Site icon Tawheed Media

হাদীস ব্যতীত কুরআন বুঝা অসম্ভব হাদীস যে কুরআনের ব্যাখ্যা স্বরূপ চলুন কয়েকটি উদহারন দেখি যা বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করবে ইনশাআল্লাহ

▪️(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ ‘আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকূ কর’ (বাক্বারাহ ২/৪৩)।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সালাত ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সালাত আদায়ের পদ্ধতি কি হবে? কোন ওয়াক্তের সালাত কত রাক‘আত আদায় করতে হবে? কোথায় হাত রেখে রুকূ করতে হবে? অনুরূপভাবে যাকাত ফরয হওয়ার জন্য নিছাব কতটুকু এবং কি পরিমাণ যাকাত, কখন দিতে হবে? এর কিছুই কুরআনে বর্ণিত হয়নি। এগুলো জানতে হ’লে হাদীসের দিকে ফিরে যেতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে,
.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একসময় নবী (ﷺ) মসজিদে তাশরীফ আনলেন, তখন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করল। অতঃপর সে নবী রাসূল (ﷺ)-কে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। লোকটি পুনরায় সালাত আদায় করে এসে নবী করীম (ﷺ)-কে সালাম দিল। তিনি বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর, কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হ’ল। অতঃপর লোকটি বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। আমি এর চেয়ে সুন্দর সালাত আদায় করতে জানি না। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন,যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। অতঃপর কুরআন থেকে তোমার পক্ষে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়বে। অতঃপর রুকূতে যাবে এবং ধীর-স্থিরভাবে রুকূ করবে। অতঃপর রুকূ হ’তে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীর-স্থিরভাবে সিজদাহ করবে। অতঃপর সিজদাহ হ’তে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদাহ করবে। অতঃপর পূর্ণ সালাত এভাবে আদায় করবে’(বুখারী হা/৭৯৩; মুসলিম হা/৩৯৭)

কি পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্য থাকলে যাকাত ফরয হবে এবং তাকে কি পরিমাণ যাকাত আদায় করতে হবে? এ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন,বিশ দীনারের কম স্বর্ণে যাকাত ফরয নয়। যদি কোন ব্যক্তির নিকট বিশ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকে, তবে এর জন্য অর্ধ দীনার যাকাত দিতে হবে। এরপরে যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐভাবেই হবে’।(আবূদাউদ হা/১৫৭৩)

রৌপ্যের নিছাব উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,وَلاَ فِيْ أَقَلَّ مِنْ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ ‘পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যে যাকাত নেই’(বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪)

কৃষিপণ্যের যাকাতের নিছাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, لَيْسَ فِيْمَا أَقَلُّ مِنْ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ صَدَقَةٌ ‘পাঁচ ওয়াসাক্ব-এর কম উৎপন্ন ফসলের যাকাত নেই’।(সহীহ বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ঐ, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২০ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪) অতএব বুঝা গেল, হাদীসের অনুসরণ ব্যতীত সঠিক পদ্ধতিতে সালাত ও যাকাত আদায় করা সম্ভব নয়।
.
▪️(২) আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,اَلَّذِيْنَ آمَنُواْ وَلَمْ يَلْبِسُوْا إِيْمَانَهُم بِظُلْمٍ أُوْلَـئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত’ (সূরা আন‘আম ৮২)।

অত্র আয়াতে বর্ণিত بِظُلْمٍ দ্বারা ছাহাবায়ে কেরাম সাধারণভাবে সকল প্রকার যুলুম বুঝেছিলেন। সেটা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন। এজন্য এ আয়াতটির মর্ম তাদের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকলে তারা বলেছিলেন, يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيُّنَا لاَ يَظْلِمُ نَفْسَهُ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে তার নফসের উপর যুলুম করে না? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছিলেন,لَيْسَ ذَلِكَ، إِنَّمَا هُوَ الشِّرْكُ، أَلَمْ تَسْمَعُوْا مَا قَالَ لُقْمَانُ لِاِبْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَبُنَيَّ لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ ‘তোমরা যে যুলুমের কথা ভাবছ সেটা উদ্দেশ্য নয়। বরং ওটা হচ্ছে শিরক। তোমরা কি লোকমান তার সন্তানকে উপদেশ স্বরূপ যা বলেছিলেন তা শুননি যে, ‘হে বৎস! আল্লাহর সাথে শিরক কর না। নিশ্চয়ই শিরক বড় যুলুম’ (সূরা লোকমান ১৩ বুখারী হা/৪৬২৯, ৪৭৭৬, ৬৯১৮, ৬৯৩৭; মুসলিম হা/ ১২৪,)

