গায় অবতরণ করে উপরের দোয়াটি পড়ে, সে উক্ত জায়গা ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না।

রেফারেন্স: মুসলিম: ২৭০৯; তিরমিযী: ৩৪৩৭; ইবন মাজাহ: ৩৫৪৭

********************************************

🛑 দশটি দাসমুক্তির সওয়াব, একশত সওয়াব এবং শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া (১০০ বার সকাল ও সন্ধ্যায়):

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।

অর্থ: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

ফযিলত: আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে লোক একশ’বার এ দু’আ’টি পড়বেঃ আল্লাহ ব্যতিত কোন ইলাহা নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। তাহলে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব তার হবে। তার জন্য একশটি সওয়াব লেখা হবে এবং আর একশটি গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হতে মাহফুজ থাকবে। কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু’আটির ‘আমল বেশি পরিমাণ করবে।

রেফারেন্স: বুখারী: ৩২৯৩; আবূ দাউদ: ৫০৭৭; ইবন মাজাহ: ৩৭৯৮; মুসলিম: ২৬৯১।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: আসাদ রনি

Share: