Site icon Tawheed Media

হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ১৮তম দুআ

ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনো শিরক থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার দু’আ।
▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: প্রিয় পাঠক! মনে করুন কোন ব্যক্তি ২০/৩০ কিংবা চল্লিশ বছর যাবত একমাত্র মহান আল্লাহর ইবাদত করলো,তিনি নিয়মিত ফরজ সালাতের পাশাপাশি নফল সুন্নত নামায পড়লো, রমজান মাসের ফরজ সিয়াম এবং সাথে কিছু নফল সিয়ামও রাখলো, তিনি সমর্থ্যবান হলে হজ্জ উমরাহ করলো, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে নিয়মিত যাকাত আদায় করলো। কিন্তু মরণের পূর্বে একটি বড় শিরক করে তওবা না করেই মারা গেলো। আপনি কি জানেন! এই একটা মাত্র শিরক তার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেবে (নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক)! কেয়ামতের দিন তার আমলগুলোর কোনো ওযন বা প্রতিদান আল্লাহ তাকে দেবেন না, বরং এইগুলোকে ধূলো-বালিতে রূপান্তরিত করে দেবেন।এমনটাই কুরআনে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন,”আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব”। (সূরা ফুরকান, ২৫/২৩) মানুষ জেনে হোক বা না জেনেই হোক যে কেউ, যেকোনো সময় শিরকে লিপ্ত হতে পারে, যে যত বড় নেককার মুমিন মুত্তাকী হোক না কেনো, যদি না, আল্লাহ তাকে হেফাজত করেন। এইজন্য শিরক করা অথবা অনিচ্ছায় শিরকে লিপ্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে সবসময় আশ্রয় চাইতে হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকালে বিকালে অন্তত একবার বা তিনবার করে পড়ে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন ইনশাআল্লাহ। আপনি কি জানেন, সেই দু’আটা কি?
.
হাদীসটি বর্ননা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী মাকিল ইবনে ইয়াসার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তিনি বলেন, আমি আবু বাকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের-এর নিকট গেলাম। তিনি (ﷺ) বলেনঃ হে আবু বাকর! নিশ্চয় শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবু বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি শিরক আছে? নবী (ﷺ) বলেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিবো সুনানে নাসাঈতে এসেছে, তুমি যা পালন করলে ছোট ও বড় শিরক তোমার থেকে দূরিভূত হবে। তুমি বলবে.. দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে,
.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
.
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন,পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (মুসনাদে আহমাদ হা/ ৪/৪০৩,ইমাম আলবানী সহীহ আল-জামে: খণ্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ২৩৩ হা/৩৭৩১ ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদ হা/৭২১ হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬ হাদীসটি বিশুদ্ধ)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন— .
.
اَللّٰهُمَّ
(আল্লা-হুম্মা) অর্থ: হে আল্লাহ!
.
إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ
(ইন্নী আ’উযুবিকা আন) অর্থ: নিশ্চয়ই আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
.
أُشْرِكَ بِكَ
(উশরিকা বিকা) অর্থ: আপনার সাথে (কোন কিছুকে) অংশীদার/শিরক করা থেকে,
.
وَأَنَا أَعْلَمُ،
(ওয়া আনা আ’লাম) অর্থ: এবং আমার জানা অবস্থায়,
.
وَأَسْتَغْفِرُكَ
(ওয়া আস-তাগফিরুকা) অর্থ: এবং আপনার নিকট ক্ষমাও চাই,
.
لِمَا لَا أَعْلَمُ
(লিমা লা আ’লাম) অর্থ: যেগুলো (আমার) অজানা/অজ্ঞাতসারে ঘটে।
.
প্রিয় পাঠক! দু’আটি ছোট হলেও চমৎকার একটি দু’আ। দু’আটির অর্থও খুবই ব্যাপক— দু‘আটির অর্থের দিকে লক্ষ করলেই এর বিরাট গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়।মানুষের জন্য অতি আবশ্যকীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বান্দা শির্কের অর্থ, এর ভয়াবহতা ও এর প্রকারগুলো সম্পর্কে অবগত হবে; যাতে করে তার তাওহীদ পরিপূর্ণতা লাভ করে, তার ইসলাম নিরাপদ থেকে এবং তার ঈমান আনা সহিহ হয়।তাই প্রত্যেক মুসলিমের উপর কর্তব্য ছোট শির্ক বা বড় শির্ক সকল শির্কের ব্যাপারে সাবধান থাকা। কেননা শির্ক হচ্ছে- আল্লাহ্‌র সবচেয়ে বড় অবাধ্যতা, তাঁর অধিকারে সীমালঙ্ঘন করা। আল্লাহ্‌র অধিকার হচ্ছে- নিরঙ্কুশভাবে তার ইবাদত করা এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার না করা।আল্লাহ্‌ তাআলা মুশরিকদের জন্য স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকাকে আবশ্যক করেছেন এবং জানিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। তাদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,”নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না। এর চেয়ে লঘু গুনাহ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করে সে মহা পাপে লিপ্ত হয়”।(সূরা নিসা ৪/: ৪৮) তাই শিরক থেকে বেঁচে থাকতে প্রত্যেকের উচিত দু‘আটি মুখস্থ করা নেওয়া এবং নিয়মিত পড়া। এটি শুধু সকাল-সন্ধ্যায় নয়,বরং নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে, লাইলাতুল কদরে এবং অন্য যেকোনো সময় এই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আটি পাঠ করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন।
.
পরিশেষে আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদের অন্তরগুলোকে তাঁর দ্বীনের উপর অবিচল রাখেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তাঁর সাথে সাক্ষাত করি। আমরা মহান আল্লাহ্‌র ইজ্জতের ওসিলা দিয়ে তাঁর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি তিনি যেন, আমাদেরকে পথভ্রষ্ট না করেন। নিশ্চয় তিনি চিরঞ্জীব; যিনি মৃত্যুবরণ করবেন না; জ্বিন ও ইনসান মৃত্যুবরণ করবে।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ ও সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান এবং তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Exit mobile version