হে মুসলিম ভাই-বোন! লক্ষ্য করুন,সাহাবায়ে কেরাম পর্যন্ত উল্লিখিত আয়াতে বর্ণিত بِظُلْمٍ শব্দের অর্থ ভুল বুঝেছিলেন। যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে তাদের ভুল শুধরিয়ে না দিতেন এবং বুঝিয়ে না দিতেন যে, আয়াতে উল্লিখিত ظلم দ্বারা শিরক উদ্দেশ্য, তাহ’লে আমরাও তাদের ভুলের অনুসরণ করতাম। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দিকনির্দেশনামূলক হাদীছ দ্বারা আমাদেরকে এত্থেকে রক্ষা করেছেন।
.
▪️(৩). আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু ও রক্ত’ (সূরা মায়েদা,৫/৩)।

এই আয়াত অনুযায়ী আমরা যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসের অনুসরণ না করি তাহ’লে মৃত মাছ ও কলিজা আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এগুলোকে হালাল সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেন,أُحِلَّتْ لَنَا مَيْتَتَانِ وَدَمَانِ : فَأَمَّا الْمَيْتَتَانِ فَالْجَرَادُ وَالْحُوْتُ، وَأَمَّا الدَّمَانِ فَالْكَبِدُ وَالطِّحَالُ ‘দু’প্রকারের মৃত জন্তু এবং দু’প্রকারের রক্ত আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। মৃত জন্তু দু’টি হ’ল টিড্ডি ও মাছ। আর দু’প্রকারের রক্ত হ’ল কলিজা ও প্লীহা’।(মিশকাত হা/৪২৩২; সিলসিলা সহীহা হা/১১১৮)
.
অতএব প্রিয় পাঠক, সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ সহ ইবাদতের সকল বিষয়েই এরূপ অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যার সমাধান হাদীসের অনুসরণ ব্যতীত সম্ভব নয়। বর্তমান যুগে হাদীস অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বলে দাবী করে। অথচ কুরআনের অসংখ্য আয়াতে হাদীস তথা রাসূল ﷺ)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ রয়েছে। যা তারা মানেনা। বস্ত্ততঃ রাসূল (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর একটি বাস্তব চিত্র হ’ল ভ্রান্ত ফেরকা আহলে কুরআন।রাসূল (ﷺ) উক্ত দল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ‘জেনে রাখো আমাকে কিতাব (কুরআন) এবং তার সাথে অনুরূপ একটি বস্ত্ত দেয়া হয়েছে। অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন কোন পেটপুরে খাদ্য গ্রহণকারী (প্রাচুর্যবান) ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ কর, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল আর তাতে যা হারাম পাবে তা হারাম মনে কর’ (আবুদাঊদ হা/৪৬০৫ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৬২)।

অন্য হাদীসে এসেছে ‘আমি যেন তোমাদের মধ্যে কাউকে এমন অবস্থায় না পাই যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং তার নিকট যখন আমার আদিষ্ট কোন বিষয় অথবা আমার নিষেধ সম্বলিত কোন কিছু (হাদীস) উত্থাপিত হবে তখন সে বলবে, আমি তা জানি না, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে আমরা যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব’ (আবুদাঊদ হা/৪৬০৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৬৩)। মহান আল্লাহ সকল পথ ভ্রষ্ট বাতিল-ফিরকা থেকে মুসলিম জাতিকে হেফাজত করুক আমীন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version